বৃহস্পতিবার ৮ মে, ২০২৫


মা সারদা।

ভক্ত আর ভগবানের মধ্যে চিরকাল লীলা চলে। তবে ‘নরলীলা নরবৎ’ হয়ে থাকে। তাই বয়সের ধর্মে মা সারদার ভগ্নপ্রায় মানবদেহ ক্রমে কাজের চাপে ভেঙে পড়তে লাগল। তাঁর জীবনকালের শেষ কিছু বছর যেমন তিনি গভীরভাবে নিজেকে কর্মে আবদ্ধ রেখেছিলেন, তেমনই সকলের প্রতি তাঁর অবিরাম করুণাধারা বর্ষিত হয়েছিল। একদিকে তাঁর আত্মীয়দের ও আশ্রিতের সংখ্যা বেড়েছে, অন্যদিকে তাঁর আশ্রয়প্রার্থী ভক্তদের ভিড় লেগেই আছে। এমনকি রাতেও তিনি ভালভাবে বিশ্রামের সময় পেতেন না।
ভক্তদের কল্যাণে সারা রাত জপ আর ধ্যানে অতিবাহিত করতেন। ইন্দুভূষণ সেনগুপ্তকে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমার চিন্তা কি বাবা, তুমি আমার অন্তরে রয়েছ, তোমার জন্যে আমিই কচ্চি’। তাঁর নিজের শরীর দেশে থাকার সময় ভয়ংকর ম্যালেরিয়ায় বারবার সংক্রামিত হয়ে আরও শিথিল ও জীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া নিজের আত্মীয়বিয়োগের আঘাতও তাঁকে সহ্য করতে হয়েছিল। ১৩২৩ সালে শ্রীমার দেহ আমবাতে আক্রান্ত হয়। এক এক সময়ে তা অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়ে উঠত। তার জন্য তেল মালিশ করতে হত। টানা তিনবছর তিনি এই অসুখে কষ্ট পেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৬: মা সারদার প্রথম মন্ত্রশিষ্যা ছিলেন দুর্গাপুরীদেবী

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৪৮: রান্নার জ্বালানি নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ?

এর পরের বছর ১৩২৪ সালের বিশে পৌষ শ্রীমার জন্মতিথির দিন তাঁর সামান্য জ্বর দেখা দেয়। চিকিৎসা করা সত্ত্বেও সেই জ্বর প্রবলাকার ধারণ করে তাঁর শরীরের অবস্থা সংকটজনক করে তোলে। পাঁচই মাঘ স্বামী বিশ্বেশ্বরানন্দের তার পেয়ে শরৎ মহারাজ ডাক্তার কাঞ্জিলাল, ডাক্তার সতীশ চক্রবর্তী, গোলাপমা, যোগীনমা, ভূমানন্দ মহারাজ, দয়ানন্দ মহারাজ ও সরলাকে নিয়ে জয়রামবাটি যান। ডাক্তার কাঞ্জিলালের চিকিৎসায় মা সারদা সুস্থ হয়ে পনেরই মাঘ পথ্য গ্রহণ করেন। তিনি কলকাতায় আসতে রাজি না হওয়ায় শরৎ মহারাজ তাঁর সেবার জন্য সরলাকে জয়রামবাটিতে রেখে যান।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৫: এ কেমন রঙ্গ জাদু, এ কেমন রঙ্গ…/৩

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১৪: ঠাট্টা করলে যে বুঝতে পারত, ঠিক সময়ে হাসতে পারত

ফাল্গুন মাসের শেষে কোয়ালপাড়া আশ্রমে গিয়ে শ্রীমা আবার জ্বরে আক্রান্ত হন। সেই জ্বরও ক্রমে প্রবল হয়ে ওঠে। বাইশে চৈত্র কোয়ালপাড়া থেকে তার পেয়ে শরৎ মহারাজ সেদিনই ডাক্তার কাঞ্জিলাল, ভৃমানন্দ মহারাজ ও পরমেশ্বরানন্দ মহারাজকে সেখানে পাঠান। আর তিনি নিজে অত্যাবশ্যক কাজগুলোর যথা সম্ভব শীঘ্র ব্যবস্থা করে ডাক্তার সতীশ চক্রবর্তী আর যোগীনমাকে নিয়ে কোয়ালপাড়া রওনা হন।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১২: প্রশাসক রামচন্দ্রের সাফল্য কী আধুনিক কর্মব্যস্ত জীবনে সফল প্রশাসকদের আলোর দিশা হতে পারে?

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৫: সর্বত্র বরফ, কোত্থাও কেউ নেই, একেবারে গা ছমছম করা পরিবেশ

বিষ্ণুপুরে একটি ঘোড়ার গাড়ি জোগাড় করে সেই গাড়িতে তিনি চৌঠা বৈশাখ কোয়ালপাড়া পৌঁছোন। আর তার পরদিনই শ্রীমার জ্বর ছেড়ে যায়। এই জ্বরে শ্রীমা দুঃসহ কষ্ট ভোগ করেছিলেন। জ্বরের ঘোরে তিনি মুখে প্রায়ই বলতেন, ‘কই শরৎ এল, আহা, তার হাত কি ঠান্ডা, আমার সব দেহ জ্বলে গেল’। জয়রামবাটিতে ফিরে বিভূতিবাবুর সঙ্গে শ্রীমার কথা হয়, ‘বিভূতি, তুমি আমাকে বারণ কল্লে না, তুমি বারণ কল্লে তো আমি যেতুম না’। আমজেদ বলছিল, ‘বিভূতিদাদা শুনলেন, টিকটিকি টক্ টক্ কল্ল, অথচ তিনি আপনাকে বারণ কল্লেন না’। ‘না মা, আমি শুনিনি’, বিভূতিবাবু বলেন।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৭: পাতি সরালি

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭৭: পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যাঁর জীবনের আকাশে কখনও শত্রুতার মেঘ জমেনি

শ্রীমা বলেন, ‘আমজেদ বলছিল তুমি শুনেচ। তুমি বারণ কল্লে আমি যেতুম না, আমার এত কষ্ট হত না’। কোয়ালপাড়া থেকে তিনি পনেরই বৈশাখ জয়রামবাটি যান এবং বাইশে বৈশাখ সেখান থেকে শরৎ মহারাজের সঙ্গে 24শে রাত আটটার পর কলকাতায় আসেন। মা সারদা কোয়ালপাড়া থেকে বিষ্ণুপুর অবধি ঘোড়ার গাড়িতে আসেন।—চলবে।
* আলোকের ঝর্ণাধারায় (sarada-devi): ড. মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় (Dr. Mousumi Chattopadhyay), অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, বেথুন কলেজ।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content