ঋষিকেশ মুখোপাধ্যায় নির্দেশিত ‘বেমিসাল’ ছবির ‘এ রি পবন ঢুন্ডে কিসে তেরা মন’ গানটিতে আমরা পঞ্চমের সৃষ্টির মধ্যে কোথাও যেন শচীনকর্তাকে খুঁজে পাই। পঞ্চম এই গানটির মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছেন একটি চরম সত্যি। সেটি হল তিনি যতই স্বতন্ত্রভাবে নিজের একটি ট্রেন্ড তৈরি করে থাকুন না কেন, বাবার থেকে পাওয়া সংগীতশিক্ষা তিনি ভুলে যাননি। তাঁর সুরসৃষ্টিতে বাবার প্রভাব সদা বিরাজমান। তা না হলে আনন্দ বকশির লেখা এই গানটিতে রাগের অবলম্বনে এহেন মিষ্টি একটি সুর আমরা পেতাম কীভাবে? শুরু থেকে শেষ, গানটি সম্মোহিত করে রাখে আমাদের।
গানটিতে ছন্দের দ্বায়িত্বে থাকা দুটি বাদ্যযন্ত্র তবলা এবং মাদল, নিজেদের কাজ করে চলে। ভায়োলিন সেই ছন্দে যোগ করে এক সুগভীর আবেগ। বিশেষ কিছু অংশে সেতার এবং ১২ স্ট্রিং গিটার সুসজ্জিত করে তোলে গানটিকে। এবংতারসঙ্গেলতা মঙ্গেশকরের আবেগতাড়িত কণ্ঠ। গানটি শোনার পর বেশ কিছুক্ষণ কানে বাজতে থাকে সুরটি। নিজের মনে গুনগুন করতে ইচ্ছে করে।
‘কিসি বাত পর ম্যায় কিসিসে খাফা হুঁ’ —নেশাতুর কণ্ঠে কিশোরের সেই গান। দৃশ্যে লিপ দিচ্ছেন অমিতাভ বচ্চন। হাতে সুরার পাত্র। ছন্দ ধরে রাখছে তবলা এবং আকস্টিক স্প্যানিশ গিটার। ফিলারে সন্তুর এবং মাঝে মধ্যে ১২ স্ট্রিং গিটার। আর সেই চিরপরিচিত ‘ম্যানলি ভয়েসের’ অধিকারী কিশোর উপস্থাপিত করছেন গানটি। এক কথায় অনবদ্য।
‘কিসি বাত পর ম্যায় কিসিসে খাফা হুঁ’ —নেশাতুর কণ্ঠে কিশোরের সেই গান। দৃশ্যে লিপ দিচ্ছেন অমিতাভ বচ্চন। হাতে সুরার পাত্র। ছন্দ ধরে রাখছে তবলা এবং আকস্টিক স্প্যানিশ গিটার। ফিলারে সন্তুর এবং মাঝে মধ্যে ১২ স্ট্রিং গিটার। আর সেই চিরপরিচিত ‘ম্যানলি ভয়েসের’ অধিকারী কিশোর উপস্থাপিত করছেন গানটি। এক কথায় অনবদ্য।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৪২: দো নেয়না আউর এক কাহানি, থোড়া সা বাদল থোড়া সা পানি…
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৬: ভয়ের না ‘অভয়ের বিয়ে’
প্রঙ্গত, গুলজার যেমন ছিলেন পঞ্চমের পরম বন্ধু, আনন্দ বকশির সঙ্গেও আরডি-র সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত নিবিড়। মেলোডি কিংয়ের সঙ্গে দুজনেরই ‘ওয়েভ লেন্থ ম্যাচিং’-এর বিষয়টি ছিল চোখে পড়ার মতো। তাই যখন ‘এক রোজ ম্যায় তরফ কর’ গানটি লিখে বকশি সাহেব পঞ্চমকে সুরারোপ করতে বলেন, তখন পঞ্চম একটি ধামাকেদার সুর তৈরি করে শোনান তাঁকে। আনন্দবকশি তো যারপরনাই খুশি। রিহার্সালের পর ফাইনাল রেকর্ডিং করানো হয় কিশোরকে দিয়ে। লিপ দেন অমিতাভ। ইন্টারলুডটিকে আপ-টেম্পো রেখে এবং কিছুটা দীর্ঘায়িত করে শুরু হয় গানটি। তারপর রাজত্ব করে চলেন কিশোর। তাঁর কণ্ঠের সঙ্গে আবহ সঙ্গীত মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়ে গানটি একটি ঝড়ের রূপ নেয়।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৫০: কুষ্টি বিচার, না কি রক্ত বিচার! জরুরি কোনটা?
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৮: সুন্দরবনের তিন গাজী—রক্তান গাজী, তাতাল গাজী ও শতর্ষা গাজী
কাশ্মীরের অপার্থিব সৌন্দর্যের রসাস্বাদন কোনও গানের মাধ্যমে করতে চাইছেন? কী ভাবছেন? সেটি কী করে সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। কারণ সেই সুরের জন্ম পঞ্চমের হাতে। গানটি যদি চোখ বন্ধ করে শোনা যায়, মানস চোখে ভেসে উঠবে সবুজ ঘাসের গালিচা, নানা রঙের ফুলের মেলা, মাথার উপরে থাকা নীল আকাশ, বরফের চাদরে ঢেকে থাকা পর্বতশৃঙ্গ, পাথরের বাধা পেরিয়ে বয়ে চলা জলস্রোত, শান্ত হ্রদের জলে ইতিউতি ভেসে চলা শিকারা, স্থানীয় পোশাকে আবৃত সারল্যে ভরা কোনো কাশ্মীর-বাসিনী এবং চেনা অচেনা পাখিদের কলকাকলি। কোন গানের কথা বলছি? গানটি হল ‘কিতনি খুবসুরত ইয়ে তাসভির হ্যায়, ইয়ে কাশ্মীর হ্যায়‘। তবলা, সন্তুর, ভায়োলিনে সাজানো পাহাড়ি ধুন, তার সঙ্গে লতা মঙ্গেশকর, কিশোর কুমার এবং সুরেশ ওয়াডকার। প্রসংশার ভাষা খুঁজে পাওয়া সত্যিই খুব কঠিন।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, শক্তিরূপেন সংস্থিতা, পর্ব-৩: মালতীর কথা…
বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল পর্ব-২: পর্তুগালের কালো চিতা
আসলে আমাদের কান এবং মন এই দুটিই কিন্তু সুরের পিয়াসী। যে সুর যত মাটির কাছাকাছি, যত সহজসরল এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনুভূতিকে তুলে ধরতে সক্ষম, সেই সব সুরের প্রতিই বেশি করে আমাদের আকর্ষণ তৈরি হয়। আর তাই, আজকের দিনেও পঞ্চমের সুর একই রকম প্রাসঙ্গিক। কারণ সময় বদলেছে ঠিকই, কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের অনুভূতিগুলি একই থেকে গিয়েছে। সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা, অভিমান, প্রেম, বিচ্ছেদ সবই আজকেও একইরকম সত্যি। এই প্রতিটি অনুভূতির ওপর আরডি বর্মণের কোনও না কোনও সুর আপনি ঠিক খুজে পাবেন। কে বলতে পারে, নিজের জীবনের অনুভূতিগুলিই হয়তো পঞ্চমকে তাঁর কর্মজীবনে এতখানি সাফল্য এনে দিয়েছে। তিনি হয়তো তাঁর ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলিকে কাজে লাগিয়ে সুরের মাধ্যমে আমাদের মন জয় করেছেন। তাই যতদিন অনুভূতিগুলি বেঁচে থাকবে, ততদিন বেঁচে থাকবেন রাহুল দেব বর্মণ।—চলবে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।