সিন্নি: পর্ব-৭
—সেটা তো বস তোমাদের খুঁজে বের করতে হবে। সিঁড়ির রেলিংয়ে কাঠের হাতলের ওপর কালচেদাগটা রক্তের এটা বোঝা গিয়েছে। তবে এটা নিয়ে আর আমরা বেশি সময় দিইনি। কারণ ভিক্টিমদের কারও একজনের বা অনেকের সঙ্গেই এই রক্ত মিলে যেতে পারে। হ্যাঁ, আর একটা স্পেশাল সারপ্রাইজের কথা তো ভুলেই গিয়েছি।
—কী রকম?
—বডি বেরিয়ে যাবার পর তো তোমরা চলে এলে। আমরা বাড়ির পিছন দিকটাতে একটু তদন্ত করছিলাম।
—কিছু ইনটারেস্টিং পেয়েছ?
—যথেষ্ট ইন্টারেস্টিং।
—কী রকম?
—একটা টু-টায়ার এসির টিকিটের ছেঁড়া অংশ। ট্রেন নম্বর ১৮৪০৯। পুরী জগন্নাথ এক্সপ্রেস। ডেট অফ জার্নি খুনের রাতে। কয়েকটা টুকরো মিসিং। তাই নামের অংশটা পাইনি। যাত্রী দু’জন ছিলেন। এম২৫ এবং এফ২১।
—কী রকম?
—বডি বেরিয়ে যাবার পর তো তোমরা চলে এলে। আমরা বাড়ির পিছন দিকটাতে একটু তদন্ত করছিলাম।
—কিছু ইনটারেস্টিং পেয়েছ?
—যথেষ্ট ইন্টারেস্টিং।
—কী রকম?
—একটা টু-টায়ার এসির টিকিটের ছেঁড়া অংশ। ট্রেন নম্বর ১৮৪০৯। পুরী জগন্নাথ এক্সপ্রেস। ডেট অফ জার্নি খুনের রাতে। কয়েকটা টুকরো মিসিং। তাই নামের অংশটা পাইনি। যাত্রী দু’জন ছিলেন। এম২৫ এবং এফ২১।
ঘুমের ওষুধ আর ছেঁড়া ট্রেনের টিকিট পুরো হিসাবটাকে গোলমাল করে দিল। ঘুমের ওষুধ মানে কি কোনও রাহাজানির মতলব? কেউ একজন প্রতিবাদ করতে চেয়েছে তাই সকলকে…।
আসলে পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা না আসা পর্যন্ত কিছু আন্দাজ করা যাচ্ছে না। কিন্তু মিডিয়ার কাছে এটা একটা খুব হাই টিআরপি নিউজ। প্রতি সন্ধেবেলাতেই তদন্ত কতদূর এগল এই নিয়ে তারা একটা আলোচনাসভা বসাবেই। অবশ্য এই সমস্ত পারিপার্শ্বিক ঘটনা তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে না। তদন্ত চলবে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সঠিক দিকে।
লোকাল থানার এএসআই বিদ্যুৎ সাঁপুই বেশ বুদ্ধিমান। কিন্তু দুঃখের বিষয় থানার ওসি মানে আজকের ওয়েব সিরিজের দুনিয়ায় যাকে অফিসার ইনচার্জ না বলে স্টেশন হাউস অফিসার বা এসএইচও নামে ডাকা হয়, সেই ভদ্রলোক নিজেকে একজন জ্ঞানী-ভাবা ঘুণপোকার মতো জ্ঞানপোকা বিশেষ।
জ্ঞানে ভুবন ভরিয়ে দেবে,
ভেবেছিলো একটি পাকা,
বলতে গেলেই আশেপাশের,
লোকজন সব হোত ফাঁকা…
আসলে পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা না আসা পর্যন্ত কিছু আন্দাজ করা যাচ্ছে না। কিন্তু মিডিয়ার কাছে এটা একটা খুব হাই টিআরপি নিউজ। প্রতি সন্ধেবেলাতেই তদন্ত কতদূর এগল এই নিয়ে তারা একটা আলোচনাসভা বসাবেই। অবশ্য এই সমস্ত পারিপার্শ্বিক ঘটনা তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে না। তদন্ত চলবে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সঠিক দিকে।
লোকাল থানার এএসআই বিদ্যুৎ সাঁপুই বেশ বুদ্ধিমান। কিন্তু দুঃখের বিষয় থানার ওসি মানে আজকের ওয়েব সিরিজের দুনিয়ায় যাকে অফিসার ইনচার্জ না বলে স্টেশন হাউস অফিসার বা এসএইচও নামে ডাকা হয়, সেই ভদ্রলোক নিজেকে একজন জ্ঞানী-ভাবা ঘুণপোকার মতো জ্ঞানপোকা বিশেষ।
ভেবেছিলো একটি পাকা,
বলতে গেলেই আশেপাশের,
লোকজন সব হোত ফাঁকা…
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-২৭: সিন্নিতে কোনও বিষই নাকি পাওয়া যায়নি? তাহলে?
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৬: সুন্দরবনের লৌকিক চিকিৎসায় ম্যানগ্রোভ—হরগোজা ও কেয়া
দেয়া-নেয়া ছবির জন্য গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় শ্যামল মিত্রের নিজের সুরে গাওয়া সেই অসাধারণ গানটির প্যরোডি করে স্কুলের উঁচু ক্লাসে এক বিটকেল বন্ধু এই গানটা প্রায়ই গাইত। স্কুল-কলেজ অফিসকাছারি সমাজসংসার সিনেমা বা থিয়েটারের হলে একশ্রেণির মানুষ থাকেন যাদের মধ্যে সদ্যজানা জ্ঞানগজগজ করে। আর তারা বদহজমের চোঁয়াঢেঁকুরের মতো অনবরত তাদের জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ না করলে শান্তি পান না। এদের উদ্দেশ্য করেই পরবর্তীকালে প্রখ্যাত নট ও নাট্যকার শ্রদ্ধেয় মনোজ মিত্র ‘চোখে আঙুল দাদা’ নামের বিখ্যাত রেডিয়ো নাটক লিখেছিলেন। পৃথিবীর কোনও কিছুই এদের সঠিক বলে মনে হয় না। খুনের তদন্ত থেকে বাজেটে অর্থ বরাদ্দ সব ব্যাপারেই এদের একটা গিটকিরি-মারা আগমার্কা মতামত রয়েছে।
গণতান্ত্রিক দেশ, মতামত দেওয়ার অধিকার সকলের আছে। কিন্তু আমার মতটা তোমার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার নামই যে স্বৈরাচার। আপরুচি খানা আপরুচি পরনার মতোই তো আপরুচি সোচনা, আপরুচি অচ্ছা ইয়া বুরা লগনা। আমার কী ভালো লাগবে বা লাগবে না, সেটা তো একেবারেই মেরা মর্জি।
গণতান্ত্রিক দেশ, মতামত দেওয়ার অধিকার সকলের আছে। কিন্তু আমার মতটা তোমার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার নামই যে স্বৈরাচার। আপরুচি খানা আপরুচি পরনার মতোই তো আপরুচি সোচনা, আপরুচি অচ্ছা ইয়া বুরা লগনা। আমার কী ভালো লাগবে বা লাগবে না, সেটা তো একেবারেই মেরা মর্জি।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৩: বাবু ডাক্তার ও ‘ডাক্তারবাবু’
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬১: মহাভারতের রাক্ষসরা কী আজও বর্তমান? প্রসঙ্গ— বকরাক্ষসবধ
যেমন মর্জিনা বাঁদী হলেও নিজের মর্জিমাফিক চলত। মনিবকে বাঁচাবার কথা মনে হয়েছে তাই সে নাচতে নাচতে হাতের ছুরি আমূল বসিয়ে দিয়েছে দস্যুসর্দারের বুকে। কারও অনুমতি নেয়নি। স্রষ্টা চেয়েছেন তাই বাঁদি মর্জিনা বেগম হয়েছে। কী ভাগ্যি পরবর্তী সময়ের চোখে-আঙুল-দাদারা কেউ প্রশ্ন করেননি, হয়তো বা প্রশ্ন করার সাহস করেননি যে সেই সময় চিচিং ফাঁক বললে পাথরের দরজা খুলতো কী করে? বা চিচিং বন্ধ বললে বন্ধই বা হতো কী করে? আলেক্সার তো ভয়েস কমান্ড নেওয়ার ক্ষমতা তখন তো ছিল না। ভয়েস কমান্ড দিয়ে মেকানিক্যাল এনার্জিতে পাথরের দরজা খোলাবন্ধ তাও তো ছিল না।
এসএইচ ও মৃণাল মাঝির হয়ত এ ব্যাপারে একটা সুস্পষ্ট মতামত আছে। তাই অফিসিয়াল ডেকারম ভেঙে সরাসরি ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেতে বিদ্যুতের মোবাইল নম্বরটা নিয়ে রেখেছিল বাবু। মৃণাল মাঝির মতো এই লোকগুলোকে তার কোনওকালেই পছন্দ নয়। ধৃতিমানের সিনেমা বা থিয়েটারের জগতে এই ধরনের জ্ঞানপোকা থিকথিক করছে। এরা সামনে থাকলে কখনওই কোনও কাজে এগোনো যায় না। তাই এদের না চটিয়ে এড়িয়ে যাওয়াটুকু শিখতে হয়।
আচমকা শ্রেয়া বসুর কলার টিউন বাজছে। সোনার কেল্লার বিখ্যাত সেই উটের দৌড়ের থিম মিউজিক।
এসএইচ ও মৃণাল মাঝির হয়ত এ ব্যাপারে একটা সুস্পষ্ট মতামত আছে। তাই অফিসিয়াল ডেকারম ভেঙে সরাসরি ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেতে বিদ্যুতের মোবাইল নম্বরটা নিয়ে রেখেছিল বাবু। মৃণাল মাঝির মতো এই লোকগুলোকে তার কোনওকালেই পছন্দ নয়। ধৃতিমানের সিনেমা বা থিয়েটারের জগতে এই ধরনের জ্ঞানপোকা থিকথিক করছে। এরা সামনে থাকলে কখনওই কোনও কাজে এগোনো যায় না। তাই এদের না চটিয়ে এড়িয়ে যাওয়াটুকু শিখতে হয়।
আচমকা শ্রেয়া বসুর কলার টিউন বাজছে। সোনার কেল্লার বিখ্যাত সেই উটের দৌড়ের থিম মিউজিক।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৪: সারদা মায়ের মানসিক দৃঢ়তা
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২১: গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী—এক শক্তির গল্প
আসলে সত্যজিতের ছবি সত্যজিতের লেখা তার চিত্রায়িত দৃশ্য আবহসংগীতের ব্যবহার বা সংলাপের শব্দখেলা সবকিছুই ধৃতিমানের কাছে একটা বিস্ময় খানিকটা অবসেশনও বটে। নিয়ম করে ২ মে শুধু তাঁর জন্মদিনে নয়, সারা বছর সারাটা জীবন তিনি ধৃতিমানকে আচ্ছন্ন করে রেখেছেন। তবে একমাত্র চক্রবর্তী সাহেব ছাড়া কারও সঙ্গে সত্যজিৎ রায় প্রসঙ্গে সে আলোচনা করে না। নিজের ছবির ইউনিট মেম্বার বা থিয়েটারের বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গেও না। এ বিষয়ে কেউ কিছু কথা তুললে সে সযত্নে এড়িয়ে গিয়ে বলে ‘উনি আমার কাছে দেবতা, দেবতার মাহাত্ম্য নিয়ে আলোচনা করে লাভ কী? ‘
কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ফ্রেমের মাঝবরাবর ছুটে আসা ট্রেন আর তার নিচে দিয়ে মরুভূমির মধ্যে ফেলুদাদের উটের সারি। উটের দৌড়ের থিম মিউজিক তার সঙ্গে মিশে থাকা কয়লার ইঞ্জিনের ঝিকঝিক ঝিকঝিক আর ট্রেনের বাঁশি। ঠিক সেলুলয়েডে আঁকা সিনেমা। তবে উটের দৌড়ের আগে রামদেওরা স্টেশনে যাওয়ার জন্য উটে চড়ার একটা দুর্দান্ত ব্যাকগ্রাউন্ড ট্র্যাক রয়েছে। আছে ফেলুদা আর জটায়ুর অসাধারণ কথোপকথন। রয়েছে লালমোহনবাবুর উটে ওঠার সেই অবিস্মরণীয় দৃশ্য। একটা একটা করে লালমোহনবাবুর সব স্বপ্ন মিলে যাওয়ার আনন্দে চিৎকার করে বলে ওঠা “ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন”। ফেলুদার কাছে উটের কুঁজেই জল থাকে শুনে তেষ্টায় কাতর জটায়ূর আর্তচিৎকার “কুঁজ নয় কুঁজো”।
সৌভাগ্যক্রমের শ্রেয়া ফোনটা ছাড়েননি। শ্রেয়া জানেন বুবু বাইরে থাকলে অনেক সময় ফোন ধরতে বাবুর দেরি হয়।
—হ্যাঁ, শ্রেয়া বলুন।
—পোস্টমর্টেম-এর পুরো রিপোর্টটা এখনও আসেনি। তবে একটা ইন্টারেস্টিং ডেভেলপমেন্ট হল বড়মেয়ে রীনার সঙ্গে সম্ভবত মার্ডারারের ধস্তাধস্তি হয়েছিল! কনুইয়ের পাশে ধাক্কা লেগে রক্ত জমাট বেঁধে আছে, মাথার পেছনেও একটা উন্ড রয়েছে। —চলবে।
কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ফ্রেমের মাঝবরাবর ছুটে আসা ট্রেন আর তার নিচে দিয়ে মরুভূমির মধ্যে ফেলুদাদের উটের সারি। উটের দৌড়ের থিম মিউজিক তার সঙ্গে মিশে থাকা কয়লার ইঞ্জিনের ঝিকঝিক ঝিকঝিক আর ট্রেনের বাঁশি। ঠিক সেলুলয়েডে আঁকা সিনেমা। তবে উটের দৌড়ের আগে রামদেওরা স্টেশনে যাওয়ার জন্য উটে চড়ার একটা দুর্দান্ত ব্যাকগ্রাউন্ড ট্র্যাক রয়েছে। আছে ফেলুদা আর জটায়ুর অসাধারণ কথোপকথন। রয়েছে লালমোহনবাবুর উটে ওঠার সেই অবিস্মরণীয় দৃশ্য। একটা একটা করে লালমোহনবাবুর সব স্বপ্ন মিলে যাওয়ার আনন্দে চিৎকার করে বলে ওঠা “ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন”। ফেলুদার কাছে উটের কুঁজেই জল থাকে শুনে তেষ্টায় কাতর জটায়ূর আর্তচিৎকার “কুঁজ নয় কুঁজো”।
সৌভাগ্যক্রমের শ্রেয়া ফোনটা ছাড়েননি। শ্রেয়া জানেন বুবু বাইরে থাকলে অনেক সময় ফোন ধরতে বাবুর দেরি হয়।
—হ্যাঁ, শ্রেয়া বলুন।
—পোস্টমর্টেম-এর পুরো রিপোর্টটা এখনও আসেনি। তবে একটা ইন্টারেস্টিং ডেভেলপমেন্ট হল বড়মেয়ে রীনার সঙ্গে সম্ভবত মার্ডারারের ধস্তাধস্তি হয়েছিল! কনুইয়ের পাশে ধাক্কা লেগে রক্ত জমাট বেঁধে আছে, মাথার পেছনেও একটা উন্ড রয়েছে। —চলবে।
ঘোষ পরিবার হত্যারহস্য: পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ৯ মে ২০২৪।
>* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।