বুধবার ৮ জানুয়ারি, ২০২৫


ছবি: প্রতীকী।

শ্রেয়া কয়েক মূহুর্ত স্থির হয়ে তাকিয়ে থাকল ছেলেটির চোখের দিকে। ছেলেটি অস্বস্তি কাটাবার জন্য বলে ওঠে—
—ওই ভদ্রলোক বলছিলেন আমার সঙ্গে কাজের ব্যাপারে কথা বলতে আসবেন। আমি আসলে নিউজ আইটেম ছাড়া ভিডিও’র কাজ করি না।
—জানি তো! আমরা নিউজের ব্যাপারেই এসেছি!
—কীরকম?
—ডাঃ সুরজিত ব্যানার্জি আর কৌশিকীর কেচ্ছা গাইতে কে বলেছিল?
ছেলেটা এক মূহুর্তের জন্য ঘাবড়ে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো। ছেলেটার চেহারার স্পষ্ট বদলটা ধৃতিমানের নজর এড়াল না। কিন্তু সে ওভারস্মার্ট অ্যাটিচ্যুড দেখাতে গেল!
— আমার খবরের সোর্স তো আপনাকে রিভিল করতে পারি না। এটা এথিকস না!

আচমকা ছেলেটার কাঁধে একটা হাত রেখে অন্য হাতে আইকার্ড দেখিয়ে শ্রেয়া বলল—
—শ্রেয়া বাসু, ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট, কলকাতা পুলিশ! এমন ক্যালাবো না তোর খবরের সোর্স আর জার্নালিজমের এথিকস সব গিঁট পাকিয়ে যাবে। কিন্তু তুলে নিয়ে গিয়ে এক্সট্রা ভাও তোকে দেবো না। খুনের মামলায় জড়িয়ে গেলে ইউটিউব-এর ব্যবসা ভোগে চলে যাবে। যা জিজ্ঞেস করছি তার ঠিকঠাক জবাব দিয়ে দে, ঠিক আছে?
শ্রেয়ার বয়েজকাট চুল। ইউনিফর্মে না থাকলে বেশিরভাগ সময় টি-শার্ট বা হোয়াইট ফুল স্লিভ ফর্মাল শার্ট আর ব্লু বা ব্ল্যাক ডেনিম জিন্স-প্যান্ট। চোখে বেশ সরু ফ্রেমের বাদামি চশমা। বাঙালি মেয়েদের তুলনায় লম্বা এবং ছিপছিপে চেহারা। ডান হাতে ব্ল্যাক ডায়াল স্মার্ট ওয়াচ। নিয়মিত জিম করে। গলায় হার বা কানে দুল পরে না। নো লিপস্টিক, নো মেকআপ। তবে চোখে হালকা কাজল থাকে। আর সঙ্গে সুন্দর পারফিউম সাজগোজ বলতে ওইটুকুই।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৬২: বাথটাব/১৪

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৫: রবীন্দ্রনাথ ভয় পেতেন মহর্ষিদেবকে

শ্রেয়াকে যাদবপুর বা প্রেসিডেন্সির ছাত্রী বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু চোখের দিকে তাকিয়ে সামনের মানুষটির শরীরের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিতে জানে সে। কথা বলার এমন একটা দাপুটে ভঙ্গি, হার্ডকোর ক্রিমিনালের কথা আলাদা, কিন্তু সাধারণ আমজনতাকে ভয় পাইয়ে দেবার জন্য যথেষ্ঠ। সে যখন এমন কথাবার্তা বলে তখন মেলানো যায় না। ভয়টা পেয়ে বসে। তবে আমার সামনেই দু’ একজনকে কষিয়ে থাপ্পড় মারতে দেখেছি শ্রেয়াকে অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্টটাও ওর ঠিক আসে না। কিন্তু ওর এই অ্যাগ্রেসিভ নেচার পুলিশ হিসেবে খুব কাজে লাগে। কিন্তু এই অ্যাংরি উওমেন ইমেজ মাঝে মাঝে শ্রেয়াকে বিপদে ফেলে দেয়, বহুক্ষেত্রে চক্রবর্তী সাহেব সামলে দেন! কয়েকবার মেমো খেতে খেতে শেষমুহুর্তে বেঁচে গিয়েছেন শ্রেয়া।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯৬: যদি হই চোরকাঁটা

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮১: সুন্দরবনের পাখি—বেনে বউ

—দেখো বাবু! তুমি সে কাজ করো সেগুলো আমরা খুব মন দিয়ে দেখেছি। তোমার নানারকম কন্টেন্ট আমরা দেখেছি। কিন্তু কৌশিকী দত্তগুপ্তকে নিয়ে এই বিশেষ ইউটিউব কন্টেন্টে যে সব এভিডেন্স দেখানো হয়েছে সেগুলো অনেক বেশি পারসোনাল ডকুমেন্টস পেলে কোথায়?
—দেখুন আপনি আমাকে ধমকাতে পারেন, মারধোরও করতে পারেন। কিন্তু খররের সোর্স আমাকে রিভিল করতে হবে কেন? যার সম্বন্ধে বলেছি, সেটা যদি মিথ্যে হয় তিনি আমার বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন!
ধৃতিমান বুঝল, ছেলেটি চাপের মুখে বাঁচার চেষ্টা করছে। ওকে আর ভয় না দেখিয়ে ওর কাছে পৌঁছতে হবে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৬: রাজনৈতিক পরিসরে অখ্যাতি ও সন্দেহর আবিলতা থেকে কি মুক্তি সম্ভব?

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬৯: টাকা-পয়সা থাকলে চোর-ডাকাতকেও লোকে সম্মান দেখায়

শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে ছেলেটির পাশে গিয়ে বসল ধৃতিমান।
—দেখুন ভাই! আপনি নিউজ পোর্টাল চালাচ্ছেন। একটা বিশেষ কন্টেন্ট করতে গিয়ে সেটাকে এভিডেন্সিয়ালি কারেক্ট করতে গিয়ে আপনি চেষ্টা করেছেন। ঠিক না ভুল, সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু আমাদের আজকের ইনভেস্টিগেশনের কারণটা একেবারেই অন্য। আমাদের সন্দেহ কেউ একজন আড়ালে লুকিয়ে আছেন। আমরা তাকে খুঁজছি! ভয় পাবেন না, আপনি আমাদের টার্গেট নন। কিন্তু আপনি আমাদের টার্গেটের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। তাই প্লিজ কিছু গোপন না করে সবটুকু বলুন।

এ বার শ্রেয়া ধৃতিমানের দিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে তাকাল। ঠিক সময়ে ধৃতিমান হাল ধরে নিয়েছে। শ্রেয়া হয়ত ধৈর্য হারাচ্ছিল। ছেলেটি মাথা নিচু করে বলল—
—আমার কাছে ফোন এসেছিল ভিন্ন ভিন্ন নম্বর থেকে! আমাকে ফোন রিসিভ করার পর নম্বর ডিলিট করতে বলা হয়েছিল!
শ্রেয়া বলল—
—ডিলিট না করলেও ট্রেস করা যেত না, আমাদের দেশে খুব সস্তায় হাটে-মাঠ-বাটে মোবাইল ফোন সিমকার্ড রিচার্জ সব পাওয়া যায়। ইচ্ছে করলেই যে কেউ ফোন সিম একবার ইউজ করে ডেস্ট্রয় করে দিতে পারে। বার্ন ফোন টেকনিক অপরাধ জগতে খুব জনপ্রিয়। আপনার নেক্সট ইউটিউব কন্টেন্ট করতে পারেন, নাও ক্যারি অন!
আরও পড়ুন:

শ্যাম বেনেগল সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে পারতেন

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-১২: দর্দরজাতক

তুই তুমি থেকে শ্রেয়া, আপনিতে ফিরে এসেছেন। তার মানে মাথাটা ঠান্ডা হয়েছে। ধৃতিমান আবার বলল—
—তারপর আমাকে বলা হয়েছিল কাছেই গড়িয়া বাস ডিপোর দাঁড়িয়ে থাকা বাসের সিটের নিচে বা কখনও কবি নজরুল মেট্রো স্টেশনের সিঁড়ির পাশে রাখা প্যাকেট তুলে নিতে। প্রথমটায় অনলাইন এয়ারটিকিট, ক্রুজের টিকিট বোর্ডিংপাসে নামের জায়গায় কালো দাগকাটাছিল। পরের বারনাম ছিল।
—আর কিছু ইনফরমেশন?
—হ্যাঁ, ওই কৌশিকী ম্যাডামের বাবার চিকিৎসার ডিটেল ইংরিজিতে কম্পিউটার টাইপ করা।
শ্রেয়া একবার হাত তুলে ধৃতিমানকে হাত তুলে থামিয়ে কাছে ডেকে চাপা স্বরে জানতে চাইলেন।
—কৌশিকীর প্রেগন্যান্সির ব্যাপারটা ছেলেটা জানে কি?
—এই স্টেজে নিউজটা কোথাও নেই। আমরা লিক করে দেব শ্রেয়া? উচিত হবে?
—ওকে লেট মি ট্রাই।
শ্রেয়া গিয়ে এ বার ছেলেটির পিছনে দাঁড়াল।
—আচ্ছা মনে করে দেখুনতো এই কন্টেন্ট নিয়ে আর কোনও এপিসোড করার ধামাকাদার কোনও স্কুপ পেয়েছেন?
ধৃতিমান মনে মনে শ্রেয়ার বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারল না!—চলবে।
 

● কৌশিকি দত্তগুপ্ত হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ৯ জানুয়ারি ২০২৫।

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content