ধৃতিমান ভাবেনি এত তাড়াতাড়ি সে একটা গোটা মৃত্যু তদন্ত হাতে পেয়ে যাবে। ল্যান্ডলাইন নম্বরটা দেখে ভেবেছিল এটা অফিসের ফোন। সুতরাং তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে সে কে এবং কেন এই ফোনটা করছে বা কার সঙ্গে কথা বলতে চায়। কথাবার্তায় এটা বোঝা গিয়েছে যে ভৈরব চক্রবর্তী মানুষটা যতই সহজ হন। কলকাতা পুলিশের তাঁর পদাধিকার যথেষ্ট উঁচুতে। সুতরাং একবার বললেই যে তাঁর সঙ্গে কথা বলা যাবে তাও তো নয়। এসব ভাবতে ভাবতেই ও প্রান্তে ফোনটা রিং হতে শুরু হল। আর ফোনটা তুলেই স্বয়ং ভৈরব চক্রবর্তীই বলে উঠলেন—
—হ্যাঁ, বলুন।
—হ্যাঁ, বলুন।
এটাই যে মিস্টার চক্রবর্তীর অভ্যেস সেটা অনেক পরে বোধগম্য হয়েছে। উনি ফোন তুলে ‘হ্যালো’ বলেন না। একমুহূর্ত নৈঃশব্দ্য রেখে তারপরে বলেন, “হ্যাঁ বলুন”। এটাই তার ভালোলাগা স্বভাব বা অভ্যাস। ভালো লাগে বলেই তো স্বভাব হয়েছে আর স্বভাব হতে হতে সেটা চিরকালীন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। মিঃ চক্রবর্তী একেবারেই মাংস খেতে পছন্দ করেন না চিকেন মাটন কিছুই না। তিনি মাছের ভক্ত। এমন এমন সব মাছের নাম বলেন যেগুলো বহু বাঙালিরই সিলেবাসের বাইরে। আসলে ভৈরব চক্রবর্তীর জন্ম পড়াশোনা কলকাতাতে হলেও তার পরিবার ঢাকা নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা ছিলেন। একাত্তরের অনেক আগেই কলকাতা চলে এলেও ২৬ মার্চ ১৯৭১-এ বাংলাদেশ জন্মানোর আগে পর্যন্ত নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তাই তাঁদের বাড়িতে রান্নাবান্নায় পূর্ববঙ্গের প্রভাবটা এখনও বিদ্যমান।
আরও পড়ুন:
হ্যালো বাবু!, পর্ব-৬৬: গুগলি/১
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৯: কী ছিল চিঠিতে, উত্তর লিখতে গিয়ে উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের হাত কেঁপেছিল
বহু মানুষের অনেক বিষয়ে দুর্বলতা থাকে, সেই বিষয়ে কথা উঠলে সে যেন থামতে পারে না। সিনেমা ধৃতিমানের প্রিয় বিষয়, বয়স যখন কম ছিল তখন সিনেমা নিয়ে কথা উঠলে গড়গড় করে বলতে শুরু করত। পরে বয়স বাড়তে ক্রমশ বুঝতে পারল অকারণে সিনেমা নিয়ে কথা বলা অপ্রয়োজনীয়। তাই উপযুক্ত সঙ্গ না পেলে ধৃতিমান আজকাল সিনেমা বা থিয়েটার নিয়ে একটাও শব্দ উচ্চারণ করে না। কিন্তু ভৈরব চক্রবর্তী চরম দুর্বলতা হল মাছ। মাছ নিয়ে কথা উঠলে তিনি আর নিজেকে সামলাতে পারেন না। মাছের প্রকারভেদ নানা মাছের নানান ব্যঞ্জন সেসব রসিয়ে বলতে পারেন তিনি। প্রশ্ন করলে বলেন—
—আরে বাবা মাছে ভাতে বাঙালি। ওই বাংলায় ছোটখাট মিলিয়ে প্রায় ৪০০ মতো নদী আর রয়েছে অসংখ্য খালবিল, হাওরবাওর, ডোবানালা। তাই মাছও অসংখ্য। কয়েকটা মাছের নাম বললে তো চিনতেই পারবেন না।
—আরে বাবা মাছে ভাতে বাঙালি। ওই বাংলায় ছোটখাট মিলিয়ে প্রায় ৪০০ মতো নদী আর রয়েছে অসংখ্য খালবিল, হাওরবাওর, ডোবানালা। তাই মাছও অসংখ্য। কয়েকটা মাছের নাম বললে তো চিনতেই পারবেন না।
আরও পড়ুন:
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৫: সুন্দরবনের পাখি — মাছরাঙা
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৮: প্রতিভা দেবী—ঠাকুরবাড়ির সরস্বতী
তখনও সম্পর্কটা আপনি থেকে তুমি হয়নি।
—বেশি নয় কয়েকটা। যেমন ধরুন তল্লা আইড়, এলং, আরোয়ারি, বাঘাইর। কিংবা বেলিটোরা, কুনচি, চেকা, চাওয়া, লাউবুছা!
—সবকটা আনকমন!
—টেংরা তো কমন?
—টেংরা আমার খুব প্রিয়…
—আমারও! বুকভরা ডিম নিয়ে আহা হা! সেই টেংরার কটা ভ্যারিয়েশন জানেন? গাঙটেংরা, কাপশী টেংরা, কোশী টেংরা, গুলসা টেংরা, কানি টেংরা, নুনা টেংরা!
পুরোনো নতুন কথা মনের মধ্যে মিলেমিশে থাকে। এতবছর বাদে ক্রিকেটার মৃদুল সাহার অস্বাভাবিক মৃত্যুর রহস্যের খুঁটিনাটি সব মনে পড়ে গেল। তার সঙ্গেই মিলেমিশে যাচ্ছে ভৈরব চক্রবর্তী সঙ্গে এতদিনকার সম্পর্কের নিত্যদিনের কথোপকথন। তখন মোবাইলও ছিল না। অ্যাপে আঙুল ছুঁইয়ে বাহনও ডাকা যেত না। উল্টোডাঙা থেকে লালবাজার দিব্যি বাসে চলে যাওয়া যেত, কিন্তু ব্যস্ত মানুষ সময় দিয়েছেন। তাই সেদিন ট্যাক্সি নিয়েছিল ধৃতিমান। ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবার পর প্রশংসা এসেছিল ঘুরপথে।
—সময়ের ব্যাপারে আপনি তো মশাই একেবারে বিজাতীয়! সাম্রাজ্যবাদীদের ভক্ত!
—বেশি নয় কয়েকটা। যেমন ধরুন তল্লা আইড়, এলং, আরোয়ারি, বাঘাইর। কিংবা বেলিটোরা, কুনচি, চেকা, চাওয়া, লাউবুছা!
—সবকটা আনকমন!
—টেংরা তো কমন?
—টেংরা আমার খুব প্রিয়…
—আমারও! বুকভরা ডিম নিয়ে আহা হা! সেই টেংরার কটা ভ্যারিয়েশন জানেন? গাঙটেংরা, কাপশী টেংরা, কোশী টেংরা, গুলসা টেংরা, কানি টেংরা, নুনা টেংরা!
পুরোনো নতুন কথা মনের মধ্যে মিলেমিশে থাকে। এতবছর বাদে ক্রিকেটার মৃদুল সাহার অস্বাভাবিক মৃত্যুর রহস্যের খুঁটিনাটি সব মনে পড়ে গেল। তার সঙ্গেই মিলেমিশে যাচ্ছে ভৈরব চক্রবর্তী সঙ্গে এতদিনকার সম্পর্কের নিত্যদিনের কথোপকথন। তখন মোবাইলও ছিল না। অ্যাপে আঙুল ছুঁইয়ে বাহনও ডাকা যেত না। উল্টোডাঙা থেকে লালবাজার দিব্যি বাসে চলে যাওয়া যেত, কিন্তু ব্যস্ত মানুষ সময় দিয়েছেন। তাই সেদিন ট্যাক্সি নিয়েছিল ধৃতিমান। ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবার পর প্রশংসা এসেছিল ঘুরপথে।
—সময়ের ব্যাপারে আপনি তো মশাই একেবারে বিজাতীয়! সাম্রাজ্যবাদীদের ভক্ত!
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৪: শিকারী ও ‘শিকার’
মাই নেম ইজ গওহর জান—ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে অঘোষিত বিপ্লব এনেছিলেন এই শিল্পী
সেদিনই বলে দিয়েছিলেন। যদিও ধৃতিমানের কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে সরাসরি কিছু দেওয়া যাবে না। তবে এই সংক্রান্ত কাজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত সব গাড়িভাড়া খাওয়া-দাওয়া খুব প্রয়োজনে কলকাতা ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়া এবং সেখানে থাকা খাওয়ার সমস্ত খরচ সরকারি তহবিল থেকেই মেটানো হবে। তার জন্য একটা ভাউচার সই করতে হবে। এটা কোন অন্যায় পথে রোজগার নয়। আর ধৃতিমান এই শর্তটা মেনে নিলেই এ সংক্রান্ত কথা এগোবে না হলে তদন্ত নিয়ে আর কোনও কথা হবে না। অবশ্যই আলাপটা বজায় থাকবে। খুব স্বাভাবিকভাবেই তদন্তের প্রতি অদম্য লোভই ধৃতিমানকে রাজি করিয়েছিল।
—বেশ! এবার মৃদুল সাহা! চেনেন?
—হ্যাঁ! পড়েছি!
—কোথায়?
—খেলার আসর! আমার বাড়ির ঠিক তলায় একজন পত্রপত্রিকা নিয়ে বসেন। ওর কাছেই পড়েছি।
আগে সেইসময় নিউজপ্রিন্টে বাংলা ক্রীড়াজগতের খবরাখবর নিয়ে খেলা, খেলার আসর, খেলার কাগজ, খেলার কথা এসব পাওয়া যেত।
—ওখানে তো খেলোয়াড়ের খেলার কথাটুকুই লেখা হয়। খেলার বাইরের খেলাধুলো… নাহ, ওখানে পাবলিশ হওয়ার কথা নয়।
—সেটা একটু একটু শুনেছি!
—একটু একটু নয়, একটু গভীরে জানতে হবে!
—গসিপ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি?
—তদন্তের স্বার্থে ডাস্টবিনও ঘাঁটতে হয়, আপনার একটু সুবিধা হবে কারণ এই নরম মানুষটির খেলাধুলো সবই চলচ্চিত্র জগৎ ঘিরে। আপনার চেনা পরিচিতদের একটু টোকা দিলেই খবর পেয়ে যাবেন। বাই দ্য ওয়ে নরম কেন বললাম ?
—মৃদুল নাম বলে!
—বেশ! এবার মৃদুল সাহা! চেনেন?
—হ্যাঁ! পড়েছি!
—কোথায়?
—খেলার আসর! আমার বাড়ির ঠিক তলায় একজন পত্রপত্রিকা নিয়ে বসেন। ওর কাছেই পড়েছি।
আগে সেইসময় নিউজপ্রিন্টে বাংলা ক্রীড়াজগতের খবরাখবর নিয়ে খেলা, খেলার আসর, খেলার কাগজ, খেলার কথা এসব পাওয়া যেত।
—ওখানে তো খেলোয়াড়ের খেলার কথাটুকুই লেখা হয়। খেলার বাইরের খেলাধুলো… নাহ, ওখানে পাবলিশ হওয়ার কথা নয়।
—সেটা একটু একটু শুনেছি!
—একটু একটু নয়, একটু গভীরে জানতে হবে!
—গসিপ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি?
—তদন্তের স্বার্থে ডাস্টবিনও ঘাঁটতে হয়, আপনার একটু সুবিধা হবে কারণ এই নরম মানুষটির খেলাধুলো সবই চলচ্চিত্র জগৎ ঘিরে। আপনার চেনা পরিচিতদের একটু টোকা দিলেই খবর পেয়ে যাবেন। বাই দ্য ওয়ে নরম কেন বললাম ?
—মৃদুল নাম বলে!
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৯: আলোকলতা তিলোত্তমারা যুগে যুগে পুরুষের উজ্জীবনী শক্তির আধার
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০০: চোর মাচায়ে শোর
আমি আসলে সিনেমা জগতের গসিপ নিয়ে একদমই উৎসাহ দেখাতাম না, কেউ কিছু বলতে এলে তার চোখের দিকে তাকালে সে বুঝতে পারত যে আমি পছন্দ করছি না। কিন্তু আমার এক পরিচিত প্রোডাকশন কন্ট্রোলার আছেন যিনি খবরের খনি। আমার প্রথম ছবিতে নেহাত বন্ধুত্বের দায় বজায় রাখতে কাজ করেছিলেন। আমি ওঁর পুরো পারিশ্রমিক দিতে পারিনি। তবুও উনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন যাতে ছবিটা শেষ হয়। আমি সেই হীরেন নন্দীকেই ফোন করলাম। ঠিক চারটে দিন পর হীরেন বাবু আমাকে ফোন করে জানালেন—
—এ কার খোঁজ নিতে বলেছিলেন ভাইটি?
—কেন?
—এতো সেই আরব্য রজনীর সুলতান!—চলবে।
—এ কার খোঁজ নিতে বলেছিলেন ভাইটি?
—কেন?
—এতো সেই আরব্য রজনীর সুলতান!—চলবে।
গুগলি: পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।