রবিবার ১৯ মে, ২০২৪


ছবি সংগৃহীত।

ভারতীয় জীবনমঞ্চ মাতিয়ে রাখেন যে নরচন্দ্রমা, কেমন ছিল সেই রামচন্দ্রের জন্মভূমি অযোধ্যা? সরযূনদীর তীরে সমৃদ্ধ কোশল জনপদে অযোধ্যা নগরী। যে কোনও মহানগরীর মতো দীর্ঘ রাজপথ, সেখানে সুশোভিত কুসুমিত বীথি সদা সুগন্ধে আমোদিত, সুপরিকল্পিত সুরক্ষিত এই নগরীতে বাস করেন রামচন্দ্রের পিতা দশরথ। কারা তাঁর প্রজা?

সর্বযন্ত্রায়ুধবতীমুষিতাং সর্বশিল্পিভিঃ।
সূতমাগধসম্বন্ধাং শ্রীমতীমতুলপ্রভাম্।


বিচিত্র যন্ত্র ও অস্ত্রশস্ত্রের সুসজ্জিত অযোধ্যা নগরে বাস করেন শিল্পবিদ্যা বিশারদ, কোথাও সূত ও মাগধগণ, মোটামুটি এক মিশ্র পেশার জনজাতি। এছাড়াও সেখানে বাস করেন অস্ত্রপ্রয়োগবিদ্যা বিশারদ মহারথগণ। সাগ্নিক ব্রাহ্মণ বেদাঙ্গসহ চতুর্বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ, গুনবান, দয়াবান, দানশীল সত্যনিষ্ঠ মহর্ষিকল্প নরশ্রেষ্ঠ ও মহাত্মাগণ অধ্যুষিত এই জনপদ। অযোধ্যা প্রমোদোদ্যান, নাট্যশালা, আম্রকানন, বৃহৎ শালবীথি পরিবৃত। প্রজারা সর্বদাই পরিতৃপ্ত। তাই নির্লোভ তাঁরা। উদারতার অভাব নেই তাদের যাপনে।

কামী বা না কদর্য্যো বা নৃশংসঃ পুরুষঃ ক্বচিৎ।
সেখানে ছিল না কোন লম্পট কদর্য্যস্বভাব,নৃশংস মানুষ।
নাসূয়কো ন চাশক্তো নাবিদ্বান্ বিদ্যতে ক্বচিৎ।
হিংসুক,সামর্থ্যহীন,অবিদ্বান মানুষ ছিলনা সেখানে।
কৃতজ্ঞাশ্চ বদান্যাশ্চ শূরাঃ বিক্রমসংযুতাঃ।


তাঁরা ছিলেন কৃতজ্ঞ, বদান্য, বীর এবং বিক্রমশালী। চন্দ্রের আধিপত্য যেমন নক্ষত্রপুঞ্জে তেমনি শত্রুদের অবদমিত করে তেজস্বী রাজা দশরথ সেখানে রাজত্ব করতেন। অযোধ্যা ছিল সার্থকনামা নগরী। কারণ প্রতিপক্ষের কোন শত্রুতার সম্ভাবনারহিত ছিল সে নগরী।

রামচন্দ্রের প্রশাসনকালে ছিল রামরাজত্ব। দশরথের শাসনাধীন অযোধ্যার থেকে তা ব্যতিক্রমী নয়। অযোধ্যাবাসীরা এখন হৃষ্ট, তুষ্ট ও পুষ্ট। সুখী, পরিতৃপ্ত নাগরিকজীবন সেখানে। সকলে ধার্মিক, নীরোগ, বীতশোক, প্রাকৃতিক বিপর্যয়বিহীন। সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব নেই। ক্ষুধার্ত হওয়ার আশঙ্কায় পীড়িত নন রামচন্দ্রের প্রজারা। কারণ সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলা সে দেশ। সত্য যুগের আবহে যেন সদা প্রফুল্লতা, আমোদ, আহ্লাদ। চতুর্বর্ণকে নিজ নিজ ধর্মে নিরত রাখেন রামচন্দ্র।
কুবেরের পুষ্পক রথ কুবেরের নির্দেশে রামচন্দ্রের শরণ নিলে তাকে যথাকালে রামচন্দ্র প্রয়োজনে স্মরণ করবেন এই আশ্বাস দিলেন।উত্তর কাণ্ডে রামচন্দ্রকে ভরত জানাচ্ছেন, পুষ্পক রথের মতো জড় পদার্থে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তাকে মুখর করে তুলেছেন রাম।পৃথিবী রামময়।

রামো রামো রাম ইতি প্রজানামভবন্ কথাঃ।

প্রজাদের মুখে শুধুই রামের গল্পকথা। এমনই তাঁর মহিমা। ইতিমধ্যে মাসখানেকের প্রশাসনে প্রজারা ব্যাধিমুক্ত এমনকি জরাজীর্ণ জীবগণের কেউ মৃত্যুবরণ করেননি। নারীরা সুস্থ, নীরোগ সন্তান প্রসব করছেন। প্রজারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, তাঁরা তুষ্ট। পরিবেশ অনুকূল মেঘ সুস্বাদু, বারিবর্ষণে উদ্যত। সুসমীরণপ্রবাহে সুখস্পর্শানুভূতি। হাস্যরসিকরা, বিচক্ষণ বয়স্যরা, রামকে ঘিরে ধরে নানা গল্পের অবতারণা করলেন যখন, তখন হয়তো সুযোগ বুঝে প্রজাদের মন বুঝবার জন্যে রামচন্দ্র ভদ্র নামে বয়স্যকে জিজ্ঞাসা করলেন গ্রামে, নগরে তাঁর সম্বন্ধে কি আলোচনা হয়? কোন বিরূপ সমালোচনা নেই তো? রামের পরিমণ্ডলে যাঁরা, সেই সীতা, ভরত, লক্ষণ, শত্রুঘ্ন বা কৈকেয়ী সম্বন্ধেই বা প্রজাদের অভিমত কী? রামচন্দ্র বললেন ভদ্রতাবশত কোন কিছুর গোপন করবার দরকার নেই। যথাযথ ছবিটাই তাঁর চাই।

কথয়স্ব যথাতত্ত্বং সর্বং নিরবশেষতঃ।
শুভাশুভানি বাক্যানি যান্যাহুঃ পুরবাসিনঃ।
শ্রুত্বেদানীং শুভং কুর্য্যাং ন কুর্য্যামশুভানি চ।।


জনপ্রতিনিধি ভদ্রকে আশ্বস্ত করে তিনি বললেন পুরবাসীদের ভালমন্দ সব মতামত শুনে তাঁদের জন্যে ভালোই করবেন, মন্দ নয়।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৩: আর্ষ মহাকাব্যদ্বয়ের আদি প্রচারমাধ্যম

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৪০: নরমাংসলোলুপ রাক্ষস না কি সুরলোকের অভিশপ্ত গন্ধর্ব?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৬: কবির ভালোবাসার পশুপাখি

ভদ্র জানালেন রাবণবিজয়ী রামের বীর্যবর্তা প্রজাদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিন্তু সাধারণ প্রজাবৃন্দ দোকান বাজারে, মাঠে ঘাটে, পথে প্রাঙ্গণে,বনে উপবনে, বলে বেড়াচ্ছেন — রাম দুস্তর সাগরের সেতু বেঁধেছেন যা কোন রাজা, দানব, দেবতাদেরও দুঃসাধ্য, বধ করেছেন রাবণকে। কিন্তু তাঁর নিজের স্ত্রীকে যে রাক্ষস রাবণ স্পর্শ করল,কোলে তুলে নিয়ে বলপ্রয়োগ করে লঙ্কায় নিয়ে গেল, রাক্ষসদের বশে রইলেন সীতা, এসব কারণে রাজার মনে কোন বিরাগ নেই? তাহলে যে তাঁর এই আচরণ, আমাদের পারিবারিক জীবনে আমাদের স্ত্রীদের ক্ষেত্রেও সহ্য করতে হবে। কারণ রাজা যা করেন প্রজারাও তা অনুসরণ করে।

অস্মাকমপি দারেষু সহনীয়ং ভবিষ্যতি।
যথা হি কুরুতে রাজা প্রজাস্তমনুবর্ততে।।


নাকি সীতার সম্ভোগজনিত সুখে মজে আছেন তিনি?

“কীদৃশং হৃদয়ে তস্য সীতাসম্ভোগজং সুখম্”

শ্রীরামচন্দ্রের মনে দুরাশার কালো মেঘ ঘনায়মান, মনে হয়তো একটু আশার আলো ঝলকানি, সকলের মতো হয়তো এটা নয়। শুভাকাঙ্ক্ষীদের জিজ্ঞাসা করলেন পুরবাসীরা সত্যিই এইরকম অভিমত পোষণ করেন কী? সকলে সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন। সত্যিই তাই। একজন দক্ষ প্রশাসকের জীবনাদর্শকেই প্রজাপুঞ্জ গ্রহণ করে থাকে যদিও তা তাঁর একান্তই ব্যক্তিগত যাপন। তবে প্রজাদের এই কানাঘুষো শেষ পর্যন্ত বৃহদাকার হয়ে রাজসিংহাসনের অস্তিত্বতেও ঘুণ ধরিয়ে দিতে পারে হয়তো। অনেকটা অনবধানতাবশত অন্তর্ঘাতের সুযোগ করে দেওয়ার মতো।অপবাদ আত্মস্থ করে পারিবারিক জীবন বিসর্জনের নজির স্থিতধী পুরুষের পক্ষেই সম্ভব। হয়তো এই কারণেই রামরাজ্যের ধারণা, সুপ্রশাসনে শান্ত সুস্থিত ভারসাম্যময় রাজত্বের দ্যোতক।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৮: ড. হীরালাল চৌধুরীর আবিষ্কার আজও পোনামাছ চাষীদের কাছে এক পরম আশীর্বাদ

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১২: বাইগা রিসর্ট ও বস্তি

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৯: সুরের আকাশে ঘটালে তুমি স্বপ্নের ‘শাপমোচন’

মুহূর্তে প্রিয়া সীতাকে নিজের জীবন থেকে নির্বাসনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন রামচন্দ্র।মন্ত্রীদের যুক্তি পরামর্শ নয়, প্রিয় ভাইদের মতামত নয়, প্রাজ্ঞ,বিজ্ঞ আস্থাভাজন হনুমান, বিভীষণ, সুগ্রীবের দূরদর্শিতার প্রতি আস্থা রেখে তাঁদের প্রস্তাব মতো নয়, একান্তই নিজস্ব বিবেচনায় এই নির্মম সিদ্ধান্ত তাঁর। ভাইদের জানালেন, আগুনে পুড়ে সোনা খাদমুক্ত হয়। সীতাও যে পরীক্ষিত, দেবতারা তার অপাপবিদ্ধ পূত চরিত্র ঘোষণা করেছেন। রাবণ নিধনের পর, সীতার মুখোমুখি অযোধ্যার ভাবী রাজা সীতাকে নির্দয়ভাবে বলেছিলেন, যুদ্ধ, হত্যা যা কিছু সবই “ন ত্বদর্থং ময়া কৃতঃ” তোমার জন্যে আমি করিনি। নিজের চরিত্ররক্ষা, অপবাদ দূরীকরণ, বিখ্যাত বংশের অখ্যাতি নির্মূল করাই ছিল আমার লক্ষ্য।

রক্ষতা তু ময়া বৃত্তমপবাদঞ্চ সর্বতঃ।
প্রখ্যাতস্যাত্মবংশস্য ন্যঙ্গঞ্চ পরিমার্জ্জতা।


সন্দিহান রামচন্দ্র বলেছেন রাবণ তোমার দিব্য মনোমোহিনী রূপ দেখে নিশ্চয়ই ধৈর্য্য রাখতে পারেননি।এই জটিল পরিস্থিতিতে রামসীতার দাম্পত্য সম্পর্কে দেবতারা মাথা গলিয়েছেন, বলেছেন রামচন্দ্রের এই প্রাকৃতজনসুলভ সন্দেহপ্রবণতা আশা করা যায় না। রাম কিন্তু নিজেকে দশরথ পুত্র বলেই জানেন।ব্রহ্মা তাঁকে জানালেন তাঁর অপ্রাকৃত সত্তার কথা। রাজাতো সত্যিই সাধারণ প্রাকৃত জনেদের মধ্যে অতিলৌকিক গুণের অধিকারী।বিশিষ্ট বলেই তিনি রাজা। অগ্নির শংসাপত্র নিষ্পাপ মৈথিলীর সপক্ষে। অগ্নি সীতাকে গ্রহণ করবার জন্যে রামচন্দ্রকে অনুরোধ জানালেন। কিন্তু সুদূর লঙ্কায় অপবাদের রটনাকারী অযোধ্যার সাধারণ জনতা তখন কোথায়? অযোধ্যার আপামর জনগোষ্ঠী? লোকনিন্দার ভয়ে অম্লান কীর্তিতে একটুও কালি ছিটোতে দেবেন না রামচন্দ্র। বলেছেন,আমি অগ্নিতে পরিশুদ্ধ সীতাকে অম্লান চিত্তে গ্রহণ করলে লোকে আমাকে কামুক মূর্খ বলে দুর্নাম দেবে। স্ত্রীর প্রতি তাঁর ধারণা কী রকম?নিজের কীর্তির মতোই অচ্ছেদ্য অপরিত্যজ্য সীতা।

বিশুদ্ধা ত্রিষু লোকেষু মৈথিলী জনকাত্মজা।
নং বিহাতুং ময়া শক্যা কীর্ত্তিরাত্মবতা যথা।।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৪: পঞ্চমকে সিনেমা হলে বসিয়েই বেরিয়ে যান রীতা

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-১১: কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দু’ একটি ছবি তুলতে না তুলতেই হাত অসাড় হয়ে যাচ্ছিল

হার্ট অ্যাটাক নীরবেও হতে পারে! কোন উপসর্গ দেখে সতর্ক হবেন? জেনে নিন ডাক্তারবাবুর পরামর্শ

যেমন আত্মবান ব্যক্তি কীর্তি পরিত্যাগ করতে পারেন না সেই রূপ আমিও এই ত্রিলোক বিশুদ্ধা জনকতনয়া সীতাকে পরিত্যাগ করতে পারি না।

সীতা স্বয়ংপ্রভা, আত্মতেজেই তিনি স্বয়ং রক্ষিতা বিশালাক্ষী সীতাকে রাবণ অতিক্রম করতে পারেননি তেমন মহাসমুদ্র বেলাভূমিতে অতিক্রম করতে পারেনা সেই রকম।

ইমামপি বিশালাক্ষীং রক্ষিতাং স্বেন তেজসা।
রাবণো নাতিবর্ত্তেত বেলামিব মহোদধিঃ।।


প্রদীপ্ত অগ্নিশিখার মতো মৈথিলী কে দুষ্ট রাবণ মনে মনেও ধর্ষণ করতে পারেননি।

ন চ শক্তঃ স দুষ্টাত্মা মনসাপি চ মৈথিলীম্।
প্রধর্ষয়িতুমপ্রাপ্যাং দীপ্তামগ্নিশিখামিব।।


আর লোকাপবাদ শুনে সেই রামচন্দ্রের প্রতিক্রিয়া কী? সেই একই রামচন্দ্র ভাইদের বললেন—

পতত্যেবাধমাল্লোঁকান্ যাবচ্ছব্দঃ প্রকীর্ত্ত্যতে।
অকীর্ত্তির্নিন্দ্যতে দেবৈঃ কীর্ত্তির্লোকেষু পূজ্যতে।।


যতদিন অপবাদ চলতে থাকে ততদিন অকীর্ত্তিমান অধমলোকে পতিত হন।দেবগণ অকীর্ত্তির নিন্দা এবং কীর্ত্তির প্রশংসা করে থাকেন। সেই কারণে,

কীর্ত্ত্যর্থন্তু সমারম্ভঃ সর্বেষাং সুমহাত্মনাম্।।

কীর্ত্তির জন্যেই মহান ব্যক্তিরা সবকাজে উদ্যোগী হন। ভাইদের জানালেন —

অপ্যহং জীবিতং জহ্যাৎ যুষ্মান্ বা পুরুষর্ষভাঃ।

তোমাদের মতো পুরুষশ্রেষ্ঠদেরকে এমনকি জীবনও পরিত্যাগ করতে পারি ওই এক কীর্ত্তি অর্জনের জন্যে, “কিং পুনর্জনকাত্মজাম?” জনকতনয়ারতো কথাই নেই। যদিও অতীতে তিনি এর থেকে বড় দুঃখ অনুভব করেননি— অকপটে জানালেন। এ বিষয়ে কোন অনুনয়,বিনয় চলবেনা। যাঁরা এ বিষয়ে অন্য কোন প্রস্তাব রাখবেন তাঁরা শত্রু বলে চিহ্নিত হবেন।

মানয়ন্তু ভবন্তো মাং যদি মচ্ছাসনে স্থিতাঃ।

ছবি সংগৃহীত।

যদি আমার শাসনে থাকতে চাও তাহলে আমাকে সম্মান কর। অনমনীয় শাসক আদেশ দিলেন ভাই লক্ষ্মণকে নয়,যেন অনুচর লক্ষ্মণকে—

ইতোঽদ্য নীয়তাং সীতা কুরুষ্ব বচনং মম।।

আজই এখান থেকে সীতাকে নিয়ে যাও ,আমার আদেশ পালন কর। এ যেন “অপরাধী জানিলনা বিচার হইয়া গেল”। সীতা বিন্দুবিসর্গ জানলেন না যে,তিনি চিরদিনের জন্যে অযোধ্যার অন্তঃপুর থেকে, রামচন্দ্রের জীবন থেকে নির্বাসিতা হতে চলেছেন।

কোথায় যেন এক নির্মম প্রশাসকের স্বেচ্ছাচারিতার ছায়া যেন এই সিদ্ধান্তে? বিচারের কোন অবকাশ রাখেননি।শাসনদণ্ডে নিজের স্ত্রীকে সাধারণ প্রজাদের থেকে আলাদা করতে পারেননি।একটাই প্রশ্ন —সাধারণ নাগরিকের স্ত্রীদের ক্ষেত্রেও কী উদ্যতদণ্ড শাসক তিনি? উদাহরণসৃষ্টির জন্যেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত নয়তো?তাহলেও যে চিন্তা উস্কে দেয় পুরুষোত্তমের এই দণ্ডাদেশ।

পত্নী ও কীর্তির দ্বন্দ্বে, জয়ী হল কীর্তি। মনুষ্যত্বকে অবদমিত করে উড়ল কীর্তির ধ্বজা, অবশ্যই তা বৃহত্তর স্বার্থে। স্ত্রীর মনের দিকে তাকাননি রামায়ণের নায়ক, মায়ের চোখের জল, পিতার আর্তিকে উপেক্ষা করেছিলেন যেমন নির্মোহ বৈরাগ্যে ঠিক একইভাবে নিজের ভেতরের অবিরাম রক্তক্ষরণকে ঢেকে অনড় সিদ্ধান্তে অবিচল রইলেন। বিসর্জিতা হলেন সীতা। যুগান্তরে, এর কী কোন কালো ছায়া পড়েছিল ভারতীয় সমাজ জীবনে? বিবাহিত স্ত্রীর ত্রুটিমাত্রই জটিল সন্দেহ, কাঁটা হয়ে বিদ্ধ করে পুরুষ চিত্তকে। দাম্পত্য জীবন থেকে নির্বাসিতা হন কত শত ভারতীয় নারী, অনিশ্চিত ভবিতব্যের জীবন মেনে নেন সন্তানসহ। এই জীবন থেকে তাঁদের উৎখাত করার প্রবণতায় পুরুষোত্তমের কী কিছুমাত্র অবদান নেই? ভারতীয় পুরুষের অবচেতনে রামলীলা খেলা করে নাতো?—চলবে
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।

Skip to content