বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

বর্তমান যুগে চুল পাকার কোনও বয়স হয় না এই উক্তির সত্যতা আমরা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করছি। তেমনই কেবল চুল পাকা নয় বাস্তবিক অর্থেই বর্তমান যুগে অনেক অসুখকেই আপনি বয়স দিয়ে বাঁধতে পারবেন না, আর এই সমস্ত অবাধ্য লাগামছাড়া অসুখের মধ্যে একটি অন্যতম অসুখ হল ডায়াবেটিস। আজ আমি মূলত আলোচনা করব ডায়াবেটিস কালের হতি পারে এবং মূলত কোন কোন সম্ভাবনা বা লক্ষণ দেখলে আপনার ডায়াবেটিসের থেকে সচেতন হওয়া উচিত।

প্রথমেই বলি ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা তাঁদের মধ্যে রয়েছে যাঁদের পরিবারে বংশ পরম্পরাগতভাবে এই রোগ তার নিজস্ব ট্র্যাডিশন বজায় রেখে চলেছে। ধরুন আপনার ঠাকুরদা বা তার বাবার ডায়াবেটিস ছিল কিংবা আপনার বাবা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাহলে আপনার আশুকর্তব্য হল পঁচিশ বছর বয়সের পর থেকেই নিয়ম করে রক্তে শর্করার পরিমাণ পরীক্ষা করানো। ডায়াবেটিসের দুটি পর্ব হল, যথা, প্রাক ডায়াবেটিস পর্ব এবং ডায়াবেটিস পর্ব। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে যদি দেখা যায় যে আপনার রক্তে HB1C এর মাত্রা ৬.৫-এর বেশি তাহলে বুঝতে হবে আপনি ডায়াবেটিস আক্রান্ত আর যদি HB1C-এর মাত্রা ৫.৭ থেকে ৬.৪-এর মধ্যে হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনি প্রাক্ ডায়াবেটিস পর্বে রয়েছেন। প্রাক ডায়াবেটিস পর্বে থাকা মানেই কিন্তু আপানার খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ, যথাযথ শরীরচর্চা এবং প্রতি চ-মাস অন্তর রক্তে শর্করার পরিমাণ পরীক্ষা করানো অতি আবশ্যকীয় কর্তব্য

দ্বিতীয়ত, গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলা ডায়াবেটিস আক্রান্ত হয়ে থাকেন। যদিও সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এইক্ষেত্রে আবার এই অসুখ সেরেও যায়। এই জাতীয় ডায়াবেটিসকে বলা হয়ে থাকে ডিসট্রেশানাল ডায়াবেটিস। ডিসট্রেশানাল ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে আপনাকে যে বিষয়টিতে সচেতন থাকতে হবে সেটি হল সন্তান জন্মগ্রহণের পরবর্তী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে কিন্তু পুনরায় আপনার ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার উচিত নিয়মিত চেক-আপ এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা সম্পর্কে সচেতন ও অবগত থাকা।
তৃতীয়ত, ডায়াবেটিসের আরও একটি অন্যতম কারণ হল অনিয়মিত জীবনযাত্রা। এই লকডাউনে আমাদের কাছে এরকম অনেক মানুষ এসেছেন যাদের বংশ পরম্পরাগতভাবে ডায়াবেটিসের কোনও ইতিহাস না থাকা সত্ত্বেও তারা ডায়াবেটিস আক্রান্ত কেবলমাত্র লকডাউনে বাড়িতে বসে কাজ, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, অনিয়ন্ত্রিত খাওয়াদাওয়া এবং ওজন বৃদ্ধির কারণে। হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া, বিশেষত অতিরিক্ত পরিমাণে পেটের মেদ বৃদ্ধি কিন্তু ডায়াবেটিসের সহায়ক অনুঘটক হিসাবে কাজ করতে পারে, আবার হঠাৎ অতিরিক্ত ওজন কমে গেলেও জানবেন সেটিও কিন্তু ডায়াবেটিসের একটি অন্যতম সম্ভাবনা হিসাবে কাজ করতে পারে। অতএব দু’ ক্ষেত্রেই সাবধান হওয়াটা জরুরি আপনার জন্য।

কেবলমাত্র বংশে ডায়াবেটিস নয়, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টরল বা হৃদযেন্ত্রর সমস্যার ধারাবাহিক ইতিহাস যদি আপনার পরিবারে থেকে থাকে তাহলেও কিন্তু পরবর্তীকালে আপনার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে থাকে, বিশেষত যদি কখনও রক্তে লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেন যে কম বয়সেই আপনার রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি বা আপনি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তাহলে বুঝবেন এই লক্ষণগুলি কিন্তু ভবিষ্যতে আপনার ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে ইঙ্গিত করছে। সেক্ষেত্রে তিরিশ বছর বয়সের পর থেকে প্রতছ মাস অন্তর রক্তে শর্করা মাত্রা পরীক্ষা করানো কিন্তু আবশ্যক।

ডায়াবেটিস হল এমন এক অসুখ যাকে ঠিক সময়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আপনার সমস্যা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যেতে পারে কিন্তু অবহেলা করলে ফলাফল হতে পারে মারাত্মক। তাই সময় থাকতে সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

Skip to content