শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


দিল্লি ও অন্যান্য দূষিত শহরগুলির মতো কলকাতার বায়ুমণ্ডলও অতটা সুস্বাস্থ্যকর নয়। এর অন্যতম কারণ, বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকারক কেমিকেল এবং দূষণকারী পদার্থ বাতাসে মিশে এখানকার বায়ুমণ্ডলও বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এছাড়াও অনেক রকম কারণ থাকতে পারে বায়ুদূষণের, যেমন— গাড়ি থেকে নির্গত দূষিত ঘন কালো ধোঁয়া, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্মাণকার্য, অতিরিক্ত সবুজ ধ্বংস প্রভৃতি। এই দূষিত বাতাসই আমাদের শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন অসুখবিসুখকে বাসা বাঁধতে সাহায্য করছে। যাইহোক, বায়ুদূষণের হাত থেকে আমাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে এখনকার অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এয়ার পিউরিফায়ার।

এয়ার পিউরিফায়ার ঠিক কী?
এয়ার পিউরিফায়ার হল বিশেষ এক ধরনের উন্নত প্রযুক্তির বৈদ্যুতিক মেশিন। এর প্রধান কাজ বাড়ি বা ঘরের দূষিত বায়ুকে বিশেষ পদ্ধতিতে পরিশোধিত করে আমাদের বিশুদ্ধ অক্সিজেনের জোগান দিয়ে যাওয়া।

প্রয়োজন কেন?
এই মুহূর্তে সুস্থ থাকতে এয়ার পিউরিফায়ার ছাড়া তেমন কোনও বিকল্প আমাদের হাতে নেই। এটি প্রায় ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ির ভেতরের বায়ুকে সব রকম দূষণকারী এবং খারাপ রাসায়নিকের হাত থেকে মুক্ত করতে পারে। যাঁদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য এটি বেশ ভালো। গবেষণায় জানা গিয়েছে, ক্ষতিকারক বায়ু থেকে আজকাল ব্যাপক হারে অ্যাজমা, ক্যানসার প্রভৃতি রোগের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। আবার ধরুন বাড়িতে কেউ ধূমপান করলে সিগারেটে থাকা ক্ষতিকারক কেমিকেলও বাতাসে মেশে শরীরের ক্ষতি করছে। এয়ার পিউরিফায়ার এই সমস্যা থেকেও আমাদের রক্ষা করবে। বাড়িতে থাকা এয়ার পিউরিফায়ার এ ধরনের বায়ুদূষণ কমাতেও কার্যকরী ভূমিকা নেয়।
চিকিৎসকদের মতে, যাঁরা ধূমপান করেন একমাত্র তাঁদেরই ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকত। কিন্তু এখন যাঁরা ধূমপান করেন না, তাঁদেরও এই প্রবণতা ভালো রকমই দেখা যাচ্ছে। কোনও শিশুর হৃদযন্ত্রে ছিদ্র থাকলে এমনিতেই সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এখন দেখা যাচ্ছে শিশুদের এমন হারে নিউমোনিয়া হচ্ছে যে, তাদের জীবন বাঁচানো দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। এসবের জন্য বায়ুদূষণকেই দায়ী করছেন চিকিৎসকরা। তাই এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে ও বাড়তি সতর্কতার জন্য এয়ার পিউরিফায়ারের ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হয়।

কীভাবে কাজ করে?
দেখা গেছে অনেক সময় বাতাসে শ্বাসযোগ্য ভাসমান কণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার) পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটা বেড়ে যায়। এয়ার পিউরিফায়ারের ফিল্টার বায়ু থেকে ভাসমান কণাকে ছেঁকে বার করে নেয়। এয়ার পিউরিফায়ারে থাকা ‘হাই এফিসিয়েন্সি পার্টিকুলেট এয়ার’, ‘চার্জড মিডিয়া’, ‘অ্যান্টিব্যাকেটিয়াল’ এবং ‘ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটের’ প্রভৃতি ফিল্টার বিশেষ পদ্ধতিতে বায়ুকে দূষণমুক্ত করে থাকে। আপনার এয়ার পিউরিফায়ারে থাকা ক্লিন এয়ার ডেলিভারি রেট জানিয়ে দেবে প্রতি মিনিটে কতটা ঘনত্বের বায়ু শোধন হচ্ছে। সেই রেট যত বেশি হবে, তত তাড়াতাড়ি বায়ু পরিশুদ্ধ হবে। আবার এতে থাকা অ্যাক্টিভেটেড কার্বন লেয়ার বা কার্বন ফিল্টার যত ভালো বা উন্নতমানের হবে বায়ুর দূষিত গ্যাস ও রাসায়নিক পদার্থ শোধনের কার্যক্ষমতাও তত বাড়বে।

কেনার আগে জেনে নিন
ঘরের আয়তন অনুযায়ী কত শক্তির এয়ার পিউরিফায়ারা লাগবে সেটা নিশ্চিতভাবে জেনে নেবেন।
সব সময়ই ঘরের আয়তনের থেকে একটু বড় এবং কমপ্যাক্ট মডেলের পিউরিফায়ার ক্রয় করা আপনার উচিত।
এসময় বেশি পরিশোধন ক্ষমতাযুক্ত এয়ার পিউরিফায়ার কেনাই উচিত মনে হয়।
পিউরিফায়ারের বায়ুশোধন ক্ষমতা ও ওজন কত তা জেনে নেওয়া আপনার কর্তব্য।
আপনার কেনা এয়ার পিউরিফায়ারে চালু অবস্থায় কতটা শব্দ হবে সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
পিউরিফায়ার চালাবেন কীভাবে তা জেনে নিন।
মেশিনটিকে রক্ষণাবেক্ষণ করবেন কীভাবে তা জেনে নিন।
যে ব্র্যান্ডের পিউরিফায়ার কিনছেন কাছাকাছি কোথায় কোথায় সার্ভিস সেন্টার আছে তা জেনে নিন।
কত বছরের ওয়্যারেন্টি পাবেন তা দেখে নিন।
ভালো করে দেখে নিন ‘হাই এফিসিয়েন্সি পার্টিকুলেট এয়ার’, ‘চার্জড মিডিয়া’, ‘অ্যান্টিব্যাক্ট্রিয়াল’ এবং ‘ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটের’ ফিল্টার সহ আর কী কী নতুন ফিল্টার আপনার পছন্দের পিউরিফায়ারে আছে।
প্রতি ঘণ্টায় বায়ু শোধনের (এয়ার এক্সচেঞ্জ রেট) মাত্রা কতটা।
কারও হাঁপানির সমস্যা থাকলে ৫-৬ এয়ার এক্সচেঞ্জ রেটের এয়ার পিউরিফায়ার কেনা ভালো।
প্রতি মিনিটে কত বেশি ও দ্রুত ঘনত্বের বায়ু শোধন করার ক্ষমতার প্রযুক্তি তথা ক্লিন এয়ার ডেলিভারি রেট আছে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
দূষিত গ্যাস ও রাসায়নিক পদার্থ শোধনের জন্য অ্যাক্টিভেটেড কার্বন লেয়ার বা কার্বন ফিল্টার যদি থাকে তা খুবই ভালো।
ইউভি ফিলট্রেশন বা আয়োনাইজড বেসড পিউরিফায়ারে ওজন গ্যাস নির্গত হয়, যা ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। তাই এদিকেও নজর দিন।

কী কী ব্র্যান্ডে পাওয়া যায়?
বাজারে এখন অনেক সংস্থারই উচ্চ প্রযুক্তির রকমারি মডেলের এয়ার পিউরিফায়ার পাওয়া যাচ্ছে। এয়ার পিউরিফায়ার তৈরি করে এমন কয়েকটি সংস্থা হল—ফিলিপস, ভোল্টাস, স্যামসাং, ডাইকিন, এম আই, ইউরেকা ফোর্বস, সার্প, কেন্ট, লিভপিওর, হ্যাভলস প্রভৃতি। এদের উন্নত প্রযুক্তির এয়ার পিউরিফায়ারে ভরসা করা যায়।

দাম কেমন?
দাম খুব বেশি নয়। হাজার ছয়েক টাকা বাজেট থাকলে কেনা যেতে পারে এয়ার পিউরিফায়ার। তবে সংস্থা, বাড়ি বা ঘরের আয়তন, কতটা ক্ষমতা, কী কী প্রযুক্তি আছে প্রভৃতি তার ওপর এয়ার পিউরিফায়ারের দাম নির্ভর করে। এখন বিভিন্ন স্টোর ছাড়াও অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট-এর মতো অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যাচ্ছে এয়ার পিউরিফায়ার। বৈদ্যুতিন স্টোর এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলি অনেক সময় আকর্ষণীয় অফারও দেয়।

বাড়তি সুবিধা
যেখানে খুশি সহজে নিয়ে যাওয়া যায় এর বাড়তি সুবিধা হল, এয়ার কন্ডিশনারের মতো কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় স্থায়ীভাবে বসাতে হয় না। বাড়ির মধ্যে যেকোনও জায়গায় সহজে প্রয়োজন মতো নিয়ে যাওয়া যায়। আবার ঠিকানা বদলালেও কোনও ঝামেলা থাকে না। টেকনিশিয়ান ডাকার দরকার পড়ে না। এখন তো আবার টেবিল বা অন্য কোথাও রাখার জন্য খুব সুন্দর দেখতে পোর্টেবল মডেলও সংস্থাগুলি বাজারে নিয়ে এসেছে।

উপহার
প্রিয়জনকে দেওয়া যায় এমন উপহারের তালিকায় এখন প্রথম সারিতে এয়ার পিউরিফায়ার। জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, বিয়ে, পুজো প্রভৃতি উৎসবে এয়ার পিউরিফায়ার উপহার হিসেবে দেওয়া যেতে পারে।

বিদ্যুৎ খরচ
এয়ার কন্ডিশনারের তুলনায় একেবারে নামমাত্র খরচে এয়ার পিউরিফায়ার চলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এখনকার উন্নত প্রযুক্তির রেফ্রিজারেটর বা ওয়াশিং মেশিনে যেমন বিদ্যুৎ খরচ হয়, সেরকমই খরচ এয়ার পিউরিফায়ারে।

ছবি ও তথ্য : সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

Skip to content