বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ: গৌতম চক্রবর্তী।

টনিকের প্রতি আমাদের অনেকেরই খুব আসক্তি থাকে। কি মধু আছে এই পাঁচ অক্ষরের TONIC শব্দটিতে, কে জানে!

অপুষ্টিতে ভোগা হাড় জিরজিরে শিশু কোলে মা যেমন ডাক্তারের কাছে আর্জি জানান, রক্ত হওয়ার কোনও টনিক লিখে দেবার জন্য, তেমনি অতিপুষ্টিতে ক্লান্ত কোনও মেদবান পুরুষও ডাক্তারের কাছে অনুরোধ করেন সেক্স ধরে রাখার টনিক লিখে দেবার জন্য। আহা কি জাদু আছে এই টনিকে, কে জানে?

ভিটামিনের নানা গুণপনার কথা আমরা সবাই জানি। দেহের শ্রীবৃদ্ধির জন্য ভিটামিন যে ভীষণ প্রয়োজনীয় তা স্কুল পাঠ্য বইতেও লেখা থাকে। দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সবকটি ভিটামিনই আমরা রোজ যা খাই, তাই থেকেই পাই। বাড়তি প্রয়োজন তখনই ঘটে, যখন খাদ্যে পুষ্টির অভাব হয়, ভিটামিন দেহে ঠিক মতো গৃহীত ও শোষিত হয় না, কোনও অপারেশন পর বা অসুস্থতার পর দেহে অতিরিক্ত ভিটামিনের চাহিদা যখন তৈরি হয়।
অনেকেরই অভ্যাস দুপুরে এবং রাতে দু’ বেলা খাওয়ার পর ভিটামিন ক্যাপসুল বা দু’চামচ টনিক খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা। এতে শুধু অর্থ দণ্ড হয়, কাজের কাজ কিছুই হয় না। পেট ভরে ডাল, ভাত, সব্জি, সপ্তাহে দু-তিন দিন একটু মাছ-ডিম-দুধ খেলেই সব ভিটামিন শরীরের ঢোকে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনও ভিটামিন খাবেন না। অতিরিক্ত ভিটামিন কিন্তু অনেক বিপত্তির কারণ হতে পারে।
 

ভিটামিন এ

অতিরিক্ত ‘ভিটামিন এ’ থেকে খিদে কমে যাওয়া, গা গোলানো, চামড়ায় চুলকোনি, চুল পড়া, গাঁট ফোলা, ঘুষঘুষে জ্বর, খিটখিটে ভাব, রক্তাল্পতা, লিভার এবং পিলে বেড়ে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া, জিভে ঘা, চামড়ায় চাকা চাকা দাগ, মাথা ব্যথা, গর্ভাবস্থায় শিশু বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা-সহ নানা বিপত্তি দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৪: গরম পড়েছে, যত পারুন ঠান্ডা খান! কী হচ্ছে এর ফলে?

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১১: ফুটবলের ব্ল্যাক প্যান্থার: লেভ ইয়াসিন

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩১: মরুভূমির উপল পারে বনতলের ‘হ্রদ’

 

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স

‘ভিটামিন বি কমপ্লেক্স’ বেশি খেলে চোখমুখ লাল হওয়া বা ফ্লাসিং, চুলকোনি, ফুসকুড়ি, ফোঁড়া, পেটের গন্ডগোল, পেটে আলসার, জন্ডিস এবং চোখের নানা রোগ দেখা দিতে পারে।
 

ভিটামিন বি সিক্স

‘ভিটামিন বি সিক্স’ বেশি মাত্রায় খেলে স্নায়ু রোগ পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি হতে পারে। ‘ভিটামিন ই’ বেশি খেলে মাংসপেশির দুর্বলতা, বমি ভাব, ক্লান্তিবোধ, মাথা ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।
 

ভিটামিন সি

‘ভিটামিন সি’ অনেকে নিয়মিত খান সর্দি-কাশি কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে। করোনার সময় তো মুড়ি মুড়কির মতো সবাই ভিটামিন সি খেতেন।

মুখে বা জিভে ঘা হলে ডাক্তারবাবুরা রোজ ৫০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খেতে বলেন। কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত খেলে মুত্রে অক্সালেট-এর পরিমাণ বাড়বে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিডনি। ঘন ঘন পেট ব্যথা হবে, পায়খানা হবে। গর্ভবতী মায়েরা বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারেন।

আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৮: রবীন্দ্রনাথ সাঁতার কাটতেন, সাঁতার শেখাতেন

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫০: ‘ফিশ পাস’ পুরোদমে চালু হলে ইলিশের প্রজনন বাধাহীনভাবে সম্ভবপর হবে

দশভুজা: ‘পুরুষ মানুষের কাজে হাত দিলে এমনই হবে, মহিলাদের এসব সাজে না’

 

ভিটামিন ডি

অতিরিক্ত ‘ভিটামিন ডি’ থেকে দেহে বাড়তি ক্যালশিয়াম ঢোকে। দেখা যায় দুর্বলতা গা গোলানো ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, বহুমূত্র রোগ, গাঁটে যন্ত্রণা, মানসিক অস্থিরতা, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঠিকমতো হয় না। কিডনিতে পাথর হতে পারে, গর্ভস্থ শিশুর নানা বিপদ হতে পারে।
 

ভিটামিন কে

আবার ‘ভিটামিন কে’ বেশি খেলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জন্ডিস দেখা দিতে পারে। সদ্যোজাত শিশুর নানা রক্তের রোগ এবং নার্ভের অসুখও হতে পারে।

আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৬: পঞ্চম-সভার তিন রত্ন বাসু-মনোহারী-মারুতি

মাইগ্রেনও পুরোপুরি সেরে যেতে পারে, জেনে নিন এর থেকে বাঁচার সহজ উপায়

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৪: কাওয়ার্ধা পরিভ্রমণ

ভিটামিন টনিকে ভিটামিন ছাড়াও নানা ছাই ভস্ম থাকে। যেমন বিভিন্ন পশুর লিভারের নির্যাস, হজম ক্ষমতা বাড়ানোর ওষুধ, ব্রেনে ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিউরো ফসফেটস এবং তামা- ম্যাঙ্গানিজ-সহ নানা খনিজ পদার্থ। এদের কে কীভাবে কাজ করে, তা আজও বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত হয়নি।

আর তাছাড়া ওষুধ খেয়ে যে বুদ্ধি বাড়ে না, তা তো বুদ্ধিহীনেরাও জানেন। কাজেই টনিক বাদ দিয়ে পেট ভরে ভাত, ডাল, সবজি, ডিম খান। সঙ্গে দুধ ও দই এবং পর্যাপ্ত জল।
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।

Skip to content