শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলির সঙ্গে গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

আমাদের বাড়িতে যখন প্রথম টেপ রেকর্ডার এল, আমি তখন ক্লাস সিক্স। আজও আমার স্পষ্ট মনে আছে টেপ রেকর্ডারের সঙ্গে বাবা দুটো ক্যাসেট কিনে এনেছিলেন – ‘অবিস্মরণীয় শচীন দেব বর্মন’ আর ‘গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়’। দুটি ক্যাসেটই আমাকে দুটি নতুন অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিল। সেই প্রথম আমি শচীনকত্তার গান শুনলাম এবং বলাই বাহুল্য, ওই কণ্ঠের জাদুতে আচ্ছন্ন হলাম, যে মুগ্ধতা আজও অবিচল। দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা ছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ছবি দেখা। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান ততদিনে আমার শোনা হয়ে গেছে কিন্তু মানুষটিকে দেখা তখনও হয়নি। আর তখন তো মহামান্য সবজান্তা গুগল দাদা ছিলেন না, যে চাইলেই যে কোনও তথ্যই হাতের মুঠোয় চলে আসবে। তাই, ক্যাসেটের কভারে সেই স্মিতহাস্যময়ী কোমল শ্যামলা চেহারার মহিলাকে দেখে কেমন যেন আপন মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল ইনি যেন আমারই পরিবারের কেউ। একজোড়া গভীর শান্ত চোখের মায়ায় জড়িয়ে গেলাম আমি। আজও বলতে পারব না কোন আকর্ষণ আমার কাছে বেশি– ওই স্নিগ্ধ মায়াবী মুখের নাকি ওই সুরেলা কণ্ঠের, যার গানের প্রজাপতি সত্যিই পাখায় পাখায় রং ছড়িয়ে যায়। ‘মধু মালতী’র এই মধুর ডাক আমি কেন, কোনও বাঙালির পক্ষেই কি উপেক্ষা করা কোনওদিন সম্ভব?

ছোটবেলায় দূরদর্শনে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে পুরোনো বাংলা ছায়াছবির গান শোনা এবং দেখার স্মৃতি আজও উজ্জ্বল। ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’, ‘তুমি না হয় রহিতে কাছে’, ‘আমি স্বপ্নে তোমায় দেখেছি’, ‘জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া’, অথবা ‘আমি যে জলসাঘরে’ যেন সুরের স্বর্গলোকের অনুভূতি বহন করে আনে! সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের আধুনিক বা চলচ্চিত্রের গান আমাকে বেশি বিভোর করে নাকি তাঁর রাগাশ্রয়ী গান’ সেই তুলনা করার সাধ্য আমার সত্যি নেই। আমি শুধু জানি ‘ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকি মিকি তারা’র মাদকতা যতখানি, ‘কি করি সজনি আসে না প্রীতম’-এর আবেগমথিত যন্ত্রণাও ঠিক ততখানি।
এই জরাগ্রস্ত পৃথিবীতে নক্ষত্র পতনের কাল চলছে নাকি স্বর্গলোকে ঈশ্বর তাঁর প্রিয় মানুষগুলির জন্য কাতর হয়েছেন, জানি না, শুধু অনুভব করছি আস্তে আস্তে পৃথিবী রিক্ত হয়ে যাচ্ছে ! মিষ্টি সোনাঝরা সকালগুলোও কি আস্তে আস্তে তাদের মাধুর্যের রেশ হারিয়ে ফেলবে? গানের দিনের গান শোনাবার লগ্নগুলোও কি বেসুরে ছন্নছাড়া হয়ে যাবে? পাখি কি তবে তিরবিদ্ধ হয়ে তার গান সত্যিই থামিয়ে দেবে?

Skip to content