সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

আমরা ডায়াবিটিস রোগীদের সাধারণত কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট জাতীয় খাবার কম খেয়ে প্রোটিন খাবার বেশি খেতে বলি। আজ আমরা আলোচনা করব, কী ধরনের প্রোটিন খেলে ডায়াবিটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমবে। প্রোটিন অনেক রকম আছে। মাংস, মাছ, ডিম, ডাল, দুধ সেগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রোটিন।

সব সময় মাথায় রাখতে হবে, প্রোটিন খাওয়ার একটা নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। যেমন কারও ওজন ৬০ কেজি হলে তাহলে আমরা তাঁকে প্রতিদিন সর্বাধিক ৬০-৯০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন খাওয়ার পরামর্শ দিই। এই পরিমাণের বেশি পরিমাণ প্রোটিন একেবারেই খাওয়া যাবে না। কারণ, এর থেকে বেশি প্রোটিন খেলে কিডনির ওপর চাপ পড়তে পারে।
সুতরাং প্রোটিন খাওয়ার সময়, বিশেষত যাঁরা ডায়াবিটিসের পূর্ববর্তী ধাপে (প্রি-ডায়াবিটিস) রয়েছেন বা যাঁদের বংশ পরম্পরায় এই অসুখ আছে, তাঁদের ডায়াবিটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাঁদেরকে আমরা সাধারণত বলি, ৩০ বছর বয়সের পর থেকে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ ভাত, রুটি, ময়দা, ছিঁড়ে, খই প্রভৃতি কমিয়ে প্রোটিনের উপর জোর দিতে হতে।
ইতালির একদল গবেষক যাঁদের ডায়াবিটিসের ঝুঁকি রয়েছে, তাঁদের বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন খাইয়ে একটি গবেষণা করেন। সেই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আমরা যদি নিয়মিত রেড মিট খাই তাহলে ডায়াবিটিস হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট না খেয়েও শুধু প্রোটিন খাওয়ার জন্য আমাদের ডায়াবিটিস বেড়ে যেতে পারে।

রেড মিটের তুলনায় হোয়াইট মিট অর্থাৎ মুরগির মাংস কিছুটা হলেও ভালো। বরং শাক-সব্জি থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন এদের থেকে নিরাপদ। যেমন ধরুন ডাল, রাজমা, সয়াবিনে থাকা প্রোটিন কিন্তু রেড মিট বা হোয়াইট মিট এর তুলনায় ভালো। রেড মিট সব থেকে ক্ষতিকর। এই মাংস খেলে ডায়াবিটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুন:

শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়েছে? প্রাকৃতিক উপায়েই সহজে জব্দ হবে এই রোগ, কী ভাবে?

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-৩: মেডিকেল কলেজ থেকে বিশ্বকাপ

বাঙালিদের জন্য একটি সুখবর হল— মাছ খাওয়া অনেক বেশি নিরাপদ। অর্থাৎ আমরা যদি মাছের ওপর জোর দিই, তাহলে কিন্তু আমাদের প্রোটিন জনিত কারণে ডায়াবিটিস হওয়ার সম্ভাবনা এতটা বাড়বে না। অর্থাৎ ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্য মাছ খাওয়া ভালো। আর যদিও প্রাণীজ প্রোটিন খেতেই হয় তাহলে মুরগির মাংস বা ডিম খেতে পারেন। কিন্তু রেড মিট কোনও ভাবেই নয়।

ওই গবেষকরা আমাদের একটা দিশা দেখিয়েছেন। সেটা হল, যাঁদের ডায়াবিটিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে বা প্রি-ডায়াবিটিসে ভুগছেন তাঁরা যদি রোজ ২০০ এমএল দুধ বা সমপরিমাণ দুগ্ধ জাতীয় খাবার খান যেমন ধরুন ২০০ গ্রাম টকদই বা ছানা ইত্যাদি তাহলে কিন্তু ডায়াবিটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাতে পারে।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫০: লুকোনো বই পড়ার জন্য রবীন্দ্রনাথ বাক্সের চাবি চুরি করেছিলেন

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২২: স্বপ্নের সারথি পাঠিয়েছেন ‘বকুল’ ফুল

গবেষণায় এও দেখা গিয়েছে, যাঁরা নিয়মিত এই পরিমাণ দুগ্ধ জাতীয় প্রোটিন খেয়েছেন তাঁদের ১০ ভাগ ক্ষেত্রে ডায়াবিটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। অর্থাৎ আমরা যখন প্রোটিন পছন্দ করব, তখন খেয়াল রাখতে হবে দিনের মধ্যে একবার যেন দুধ বা দুগ্ধ জাতীয় প্রোটিন খাদ্য তালিকায় থাকে। দু’বার খেলে আরও ভালো। আমরা অনেক সময়ই বলি, সন্ধ্যের সময় ধরুন এক কাপ দুধ খেলেন। আবার রাতে রুটি খাওয়ার সময় বা শোয়ার সময় এক কাপ দুধ খেলেন। লাঞ্চের সময় হয়তো একশো গ্রাম মতো টকদই খেতে পারেন।
আরও পড়ুন:

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৩৩: শোকস্তব্ধ অযোধ্যানগরী কি আপন করে নিল ভরতকে?

আপনি কি চুলের বাড়তি যত্নে হেয়ার মাস্ক লাগাচ্ছেন? কিন্তু ব্যবহারের নিয়ম জানেন তো

মোদ্দা কথা হল, আমরা যদি ডায়াবিটিস প্রতিরোধ করতে চাই তাহলে রোজ কমপক্ষে ২০০ এমএল দুধ বা দুগ্ধ জাতীয় খাবার খেতে হবে। এই প্রোটিনই কিন্তু সব থেকে ভালো। তাই প্রোটিন নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের সজাগ হতে হবে। রেড মিট ও হোয়াইট মিট কমিয়ে মাছ, ডাল ও দুধের উপর জোর দিতে হবে। ব্যস, তা হলেই জব্দ হবে ডায়াবিটিস।

যোগাযোগ: ৯৮৩১৬৭১৫২৫
* সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন (health-checkup – Health Tips) : ডাঃ আশিস মিত্র (Dr. Ashis Mitra), বিশিষ্ট মেডিসিন ও ডায়াবিটিস বিশেষজ্ঞ।

Skip to content