শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


ছবি প্রতীকী

আমার চেম্বারে প্রায়ই একাধিক বিবাহিত দম্পতিই আসেন তাঁদের হারানো যৌনজীবনকে ফিরে পাওয়ার আশায়, যা মূলত বোঝাপড়ার অভাবে মন থেকে হারিয়ে গিয়েছে। তাঁদের সেই সব সমস্যা উভয়ের মধ্যে এতটাই ক্ষত তৈরি করেছে যে, তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পরিবারের ওপরও।
 

তাহলে মুক্তির উপায়?

প্রথমত: যেসব দম্পতিরা এই সমস্যা নিয়ে আসেন তাঁদের মধ্যে মূল কারণ হল বোঝাপড়ার অভাব। নিজেরা হয়তো খুব ভালো বন্ধু, ভালোবাসা বিয়েও করেছেন। তবু কোথাও একটা নিজেদের মধ্যে ছন্দপতনের জন্য তাঁরা আর আগের মতো যৌনজীবন উপভোগ করতে পারেন না। এই বোঝাপড়ার ছন্দপতন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, তাঁরা নিজেদের পাশাপাশি প্রিয়জনকেও সমস্যা, অভিমান, রাগ, দুঃখ, ভাললাগা, ভালবাসার কথা ভাগ করে নিতে পারেন না। তাই এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ: হারিয়ে যাওয়া সেই সেরা মুহূর্তকে ফিরে পেতে— আমি না-ও আগে, একে অন্যকে দোষারোপ না করা, রাগ, অভিমান, অহংকার এসব সরিয়ে রেখে উভয়ে উভয়ের দিকে এগিয়ে যান, মনের জানালা খুলে কথা বলুন। ঠিক আগের মতো। একেবারে আপনাদের নিজস্ব ফ্রেমবন্দি সিনেমার মতো। নিজেদের ভাবুন—আমরা, আমাদেরই মতো। তাহলেই দেখবেন হারিয়ে যাওয়া সেই যৌনজীবনকে হয় তো আগের থেকেও বেশি উপভোগ করছেন।

দ্বিতীয়ত: মানুষ সাধারণত দুটি কারণে নিজেদের মধ্যে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। এক. সন্তান ধারণের জন্য, দুই, আনন্দ উপভোগ করা। প্রায় সবারই যৌনজীবনে কোনও কোনও সময় একঘেয়েমি গ্রাস করে। এটা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, তাই বিষয়টি নিয়ে অযথা উদবেগের কোন কারণ নেই। ধরা যাক, কুড়ি বছরের বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর ঠিকমত বোঝাপড়া হচ্ছে না। একঘেয়েমি চলে এসেছে তাঁদের মধ্যে।

তাহলে সমাধানের পথ? এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ, পরিবেশ-পরিস্থিতে একটু পরিবর্তন আনা জরুরি। হয়তো বা আপনি যে ঘরে বরাবর ঘুমোন, সেই ঘরটি বদল করলেন। শোবার সময় উভয়ের পছন্দের গান খুব হালকা টোনে চালিয়ে দিলেন। পারফিউম বা রুম ফ্রেশনারও ব্যবহার করতে পারেন। প্রিয়জনকে আকৃষ্ট করতে বদল আনতে পারেন রাত পোশাকেও। বিশেষ কোন ভালো লাগার সিনেমাও দেখতে পারেন, যা আপনাদের একঘেয়ে যৌনজীবনে রোমান্টিকতা আনতে পারে। এসবের মূল কথা হল—যৌনজীবন উপভোগ করতে হলে রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

তৃতীয়ত: যৌনজীবন নিয়ে অনেক সময় অল্প বয়সীদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা থাকে। এই ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয় ছোটবেলা থেকেই। কারণ, তারা হয়তো অনেকেই ছোট বয়স থেকেই পর্নোগ্রাফি দেখছে। নিজের অজান্তে এর প্রভাব পড়ছে ভবিষ্যতের যৌনজীবনে। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা পর্নোগ্রাফিতে যা দেখে তাই-ই তারা বাস্তবজীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করে। এই ‘কারও’ এই বিশেষ ইচ্ছে অনেক সময় উভয়ের মধ্যে সমস্যা তৈরি হয়। কারণ, পর্নোগ্রাফির সঙ্গে স্বাভাবিক যৌনজীবনের মিল নেই। আরেকটি বিষয় হল, স্বাভাবিক যৌনজীবনের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যেন আবেগের কোনও ঘাটতি না হয়। কারণ এই আবেগের উপরই যৌনজীবন উপভোগ বা আনন্দ অনেকটাই নির্ভর করে। তাই পর্নোগ্রাফির কথা মাথায় না রেখে উভয়ই যখন যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হবেন, তখন একে অপরকে বিভিন্ন ভাবে অনুভব করুন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, আমরা কীভাবে অনুভব করব? একে অপরকে স্পর্শ করুন। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ফোরপ্লে’। আর একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, সঙ্গমের সময় কখনওই টার্গেট করবেন না যে, আমাকে চরমতম মুহূর্তে পৌঁছতেই হবে। এর সঙ্গে এই চিন্তাও বর্জন করুন যে, পর্ণগ্রাফিতে যেমন দেখেছি তেমনটাই উপভোগ করবো। এই ভাবনা থেকে না বেরতে পারলে কিন্তু সমস্যার সমাধান অধরা থেকেই যাবে। মনে রাখবেন, যৌনজীবন হল একটি সুন্দর সফর, নির্দিষ্ট কোনও গন্তব্য নই।

চতুর্থত: দীর্ঘ যৌনজীবনের পর অনেকের পুরুষাঙ্গের সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে মূলত যে সমস্যাটি দেখা যায়, তা হল পুরুষাঙ্গ ঠিক মতো উত্তেজিত হয় না। বিষয়টি নিয়ে এত চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই। সমস্যার সমাধানে নিয়মিয় কেগাল এক্সারসাইজ করুন। এতে ‘পেলভিক ফ্লোর’-এর মাসলের শক্তি বাড়ে। এটি নিয়ম মেনে করলে সমস্যার সমাধান হবে। কীভাবে এক্সারসাইজটি করতে হবে তা চিকিৎসকই বুঝিয়ে বলে দেবেন।

পঞ্চমত: কথায় আছে স্বাস্থ্যই সম্পদ। অর্থাৎ শরীর যত ফিট থাকবে, ততই ভালো ভাবে যৌনজীবন উপভোগ করা সম্ভব হবে। তাই শরীর ঠিক রাখতে ডায়েট মেনে ভালো খাবার খান। শরীরকে নিরমেদ রাখুন। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। আর অবশ্যই অ্যালকোহল ও ধূমপান বর্জন করুন। কারণ এগুলি যৌনজীবনকে খুব ব্যাহত করে। তাই হারানো যৌনজীবন ফিরে পেতে হলে নিজেকে রাখতে হবে ‘ফিট অ্যান্ড ফাইন’।

ব্যাস, এই কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলেই আপনার যৌনজীবন ফের রামধনু রঙে হবে রঙিন।

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৪৩৩২৯১৮৭৭

Skip to content