শনিবার ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও তারাসুন্দরী দেবী।

বেশ কিছুদিন বাদে আবার স্টার থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ। তখন অমৃতলাল বসু রচিত এবং পরিচালিত ‘তাজ্জব ব্যাপার’ নাটকটি মঞ্চস্ত করেছিলেন নাট্যকার স্বয়ং। সেই সময়ে গিরিশচন্দ্র যোগদান করেছিলেন স্টার থিয়েটারে এবং যোগদান করেই তিনি পুনরায় ম্যানেজারের পদটি গ্রহণ করেন। ইতিপূর্বে রসরাজ অমৃতলাল বসু মশাই ম্যানেজারের পদে আসীন ছিলেন।
কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন উপলক্ষে গিরিশচন্দ্র ঘোষ একটি রূপক নাটক রচনা করেছিলেন। এই রূপক নাটকটির নাম হল ‘মহাপূজা’। এই নাটকের মধ্য দিয়ে গভীরভাবে গিরিশচন্দ্র তাঁর দেশভক্তির পরিচয় দিয়েছিলেন। মহাপূজা নাটকটি স্টার থিয়েটারে প্রথম অভিনীত হয় ১৮৯০ সালের ২৪ ডিসেম্বর।
আরও পড়ুন:

নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-৬৬: গিরিশচন্দ্র ঘোষের ‘য্যায়সা কা ত্যায়সা’ মঞ্চস্থ হয়েছিল মিনার্ভা থিয়েটারে

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৬: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—ছাগল ক্ষুরি ও ধানি ঘাস

সেই প্রথম অভিনয় রজনীতে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন—মানদা সুন্দরী (ব্রিটানিকা), তারাসুন্দরী (সরস্বতী), নগেন্দ্র বালা (লক্ষ্মী), বনবিহারিনী (ভারতমাতা), অমৃতলাল মিত্র, অঘোরনাথ পাঠক, রামতারণ সান্যাল, কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায়, মহেন্দ্রনাথ চৌধুরী প্রমুখ ভারত সন্তানের ভূমিকাতে অভিনয় করেছিলেন।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৯: শাসক বেকায়দায় পড়লেই প্রতিপক্ষকে সন্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়, যদিও রাজনীতিতে সে সব মানা হয় না

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৬২: সত্যজিৎ রায় রুপটান শিল্পীকে বলেছিলেন, উত্তমকুমারের কোনও মেকআপ করার

ভারত সন্তানদের একটি গান তখন অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। সে গানটি উল্লেখ করা গেল—
“নয়ন জলে গেঁথে মালা পরাবো দুখিনীমায়
ভক্তি কমল কলি দিব মায়ের রাঙ্গা পায়।।
শিখ হৃদি উচ্চ শিক্ষা মাতৃমন্ত্রে লহ দীক্ষা
ত্যাজ স্বার্থ মাগি ভিক্ষা রহ জননী সেবায়।।
যে নামে দূরিত হরে রাখ যত্নে হৃদে ধরে
অবনী তারে আদরে, জননী প্রসন্না যায়।”
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬৩: বেলুড়মঠে শ্রীমায়ের অভিনন্দন

এই নাটকের স্টার থিয়েটারের অভিনয় দেখে কালীকৃষ্ণ ঠাকুর অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছিলেন এবং তিনি তখন গিরিশচন্দ্র ঘোষকে এক হাজার টাকা পুরস্কার প্রদান করেছিলেন। তখনকার দিনে এক হাজার টাকা অনুমান করা যায় সহজেই। সেই টাকা গিরিশচন্দ্র ঘোষ সমস্ত অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং কলাকুশলীদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮১: তথাকথিত পরিচয়হীন প্রতিভার মূল্যায়ন কী শুধুই সাফল্যের নিরিখে সম্ভব?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

এখানেই শেষ নয়, গিরিশচন্দ্র বাকি যে টাকা পড়েছিল তা তিনি স্টার থিয়েটারের স্বত্বাধিকারীদলের হাতে অর্পণ করেছিলেন। যদিও স্টার থিয়েটারে এরপরে আর বেশিদিন গিরিশচন্দ্র ঘোষ ছিলেন না। চলে এসেছিলেন তাঁর প্রিয় মিনার্ভা থিয়েটারে।—চলবে।
* নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে (Girish Chandra Ghosh–Actor –Theatre) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।

Skip to content