ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
মিত্রভেদ
ভগবান নারায়ণ বুঝলেন, গরুড় ভীষণভাবে কুপিত এবং অপমানিত। নেহাৎ নারায়ণের প্রতি শ্রদ্ধায় সে অবনত— না হলে এতক্ষণে হয়তো সমুদ্র শুকিয়ে দিয়ে সৃষ্টি বিপর্যয় ঘটিয়ে ফেলতো। তাই কিছু একটা করা প্রয়োজন। সবক্ষেত্রে নির্লিপ্ত হয়ে থাকা যায় না। ভগবান স্মৃত হেসে বললেন, হে বৈনতেয়! আপনি যথার্থই বলেছেন। শাস্ত্রে বলে—
তেন লজ্জাঽপি তস্যোত্থা ন ভৃত্যস্য তথা পুনঃ।। (মিত্রভেদ, ৩৫৪)
অর্থাৎ ভৃত্য যদি কোনও অপরাধ করে তার দণ্ড স্বামীকেও পেতে হয়, এইটাই জগতের নিয়ম। তাই তাকে কেউ শাস্তি দিলে লজ্জায় স্বামীর মুখই নত নয়, ভৃত্যের হয়তো কিছুই এসে যায় না। সবসময়েই রাজার অপমান তাঁর অনুচরের জন্যেই হয়ে থাকে। অনুচরদের দোষেই রাজারা অপমানিত হয়। তাই আপনি আমার সঙ্গে সমুদ্রের কাছে চলুন। প্রথমে তার কাছ থেকে ডিমগুলিকে ফিরিয়ে এনে টিট্টিভ দম্পতীকে প্রসন্ন করে তবে আমরা অমরাবতী যাব।
১২ কাহিনি সমাপ্ত
দমনক কাহিনি শেষ করে বললে, সেই জন্যেই আমি বলেছিলাম যে ব্যক্তি শত্রুর পরাক্রমকে না বুঝেই যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়ে যায় সে নিজে বলবান হলেও শত্রুর কাছে সে নিশ্চিতভাবে পরাজিত হয়। সমুদ্রকে কি আপনার কম বলবান মনে হয়, কিন্তু বাহুবলেই শুধু যুদ্ধ জয় করা যায় না। তার জন্য চাই মিত্রশক্তি। কার সঙ্গে কোনও ক্ষমতাশালী ব্যক্তির অন্তরঙ্গ সম্পর্ক কতটা নিবিড়, যুদ্ধজয়ের ক্ষেত্রে সে সব দিকও বিবেচনা করতে হয়। তাই বলে উদ্যোম ত্যাগের কথা আমি বলছি না। ঝগড়ায় যেতে হলে সবদিন বিচার-বিবেচনা করেই অগ্রসর হওয়া উচিত।
দমনকের কথাগুলোকে চিন্তাভাবনা করে তাকেই আবার সঞ্জীবক জিজ্ঞাসা করলে, ওহে মিত্র! তাহলে আপনিই বলুন কীভাবে আমি বুঝবো যে সে আমার প্রতি কুপিত বা আমাকে হত্যা করবার জন্য কোনও বদমতলব আঁটছে। এতকাল পর্যন্ত যতদিন গিয়েছে ততই সে আমার প্রতি প্রসন্নতা দেখিয়েছে। প্রতিদিন আমাদের দুজনের মধ্যে স্নেহবন্ধন নিবিড় হয়েছে। কোনও দিনই আমার প্রতি তাঁকে বিরূপ হতে দেখিনি। তাই আপনিই বলুন কী লক্ষণ দেখে আমি তাঁকে হত্যা করবার কথা চিন্তা করবো?
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৪২: রাজকোষে সঞ্চিত সোনা-রূপা-ধান্যাদি সবই প্রজাবর্গের, রাজার ব্যক্তিগত নয়
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৭: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—বাইন ও গর্জন
আত্মানং সততং রক্ষেদ্ দারৈরপি ধনৈরপি।। (ঐ, ৩৮৭)
অর্থাৎ মানুষের উচিত ভবিষ্যৎ বিপদ-আপদের কথা চিন্তা করে ধনসঞ্চয় করা; প্রয়োজনে সঞ্চিত সেই অমূল্য ধনসম্পদ দিয়ে হলে স্ত্রীকে রক্ষা করা উচিত। কিন্তু সেই সঞ্চিত ধনসম্পদ হোক বা স্ত্রী, নিজেকে বাঁচাতে প্রয়োজনে সবকিছুই ত্যাগ করতে হবে। সাধে কি বলে, “আপনি বাঁচলে বাপের নাম!” তাই বলবান শত্রুর বিষ নজরে পড়লে দুর্বলের উচিত নয় বিদেশে আত্মগোপন করা কিংবা তাঁর বশ্যতা মেনে নেওয়া। আমার তো মনে হয় এই পরিস্থিতিতে আপনার পালিয়ে যাওয়াটাই শ্রেয়।
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২১: গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী—এক শক্তির গল্প
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬১: মহাভারতের রাক্ষসরা কী আজও বর্তমান? প্রসঙ্গ— বকরাক্ষসবধ
দমনক নানা ভাবে আকারে-ইঙ্গিতে কিছুটা স্পষ্টভাবেই বৃষ সঞ্জীবককে প্রাণে বাঁচতে সিংহ পিঙ্গলকের বিচরণ ক্ষেত্র থেকে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে বলল। এরপর দমনক বৃষ-সঞ্জীবকের মনে সিংহ-পিঙ্গলকের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে অবশেষে ফিরে এল করটকের কাছে। দমনককে আসতে দেখেই চিন্তিত করটক তাঁর কাছে গিয়ে বলল— “ভদ্র! কিং কৃতং তত্র ভবতা?” আপনি কি কি করলেন সেখানে আমাকে সবটা বলুন।
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৪: সারদা মায়ের মানসিক দৃঢ়তা
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৭: কবির জন্মদিনে প্রিয়জনের উপহার
র্দৈবং হি দৈবমিতি কাপুরুষা বদন্তি।
দৈবং নিহত্য কুরু পৌরুষমাত্মশক্ত্যা
যত্নে কৃতে যদি ন সিধ্যতি কোঽত্র দোষঃ।। (ঐ, ৩৯২)
যে পুরুষ সিংহের ন্যায় পরাক্রমী এবং উদ্যোমী তার কাছে ভাগ্যলক্ষ্মী স্বয়ং প্রকটিত হোন আর ভাগ্যের উপর ভরসা তো কেবল কাপুরুষেরাই করে। ভাগ্যের উপর দোষ দিয়ে কোন কাজেই তারা উদ্যোগী হয় না; সব সময়েই তারা ভয় পায় ভাগ্য বিপর্যয়ের। তাই ভাগ্যের উপর ভরসা না করে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে পুরুষার্থ প্রতিষ্ঠার চেষ্টাতেই নিজেকে মগ্ন রাখা উচিত। নিজের উদ্দেশ্য পূরণের চেষ্টা মানুষকে নিজেকেই জন্য করতে হয়; আর চেষ্টা করেও যদি তাতে অসফল হয় তাতে লজ্জার কিছুই নেই, বরং চেষ্টা না করাটাই কাপুরুষতা। আমি অন্তত দু’জনের মধ্যে ভেদ ঘটাবার চেষ্টাটা করলাম। এ বার সেটা সফল হল কি হল না সেটা সময় বলবে।—চলবে।