ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
গার্হস্থজীবনের শুভসূচনা পর্বে চার দশরথপুত্র সপত্নী সুন্দর সময় অতিবাহিত করত লাগলেন। রেমিরে মুদিতাঃ সর্ব্বা ভর্ত্তৃভিঃ সহিতা রহঃ। কৃতদারাঃ কৃতজ্ঞাশ্চ সধনাঃ সসুহৃজ্জনাঃ।। শুশ্রূষমাণাঃ পিতরং বর্ত্তয়ন্তি নরর্ষভাঃ। বধূমাতারা স্বামীদের সঙ্গসুখে একান্ত নিভৃতযাপনে অনুভব করলেন পরমানন্দ, বিবাহিত রাজপুত্ররা কৃতজ্ঞচিত্তে পিতার সেবাপরায়ণ হয়ে সুহৃদবর্গের সঙ্গে কালযাপন করতে লাগলেন।
এমন সুখের সময়ে একদিন রাজা দশরথ কৈকেয়ীপুত্র ভরতকে ডেকে বললেন—অয়ং কৈকয়রাজস্য পুত্ত্রো বসতি পুত্ত্রক।। ত্বাং নেতুমাগতো বীর যুধাজিন্মাতুলস্তব। হে পুত্র, তোমার মাতুল কেকয়রাজপুত্র শৌর্যশালী যুধাজিৎ, যিনি এখানে উপস্থিত, তিনি তোমায় নিতে এসেছেন। ভরত এবং তাঁর ছায়াসঙ্গী ভাই শত্রুঘ্ন মাতুলালয়ে যাত্রার উদ্যোগ নিলেন। পিতা দশরথ, মাতৃগণ এবং জ্যেষ্ঠ রামচন্দ্রের কাছে বিদায় নিলেন দুই ভাই। মাতুলালয়ে মাতামহ, যুধাজিতের সঙ্গে সমাগত পৌত্রদের লাভ করে সুখী হলেন।
ভরত এবং শত্রুঘ্নের অনুপস্থিতিতে পিতা দশরথের আদেশানুসারে রামচন্দ্র ও লক্ষ্মণের তত্ত্বাবধানে পৌরকার্য এবং পিতার অভীষ্ট কাজ সম্পন্ন হতে লাগল। দুই ভাই আন্তরিকভাবে মায়েদের ও অন্যান্য গুরুজনদের গুরুকর্তব্য পালন করতে লাগলেন। রাজা দশরথ পরম সন্তোষ লাভ করলেন। রামচন্দ্রের চরিত্রমাধুর্যে প্রীত হলেন ব্রাহ্মণবণিকসম্প্রদায়সহ সমগ্র দেশবাসী। ব্রাহ্মণাদি চতুর্বর্ণান্তর্গত সকলেই। সকলেরই প্রীতিভাজন হয়ে উঠলেন শ্রীরামচন্দ্র। তিনি সত্যপরায়ণ, অতিযশস্বীর সম্মান লাভ করলেন। এবং দশরথঃ প্রীতো ব্রাহ্মণো নৈগমস্তথা।। রামস্য শীলবৃত্তেন সর্ব্বে বিষয়বাসিনঃ। তেষামতিযশা লোকে রামঃ সত্যপরিক্রমঃ।। যৌবনে উপনীত রাজপুত্র রামচন্দ্রের এ এক অনন্য দায়িত্ববোধপালন ও দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার।
এমন সুখের সময়ে একদিন রাজা দশরথ কৈকেয়ীপুত্র ভরতকে ডেকে বললেন—অয়ং কৈকয়রাজস্য পুত্ত্রো বসতি পুত্ত্রক।। ত্বাং নেতুমাগতো বীর যুধাজিন্মাতুলস্তব। হে পুত্র, তোমার মাতুল কেকয়রাজপুত্র শৌর্যশালী যুধাজিৎ, যিনি এখানে উপস্থিত, তিনি তোমায় নিতে এসেছেন। ভরত এবং তাঁর ছায়াসঙ্গী ভাই শত্রুঘ্ন মাতুলালয়ে যাত্রার উদ্যোগ নিলেন। পিতা দশরথ, মাতৃগণ এবং জ্যেষ্ঠ রামচন্দ্রের কাছে বিদায় নিলেন দুই ভাই। মাতুলালয়ে মাতামহ, যুধাজিতের সঙ্গে সমাগত পৌত্রদের লাভ করে সুখী হলেন।
ভরত এবং শত্রুঘ্নের অনুপস্থিতিতে পিতা দশরথের আদেশানুসারে রামচন্দ্র ও লক্ষ্মণের তত্ত্বাবধানে পৌরকার্য এবং পিতার অভীষ্ট কাজ সম্পন্ন হতে লাগল। দুই ভাই আন্তরিকভাবে মায়েদের ও অন্যান্য গুরুজনদের গুরুকর্তব্য পালন করতে লাগলেন। রাজা দশরথ পরম সন্তোষ লাভ করলেন। রামচন্দ্রের চরিত্রমাধুর্যে প্রীত হলেন ব্রাহ্মণবণিকসম্প্রদায়সহ সমগ্র দেশবাসী। ব্রাহ্মণাদি চতুর্বর্ণান্তর্গত সকলেই। সকলেরই প্রীতিভাজন হয়ে উঠলেন শ্রীরামচন্দ্র। তিনি সত্যপরায়ণ, অতিযশস্বীর সম্মান লাভ করলেন। এবং দশরথঃ প্রীতো ব্রাহ্মণো নৈগমস্তথা।। রামস্য শীলবৃত্তেন সর্ব্বে বিষয়বাসিনঃ। তেষামতিযশা লোকে রামঃ সত্যপরিক্রমঃ।। যৌবনে উপনীত রাজপুত্র রামচন্দ্রের এ এক অনন্য দায়িত্ববোধপালন ও দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার।
শ্রীরামচন্দ্রের দাম্পত্যজীবন কেমন ছিল? সীতাগতপ্রাণ হয়ে বহু ঋতু যাপন করলেন শ্রীরামচন্দ্র। পিতার মনোনীত পত্নী ছিলেন রামচন্দ্রের অতি প্রিয়, পত্নী সীতা ছিলেন রামচন্দ্রের মনে প্রাণে মিশে থাকা অবিচ্ছিন্ন অংশ, সীতাতেই সমর্পিত হৃদয় ছিল তাঁর। রামশ্চ সীতয়া সার্দ্ধং বিজহার বহূনৃতুন্।। মনস্বী তদ্গতমনাস্তস্যা হৃদি সমর্পিতঃ। প্রিয়া তু সীতা রামস্য দারাঃ পিতৃকৃতা ইতি।। সীতার অলৌকিক সৌন্দর্যে, লক্ষ্মীমন্ত রূপেগুণে বিমোহিত রামচন্দ্রের প্রতি সীতার প্রেমও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেল, ভালোবাসার নিক্তিতে তা বোধ হয় রামচন্দ্রের ভালবাসার দ্বিগুণরূপে বিরাজমান। কেমন ছিল তাঁদের দাম্পত্যের বোঝাপড়া? অন্তর্গতামপি বক্তমাখ্যাতিং হৃদয়ং হৃদা। তস্য ভূয়ো বিশেষেণ মৈথিলী জনকাত্মজা।। মৈথিলী সীতা স্বামীর মনোগত অভিপ্রায় এমন বিশেষভাবে বুঝে যেতেন যেন মনে হত তাঁর হৃদয়ে স্বামী রূপগুণাতীত স্বরূপে বিরাজমান। এমনই ছিল দু’জনের মনের মিল। বিষ্ণু সুখী হয়েছিলেন লক্ষ্মীলাভে, ঠিক সেইরকম সুরনারীর মতো মনোজ্ঞা স্ত্রীলাভে অতি প্রসন্নতায় দিন অতিবাহিত হতে লাগল শ্রীরামচন্দ্রের।
রাজা দশরথের চার পুত্ররা কিন্তু পিতার প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠ এবং অনুরক্ত, এ বিষয়ে কেউ কম নন। মাতুলালয়ে অতি সমাদরেও ভরত এবং শত্রুঘ্ন এক মুহূর্তের জন্যেও পিতাকে বিস্মৃত হননি। প্রবাসী দুই পুত্রদের জন্যে সর্বদাই স্নেহসিক্ত থাকত পিতা দশরথের মনটিও। এসব সত্ত্বেও চারপুত্রের মধ্যে পিতার প্রিয়তম পুত্র হলেন জ্যেষ্ঠ রামচন্দ্র।
রামচন্দ্রের প্রতি পিতার স্নেহাতিশয্যের কারণ? পিতা দশরথের মতোই বহুগুণের আঁধার তিনি। সর্বদাই শান্ত, সমাহিতচিত্ত, বিনয়ী রামচন্দ্র কখনও কর্কশবাক্যে প্রত্যুত্তরে অভ্যস্ত নন। পরিশীলিত বাক্যপ্রয়োগেই তিনি রুচিশীল। অল্প উপকারেও প্রত্যুপকারে ব্যস্ত, বয়োবৃদ্ধ ও জ্ঞানবৃদ্ধদের সঙ্গে আলাপচারিতায় শিষ্টাচারী, মধুরভাষী, আচরণ ছিল দ্বিচারিতাবিহীন, বয়োবৃদ্ধদের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা, এতসব মানবিক গুণে সমৃদ্ধ ছিলেন শ্রীরামচন্দ্র।
অযোধ্যার সিংহাসনের ভাবি উত্তরাধিকারী রামচন্দ্র। তাই তাঁর প্রজাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী ও আচরণ কেমন ছিল? প্রজানুরঞ্জক ছিলেন রামচন্দ্র। প্রজারাও ছিলেন তাঁর অনুরাগী। অনুরক্তঃ প্রজাভিশ্চ প্রজাশ্চাপ্যনুরজ্যতে।
দয়ার্দ্রচিত্ত রামচন্দ্রের মনে দীন দরিদ্রদের প্রতি করুণা ধারার স্রোত ছিল নিত্য প্রবহমান। ধার্মিক, পবিত্রহৃদয় রামচন্দ্র যথাযোগ্য মর্যাদা দিতেন ব্রাহ্মণদের। সানুক্রোশো জিতক্রোধো ব্রাহ্মণপ্রতিপূজকঃ। দীনানুকম্পী ধর্ম্মজ্ঞো নিত্যং প্রগ্রহবান্ শুচিঃ।।
রাজা দশরথের চার পুত্ররা কিন্তু পিতার প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠ এবং অনুরক্ত, এ বিষয়ে কেউ কম নন। মাতুলালয়ে অতি সমাদরেও ভরত এবং শত্রুঘ্ন এক মুহূর্তের জন্যেও পিতাকে বিস্মৃত হননি। প্রবাসী দুই পুত্রদের জন্যে সর্বদাই স্নেহসিক্ত থাকত পিতা দশরথের মনটিও। এসব সত্ত্বেও চারপুত্রের মধ্যে পিতার প্রিয়তম পুত্র হলেন জ্যেষ্ঠ রামচন্দ্র।
রামচন্দ্রের প্রতি পিতার স্নেহাতিশয্যের কারণ? পিতা দশরথের মতোই বহুগুণের আঁধার তিনি। সর্বদাই শান্ত, সমাহিতচিত্ত, বিনয়ী রামচন্দ্র কখনও কর্কশবাক্যে প্রত্যুত্তরে অভ্যস্ত নন। পরিশীলিত বাক্যপ্রয়োগেই তিনি রুচিশীল। অল্প উপকারেও প্রত্যুপকারে ব্যস্ত, বয়োবৃদ্ধ ও জ্ঞানবৃদ্ধদের সঙ্গে আলাপচারিতায় শিষ্টাচারী, মধুরভাষী, আচরণ ছিল দ্বিচারিতাবিহীন, বয়োবৃদ্ধদের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা, এতসব মানবিক গুণে সমৃদ্ধ ছিলেন শ্রীরামচন্দ্র।
অযোধ্যার সিংহাসনের ভাবি উত্তরাধিকারী রামচন্দ্র। তাই তাঁর প্রজাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী ও আচরণ কেমন ছিল? প্রজানুরঞ্জক ছিলেন রামচন্দ্র। প্রজারাও ছিলেন তাঁর অনুরাগী। অনুরক্তঃ প্রজাভিশ্চ প্রজাশ্চাপ্যনুরজ্যতে।
দয়ার্দ্রচিত্ত রামচন্দ্রের মনে দীন দরিদ্রদের প্রতি করুণা ধারার স্রোত ছিল নিত্য প্রবহমান। ধার্মিক, পবিত্রহৃদয় রামচন্দ্র যথাযোগ্য মর্যাদা দিতেন ব্রাহ্মণদের। সানুক্রোশো জিতক্রোধো ব্রাহ্মণপ্রতিপূজকঃ। দীনানুকম্পী ধর্ম্মজ্ঞো নিত্যং প্রগ্রহবান্ শুচিঃ।।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-২৫: এক বিখ্যাত গুরুর দুই বীর শিষ্য, আচার্যর প্রত্যাশাপূরণে কী সফল হয়েছিলেন শিষ্যদ্বয়?
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৫: টনিক খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো?
কলকাতার পথ-হেঁশেল: অফিসপাড়ার ক্যান্টিন ডেকার্স লেনে কোলাহল
নিজস্ব ক্ষাত্রধর্মের পূজারী ছিলেন রামচন্দ্র। ক্ষাত্রধর্মানুসারে প্রজাপালন ও শত্রুজয় ছিল তাঁর লক্ষ্য। কারণ তাঁর শাস্ত্রনির্দিষ্ট কুলধর্ম ছিল ক্ষত্রিয়ধর্মপালন, সেটিতে অবিচলনিষ্ঠা রামচন্দ্রের আচরণবিধি নিয়ন্ত্রণ করত। শাস্ত্রবিরুদ্ধ আচরণ ছিল তাঁর নীতিবিরুদ্ধ। তাই শাস্ত্রনির্দিষ্ট বিষয়ে ছিল তাঁর রুচি, শাস্ত্রবিরোধী অশুভ কাজ তিনি পরিহার করতেন। রামচন্দ্র ছিলেন সুবক্তা, পরিবেশ, পরিস্থিতি বিষয়ে সর্বদাই অবহিত, লোকতত্ত্ববিদ, নীরোগদেহ, সুদর্শন, রামচন্দ্র সম্বন্ধে সাধারণের উপলব্ধি ছিল, তারুণ্যে উপনীত তিনি যেন বিধাতাসৃষ্ট তাত্ত্বিক এক সাধুপুরুষ। অরোগস্তরুণো বাগ্মী বপুষ্মান্ দেশকালবিৎ। লোকে পুরুষসারজ্ঞঃ সাধুরেকো বিনির্ম্মিতঃ।।
প্রজাদের কাছে যেন বাইরে সঞ্চরমান প্রাণপ্রতিম ছিলেন তিনি। এমনই ছিল তাঁর জনপ্রিয়তা। ব্রহ্মচর্যে অর্থাৎ শিক্ষাজীবনে বেদবদাঙ্গ-জ্ঞান, মন্ত্র-সহ এবং মন্ত্রহীন অস্ত্রের প্রয়োগবিষয়ক বিদ্যা, ধর্মশাস্ত্র প্রভৃতি আয়ত্ত করেছিলেন বৃদ্ধ দ্বিজশ্রেষ্ঠদের অধ্যাপনায়। ধর্মের প্রায়োগিক দিক অর্থাৎ শাস্ত্রনিষ্ঠভাবে প্রজাদের কাছ থেকে অর্থসংগ্রহ, পোষ্যপালনে অর্থের বিনিয়োগ, দুর্বৃত্তদমনে সচেতন ছিলেন। রাজোচিত ভারসাম্য বজায় রাখতেন ধর্ম, অর্থ এবং কামনাপূরণে। লৌকিক ব্যবহারে সময়োচিত ছিল তাঁর আচরণবিধি। অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ও মেধা ছিল তাঁর সম্পদ।
ধর্ম্মকামার্থতত্ত্বজ্ঞঃ স্মৃতিমান্ প্রতিভানবান্। লৌকিকে সময়াচারে কৃতকল্পো বিশারদঃ।। রামচন্দ্র সববিষয়ে প্রবল নিষ্ঠাবান, স্থিতধী, প্রমাদবিহীন, দুর্বাক্যপ্রয়োগে অভ্যস্ত নন, এমন। অনলস তাঁর উজ্জীবনীশক্তি, সর্বদাই সতর্ক থাকেন তিনি, এ ছাড়াও নিজের এবং অপরের উভয়েরই ত্রুটিবিচ্যুতি নির্বিচারে তাঁর দৃষ্টি এড়িয়ে যেত না। স্থিরপ্রজ্ঞো নাসদ্গ্রাহী ন দুর্ব্বচঃ। নিস্তন্দ্রীরপ্রমত্তশ্চ স্বদোষপরদোষবিৎ।।
প্রজাদের কাছে যেন বাইরে সঞ্চরমান প্রাণপ্রতিম ছিলেন তিনি। এমনই ছিল তাঁর জনপ্রিয়তা। ব্রহ্মচর্যে অর্থাৎ শিক্ষাজীবনে বেদবদাঙ্গ-জ্ঞান, মন্ত্র-সহ এবং মন্ত্রহীন অস্ত্রের প্রয়োগবিষয়ক বিদ্যা, ধর্মশাস্ত্র প্রভৃতি আয়ত্ত করেছিলেন বৃদ্ধ দ্বিজশ্রেষ্ঠদের অধ্যাপনায়। ধর্মের প্রায়োগিক দিক অর্থাৎ শাস্ত্রনিষ্ঠভাবে প্রজাদের কাছ থেকে অর্থসংগ্রহ, পোষ্যপালনে অর্থের বিনিয়োগ, দুর্বৃত্তদমনে সচেতন ছিলেন। রাজোচিত ভারসাম্য বজায় রাখতেন ধর্ম, অর্থ এবং কামনাপূরণে। লৌকিক ব্যবহারে সময়োচিত ছিল তাঁর আচরণবিধি। অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ও মেধা ছিল তাঁর সম্পদ।
ধর্ম্মকামার্থতত্ত্বজ্ঞঃ স্মৃতিমান্ প্রতিভানবান্। লৌকিকে সময়াচারে কৃতকল্পো বিশারদঃ।। রামচন্দ্র সববিষয়ে প্রবল নিষ্ঠাবান, স্থিতধী, প্রমাদবিহীন, দুর্বাক্যপ্রয়োগে অভ্যস্ত নন, এমন। অনলস তাঁর উজ্জীবনীশক্তি, সর্বদাই সতর্ক থাকেন তিনি, এ ছাড়াও নিজের এবং অপরের উভয়েরই ত্রুটিবিচ্যুতি নির্বিচারে তাঁর দৃষ্টি এড়িয়ে যেত না। স্থিরপ্রজ্ঞো নাসদ্গ্রাহী ন দুর্ব্বচঃ। নিস্তন্দ্রীরপ্রমত্তশ্চ স্বদোষপরদোষবিৎ।।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯: ঠাকুরের ঘরণী সারদার গার্হস্থ্য জীবন
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১২: আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-৪: ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে কোচস্থাপত্যের অন্যতম কীর্তি দেওতাপাড়া শিব মন্দির
বিহারোপযোগী শিল্পবিষয়ে তাঁর সামর্থ্য ছিল। হস্তী, অশ্ব রথ চালনায় দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন। ধনুর্বিদ্যাবত্তার পারদর্শিতায় তিনি অতিরথ নামে খ্যাত হলেন। সৈন্য অভিযানে পারঙ্গম, শত্রুপ্রতিরোধে পটু, সেনাপরিচালনায় অবিসংবাদী নেতৃত্বের দরুণ ক্রুদ্ধ সুরাসুরের অপ্রতিরোধ্য ছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। তিনি ঈর্ষাবিহীন, ক্রোধজয়ী, গর্বিত কিন্তু বিদ্বেষরহিত—এমন ছিল তাঁর ব্যক্তিত্ব।
ধনুর্ব্বেদবিদাং শ্রেষ্ঠো লোকেঽতিরথসম্মতঃ। অভিযাতা প্রহর্ত্তা চ সেনানয়বিশারদঃ।। অপ্রধৃষ্যশ্চ সংগ্রামে ক্রুদ্ধৈরপি সুরাসুরৈঃ। অনসূয়ো জিতক্রোধো না দৃপ্তো ন চ মৎসরী।। ত্রিলোকে রামচন্দ্র সম্মানীয় হতেন এই মানদণ্ডে—তিনি ক্ষমায় বসুন্ধরাতুল্য, বুদ্ধিতে বৃহস্পতিসদৃশ, শৌর্যে দেবরাজ ইন্দ্রসম এমনই উজ্জ্বল তিনি। সূর্যের যেমন আলোকোজ্জ্বল উপস্থিতি তেমনই গুণের বিভায় কিরণময় দীপ্যমান অবস্থান ছিল তাঁর পিতৃহৃদয়ের স্নেহের উৎসারণে এবং কমনীয়তাহেতু প্রজাপুঞ্জের কাছে। সম্মতস্ত্রিষু লোকেষু বসুধায়াঃ ক্ষমাগুণৈঃ। বুদ্ধ্যা বৃহস্পতেস্তুল্যো বীর্য্যে চাপি শচীপতেঃ।। তথা সর্ব্বপ্রজাকান্তৈঃ প্রীতিসঞ্জননৈঃ পিতুঃ। গুণৈর্বিরুরুচে রামো দীপ্তঃ সূর্য্য ইবাংশুভিঃ।। রামচন্দ্রের চারিত্রিক দৃঢ়তায়, অনতিক্রম্য ব্যক্তিত্বের প্রভায়, গুণাধিক্যে,লোকপ্রিয়তায়, বসুন্ধরা তাঁর প্রভুত্বে আগ্রহী হয়ে উঠলেন।
তমেবং বৃত্তসম্পন্নমপ্রধৃষ্যপরাক্রমম্। লোকনাথেনোপমং নাথমকাময়ত মেদিনী।।
ধনুর্ব্বেদবিদাং শ্রেষ্ঠো লোকেঽতিরথসম্মতঃ। অভিযাতা প্রহর্ত্তা চ সেনানয়বিশারদঃ।। অপ্রধৃষ্যশ্চ সংগ্রামে ক্রুদ্ধৈরপি সুরাসুরৈঃ। অনসূয়ো জিতক্রোধো না দৃপ্তো ন চ মৎসরী।। ত্রিলোকে রামচন্দ্র সম্মানীয় হতেন এই মানদণ্ডে—তিনি ক্ষমায় বসুন্ধরাতুল্য, বুদ্ধিতে বৃহস্পতিসদৃশ, শৌর্যে দেবরাজ ইন্দ্রসম এমনই উজ্জ্বল তিনি। সূর্যের যেমন আলোকোজ্জ্বল উপস্থিতি তেমনই গুণের বিভায় কিরণময় দীপ্যমান অবস্থান ছিল তাঁর পিতৃহৃদয়ের স্নেহের উৎসারণে এবং কমনীয়তাহেতু প্রজাপুঞ্জের কাছে। সম্মতস্ত্রিষু লোকেষু বসুধায়াঃ ক্ষমাগুণৈঃ। বুদ্ধ্যা বৃহস্পতেস্তুল্যো বীর্য্যে চাপি শচীপতেঃ।। তথা সর্ব্বপ্রজাকান্তৈঃ প্রীতিসঞ্জননৈঃ পিতুঃ। গুণৈর্বিরুরুচে রামো দীপ্তঃ সূর্য্য ইবাংশুভিঃ।। রামচন্দ্রের চারিত্রিক দৃঢ়তায়, অনতিক্রম্য ব্যক্তিত্বের প্রভায়, গুণাধিক্যে,লোকপ্রিয়তায়, বসুন্ধরা তাঁর প্রভুত্বে আগ্রহী হয়ে উঠলেন।
তমেবং বৃত্তসম্পন্নমপ্রধৃষ্যপরাক্রমম্। লোকনাথেনোপমং নাথমকাময়ত মেদিনী।।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৬: বহু জনমের মায়া, ধরিল যে কায়া, ওগো ‘শিল্পী’ সে তো শুধু তোমারই ছায়া
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১১: সুন্দরবনের ব্যাঘ্রদেবতা দক্ষিণ রায়
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-২৪: জাপানি-কুকুর পুষেছিলেন গগনেন্দ্রনাথ
মহাকাব্যে বর্ণিত, তারুণ্যে উপনীত রামচন্দ্রের একই ব্যক্তিত্বে এতসব গুণাবলীর সমাহার, লৌকিকদৃষ্টিতে বিরল। বিষ্ণুর সপ্তম অবতাররূপ শ্রীরামচন্দ্র। তাঁর লীলাক্ষেত্র এই পৃথিবীলোক। লৌকিক জীবনে তাঁকে ভোগ করতে হবে দুঃখের অভিঘাত, অপ্রত্যাশিত ভাগ্য বিপর্যয়, ঘাত-প্রতিঘাত, ক্ষোভ, সংঘাত, হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোন উদ্দাম ঝড়ে তোলপাড় দৈব দুর্বিপাকের আঘাত, প্রত্যাঘাত যেটি তাঁকে হতচকিত করবে, আলোড়িত করবে,দ্বন্দ্বাতুর করে তুলবে ক্রমাগত—এ সব কিছুই জীবনযুদ্ধের অঙ্গ। যতই বন্ধুর হয়েছে তাঁর জীবনের গতিপথ ততই অতিলৌকিকতা ছাপিয়ে লৌকিক গুণাবলী প্রকট হয়েছে তাঁর। রাজপ্রাসাদের মায়াময় প্রাচুর্যের কষ্টিপাথরে রামচন্দ্রের চরিত্রের মূল্যায়ন হয়তো সম্ভব নয়। লোকচরিত্রের আধার লোকজীবন। মাটির পৃথিবীর রুক্ষ কর্কশভূমি মানুষের বিচরণক্ষেত্র, বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় সেখানেই।
সেখানেই হয়তো মানুষ রামচন্দ্রের যথাযথগ্রহণযোগ্যতার বিচার। যে কোনও বিশিষ্ট চরিত্রই সমালোচনা, আলোচনার ঊর্ধ্বে নন। মানব অবতাররূপে রামচন্দ্রের ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য হয়তো এখানেই পর্যালোচনার চর্চিত বিষয়। শ্রীরামচন্দ্র মন্দিরে পূজিত হন, লোকসমাজে দেবতার আসনে তিনি অধিষ্ঠিত, সেখানে আছে বিষ্ণুর অবতার রূপের অনতিক্রম্য প্রভাব। রাবণবধে অশুভশক্তিদমনে তাঁর শৌর্য, জাতীয়তাবোধ উজ্জীবনের মন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে এই যুগান্তরেও। অসাম্প্রদায়িক ভারতবর্ষের অনেকের কাছেই জাতীয় নায়ক তিনি, তাঁর প্রতি ভক্তি-ধর্মীয় তকমা হয়ে দাঁড়িয়েছে কখনও কখনও।
এত গুণের আধার রামচন্দ্রের মানবিক ত্রুটিবিচ্যুতি আছে—স্খলন, পতন, বিচ্যুতি রয়েছে, মহাকাব্যকার সেগুলোও বর্ণনা করেছেন পরম নিষ্ঠায়, অবশ্যই শাণিত যৌক্তিকতার আবরণে। এই পতন তে মানবচরিত্রের অবশ্যম্ভাবী এক পরিণতি। হয়তো পরিবেশ পরিস্থিতিতে তিনি নির্ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তবে লৌকিক রূপের এইসব বিশ্বস্ততা ছাপিয়ে জাতীয় জীবনে সম্পৃক্ত তাঁর অবিচ্ছেদ্য অনন্য মহিমান্বিত অতিলৌকিকরূপই প্রকট, এ বিষয়ে প্রমাণ বোধ হয় সাম্প্রতিক ভারতীয় রাজনৈতিক আবহ।—চলবে।
সেখানেই হয়তো মানুষ রামচন্দ্রের যথাযথগ্রহণযোগ্যতার বিচার। যে কোনও বিশিষ্ট চরিত্রই সমালোচনা, আলোচনার ঊর্ধ্বে নন। মানব অবতাররূপে রামচন্দ্রের ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য হয়তো এখানেই পর্যালোচনার চর্চিত বিষয়। শ্রীরামচন্দ্র মন্দিরে পূজিত হন, লোকসমাজে দেবতার আসনে তিনি অধিষ্ঠিত, সেখানে আছে বিষ্ণুর অবতার রূপের অনতিক্রম্য প্রভাব। রাবণবধে অশুভশক্তিদমনে তাঁর শৌর্য, জাতীয়তাবোধ উজ্জীবনের মন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে এই যুগান্তরেও। অসাম্প্রদায়িক ভারতবর্ষের অনেকের কাছেই জাতীয় নায়ক তিনি, তাঁর প্রতি ভক্তি-ধর্মীয় তকমা হয়ে দাঁড়িয়েছে কখনও কখনও।
এত গুণের আধার রামচন্দ্রের মানবিক ত্রুটিবিচ্যুতি আছে—স্খলন, পতন, বিচ্যুতি রয়েছে, মহাকাব্যকার সেগুলোও বর্ণনা করেছেন পরম নিষ্ঠায়, অবশ্যই শাণিত যৌক্তিকতার আবরণে। এই পতন তে মানবচরিত্রের অবশ্যম্ভাবী এক পরিণতি। হয়তো পরিবেশ পরিস্থিতিতে তিনি নির্ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তবে লৌকিক রূপের এইসব বিশ্বস্ততা ছাপিয়ে জাতীয় জীবনে সম্পৃক্ত তাঁর অবিচ্ছেদ্য অনন্য মহিমান্বিত অতিলৌকিকরূপই প্রকট, এ বিষয়ে প্রমাণ বোধ হয় সাম্প্রতিক ভারতীয় রাজনৈতিক আবহ।—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।