বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

।। লোভ ও পাপ।।

অর্ক তখন গোয়াতে গিয়েছে এরকমই কোন একটা কনফারেন্সে। বম্বে গোয়া অজন্তা ইলোরা করে লম্বা ট্যুর। অর্ক যেদিন কলকাতার বাইরে গেল সেই দিনই সন্ধেবেলা নিলয় সরকার বলে এক ভদ্রলোক বরানগর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তার অসুস্থ স্ত্রী মনিকাকে নিয়ে দেশপ্রিয় পার্কের কাছে তার ক্লিনিকে এসে হাজির। দিন চারেক আগে অর্ক তার স্ত্রী মনিকার অপারেশন করেছে। অপারেশনের পর দু’ দিন হাসপাতালের রেখে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল। রাত থেকে তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা। ডাক্তারবাবু ব্যথা কমার ওষুধ দিয়েছিলেন, কিন্তু তাতে কমছে না।

ডাক্তারবাবুর ক্লিনিক থেকে জানানো হয়েছে তিনি কলকাতার বাইরে দিন দশের পর ফিরবেন। বরানগরের এক ডাক্তারবাবুকে দেখিয়েছিল। তিনি সন্দেহ করেছিলেন অপারেশন থেকেই কোনও সমস্যা। ভালো করে দেখে বলেছেন কলকাতায় নিয়ে এসে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করাতে হবে তবে তার আগে যে ডাক্তারবাবু অপারেশন করেছেন বা সেই নার্সিংহোমে কথা বলে নিতে। স্ত্রীকে নিয়ে নার্সিংহোমে গিয়েছিল। বলেছেন, ডাক্তারবাবু নেই। তবে তারা ইচ্ছে করলে তাঁর স্ত্রী ডাঃ সানন্দা দাশগুপ্তকে একবার দেখিয়ে নিতে পারে। তিনিও বিখ্যাত গাইনি।
সানন্দা, গন্ডগোলটা আন্দাজ করতে পারল। শহরতলীর ডাক্তারবাবু বুদ্ধিমান। ব্যথাটা যে অপারেশন থেকেই আন্দাজটা সঠিক করেছেন। তখন আজকের মতো শহরতলির অলিতেগলিতে ইউএসজি চালু হয়নি। কলকাতার নামে ক্লিনিক বা হাসপাতালেই এ ব্যবস্থা ছিল। সেই ডাক্তার বাবুর সন্দেহ মনিকাকে দেখে ব্যথার ধরন আন্দাজ করেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি পরামর্শ দিল। তখন হাসপাতালে সিট পাওয়া মুশকিল। উদ্ভ্রান্ত নিলয় সরকার মধ্যবিত্ত ব্যাংক চাকুরে। স্ত্রীর কষ্ট লাগবের জন্য সে মরিয়া। আপনি যা করবার আজই করুন যত খরচ হয় যে নার্সিংহোম লাগে আমি ব্যবস্থা করব।

সানন্দা শহরের এক নামী নার্সিংহোমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সব ব্যবস্থা করল। পেশেন্টের ইউএসজির স্ক্রিনের ছবি দেখেই ওটি রেডি করতে বলল। অর্কপ্রভরা বম্বে পর্যন্ত প্লেনে গিয়ে গোয়া সম্ভবত ট্রেনে যাবে। বম্বেতে কোনও হোটেলে থাকবে সেটা সানন্দা জানে না। তবু যে কোম্পানি এইসব ব্যবস্থা করছে তাদের কাছে খবর দিয়েছিল অর্ককে মেসেজ দেবার জন্যে। অর্ক হয়তো খবরটা পায়নি বা পেয়েও ভেবেছে জরুরি কিছু নয় পরে কথা বলবে।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং, ২য় খণ্ড, পর্ব-২২: অ্যাপেনডিক্সের ব্যথা জানান দিল, শীঘ্রই অস্ত্রোপচার না করলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-২০: জীবন্ত লাশ?

সানন্দার এখন এসব ভাবার সময় নেই। কদিন আগে হওয়া অপারেশনের জায়গাটা আবার খোঁচাখুঁচি করতে গিয়ে খারাপ লাগছে। কিন্তু কোনও উপায় নেই। অপারেশনে মন না থাকার ফলে পড়ে থাকা তুলোর টুকরোটা পুঁজ রক্ত মিলে একটা পিণ্ড হয়ে গিয়েছে। সেটা বার করতে না পারলে পেশেন্টের জীবন সংশয় হতে পারে। সানন্দার হাতে পড়ে মনিকা সে যাত্রায় রক্ষা পেল। কিন্তু আরও মনিকা বা নিলয় সরকারকে এই ধরনের চূড়ান্ত গাফিলতি থেকে বাঁচানোর জন্য সানন্দা সেদিন একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিল। রাত বারোটার পর অপারেশান থিয়েটার থেকে বেরিয়ে পাশের ডাক্তারের চেম্বারে একা নিলয় সরকারকে ডেকে পাঠালো।

— মণি মানে মণিকা কেমন আছে? ও ঠিক আছে? ভালো হয়ে যাবে তো?
সানন্দা পেন দিয়ে টেবিলে রাখা সাদা কাগজে আঁকি-বুকি কাটতে কাটতে হঠাৎ মুখ তুলে নিলয়ের দিকে তাকাল।

— চিন্তা করবেন না। আপনার স্ত্রী ভালো আছেন। উনি ভালো হয়ে যাবেন। একবার অপারেশন হয়েছে। জায়গাটা কাঁচা ছিল। আবার কাটাকাটি করতে হয়েছে। উপায় ছিল না। তাই এখন ওকে একটু কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। আমি যদি এখন আপনাকে বলি আপনি বাড়িতে গিয়ে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ুন। আপনি সেটা পারবেন না। নিচে লবিতে পেশেন্ট পার্টির থাকার ব্যবস্থা আছে। আপনি সেখানে অপেক্ষা করুন। ভয় পাবার মতো কিছু নেই।

আমি যে প্রেসক্রিপশনটা লিখেছি ওতে আমার ফোন নম্বর আছে। ক্লিনিকের নয়, আমার বাড়ির নম্বর। বিছানার পাশে ফোন আছে। রাতে এখান থেকে ডাক্তার বাবুদের বলা আছে কোনও অসুবিধা হলে ওরা আমাকে জানাবেন। কোনওভাবে আপনি যদি মনে করেন যে, ওরা খবরটা দেননি অথচ আমাকে খবরটা দেওয়া দরকার সরাসরি আমাকে ফোন করবেন সে যত রাতই হোক।
আরও পড়ুন:

অজানার সন্ধানে: ‘বঙ্গীয় বিশ্বকোষ’ প্রণেতা হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন রবীন্দ্রনাথের প্রিয়পাত্র

বাস্তুবিজ্ঞান, পর্ব-২১: বাস্তু মতে, বাড়ির সবার শোয়ার ঘর কোন দিকে হলে ভালো? কোন দিকেই বা থাকে ঠাকুর ঘর?

তবে আমার বিশ্বাস তার কোনও প্রয়োজন হবে না। আপনি কিছু খাননি। এত রাতে খাবার বলতে ক্যান্টিনে হয়তো একটু কেক দুধ এসবই পাবেন। একটু খেয়ে নিয়ে এখানেই অপেক্ষা করুন। কাল সকাল আটটায় আমি এসে আপনার স্ত্রীকে দেখে যাব।

— ঠিক কী হয়েছিল ওর? তলপেটে এত ব্যথা কেন হচ্ছিল?

— আপনার মনে অনেক প্রশ্ন। খুব স্বাভাবিক। এসব উত্তর আছে এই সাদা খামটায়। তবে আজ নয় কাল আপনার স্ত্রীর জ্ঞান ফিরলে তখন আমি আপনাকে সবটা বলব। কিন্তু আজ আপনাকে একটা কথা দিতে হবে। আমি যা যা বলবো যেমন ভাবে বলবো আপনাকে ঠিক তেমনভাবে সেই কাজগুলো করতে হবে। মোটা কাগজের সাদা খামটা সানন্দা তার ব্যাগে নেয়।

— ম্যাডাম আপনি ভগবান। আপনি না থাকলে মনিকার যে কি হতো?

— ভগবান এত সহজে সামনে আসেন না নিলয়বাবু। তবে সৎ মানুষকে ভগবান সবসময় বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। তাই তিনি এমন একটা ঘটনা ঘটালেন যখন আপনার আগের ডাক্তারবাবু কলকাতায় নেই। এতই যন্ত্রণা হল যেটা পেন কিলারে কমল না। আপনি ভয় পেয়ে বাড়ির কাছে ডাক্তারবাবুর কাছে গেলেন। তিনি সঠিকভাবেই কী ঘটেছে সেই ব্যাপারটা আন্দাজ করলেন। তিনি আছেন বলেই ওই ডাক্তারবাবু একটুও সময় নষ্ট না করে আপনাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীকে কলকাতার নার্সিংহোমে যেখানে অপারেশন হয়েছিল সেখানে পাঠিয়েছিলেন। তিনি আছেন বলেই নার্সিংহোম থেকে অন্য কোথাও না পাঠিয়ে আমার কাছে পাঠানো হয়েছিল। এবার আমি উঠি গিয়ে একটু বিশ্রাম করব।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২: চলমান সুন্দরবন

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৫: আমাদের নাকি রোজই চুল পড়ে!

পরদিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ মনিকার জ্ঞান ফিরে এল। ওষুধের ঘোরের মধ্যে ছিল। কিন্তু তখন সে ক্লিনিক্যালি স্টেবল। হার্ট পালস ব্লাডপ্রেশার ঠিকঠাক। আবার নিলয় সরকারকে ওয়ার্ড-লাগোয়া ডাক্তারের চেম্বারে ডেকে পাঠাল সানন্দা। স্ত্রীর জ্ঞান ফিরেছে নিলয়কে চিনতে পেরেছে ভীষণ খুশি নিলয়। তার চেহারা মুখ চোখ দেখেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। তাই সানন্দা কিছু বলবার আগেই, নিলয় বলল—

— কাল আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়নি যে আপনার চার্জ কত? আসলে আমি এত ভয় পেয়ে গেছিলাম।

— ভয় পাওয়াটাই তো স্বাভাবিক। তাই কাল এসব কথা আমিও তুলিনি। ভিজিটের কথা বলব বলেই তো আজ সকালে ডেকে পাঠালাম। ওই কাল যেটা বলছিলাম আমার ভিজিটের ব্যাপারে কিন্তু আমি খুব কড়া। যা চাইবো যতটা চাইবো ঠিক ঠিক দিতে হবে। রাজি তো?

— আজ্ঞে হ্যাঁ রাজি।

— আপনাকে একটা পুলিশ কেস করতে হবে।

ঘরের মধ্যে একটা বোমা ফাটলেও নিলয় সরকার এতটা ঘাবড়ে যেত না

— মানে?

— মানে একটা পুলিশ কেস করবেন আপনার আগের ডাক্তার বাবু যিনি আপনার স্ত্রীর অপারেশন করেছেন তার বিরুদ্ধে।

— আপনি কি বলছেন আমি কিছু।

—আমার বলা সম্পূর্ণ হয়নি। ওই আগের নার্সিং হোম যে থানায় আপনার সঙ্গে আমি সেই থানায় যাব। এই নার্সিং হোমে আগের ভর্তির, অপারেশনের সব কাগজপত্র নিয়ে, এখানে আবার ভর্তি অপারেশন সেইসব কাগজ দেখিয়ে এফআইআরটা ওখানেই করতে হবে। কাল আপনাকে যে খামটা দেখিয়েছিলাম এই যে। এইটার মধ্যে এই যে প্লাস্টিক ব্যাগটা দেখছেন। যার মধ্যে রক্তমাখা একটা গোল বলের মতো। এইটা ছিল আপনার স্ত্রীর ইউটেরাস মানে জরায়ুতে। আগের ডাক্তার বাবু যিনি আপনার স্ত্রীর ইউটোরিয়াসের সিস্ট অপারেশন করেছিলেন তার গাফিলতিতে কিছুটা তুলো ওখানে পড়েছিল। এটা তো শরীরের অংশ নয়, তাই ওখানে ইনফেকশান হচ্ছিল। তাই অত ব্যথা। এটা নিয়ে গিয়ে দেখাব।তবে এটা এভিডেন্স। হাতছাড়া করা যাবে না। মেডিকেল কাউন্সিলে আপনি এটার ভিত্তিতেই কমপ্লেন করবেন। আমি গাইড করব। —চলবে।

ছবি সৌজন্যঃ সত্রাগ্নি।

 

বসুন্ধরা এবং… ২য় খণ্ড/পর্ব-২৪

খুব স্বাভাবিকভাবেই বিয়ের পর থেকে যে দ্বন্দ্বটা মনের মধ্যে ছিল, সেটা সংসারের মধ্যে দেওয়াল হয়ে দাঁড়াল। মেডিকেল কাউন্সিলের ঝামেলা যে রাত্তিরে মিটল সেই রাতেই অর্ক দাশগুপ্তের একটা কথায় বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন সানন্দা। না বসুন্ধরা ভিলায় কিন্তু ফেরেননি, কোন বন্ধুর কাছে যাননি। নিজের বাড়ির কাছে একটি হোটেলে গিয়ে উঠেছেন।

* বসুন্ধরা এবং… দ্বিতীয় খণ্ড (Basundhara Ebong-Novel Part-2) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content