অলঙ্করণ: গৌতম চক্রবর্তী।
পুরো গরম কালটা তো আমাদের পাড়ার বদন মামা তুষার মানব হয়ে ঘুরে বেড়ান। এমনিতে মানুষটি খুবই শৌখিন এবং ফিটফাট। প্রতিদিন নিয়ম করে দিনে বার তিনেক ঘাড়ে, বুকে, পিঠে, বগলে গুচ্ছের পাউডার মাখেন। আর বাড়ি থেকে বেরোলে তো ঘাড় পিঠ ছাড়া মুখেও মাখেন। কেউ জিজ্ঞেস করলেই বলেন, যা গরম পড়েছে, প্রচণ্ড ঘাম হচ্ছে, পাউডার না মেখে কি উপায় আছে! গরমের মাস চারেক তাই বদন মামার বাজার খরচের অনেকটাই জুড়ে থাকে ট্যালকম পাউডার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ঘাম কমাতে সত্যিই কি পাউডারের কোনও ভূমিকা আছে!
আমাদের ত্বকের প্রধান দুটো স্তর হল, এপিডার্মিস ও ডার্মিস। ডারমিসের তলায় থাকে হাইপোডারমিস। এই সব স্তরের আবার নানা উপস্তর থাকে। এগুলোর মধ্যে প্রধানত তিন ধরনের গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি থাকে, ঘর্মগ্রন্থি বা সোয়েট গ্ল্যান্ড যাদের অন্যতম। এই সোয়েট গ্ল্যান্ডের নিঃসরিত রসের নাম ঘাম বা সোয়েট। যার মাধ্যমে দেহের নানা অপ্রয়োজনীয় পদার্থ দেহের বাইরে আসে। ঘর্মগ্রন্থির কুণ্ডলীকৃত অংশ থাকে ডার্মিস ও হাইপোডারমিসে এবং নালিকা এপিডারমিস স্তর ভেদ করে দেহত্বকের ওপরে ছোট ছোট ছিদ্রে উন্মুক্ত হয়, যাদের বলে ঘর্ম ছিদ্র বা সোয়েট পোর। এই সোয়েট পোর দিয়েই ঘাম ত্বকের উপরে আসে। এক্রিন এবং অ্যাপোক্রিন–এই দুই ধরনের ঘর্মগ্রন্থি, আমাদের সারা দেহ জুড়ে থাকে।
আমাদের ত্বকের প্রধান দুটো স্তর হল, এপিডার্মিস ও ডার্মিস। ডারমিসের তলায় থাকে হাইপোডারমিস। এই সব স্তরের আবার নানা উপস্তর থাকে। এগুলোর মধ্যে প্রধানত তিন ধরনের গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি থাকে, ঘর্মগ্রন্থি বা সোয়েট গ্ল্যান্ড যাদের অন্যতম। এই সোয়েট গ্ল্যান্ডের নিঃসরিত রসের নাম ঘাম বা সোয়েট। যার মাধ্যমে দেহের নানা অপ্রয়োজনীয় পদার্থ দেহের বাইরে আসে। ঘর্মগ্রন্থির কুণ্ডলীকৃত অংশ থাকে ডার্মিস ও হাইপোডারমিসে এবং নালিকা এপিডারমিস স্তর ভেদ করে দেহত্বকের ওপরে ছোট ছোট ছিদ্রে উন্মুক্ত হয়, যাদের বলে ঘর্ম ছিদ্র বা সোয়েট পোর। এই সোয়েট পোর দিয়েই ঘাম ত্বকের উপরে আসে। এক্রিন এবং অ্যাপোক্রিন–এই দুই ধরনের ঘর্মগ্রন্থি, আমাদের সারা দেহ জুড়ে থাকে।
ঘাম কিন্তু দেহের নানা কাজে লাগে। দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। জলের সমতা বজায় রাখে। ত্বককে আদ্র রাখে। রোগ জীবাণু প্রতিরোধ করে। অ্যাসিড ও ক্ষারের সমতা নিয়ন্ত্রণ করে। দেহ নির্গত ঘামের পরিমাণ আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। গুমোট আবহাওয়ায় ঘামের পরিমাণ কমে যায়, কষ্ট হয়। ভয় পেলে বা আবেগে অতিরিক্ত ঘাম নিঃসরিত হয়।
ঘামের শতকরা ৯৯ ভাগ হল জল। বাকি এক ভাগের মধ্যে থাকে বিভিন্ন লবণ, অ্যাসিড, ইউরিয়া, প্রোটিন, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি। অ্যাপোক্রিন গ্রন্থি থেকে নির্গত ঘামে এগুলো ছাড়াও থাকে ইনডক্সিল, উদ্বায়ী ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যামোনিয়া ইত্যাদির মিশ্রণ। এর ফলে এই ঘামে গন্ধ বেশি হয়। বগলে এবং জংঘাতে অ্যাপোক্রিন গ্রন্থি বেশি থাকে বলে, এই ঘামে গন্ধ বেশি হয়। তাছাড়া এই ঘাম ঘন। এর সংস্পর্শে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের বংশবৃদ্ধি বাড়তে পারে।
ঘামের শতকরা ৯৯ ভাগ হল জল। বাকি এক ভাগের মধ্যে থাকে বিভিন্ন লবণ, অ্যাসিড, ইউরিয়া, প্রোটিন, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি। অ্যাপোক্রিন গ্রন্থি থেকে নির্গত ঘামে এগুলো ছাড়াও থাকে ইনডক্সিল, উদ্বায়ী ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যামোনিয়া ইত্যাদির মিশ্রণ। এর ফলে এই ঘামে গন্ধ বেশি হয়। বগলে এবং জংঘাতে অ্যাপোক্রিন গ্রন্থি বেশি থাকে বলে, এই ঘামে গন্ধ বেশি হয়। তাছাড়া এই ঘাম ঘন। এর সংস্পর্শে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের বংশবৃদ্ধি বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১১: লিকার চা খাওয়া কি সত্যই শরীরের পক্ষে ভালো?
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৫: নৌকো উল্টে সত্যেন্দ্রনাথের আইসিএস পড়তে যাওয়া বানচাল হতে বসেছিল
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৭: অ্যাকোয়াপোনিক্স প্রযুক্তির প্রয়োগে উৎকৃষ্টমানের মাছ এবং গাছ বেড়ে উঠতে পারে
ঘামের সঙ্গে ঘামাচির দারুণ সম্পর্ক। কোনও কারণে যদি ত্বকের ঘর্ম ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়, তবে নির্গত ঘাম ঘর্মনালি হয়ে আর ত্বকের উপরে আসতে পারে না, ত্বকের নিচে জমে থাকে, ফলে ফুসকুড়ির মতো দেখা দেয়। এদেরই বলে ঘামাচি। অনেক সময় ভীষণ চুলকোয়, নখ থেকে ময়লা গিয়ে সেকেন্ডারি ইনফেকশন বাধাতে পারে। এবার দেখা যাক কী কী কারণে ঘর্ম ছিদ্র এবং ঘর্ম নালি বন্ধ হয়ে যায়। প্রধানত ত্বক অপরিষ্কার রাখলে, ত্বকে বেশিক্ষণ ঘাম জমে থাকলে, বেশি তেল দিলে ময়লা তেলে আটকে গিয়ে ঘর্ম ছিদ্র বন্ধ করে দেয়। কাজেই দেহে অতিরিক্ত তৈলমর্দন হইতে সাবধান!
ঘাম-ঘামাচি কমাতে সত্যিই কি পাউডারের কোনও ভূমিকা আছে! এক কথায় নেই। পাউডার তৈরি হয় স্টার্চ বা শ্বেতসার জাতীয় পদার্থ দিয়ে, যা গরমে গলে গিয়ে সহজেই ঘর্ম ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। কাজেই প্রিকলি হিট পাউডারে ঘাম এবং ঘামাচি কমে, এটা নিছক বিজ্ঞাপনী প্রচার ছাড়া কিছু নয়। প্রশ্ন উঠবে তবে কি পাউডার দেব না ঘামাচি দূর করার জন্য! না। শরীরের সুগন্ধ ছড়ানোর জন্য আর ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব কমিয়ে ত্বককে পেলব রাখার জন্য পাউডার দিতেই পারেন। না দিলেও মহাভারত অশুদ্ধ হবে না।
ঘাম-ঘামাচি কমাতে সত্যিই কি পাউডারের কোনও ভূমিকা আছে! এক কথায় নেই। পাউডার তৈরি হয় স্টার্চ বা শ্বেতসার জাতীয় পদার্থ দিয়ে, যা গরমে গলে গিয়ে সহজেই ঘর্ম ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। কাজেই প্রিকলি হিট পাউডারে ঘাম এবং ঘামাচি কমে, এটা নিছক বিজ্ঞাপনী প্রচার ছাড়া কিছু নয়। প্রশ্ন উঠবে তবে কি পাউডার দেব না ঘামাচি দূর করার জন্য! না। শরীরের সুগন্ধ ছড়ানোর জন্য আর ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব কমিয়ে ত্বককে পেলব রাখার জন্য পাউডার দিতেই পারেন। না দিলেও মহাভারত অশুদ্ধ হবে না।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৩: আর্ষ মহাকাব্যদ্বয়ের আদি প্রচারমাধ্যম
দশভুজা: সেই ষোলো মিনিটের দূরত্ব কোনওদিন পূরণ হয়নি
ছোটদের যত্নে: সুস্থ ও পরিপুষ্ট সন্তানের জন্য এগুলি মেনে চলছেন তো? সন্তানসম্ভবাদের জরুরি পরামর্শে শিশু বিশেষজ্ঞ
এবারে লাখ টাকার প্রশ্ন হল, তাহলে ঘাম-ঘামাচি কমাতে কি করবেন। আর যাই করুন, বদন মামার মতো সারা গায়ে-মুখে পাউডার মেখে তুষার মানব হয়ে ঘুরে বেড়াবেন না। ঘামাচি হওয়ার একমাত্র কারণ দেহতত্বকে নোংরা অপরিষ্কার রাখা এ ব্যাপারটি সবার আগে মাথায় রাখতে হবে।
● ঘাম দেহে জমে থাকলে চলবে না।
● স্যাঁতসেতে বা গুমোট আবহাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
● পরিষ্কার সুতির পোশাক গরম কালে পরতে হবে, সিনথেটিক নয়। সম্ভব হলে প্রতিবার পড়ার আগে জল কাচা করে নিতে হবে।
● ঘেমো জামা কাপড় গায়ে রাখা চলবে না।
● সাবান এবং ছোবড়া দিয়ে দেহ ত্বক ভালো করে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে।
● অতিরিক্ত তৈল মর্দন চলবে না।
● একনাগাড়ে কয়েক ঘণ্টা গায়ে গেঞ্জি ও জামা, পায়ে মোজা বা জুতো একদমই রাখা উচিত নয়।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৬: দুয়ারে অপচ্ছায়া
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৩: ‘তিসরি মঞ্জিল’ ছিল পঞ্চমের প্রথম অগ্নিপরীক্ষা
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৮: পূর্ণ অপূর্ণ-র মাঝে পথ দেখায় ‘দেবত্র’
ঘাম নিয়ে কিছু মজার তথ্য
শেষ কথা হল, গরম কালে ঘাম-ঘামাচি তাড়াতে কখনওই পাউডার ব্যবহার করবেন না।
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।