সিন্নি: পর্ব-৮
শ্রেয়ার ফোন পাওয়ার পরপর রহস্যের অনেকগুলো গিঁট যেন খুলে গেল। জড়িয়ে যাওয়ার সুতোর গিঁট খুলতে গেলেও অনেক সময় এমনই হয়। চোখের সামনে থাকা গিঁটটা খুলতে গিয়ে চোখের আড়ালে থাকা একটা সুতো জড়িয়ে আবার নতুন গিঁট তৈরি করে। সমস্যা থেকে বেরোনোর আগে নতুন সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। যখন মনে হয় যে আর বোধহয় সুতোর গিঁট খোলা হল না। তখন পরপর গিঁটগুলো হঠাতই খুলে যায়। তবে সুতোর গিঁট বেশিক্ষণ চেষ্টা করে খুলতে না পারলে অধৈর্য হয়ে আমরা সকলেই যেটা করি, খানিকটা সুতো কেটে ফেলে দিই। রহস্য সমাধানে কিন্তু কোনও সূত্র কেটে ফেলে দেওয়া যাবে না। গিঁট পাকিয়ে জড়িয়ে গেলেও না।
রীনা ছাড়া অন্য সকলের ক্ষেত্রে কড়া ঘুমের ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে। রীনার ক্ষেত্রে কি ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়নি? কেন? তবে যতক্ষণ না পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা পুরোপুরি আসছে ততক্ষণ রীণাকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল কিনা সেটা জানা যাবে না। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায় যে রীনাকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়নি, অথচ অন্যদের দেওয়া হয়েছিল। তাহলে যে পরের সন্দেহটা আসে সেটা হল রীনা কি এই ষড়যন্ত্রটা জানতো? নাকি পুরোটাই রীনার অজান্তে ঘটেছিল? মফিজুল বাড়ির পিছন দিক থেকে যে রেলওয়ে টিকিটের টুকরো খুঁজে পেয়েছে, তাতে এফ২১ আর এম২৫ এরা কারা? ২৫ বছরের যুবক আর ২১ বছরের যুবতী পুরী যাচ্ছিল কেন?
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-২৮: সব রহস্যই কি ট্রেনের টিকিটে লুকিয়ে?
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৭: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—বাইন ও গর্জন
লোকাল থানার এএসআই বিদ্যুৎ সাঁপুইকে নিজের ফোন নম্বর দিয়ে এসেছিল ধৃতিমান। সে কি কোনও নতুন সূত্র পেল? সূত্র পেলে যে সেটা তার সবজান্তা গুরুঠাকুর বস এসএইচও নিত্যানন্দ মিত্রকে দিয়ে কোন লাভ হবে না, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধিমান বিদ্যুৎ সাপুঁই। এমন একটি হোঁৎকা কার্টুনের সঙ্গে এত বছর কাজ করতে করতে নিশ্চয়ই সে তিতিবিরক্ত।
চেহারা নিয়ে ঠাট্টা ইয়ার্কি বা বডিশেমিং এখন ঘোরতর অপরাধ। কিন্তু চেহারাটাই যাঁর ইউএসপি সেই ভারতবিখ্যাত হিন্দি চলচ্চিত্রের খ্যাতনামা কমেডি অভিনেতা অসিত সেনকে মনে করা তো অপরাধ নয়। নিত্যানন্দবাবুকে একঝলক দেখলে আপনার প্রথম যার কথা মনে হবে তিনি হলেন অসিত সেন। শুধু চেহারা নয় গলায়-বলায় তিনি অবিকল অসিত সেন। মিহি গলায় সুর করে কথা বলেন। বিদ্যুৎকে সম্পর্কেও একটা টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে দিল বাবু।
সহজ বাংলা মেসেজ—”ঘোষ ভিলা নিয়ে আর কোনও লিড পেলে নাকি ভায়া? কিছু পেলে আমায় সরাসরি ফোন করো। ধৃতিমান চৌধুরী।
চেহারা নিয়ে ঠাট্টা ইয়ার্কি বা বডিশেমিং এখন ঘোরতর অপরাধ। কিন্তু চেহারাটাই যাঁর ইউএসপি সেই ভারতবিখ্যাত হিন্দি চলচ্চিত্রের খ্যাতনামা কমেডি অভিনেতা অসিত সেনকে মনে করা তো অপরাধ নয়। নিত্যানন্দবাবুকে একঝলক দেখলে আপনার প্রথম যার কথা মনে হবে তিনি হলেন অসিত সেন। শুধু চেহারা নয় গলায়-বলায় তিনি অবিকল অসিত সেন। মিহি গলায় সুর করে কথা বলেন। বিদ্যুৎকে সম্পর্কেও একটা টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে দিল বাবু।
সহজ বাংলা মেসেজ—”ঘোষ ভিলা নিয়ে আর কোনও লিড পেলে নাকি ভায়া? কিছু পেলে আমায় সরাসরি ফোন করো। ধৃতিমান চৌধুরী।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৩: বাবু ডাক্তার ও ‘ডাক্তারবাবু’
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬২: ক্রৌঞ্চবধের বিষাদ কী ছেয়ে আছে রামায়ণের প্রেক্ষাপট?
বুবু গরমে বেশ কাহিল। মুচিপাড়ার এই পুরনো বাড়িটা চুনসুরকিতে গাঁথা মোটা দেওয়াল। পুরনো আমলের বাড়ি তাই হালআমলের চোরাগোপ্তা খুপরি ফ্ল্যাটের মতো দেওয়াল জোড়া বড় বড় জানলা নেই। রোদ গরম ধুলো তিনটেই কম ঢোকে এ বাড়িতে। তবে ভয় একটাই, দোল দোল দুলুনির মতো কখন যে ‘বর আসবে এক্ষুনি নিয়ে যাবে তক্ষুনি’ ঘটে যায় কে জানে? প্রোমোটার-বিল্ডার-ডেভলপার গোটা বাড়িটা জশ ছবির তিমির মতো গিলে খেলে কী হতে পারে? কি আবার, বুবুকে নিয়ে এই বহুদিনের আস্তানা ছেড়ে বাবুকে গিয়ে উঠতে হবে হাল আমলের কাচেমোড়া আধুনিক কোনও ফ্ল্যাটের দম-আটকানো কোনও চোরাকুঠুরিতে।
বাবু বেশিক্ষণ তো বাড়িতে থাকে না। নানা কাজকর্মে বেরিয়ে যায়। অসুবিধা হবে বুবুর। বিশেষ করে গরমকালে। এ বাড়িতে আলো কম। গরম কম। তুলনায় হাওয়াটাও কম। বুবুর জন্য তার খাঁচার পাশেই আলাদা করে নিঃশব্দে একটা টেবিলফ্যান ঘোরে। সেই আদিকালের ঘাড়নাড়া বুড়ো নয়, আধুনিক টাওয়ার ফ্যান। ফ্যানের ব্লেড বাইরে নেই। টাওয়ারের ভিতরে। হাওয়াটা ফ্যানের ভিতর থেকেই এসির মতো সুইং করে এ পাশ থেকে ওপাশ। কোনও আওয়াজ নেই।
বাবু বেশিক্ষণ তো বাড়িতে থাকে না। নানা কাজকর্মে বেরিয়ে যায়। অসুবিধা হবে বুবুর। বিশেষ করে গরমকালে। এ বাড়িতে আলো কম। গরম কম। তুলনায় হাওয়াটাও কম। বুবুর জন্য তার খাঁচার পাশেই আলাদা করে নিঃশব্দে একটা টেবিলফ্যান ঘোরে। সেই আদিকালের ঘাড়নাড়া বুড়ো নয়, আধুনিক টাওয়ার ফ্যান। ফ্যানের ব্লেড বাইরে নেই। টাওয়ারের ভিতরে। হাওয়াটা ফ্যানের ভিতর থেকেই এসির মতো সুইং করে এ পাশ থেকে ওপাশ। কোনও আওয়াজ নেই।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৫: কথার কথা মা নয়—সত্য জননী
মহামানবের সাগরতীরে
টুপ করে এক ফোঁটা জলের শব্দ হল। মেসেজ এল। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ এখন ফোন না খুলে স্ক্রিন থেকেই দেখা যায়। শ্রেয়ার মেসেজ। একটা সন্দেহ সঠিক হল। রীনার শরীরে কোনও ঘুমের ওষুধ পাওয়া যায়নি। কিন্তু অন্যদের সকলের শরীরে ঘুমের ওষুধ ছিল, যেটা শালপাতার কাটুরির মধ্যে পাওয়া সিন্নিতে মেশানো ছিল।
ফোনটা রেখে ভাবতে বসলো বাবু। তার মানে রীনার মাথার চোটটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার ফলে হয়েছে। দুই কনুইয়ে কালশিটেটাও একই কারণে। মাথার পিছনে চোট লেগে হয়তো মুহূর্তের জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল রীণা। বেশ জোরালো ধাক্কা সেই জন্য মাথার পেছনটা কেটে গিয়েছে। তারপরই রীনার গলার নলি কেটে দেওয়া হয়। তাই রীণা আর বাধা দিতে পারেনি। রীনাকে মারবার পর খুনি বা খুনিরা অচৈতন্য বাকিদের গলার নলি কেটে দেয়। তার মানে এই চারটি খুন হয়ত পরিকল্পনামাফিক ছিল না। ঘটনাপ্রবাহ খুনিকে বা খুনিদের এই কাজ করতে বাধ্য করেছে।
জেমস আইভরির শেক্সপিয়ারওয়ালা ছবির টাইটেল টিউন বাজল বিদ্যুৎ ফোন করেছে। নিশ্চয়ই কোনও সুখবর। কিন্তু বিদ্যুতের রিংটোনটা বদলে ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের মতো করে দিতে হবে। —চলবে।
ফোনটা রেখে ভাবতে বসলো বাবু। তার মানে রীনার মাথার চোটটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার ফলে হয়েছে। দুই কনুইয়ে কালশিটেটাও একই কারণে। মাথার পিছনে চোট লেগে হয়তো মুহূর্তের জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল রীণা। বেশ জোরালো ধাক্কা সেই জন্য মাথার পেছনটা কেটে গিয়েছে। তারপরই রীনার গলার নলি কেটে দেওয়া হয়। তাই রীণা আর বাধা দিতে পারেনি। রীনাকে মারবার পর খুনি বা খুনিরা অচৈতন্য বাকিদের গলার নলি কেটে দেয়। তার মানে এই চারটি খুন হয়ত পরিকল্পনামাফিক ছিল না। ঘটনাপ্রবাহ খুনিকে বা খুনিদের এই কাজ করতে বাধ্য করেছে।
জেমস আইভরির শেক্সপিয়ারওয়ালা ছবির টাইটেল টিউন বাজল বিদ্যুৎ ফোন করেছে। নিশ্চয়ই কোনও সুখবর। কিন্তু বিদ্যুতের রিংটোনটা বদলে ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের মতো করে দিতে হবে। —চলবে।
ঘোষ পরিবার হত্যারহস্য: পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪।
>* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।