শ্রীশ্রী মা সারদা। ছবি: সংগৃহীত।
সারদা মাকে অরূপানন্দ একবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তাঁকে কখনও কখনও রামায়ণ পড়তে দেখেছেন, তিনি পড়তে শিখলেন কখন! মা জানিয়েছিলেন, ছেলেবেলায় শিখেছেন। মা সারদা মুদ্রিত গ্রন্থ অনায়াসে পড়তে পারতেন। শুধু তাই নয়, দুরূহ শব্দের অর্থ বুঝতে পারতেন।
একবার কাশীতে ঠাকুরের দেহাবসানের পর ১৩১৯ সালে মা যখন ছিলেন, সেই সময় বিভূতিবাবু তাঁকে গীতার দশম অধ্যায় পড়ে শোনাচ্ছিলেন, ‘মাসানাং মার্গশীর্ষোঽহং’। এই শ্লোকটি পড়ামাত্র সারদা বলে উঠেছিলেন, মার্গশীর্ষ মানে অগ্রহায়ণ মাস। সাধে কি মা সম্পর্কে ঠাকুর বলেছিলেন, ‘ও সারদা, জ্ঞান দিতে এসেছে।’ তাই সারদা মাকে ‘নিরক্ষর গ্রাম্য’ নারী একেবারেই বলা যায় না। হ্যাঁ, তিনি গ্রামীণ ছিলেন ঠিকই, কিন্তু অক্ষরজ্ঞান সম্পন্না শিক্ষিতা ছিলেন।
জয়রামবাটি ছোট গ্রাম হলেও উৎসব আনন্দের অভাব ছিল না। গ্রামের মেয়ে-বউরা অষ্টপ্রহর হরিবাসরে, শীতলাপুজো, কালীপুজো বা দুর্গাপুজোয় একসঙ্গে যেতেন। তাঁদের সঙ্গে বাচ্চারাও থাকত। জয়রামবাটিকে কেন্দ্র করে পাশের ছোট ছোট গ্রামের মহিলারাও মিলিত হতেন। আর এখান থেকে কামারপুকুরের দূরত্ব তো মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। আনুড়ে বিশালাক্ষী দেবী দর্শনে নিজের গ্রামের মেয়েদের সঙ্গে ঠাকুরও যেতেন। আবার শ্যামবাজারে গ্রামে সাত দিন, সাত রাত ঠাকুর নাম-সংকীর্তনে মগ্ন থেকেছেন। যাত্রাগান শোনার জন্য মাদুর কাঁখে করে গ্রামান্তরে দলবেঁধে যেতেন মহিলারা।
এই রকমই সেবার গ্রামের মেয়েরা বনভোজনে মিলিত হয়েছিলেন। শ্যামাসুন্দরী সারদাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে কামারপুকুরের চন্দ্রমণির সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর তৃতীয় পুত্র গদাধর। এই বনভোজনের আসরেই গদাধরের সঙ্গে সারদার প্রথম দেখা। তখন দু’ জনেই বিশেষ করে সারদা একেবারেই শিশু ছিলেন। কিছু বোঝার মতো বয়স হয়নি। কেউ কেউ বলেছেন, এটাই তাঁদের প্রথম অবুঝ দৃষ্টি বিনিময়।
একবার কাশীতে ঠাকুরের দেহাবসানের পর ১৩১৯ সালে মা যখন ছিলেন, সেই সময় বিভূতিবাবু তাঁকে গীতার দশম অধ্যায় পড়ে শোনাচ্ছিলেন, ‘মাসানাং মার্গশীর্ষোঽহং’। এই শ্লোকটি পড়ামাত্র সারদা বলে উঠেছিলেন, মার্গশীর্ষ মানে অগ্রহায়ণ মাস। সাধে কি মা সম্পর্কে ঠাকুর বলেছিলেন, ‘ও সারদা, জ্ঞান দিতে এসেছে।’ তাই সারদা মাকে ‘নিরক্ষর গ্রাম্য’ নারী একেবারেই বলা যায় না। হ্যাঁ, তিনি গ্রামীণ ছিলেন ঠিকই, কিন্তু অক্ষরজ্ঞান সম্পন্না শিক্ষিতা ছিলেন।
জয়রামবাটি ছোট গ্রাম হলেও উৎসব আনন্দের অভাব ছিল না। গ্রামের মেয়ে-বউরা অষ্টপ্রহর হরিবাসরে, শীতলাপুজো, কালীপুজো বা দুর্গাপুজোয় একসঙ্গে যেতেন। তাঁদের সঙ্গে বাচ্চারাও থাকত। জয়রামবাটিকে কেন্দ্র করে পাশের ছোট ছোট গ্রামের মহিলারাও মিলিত হতেন। আর এখান থেকে কামারপুকুরের দূরত্ব তো মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। আনুড়ে বিশালাক্ষী দেবী দর্শনে নিজের গ্রামের মেয়েদের সঙ্গে ঠাকুরও যেতেন। আবার শ্যামবাজারে গ্রামে সাত দিন, সাত রাত ঠাকুর নাম-সংকীর্তনে মগ্ন থেকেছেন। যাত্রাগান শোনার জন্য মাদুর কাঁখে করে গ্রামান্তরে দলবেঁধে যেতেন মহিলারা।
এই রকমই সেবার গ্রামের মেয়েরা বনভোজনে মিলিত হয়েছিলেন। শ্যামাসুন্দরী সারদাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে কামারপুকুরের চন্দ্রমণির সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর তৃতীয় পুত্র গদাধর। এই বনভোজনের আসরেই গদাধরের সঙ্গে সারদার প্রথম দেখা। তখন দু’ জনেই বিশেষ করে সারদা একেবারেই শিশু ছিলেন। কিছু বোঝার মতো বয়স হয়নি। কেউ কেউ বলেছেন, এটাই তাঁদের প্রথম অবুঝ দৃষ্টি বিনিময়।
জয়রামবাটিতে যেমন দেবী সিংহবাহিনী জাগ্রত গ্রামদেবতা, তেমনি শিহড়ের শান্তিনাথ শিবঠাকুর। জয়রামবাটির পশ্চিম প্রান্তের গ্রাম শিহড়ে ছিল সারদার মামার বাড়ি। সেবার শান্তিনাথ শিবের উৎসব উপলক্ষে যাত্রাগান শুনতে মা শ্যামাসুন্দরীর সঙ্গে সারদাও এসেছেন শিহড়ে। এদিকে শিহড় হল ঠাকুরের দিদির শ্বশুরবাড়ি। ছোটবেলা থেকেই ঠাকুরের যাত্রাগান ও সংকীর্তনের প্রতি যে আকর্ষণ ছিল, তা সকলেরই জানা। তিনিও ভাগ্নে হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে বাবা শান্তিনাথের যাত্রাগানের আসরে এসেছেন শোনার জন্য। আসরের একদিকে ছেলেরা আর অপরদিকে মেয়েরা বসেছে।
সারদার পাশে বসে এক মহিলার কী খেয়াল হল, তিনি হঠাৎ কৌতুক করে সারদাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী রে বিয়ে করবি?’ বালিকা সারদাও মাথা নেড়ে তাঁকে সম্মতি জানিয়েছিলেন। এবার মহিলা জানতে চাইলেন যে মা সারদা কাকে বিয়ে করবেন। উল্টো দিকে বসা ছেলেদের দেখিয়ে তিনি বললেন, ‘ওদের কাউকে পছন্দ হয়?’ মাও নিঃসংকোচে গানে ভাবাবিষ্ট ঠাকুরকে হাত বাড়িয়ে দেখিয়ে দিলেন। মহিলারা রসিকতার ছলে হেসে উঠেছিলেন। কিন্তু অলক্ষে নিয়তির নিবন্ধন সেদিন কেউই বুঝতে পারেননি। মায়ের সংসারে নানা কাজে সারদার দিন কাটতে লাগল।
সারদার পাশে বসে এক মহিলার কী খেয়াল হল, তিনি হঠাৎ কৌতুক করে সারদাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী রে বিয়ে করবি?’ বালিকা সারদাও মাথা নেড়ে তাঁকে সম্মতি জানিয়েছিলেন। এবার মহিলা জানতে চাইলেন যে মা সারদা কাকে বিয়ে করবেন। উল্টো দিকে বসা ছেলেদের দেখিয়ে তিনি বললেন, ‘ওদের কাউকে পছন্দ হয়?’ মাও নিঃসংকোচে গানে ভাবাবিষ্ট ঠাকুরকে হাত বাড়িয়ে দেখিয়ে দিলেন। মহিলারা রসিকতার ছলে হেসে উঠেছিলেন। কিন্তু অলক্ষে নিয়তির নিবন্ধন সেদিন কেউই বুঝতে পারেননি। মায়ের সংসারে নানা কাজে সারদার দিন কাটতে লাগল।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২: মেয়েটি যেন গৃহলক্ষ্মী
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৬: মজল আঁখি মজেছে মন, ইমোজি তোদের ডাকল যখন
এ দিকে কামারপুকুরে ঠাকুরকে পাঠশালায় ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু ঠাকুর পাঠ ছেড়ে কুমোর পাড়ায় গিয়ে কখনও মাটি দিয়ে দেব-দেবীর মূর্তি গড়ে পুজো করেন। কখনও বা পালাগানের আসরে ভাবে বিভোর হয়ে রাত-ভর কাটিয়ে দেন। মা চন্দ্রমণি চিন্তিত তাঁর আদরের গদাইকে নিয়ে। ষোলবছর বয়স হয়ে গেল, ছেলের এ কেমন ধারা! সে ছেলে যে আর পাঁচজনের মতো নয়, তা তিনি জানতেন। চন্দ্রমণির স্বামী ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় একবার গয়াতীর্থে গিয়ে স্বপ্নে গদাধারী নারায়ণের দর্শন পান।
স্বপ্নে ভগবান তাঁকে আশীর্বাদ করে বলেন, ‘আমি তোমার পুত্ররূপে আসব। ‘ধর্মপ্রাণ রঘুবীরের ভক্ত ক্ষুদিরাম জ্যোতিষির কাছে জেনেছিলেন যে স্বয়ং নারায়ণের অবতার আসছেন। ১৮৩৬ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি, বাংলার ফাল্গুন মাসে ঠাকুর যখন ভূমিষ্ঠ হলেন, মা-বাবা তখন আনন্দে বিহ্বল। তাহলে কি গদাধর বিষ্ণুই গরীবের ঘরে এলেন! তাঁরা পুত্রকে গদাধর বলেই ডাকতেন।
স্বপ্নে ভগবান তাঁকে আশীর্বাদ করে বলেন, ‘আমি তোমার পুত্ররূপে আসব। ‘ধর্মপ্রাণ রঘুবীরের ভক্ত ক্ষুদিরাম জ্যোতিষির কাছে জেনেছিলেন যে স্বয়ং নারায়ণের অবতার আসছেন। ১৮৩৬ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি, বাংলার ফাল্গুন মাসে ঠাকুর যখন ভূমিষ্ঠ হলেন, মা-বাবা তখন আনন্দে বিহ্বল। তাহলে কি গদাধর বিষ্ণুই গরীবের ঘরে এলেন! তাঁরা পুত্রকে গদাধর বলেই ডাকতেন।
আরও পড়ুন:
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৫১: মারীচমায়ায় কি দিগভ্রান্ত সীতা?
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-২০: অহল্যার শাপমুক্তি ও কিছু প্রশ্ন
ঠাকুরের যখন ছয় বছর বয়স তখনই তাঁর পিতা ক্ষুদিরাম দেহত্যাগ করেন। তাঁর বড়দাদা রামকুমার কলকাতার টোলে কাজ নেন। পরে নিজেরই টোল খোলেন। ভাই গদাধরকে তিনি পড়াবেন বলে কলকাতায় নিয়ে যান। কিন্ত্ত টোলে পড়া ঠাকুরের হয়নি কলকাতার জানবাজারের রানি রাসমণি স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন সমাজের নিয়মে তিনি জাতিতে শূদ্রা ছিলেন বলে কোনও পুরোহিত তাঁর মন্দিরে পুজো করতে চাননি। তখন রামকুমার বিধান দেন যে এই মন্দির রানি যদি তাঁর গুরুদেবকে উৎসর্গ করে দেন, তবে তাঁর মন্দিরে ব্রাহ্মণ পুরোহিতের পুজো করায় আর বাধা থাকবে না। ভবিতব্যের লিখনে পরবর্তী কালে ঠাকুর হলেন রাসমণির কালীমন্দিরের পুরোহিত। তখন তাঁর বয়স কুড়ি বছর।
এদিকে সারদার এখন ছ’বছর বয়স হল। শ্যামাসুন্দরী তাঁর বিবাহের কথা বলেন রামচন্দ্রকে। বাবা তাঁর ছোট ঘরের লক্ষ্মীকে এত তাড়াতাড়ি কাছ-ছাড়া করতে রাজি নন। সারদাকে সারা গ্রামই তাদের লক্ষ্মী বলে মনে করত। মা সার্থকনাম্নী ছিলেন। সারদা বা শারদা বানানভেদে দু’টো নামেই সরস্বতী এবং দুর্গাকে বোঝায়। আবার তিনি শারদলক্ষ্মীও বটে। মায়ের মধ্যে তাই একাধারে তিন শক্তিরই অবস্থিতি ছিল। তখনকার সামাজিক নিয়মে গৌরীদান মহাপুণ্যের কাজ।
এদিকে সারদার এখন ছ’বছর বয়স হল। শ্যামাসুন্দরী তাঁর বিবাহের কথা বলেন রামচন্দ্রকে। বাবা তাঁর ছোট ঘরের লক্ষ্মীকে এত তাড়াতাড়ি কাছ-ছাড়া করতে রাজি নন। সারদাকে সারা গ্রামই তাদের লক্ষ্মী বলে মনে করত। মা সার্থকনাম্নী ছিলেন। সারদা বা শারদা বানানভেদে দু’টো নামেই সরস্বতী এবং দুর্গাকে বোঝায়। আবার তিনি শারদলক্ষ্মীও বটে। মায়ের মধ্যে তাই একাধারে তিন শক্তিরই অবস্থিতি ছিল। তখনকার সামাজিক নিয়মে গৌরীদান মহাপুণ্যের কাজ।
আরও পড়ুন:
লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-৭: গোদারের ব্রেথলেস ও প্যারিসের শঁসেলিজে
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-১৪: রাজনীতিতে নিজের উন্নতি করতে গেলে দেবগুরু বৃহস্পতির মতো মানুষের উপরেও বিশ্বাস করা অনুচিত
দক্ষিণেশ্বরে মা কালীর সন্নিধানে এসে ঠাকুরের মনে কৈশোরের সেই প্রতিমা গড়ে পুজো করার সুপ্ত অনুভূতির স্ফূরণ হতে লাগল। তাঁর মনে এক দিব্যভাবের উন্মাদনা দেখা দিতে লাগল। যা বাইরে থেকে দেখে সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা অসম্ভব। কামারপুকুরে মা চন্দ্রমণির কাছে খবর রটে গেল যে ঠাকুর উন্মাদ হয়ে যাচ্ছেন। চিন্তিত হয়ে চন্দ্রমণি ঠাকুরের মেজভাই রামেশ্বরকে দক্ষিণেশ্বরে পাঠালেন। রামেশ্বর মায়ের কথা বলে ঠাকুরকে কামারপুকুরে নিয়ে গেলেন।
প্রথম কিছুদিন ঠাকুরের ওপরে গ্রাম্য ঝাড়-ফুক প্রভৃতির প্রয়োগ করা হল। তাতে কোন ফল না পাওয়াতে সকলে পরামর্শ দিল, ঠাকুরের বিয়ে দেওয়ার। সংসারী হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। চন্দ্রমণি তাই লোক লাগিয়ে পাত্রী খুঁজতে লাগলেন। ঠাকুর বুঝতে পেরে বললেন, ‘তোমরা পাত্রী খুঁজছ? দেখ গিয়ে জয়রামবাটিতে, রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ঘরে আমার জন্য পাত্রী কুটোবাঁধা আছে।’
গ্রামাঞ্চলে একটি প্রাচীন প্রথা আছে, মাচার লতায় ফল ধরলে গৃহস্থ তার প্রথম ফলটিকে দেবতাকে উৎসর্গ করার জন্য কুটো বেঁধে চিহ্নিত করে রাখে। ঠাকুর বলতে চেয়েছেন যে, মা সারদাও তার জন্য উৎসর্গীকৃত হয়েই আছেন। বেলুড়মঠ স্থাপিত হওয়ার পর ঠাকুরের পূত ভস্মাধারকে স্বামীজি মাথায় করে নিয়ে গিয়ে সমাধি মন্দিরে স্থাপন করেছিলেন। স্বামীজি একে বলতেন ‘আত্মারামের কৌটো’। যিনি আত্মানন্দে সদানন্দ, তাঁর জন্যই তো স্বয়ং পরমা প্রকৃতি কুটোবাঁধা থাকবেন।—চলবে।
প্রথম কিছুদিন ঠাকুরের ওপরে গ্রাম্য ঝাড়-ফুক প্রভৃতির প্রয়োগ করা হল। তাতে কোন ফল না পাওয়াতে সকলে পরামর্শ দিল, ঠাকুরের বিয়ে দেওয়ার। সংসারী হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। চন্দ্রমণি তাই লোক লাগিয়ে পাত্রী খুঁজতে লাগলেন। ঠাকুর বুঝতে পেরে বললেন, ‘তোমরা পাত্রী খুঁজছ? দেখ গিয়ে জয়রামবাটিতে, রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ঘরে আমার জন্য পাত্রী কুটোবাঁধা আছে।’
গ্রামাঞ্চলে একটি প্রাচীন প্রথা আছে, মাচার লতায় ফল ধরলে গৃহস্থ তার প্রথম ফলটিকে দেবতাকে উৎসর্গ করার জন্য কুটো বেঁধে চিহ্নিত করে রাখে। ঠাকুর বলতে চেয়েছেন যে, মা সারদাও তার জন্য উৎসর্গীকৃত হয়েই আছেন। বেলুড়মঠ স্থাপিত হওয়ার পর ঠাকুরের পূত ভস্মাধারকে স্বামীজি মাথায় করে নিয়ে গিয়ে সমাধি মন্দিরে স্থাপন করেছিলেন। স্বামীজি একে বলতেন ‘আত্মারামের কৌটো’। যিনি আত্মানন্দে সদানন্দ, তাঁর জন্যই তো স্বয়ং পরমা প্রকৃতি কুটোবাঁধা থাকবেন।—চলবে।
* আলোকের ঝর্ণাধারায় (sarada-devi): ড. মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় (Dr. Mousumi Chattopadhyay), অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, বেথুন কলেজ।