মানিক পীর।
গাজী, মুশকিল আসান করো …”
গানটা আমার শৈশবে কতবার যে শুনেছি তার ইয়ত্তা নেই। চার-পাঁচ দশক আগে আমাদের বাড়িতে প্রায়ই অনেক ভিক্ষুক প্রতিদিন ভিক্ষের জন্য আসত। তাদের মধ্যে কিছু ছিল মুসলিম ভিক্ষুক যারা বাড়িতে এসে উঠোনে বসে এই গানটা গেয়ে ভিক্ষে করত। আর ভিক্ষে দেওয়ার পর তারা বলত, “গাজী মানিক পীর তোমার মঙ্গল করবে বাবা।” তাই মানিক পীরের নামটা ছোট থেকে শুনে এলেও তিনি কে, তিনি কী মঙ্গল করেন বা তিনি পীর হয়েও কেন তাঁর হিন্দু নাম মানিক—এ সবই ছিল অজানা। জানলাম অনেক পরে। আর যা যা জানলাম তা একটা কাহিনি দিয়ে শুরু করি।
মানিক পীর একবার ফকিরের বেশে এক বুদ্ধিমতী গোয়ালা-কন্যার কাছে দুধ চাইলেন। কিন্তু গোয়ালা-কন্যা পীরকে মিথ্যে বলল যে দুধ নেই। মানিক পীর এতে খুব ক্রুদ্ধ হলেন। তাঁর মাথায় ছিল রঙিন টুপি আর এক হাতে ছিল রোগজীবাণুপূর্ণ পাত্র ও অন্য হাতে ছিল আসাদণ্ড। ক্রুদ্ধ মানিক পীর প্রথমে গোয়ালা-কন্যার গোয়ালে সব গোরুর উপর রোগজীবাণু ছড়িয়ে দিলেন। তারপর পাড়ার সবার গোয়ালে ছড়িয়ে দিলেন। ফলে সবার গোয়ালে গোরু-বাছুর মরে যেতে লাগল। গোয়ালা-পাড়ার সবাই প্রমাদ গুনল। তখন সবাই, এমনকি গ্রামের বৃদ্ধ মোড়লও ছুটল পীর মানিককে ফিরিয়ে আনতে। নদীর তীরে মানিক পীরকে দেখতে পেয়ে সবাই তাঁর পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইল। মানিক পীরের ক্রোধ প্রশমিত হল। তিনি সব গোরু-বাছুরকে বাঁচিয়ে দিলেন। এভাবে বর্নহিন্দু গোয়ালাদের কাছে পূজ্য হয়ে উঠলেন মানিক পীর। গ্রামে গঞ্জে ফকিররা গানের মধ্যে দিয়ে এই কাহিনি প্রচার করেন—
“সুবুদ্ধি গোয়ালার মেয়ে কুবুদ্ধি ঘটিল।
বাছালিতে দুগ্ধ রাখি পীরকে ভাঁড়াইল।
***
“মাথায় রঙিন টুপি ব্যেধের জাম্বিল।
হাতে লয়ে আসাবাড়ি ফেরে মানিকপীর।”
বাছালিতে দুগ্ধ রাখি পীরকে ভাঁড়াইল।
হাতে লয়ে আসাবাড়ি ফেরে মানিকপীর।”
আরও পড়ুন:
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৫: সুন্দরবনে বসন্ত রোগের দেবতা বসন্ত রায়
অসমের আলো-অন্ধকার, পর্ব-১: প্রকৃতি অসমকে সাজাতে কোনও কার্পণ্যই করেনি
সেই থেকে মানিক পীরের খ্যাতি হল গৃহস্থের পশুরক্ষক দেবতা হিসেবে। মধ্যযুকে বিভিন্ন পল্লী কবি মানিক পীরের কাব্য কেচ্ছা ও গান রচনা করেছেন। যেমন ফকির মোহাম্মদ, নসর শহীদ, বয়নদ্দীন, খোদা নেওয়াজ প্রমুখ রচনা করেছেন মানিক পীরের গান, মুন্সী মোহাম্মদ গিরিজ রচনা করেছেন মানিক পীরের কেচ্ছা। ফকিরদের মুখে মুখে সেগুলি গান হয়ে ঘোরেফেরে। জয়রদ্দিন রচিত মানিক পীরের জহুরানামা মুদ্রিত অবস্থাতেও পাওয়া যায়। সেখানে রয়েছে, একদিন বেহেস্তের এক সভায় বসে খোদাতালাহ বললেন—
“সেই জনে দিব আমি দুনিয়ার ভার।
কলিকালে মানিক হবে অবতার।।”
কলিকালে মানিক হবে অবতার।।”
বারাসত কদম্বগাছিতে মানিক পীরের দরগা।
ফলে মানিক মানুষ অবতার হয়ে পৃথিবীতে এলেন। এদিকে এক বাদশাজাদি দুধবিবি নদীতে স্নান করতে গিয়ে ঝোপের মধ্যে এক শিশুকে দেখতে পেলেন। ঝোপের মধ্যে একা একটা শিশুকে বসে থাকতে দেখে কোমলপ্রাণা বাদশাজাদির মনে খুব দয়া হল। তিনি শিশুটির কাছে গিয়ে তার পরিচয় জানতে চাইলেন। শিশুটি উত্তরে তাঁকে ‘মা’ সম্বোধন করে জানাল যে তার নাম মানিক, আর তার মা-বাবা নেই।
“মানিক দেয়ান বলে শুন বলি মাই।
দুনিয়াতে ফিরি আমি মা বাপ নাঞি।।”
দুনিয়াতে ফিরি আমি মা বাপ নাঞি।।”
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৪৩: চিকন কালা বড়ই জ্বালা
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৯: বেশি ঘুম শরীরের পক্ষে ভালো?
এই কথা শুনে দুধবিবির অন্তর বিগলিত হল। তিনি শিশু মানিককে বাড়িতে নিয়ে এলেন ও যত্নসহকারে লালন-পালন করে বড় করে তুললেন। পরবর্তীকালে ইনি মানিক পীর হিসেবে বঙ্গদেশে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে লৌকিক দেবতা হিসেবে জনপ্রিয়তা পান।
এ তো গেল গল্পগাথার কথা। ঐতিহাসিকদের মতে, মানিক পীর ছিলেন ইরানের মানুষ। তিনি ছিলেন একজন সুফি-স্বীকৃত পীর। খ্রিস্টিয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকে জরাথ্রুস্ট ও খ্রিস্ট ধর্মের সংমিশ্রণে সৃষ্ট এক নতুন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি বঙ্গদেশে আসেন। অনেকে তাঁকে যিশু বা ঈসা নবীর সমগোত্রীয় বলে মনে করেন। গ্রিক শব্দ Manichee বা Manikhaios থেকে ‘মানিক’ শব্দের উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। সুফিরা পীরকে ‘Manichee’ বলেন। কেউ কেউ বলেন, তিনি আদতে জন্মসূত্রে ছিলেন হিন্দু। তাঁর বাবার নাম ছিল, মনোহর সওদাগর। কিন্তু সে যা-ই হোক, মূলতঃ গবাদি পশুর রক্ষক হিসেবে সুন্দরবনের হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের কাছে উপাস্য হলেন মানিক পীর। গাভী প্রথম দুধ দেওয়া শুরু করলে গৃহস্থ মানিক পীরের দরগায় প্রথম দুধ দিয়ে আসে যাতে গাভীর বেশি দুধ হয় এবং গাভী ও বাছুরের কোনও অসুখ না হয়। দুই ২৪ পরগনা ও যশোরে প্রচলিত ছড়া হল—
“মানিকের নামে তোমরা হেলা কোরো না।
মানিকের নাম করলে বিপদ হবে না।।”
এ তো গেল গল্পগাথার কথা। ঐতিহাসিকদের মতে, মানিক পীর ছিলেন ইরানের মানুষ। তিনি ছিলেন একজন সুফি-স্বীকৃত পীর। খ্রিস্টিয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকে জরাথ্রুস্ট ও খ্রিস্ট ধর্মের সংমিশ্রণে সৃষ্ট এক নতুন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি বঙ্গদেশে আসেন। অনেকে তাঁকে যিশু বা ঈসা নবীর সমগোত্রীয় বলে মনে করেন। গ্রিক শব্দ Manichee বা Manikhaios থেকে ‘মানিক’ শব্দের উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। সুফিরা পীরকে ‘Manichee’ বলেন। কেউ কেউ বলেন, তিনি আদতে জন্মসূত্রে ছিলেন হিন্দু। তাঁর বাবার নাম ছিল, মনোহর সওদাগর। কিন্তু সে যা-ই হোক, মূলতঃ গবাদি পশুর রক্ষক হিসেবে সুন্দরবনের হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের কাছে উপাস্য হলেন মানিক পীর। গাভী প্রথম দুধ দেওয়া শুরু করলে গৃহস্থ মানিক পীরের দরগায় প্রথম দুধ দিয়ে আসে যাতে গাভীর বেশি দুধ হয় এবং গাভী ও বাছুরের কোনও অসুখ না হয়। দুই ২৪ পরগনা ও যশোরে প্রচলিত ছড়া হল—
মানিকের নাম করলে বিপদ হবে না।।”
এক ফকির শোনাচ্ছেন মানিক পীরের গান।
মানিক পীরের মূর্তি আজকাল প্রায় দেখাই যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁর সমাধি বা স্তূপ পূজা-হাজোত করা হয়। মানিক পীরের মূর্তি খুব সুন্দর। গায়ের রং ফর্সা। মাথায় বাবরি করা চুল ও গালে দাড়ি। মাথার উপর তাজ বা পাগড়ি। হিন্দু প্রভাবিত অঞ্চলে তাঁর পরণে ধুতি দেখা যায়, আর মুসলমান প্রভাবিত অঞ্চলে কালো আলখাল্লা ও টুপি। তাঁর মূর্তি দন্ডায়মান। তাঁর এক হাতে থাকে আসাদণ্ড ও অন্যহাতে জপমালা বা তসবি। মানিক পীরের থান বা দরগায় মানতকারী বা ভক্তরা সমবেত হয়। সাধারণত বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক পূজা-হাজোত হয়।
তবে কোথাও কোথাও শনি ও মঙ্গলবারেও হয়। আবার কখনও গবাদি পশুর মড়ক হলে হিন্দু ও মুসলমানেরা মিলিতভাবে মানিক পীরের পূজা-হাজোত দেয়। গোরুর অসুখ হলে অনেকে মানিক পীরের কাছে মুরগি মানত করে। গাভী বাছুর প্রসব করলে অনেক সময় ২১ দিন পর তাঁর দরগায় দুধ দিয়ে তবেই সেই দুধ বাড়িতে খাওয়া হয়। মানিক পীরের পূজা-হাজোত যিনি করেন তাঁকে বলা হয় মুনসি বা খাদেম। তিনি অবশ্যই মুসলমান ফকির হন। নৈবেদ্য হিসেবে দেওয়া হয় সিরনি। আটা বা ময়দা বা চালের গুঁড়ো, দুধ, গুড় বা চিনি ও কলা মিশিয়ে তৈরি হয় সিরনি। নৈবেদ্য হিসেবে ফলমূল, মিষ্টি ইত্যাদিও দেওয়া হয়। পূজা-হাজোত শেষে মুনসি ভক্তদের হাতে একটু করে সিরনি দেন।
মানিক পীরের কোনও কোনও দরগায় বা থানে মুনসি জহুরানামা পাঠ করেন। মুনসি ফকিররা গবাদি পশুর রোগ হলে বিভিন্ন রকম জলপড়া, তেলপড়া দেন বা মন্ত্র দেন বা ঝাড়ফুঁক করেন। গবাদি পশুকে ভালো রাখতে বা দুধের পরিমাণ বাড়াতে বা তাদের নানা রোগে তাঁরা যে পরামর্শ দিতেন তা মানিক পীরের নানা গানের মাধ্যমে আজও গাওয়া হয়—
“সকালেতে সাফাই করে সাঁঝেতে সাজাল
সেই গোহালেতে রাখাল গরু হবে না নাকাল
যে গোহালে নিত্য সাঁঝে না পাড় সাজাল
সারা রাতে দাপায় গরু সকালে ঝিমায়
আয়ু কমে তারই সাথে দুগ্ধ কমে যায়।
***
“চৌষট্টি বেয়টি গরুর চৌষট্টি দাওয়াই
মানিকের দোয়া হলে তবে পার পাই।
জিহ্বাতে হইলে কাটা গলায় হইলে ফোলা,
হাতেতে লবন দিয়া দিবেন তাতে ডলা।
***
“কথায় বলে গাই গরুর মুখে দুগ্ধ রয়,
বেশি করে খাইলে গাই বেশি দুগ্ধ দেয়।
চূর্ণি ভূষি খইল-বিচালি ভেলিগুড় আর,
কাঁচা ঘাসে গাইয়ের পেষ্টাই কয়ে দিলাম সার।”
তবে কোথাও কোথাও শনি ও মঙ্গলবারেও হয়। আবার কখনও গবাদি পশুর মড়ক হলে হিন্দু ও মুসলমানেরা মিলিতভাবে মানিক পীরের পূজা-হাজোত দেয়। গোরুর অসুখ হলে অনেকে মানিক পীরের কাছে মুরগি মানত করে। গাভী বাছুর প্রসব করলে অনেক সময় ২১ দিন পর তাঁর দরগায় দুধ দিয়ে তবেই সেই দুধ বাড়িতে খাওয়া হয়। মানিক পীরের পূজা-হাজোত যিনি করেন তাঁকে বলা হয় মুনসি বা খাদেম। তিনি অবশ্যই মুসলমান ফকির হন। নৈবেদ্য হিসেবে দেওয়া হয় সিরনি। আটা বা ময়দা বা চালের গুঁড়ো, দুধ, গুড় বা চিনি ও কলা মিশিয়ে তৈরি হয় সিরনি। নৈবেদ্য হিসেবে ফলমূল, মিষ্টি ইত্যাদিও দেওয়া হয়। পূজা-হাজোত শেষে মুনসি ভক্তদের হাতে একটু করে সিরনি দেন।
মানিক পীরের কোনও কোনও দরগায় বা থানে মুনসি জহুরানামা পাঠ করেন। মুনসি ফকিররা গবাদি পশুর রোগ হলে বিভিন্ন রকম জলপড়া, তেলপড়া দেন বা মন্ত্র দেন বা ঝাড়ফুঁক করেন। গবাদি পশুকে ভালো রাখতে বা দুধের পরিমাণ বাড়াতে বা তাদের নানা রোগে তাঁরা যে পরামর্শ দিতেন তা মানিক পীরের নানা গানের মাধ্যমে আজও গাওয়া হয়—
সেই গোহালেতে রাখাল গরু হবে না নাকাল
যে গোহালে নিত্য সাঁঝে না পাড় সাজাল
সারা রাতে দাপায় গরু সকালে ঝিমায়
আয়ু কমে তারই সাথে দুগ্ধ কমে যায়।
মানিকের দোয়া হলে তবে পার পাই।
জিহ্বাতে হইলে কাটা গলায় হইলে ফোলা,
হাতেতে লবন দিয়া দিবেন তাতে ডলা।
বেশি করে খাইলে গাই বেশি দুগ্ধ দেয়।
চূর্ণি ভূষি খইল-বিচালি ভেলিগুড় আর,
কাঁচা ঘাসে গাইয়ের পেষ্টাই কয়ে দিলাম সার।”
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২৩: ঠাকুর সন্নিধানে সারদার কল্যাণব্রতে দীক্ষা
দশভুজা, শক্তিরূপেন সংস্থিতা, পর্ব-১: তিনকন্যা
শুধু সুন্দরবন অঞ্চল নয়, সুন্দরবন বাদেও দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, নদীয়া, বাংলাদেশের খুলনা ও যশোহরে মানিক পীরের দরগা দেখা যায়। বেশিরবাগ থানে বা দরগায় তিনি এককভাবে থাকলেও হিন্দু প্রভাবিত অঞ্চলে কোনও হিন্দু দেবদেবীর সঙ্গে তাঁকে সহাবস্থানে দেখা যায়। হাওড়া জেলার আমতা দু’নম্বর ব্লকে রাউতারা গ্রামে মানিক পীরের যে দরগাটি রয়েছে তা এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু ১৭৯৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই পরিবার এখনও দরগাটির রক্ষণাবেক্ষণ করেন। এখানে প্রতি বছর যে উৎসব উপলক্ষ্যে মেলা বসে সেখানে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ সমবেত হয়। কলকাতার দক্ষিণে যাদবপুরেও প্রতি বছর মানিক পীরের মেলায় উভয় সম্প্রদায়ের প্রচুর মানুষ উপস্থিত হয়।
মানিক পীরের সমাধি।
একসময় সুন্দরবন অঞ্চলের প্রতিটি হিন্দু গৃহস্থের গোয়ালে পয়লা বৈশাখ মানিক পীরের আরাধনা করা হত। এখনও যাঁদের গোয়ালে গোরু আছে তাঁরা পয়লা বৈশাখ মানিক পীরের পুজো করে গোরুর শিঙে কাঁচা হলুদ বাটা ও সরষের তেল মাখিয়ে পুকুরে স্নান করান। খুব কম হলেও এখনও দু’একজন ফকিরকে গ্রামে বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে ঘুরে মানিক পীরের গোইলে বা পাঁচালি পরিবেশন করে ভিক্ষা করতে দেখা যায়।
কলকাতার মানিকতলায় মানিক পীরের দরগা।
পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, মানিক পীর মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও কেন তিনি হিন্দুদেরও আরাধ্য হলেন? লোকগবেষকদের মতে এর কারণ সম্ভবত দুটি। এক, ইনি ছিলেন সুফিবাদের প্রচারক। এঁরা লোকধর্মের বিরুদ্ধে ছিলেন না। আর তাই সাধারণ মানুষের কাছে মানিক পীর হয়ে ওঠেন শ্রদ্ধার পাত্র। দুই, মানিক পীর ছিলেন কবিরাজি বা হাকিমি প্রথায় চিকিৎসায় দক্ষ। প্রত্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চলে একসময় মানুষ ও গবাদি পশুর মড়ক লাগত। উন্নত চিকিৎসালাভের কোনও সুযোগই ছিল না। সেই সময় মানিক পীর তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতিতে গবাদি পশুর মড়ক নিবারণ করেন। এভাবেই মানিক পীর হিন্দুদের হৃদয়েও স্থায়ী আসনলাভ করে নেন।—চলবে।
ছবি: লেখক
ছবি: লেখক
* সৌম্যকান্তি জানা। সুন্দরবনের ভূমিপুত্র। নিবাস কাকদ্বীপ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পেশা শিক্ষকতা। নেশা লেখালেখি ও সংস্কৃতি চর্চা। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের জন্য ‘দ্য সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল ২০১৬ সালে ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ এবং শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান লেখক হিসেবে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ ২০১৭ সালে ‘অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি সম্মান’ প্রদান করে সম্মানিত করেছে।