সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

কোভিডকালে অল্পবয়সিদের চোখের যত্ন নিয়ে বিস্তারিত পরামর্শে দিশা আই হাসপাতাল-এর সিনিয়র কনসাল্টেন্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ ভাষ্কর ভট্টাচার্য

২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে মানুষের কাছে অফিসের সংজ্ঞা হয়ে দাঁড়িয়েছে চারটি দেওয়ালের ঘেরাটোপে, ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের সামনে দিবারাত্র মুখ গুঁজে পড়ে থাকার নামান্তর। বড়দের প্রসঙ্গ না হয় খানিক আলাদা কিন্তু অবস্থা আরও সঙ্গিন হয়ে উঠেছে আমাদের ছোট্ট ছোট্ট স্কুলপড়ুয়াদের। মানসিক অবস্থার পাশাপাশি শারীরিক অবস্থার অবনতিও কিন্তু এই সময়ে অনিবার্য। ভেবে দেখেছেন কি অনবরত অনলাইন পড়াশোনার ফলে আপনার খুদেটির দৃষ্টিশক্তি ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে? জেনে নিন অনলাইন জাঁতাকলের প্রকোপ থেকে কীভাবে বাঁচাবেন আপনার সন্তানের চোখদুটিকে?

কমবেশি দেড় বছর হতে চলল স্কুল-কলেজ বন্ধ। পুরো পড়াশোনা স্মার্টফোন-ট্যাব, কম্পিউটার কেন্দ্রিক হওয়ায় ছোটদের চোখে ঠিক কী কী ক্ষতি হতে পারে?
●● কম্পিউটার বা মোবাইলের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখের আইবলে একটু চাপ পড়ে৷ এর ফলে কপালে একটু ব্যথা হতে পারে, আবার চোখ থেকে জল পড়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অনেকক্ষণ কম্পিউটার বা মোবাইলে চোখ রাখার ফলে চোখের পলক কম পড়ে, এর ফলে চোখ একটু শুষ্ক হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।

স্মার্টফোন থেকে নির্গত হওয়া বিশেষ ধরনের নীল আলো দীর্ঘক্ষণ ধরে ছোটদের চোখে পড়ার জন্য কি ভবিষ্যতে তাদের চোখের দৃষ্টিশক্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে?
●● মোবাইল ফোন থেকে নির্গত হওয়া নীল আলো চোখের পর্দার ক্ষতি করে, তবে এর কোনও তাৎক্ষণিক প্রভাব না থাকলেও এর একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব আছে। তবে মোবাইলের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে যে দৃষ্টিশক্তিতে প্রভাব পড়বে এমনটা নয়।

কমবয়সিদের মাত্রাতিরিক্ত স্মার্টফোনের ব্যবহার কি চোখকে শুষ্ক করে দিচ্ছে? তাহলে কী করণীয়?
●● চোখ যাতে শুষ্ক না হয়ে যায় তার জন্য বারবার করে চোখে জলের ঝাপটা দেওয়া ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। মোবাইল একটানা আধ ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা ব্যবহার করার পর দশ মিনিটের মতো অন্তত একটু বিরতি নেওয়া খুব জরুরি। মাঝেমধ্যে একটু চোখটা বন্ধ করে রাখা উচিত। মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে ব্যবহার করা উচিত। ঘরে পর্যাপ্ত আলো থাকলে তবেই মোবাইল ব্যবহার করা উচিত। অন্ধকার ঘরে একদমই ব্যবহার করা উচিত নয়। মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সময় ঘন ঘন চোখের পলক ফেলা উচিত৷ এটি চোখকে সহজে শুষ্ক হয়ে যাওয়ার থেকে আটকায়।

মাত্রাতিরিক্ত স্মার্টফোনের ব্যবহারের ফলে কি ছোটদের চোখে পাওয়ার বাড়ছে? ফলস্বরূপ তাদের মধ্যে চশমা পরার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে?
●● এই বিশ্বে একটা তত্ত্ব আছে যে বেশি পড়াশোনা করলে মাইনাস পাওয়ার একটু বাড়তে পারে, তবে সেটি বই পড়লেও হয় শুধু কম্পিউটার বা মোবাইল ঘাঁটলে নয়। যাদের পরিবারে মায়োপিয়ার ইতিহাস আছে, মানে যাদের মা-বাবা মায়োপিক বা মাইনাস পাওয়ার আছে তাদের সন্তানদের মাইনাস পাওয়ার আসার সম্ভাবনা আছে। তবে এমনও দেখা যায় যারা সারা দিন-রাত বই পড়ছে তাদেরও মাইনাস পাওয়ার আসতে পারে। সুতরাং মাত্রাতিরিক্ত স্মার্টফোনের ব্যবহারের সঙ্গে ওইভাবে পাওয়ার বেড়ে যাওয়ার সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই।

কারও চোখের সমস্যা থাকলে তাদের কী কী নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে?
●● অবশ্যই সাবধানতা মেনে চলা উচিত।

মোবাইল ফোন থেকে নির্গত ক্ষতিকারক নীল আলোকে আটকানোর কোনও উপায় আছে কি?
●● ক্ষতিকারক নীল আলোকে আটকানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হল নীল আলো প্রতিরোধ করে এমন চশমা পরতে হবে।

কমবয়সিদের চোখেও কি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হতে পারে?
●● কমবয়সিদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বেশি থাকে, তার ফলস্বরূপ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বেশি। তবে একথা বলে রাখা ভালো যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কিন্তু আমাদের পরিবেশে সবসময় থাকে। যে কোনও মানুষ কিন্তু এর দ্বারা যেকোনও সময়ে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সেটার বিরুদ্ধে লড়ে। তবে যে সব মানুষদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কম তাদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কোভিডের সঙ্গে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সম্পর্ক নেই। কোভিডে যেসব ওষুধ ব্যবহৃত হয় মূলত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেগুলি আমাদের শরীরে ইমিউনিটি সাপ্রেস করে অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে একটু চেপে দেয়। সেই সুযোগেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আক্রমণ করে।

চোখের মধ্যে কোনওভাবে যদি হান্ডস্যানিটিজার লেগে বা ঢুকে যায়, তৎক্ষণাৎ কী করণীয়?
●● প্রচুর পরিমাণে জলের ঝাপটা দেওয়া উচিত, তারপরেও যদি চোখ জ্বালা না কমে বা চোখ লাল হয়ে থাকে তাহলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।

ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, স্মার্টফোনের ডিসপ্লে কত দূরে ও কত উচ্চতায় এবং কত ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে থাকা উচিত? বাড়তি সুরক্ষার জন্য কোনও প্রটেক্টর লাগানো উচিত? বা সমস্যা এড়াতে বিশেষ ধরনের কোনও চশমা পরা যায়?
●● ডেস্কটপ, ল্যাপটপ বা মোবাইলের ডিসপ্লে কমপক্ষে দেড় ফুট দূরত্বে থাকা উচিত আমাদের চোখ থেকে। কম্পিউটার স্ক্রিনের ওপর নীল আলো আটকায় এমন কোনও স্ক্রিন গার্ড লাগানো উচিত। নীল আলো প্রতিরোধক চশমা পরা উচিত।

কেমন খাদ্যাভ্যাস ছোটদের চোখের পক্ষে ভালো?
●● ভিটামিন এ যুক্ত খাবার আমাদের চোখের জন্য ভালো। তাছাড়া ভারতীয় খাবারে যেসব পুষ্টিগুণ আছে তা চোখ ভালো রাখার জন্য যথেষ্ট।
আপনার সন্তানের চোখদুটিই তার ভবিষ্যৎ জীবনের আলোর দিকটিকে যথাযথভাবে নিরীক্ষণ করতে সাহায্য করবে, তাই ওর ভবিষ্যতের সঙ্গে কোনও আপস নয়। সুস্থ চোখ এক সুস্থ ভবিষ্যতের বার্তা হয়ে আসুক আপনার সন্তানের জীবনে আর তার জন্য জারি থাকুক সমস্ত প্রচেষ্টা।
* ডাঃ ভাষ্কর ভট্টাচার্য, সিনিয়র কনসাল্টেন্ট, দিশা আই হাসপাতাল।

Skip to content