
মা সারদা।
পারিবারিক জীবনে দ্রৌপদীর সঙ্গে পঞ্চ স্বামীর দাম্পত্য সম্পর্কের শর্ত স্বীকার করে অর্জুন এসেছেন বার বছরের জন্যে বনবাসে। বিভিন্ন তীর্থ ও মণিপুর রাজ্য এবং দক্ষিণ সমুদ্রতীরবর্তী তীর্থসমূহ দর্শন করলেন তিনি। অর্জুন, ঘটনাবহুল তীর্থদর্শনান্তে মণিপুরে ফিরে গেলেন। সেখানে বভ্রুবাহন নামে পুত্রের পিতা হলেন। তিনি পুত্রকে মাতামহের তত্ত্বাবধানে রেখে, চিত্রাঙ্গদাকে পুনর্মিলনবিষয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বিদায় নিলেন। এরপরে পশ্চিমপ্রান্তের পবিত্র তীর্থ ও দেবালয়গুলি ভ্রমণ করলেন। শেষে প্রভাসতীর্থে এসে উপস্থিত হলেন। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ল অর্জুনের আগমনবার্তা। প্রভাসতীর্থে সখা কৃষ্ণের সঙ্গে অর্জুনের সাক্ষাৎ হল। দুই সখা আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে পরস্পরের কুশল বিনিময় করলেন। তাঁদের দুজনের জন্মান্তরের মিত্রতা। দুজনে ছিলেন নর-নরায়ণ ঋষি। কৃষ্ণ ঔৎসুক্য প্রকাশ করলেন, অর্জুনের তীর্থভ্রমণের উদ্দেশ্য কী? অর্জুন, ভ্রমণের কারণ-সহ, সমস্ত বৃত্তান্ত জানালেন। কৃষ্ণ, অর্জুনের আচরণ সমর্থন করলেন। দুই সখা প্রভাসতীর্থ হতে রৈবতক পর্বতে বসবাস করতে এলেন। কৃষ্ণের সঙ্গে সুসজ্জিত রৈবতকপর্বতে আহার সম্পন্ন করলেন। নৃত্যগীত বাদ্য প্রভৃতি বিনোদন সম্পন্ন করে দুই বন্ধু শয্যায় আশ্রয় নিলেন। অর্জুন শয্যায় শয়ন করে কৃষ্ণকে তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করতে করতে নিদ্রিত হলেন।
বৈতালিকদের স্তুতিগীতিতে তাঁর ঘুম ভাঙল। প্রাত্যহিক সন্ধ্যাবন্দনাদি সম্পন্ন করে কৃষ্ণের অনুরোধে অর্জুন, স্বর্ণরথে আরোহণ করে, দ্বারকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। অর্জুনের সম্মানার্থে দ্বারকায় গৃহকোণের কৃত্রিম উপবনটি পর্যন্ত সুসজ্জিত হয়ে উঠল। শত শত দ্বারকাবাসী অর্জুনদর্শনে সমুৎসুক হয়ে রাজপথে এসে দাঁড়ালেন। অর্জুনকে একটিবার দর্শনেচ্ছায় শত সহস্র নারী পুরুষ এবং ভোজ,বৃষ্ণি ও অন্ধকবংশীয় পুরুষেরা মিলিতভাবে উপস্থিত হলেন।ভোজ ,বৃষ্ণি ও অন্ধকবংশীয় সকলে অর্জুনকে সমাদর করলেন। অর্জুনও সকল নমস্যদের অভিনন্দন জানালেন এবং প্রত্যভিনন্দিত হলেন।কুমাররা অর্জুনকে নিজ নিজ ভবনে নিয়ে যেতে আগ্রহী হলেন। অর্জুন সমবয়স্ক তাঁদের বার বার আলিঙ্গনাবদ্ধ করলেন এবং রত্ন ও ভোজ্যসম্পন্ন সুরম্য কৃষ্ণভবনে কৃষ্ণের সঙ্গে বাস করতে লাগলেন।
কিছু দিন পরেই রৈবতকপর্বতে শুরু হল বৃষ্ণি ও অন্ধকবংশীয়দের বার্ষিক উৎসব। ব্রাহ্মণদের প্রভূত দানে সম্মানিত করতে লাগলেন ভোজ, বৃষ্ণি ও অন্ধকবংশীয়রা। কৃত্রিম বৃক্ষ ও বিচিত্র রত্নচিত্রে সেজে উঠল সেই গিরি। বালকেরা বাদ্য বাজাতে লাগলেন, নর্তকরা নৃত্য শুরু করলেন, গায়করা গান গাইতে লাগলেন। মহাতেজস্বী, বৃষ্ণিবংশীয় কুমাররা, সুসজ্জিত হয়ে,সুবর্ণময় যানে আরোহণ করে সর্বত্র ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। শত সহস্র পুরবাসী, সপরিবারে অনুচরসহ, পদব্রজে এবং নানাবিধ যানে আরোহণ করে বিচরণ করতে লাগলেন। হলধর বললাম, মদিরাসেবনে প্রমত্ত হয়ে স্ত্রী রেবতীর সঙ্গে বিহার করতে লাগলেন। তাঁকে অনুসরণ করলেন গন্ধর্বরা। গন্ধর্বগণের সঙ্গে বৃষ্ণিরাজ প্রতাপশালী উগ্রসেন সহস্র ভার্যাসহ তেমনই ভ্রমণ করতে লাগলেন। মদ্যপানে মত্ত হয়ে,যুদ্ধে দুর্দম কৃষ্ণ ও রুক্মিণীর পুত্র প্রদ্যুম্ন ও শাম্ব,দেবতুল্য রূপবান, দুই কুমার, দিব্য মালা ও বসনে সজ্জিত হয়ে, দৃশ্যমান হলেন। অক্রুর,সারণ, গজ, বভ্রু, বিদূরথ, নিশঠ, চারুদেষ্ণ, পৃথু, বিপৃথু, সত্যক, সাত্যকি, ভঙ্গকার, মহারব, হার্দ্দিক্য এবং উদ্ধবরা মহিলা পরিবৃত হয়ে গন্ধর্বগণের সঙ্গে রৈবতক পর্বতের শোভা হয়ে উঠলেন। এই আশ্চর্য উৎসবে অনুষ্ঠান চলতে থাকলে কৃষ্ণ ও অর্জুন সামিল হলেন। উভয়ে সেইখানে বসুদেবকন্যা, সুলক্ষণা, অলঙ্কৃতা সখীপরিবৃত সুভদ্রাকে দেখলেন। তাঁকে দেখেই অর্জুন কন্দর্পের দ্বারা প্রভাবিত হলেন, তাঁর কামভাব জেগে উঠল।
কিছু দিন পরেই রৈবতকপর্বতে শুরু হল বৃষ্ণি ও অন্ধকবংশীয়দের বার্ষিক উৎসব। ব্রাহ্মণদের প্রভূত দানে সম্মানিত করতে লাগলেন ভোজ, বৃষ্ণি ও অন্ধকবংশীয়রা। কৃত্রিম বৃক্ষ ও বিচিত্র রত্নচিত্রে সেজে উঠল সেই গিরি। বালকেরা বাদ্য বাজাতে লাগলেন, নর্তকরা নৃত্য শুরু করলেন, গায়করা গান গাইতে লাগলেন। মহাতেজস্বী, বৃষ্ণিবংশীয় কুমাররা, সুসজ্জিত হয়ে,সুবর্ণময় যানে আরোহণ করে সর্বত্র ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। শত সহস্র পুরবাসী, সপরিবারে অনুচরসহ, পদব্রজে এবং নানাবিধ যানে আরোহণ করে বিচরণ করতে লাগলেন। হলধর বললাম, মদিরাসেবনে প্রমত্ত হয়ে স্ত্রী রেবতীর সঙ্গে বিহার করতে লাগলেন। তাঁকে অনুসরণ করলেন গন্ধর্বরা। গন্ধর্বগণের সঙ্গে বৃষ্ণিরাজ প্রতাপশালী উগ্রসেন সহস্র ভার্যাসহ তেমনই ভ্রমণ করতে লাগলেন। মদ্যপানে মত্ত হয়ে,যুদ্ধে দুর্দম কৃষ্ণ ও রুক্মিণীর পুত্র প্রদ্যুম্ন ও শাম্ব,দেবতুল্য রূপবান, দুই কুমার, দিব্য মালা ও বসনে সজ্জিত হয়ে, দৃশ্যমান হলেন। অক্রুর,সারণ, গজ, বভ্রু, বিদূরথ, নিশঠ, চারুদেষ্ণ, পৃথু, বিপৃথু, সত্যক, সাত্যকি, ভঙ্গকার, মহারব, হার্দ্দিক্য এবং উদ্ধবরা মহিলা পরিবৃত হয়ে গন্ধর্বগণের সঙ্গে রৈবতক পর্বতের শোভা হয়ে উঠলেন। এই আশ্চর্য উৎসবে অনুষ্ঠান চলতে থাকলে কৃষ্ণ ও অর্জুন সামিল হলেন। উভয়ে সেইখানে বসুদেবকন্যা, সুলক্ষণা, অলঙ্কৃতা সখীপরিবৃত সুভদ্রাকে দেখলেন। তাঁকে দেখেই অর্জুন কন্দর্পের দ্বারা প্রভাবিত হলেন, তাঁর কামভাব জেগে উঠল।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৪: প্রকৃতির সান্নিধ্যে কি গ্লানিমুক্তি সম্ভব? লক্ষ্মণের আবেগ কি সাধারণের মধ্যে সহজলভ্য?

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪৮: এখানে দিন-রাত-শীত-গ্রীষ্ম-আলো-অন্ধকার, সব কিছুরই হিসেব আলাদা
কৃষ্ণ, অর্জুনের সেই রতিবিষয়ে একাগ্রতা লক্ষ্য করলেন। তিনি সহাস্যে প্রশ্ন করলেন, বনবাসীর মনে কামভাবের আলোড়ন কেন? বনেচরস্য কিমিদং কামেনালোভ্যতে মনঃ। সুভদ্রার পরিচয় দিয়ে বললেন, ইনি কৃষ্ণের ভগ্নী এবং সারণের সহোদরা, পিতার অতি প্রিয় কন্যা। যদি অর্জুনের তাঁকে পছন্দ হয়ে থাকে তবে, কৃষ্ণ তাঁর পিতাকে এই বিষয়ে জানাতে পারেন। যদি তে বর্ত্ততে বুদ্ধির্বক্ষ্যামি পিতরং স্বয়ম্। অর্জুন তাঁর মতামত প্রকাশ করলেন। সুভদ্রা বসুদেবকন্যা এবং বাসুদেব কৃষ্ণের ভগিনী, সুরূপা এই কন্যাকে দেখে কে না মোহাবিষ্ট হবেন? বৃষ্ণিবংশীয়া, এই মহিয়সী, কৃষ্ণের ভগ্নীটি যদি অর্জুনের হন তবে নিশ্চিত কল্যাণ সাধিত হবে। এর উপায় কী? যদি উপায় কিছু থাকে, জনার্দন তাহলে বলুন, মানুষের সাধ্য যদি সেই উপায় হয় তবে সাধ্য সেই বিষয়টিতে অর্জুনের আস্থা আছে। প্রাপ্তৌ তু ক উপায়ঃ স্যাত্তং ব্রবীহি জনার্দন!। আস্থাস্যামি তথা সর্ব্বং যদি শক্যং নরেণ তৎ।। কৃষ্ণ উপায়ের বিষয়ে বিবেচনা করে স্বমত প্রকাশ করলেন। ক্ষত্রিয়দের স্বয়ংবর বিবাহের বিধান আছে বটে, তবে সেখানেও সংশয় আছে। কারণ মানুষের স্বভাবের স্থিরতা নেই (সুভদ্রা অন্য কাউকে বরণ করতে পারেন)। বিবাহের কারণে বলপূর্বক কন্যাহরণ শ্রেয় বলে ধর্মবিদেরা বিবেচনা করে থাকেন। কৃষ্ণ প্রস্তাব দিলেন, হে অর্জুন, তুমি বল প্রয়োগ করে আমার এই কল্যাণী ভগিনীকে হরণ কর। স্বয়ংবরসভায় এই সুভদ্রার কে অভিপ্রেত পাত্র হবেন কে জানে? স ত্বমর্জুন! কল্যাণীং প্রসহ্য ভগিনীং মম। হর স্বয়ংবরে হ্যস্যাঃ কো বৈ বেদ চিকীর্ষিতম্।। কৃষ্ণ ও অর্জুন, এ বিষয়ে কর্তব্যবিষয় স্থির করে, ইন্দ্রপ্রস্থে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের কাছে দ্রুত কয়েকজন লোক পাঠিয়ে দিলেন। সব শুনে পাণ্ডব মহাবীর যুধিষ্ঠির বিষয়টি অনুমোদন করলেন।
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-২০: জ্ঞান ও অজ্ঞান

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৯: উদ্বোধনের ঠাকুরঘরে মা সারদার সঙ্গে স্বামী অরূপানন্দের কথোপকথন
অর্জুন, যুধিষ্ঠিরের অনুমতি লাভ করেছেন। তিনি জেনেছেন কৃষ্ণেরও সম্মতি আছে। সুভদ্রা রৈবতক পর্বতে অবস্থান করছেন, জেনে, বাসুদেব কৃষ্ণকে পরবর্তী কর্ত্তব্যবিষয়ে অবহিত করে, তাঁর সম্মতি নিয়ে সেখানে যেতে প্রস্তুত হলেন। কৃষ্ণের পরিকল্পনা অনুযায়ী শৈব্য ও সুগ্রীব নামে দুটি ঘোড়াযুক্ত, স্বর্ণময় রথে কিঙ্কিণীজালের মতো মালা দুলছিল, সবরকম অস্ত্রসমূহযুক্ত,মেঘের মতো গর্জনকারী, শত্রুদের আনন্দ হরণকারী, প্রজ্বলিত অগ্নির মতো প্রকাশমান যুদ্ধের জন্যে সজ্জিত রথে আরোহণ করে, কবচ, খড়্গ, অঙ্গুলিত্র ধারণ করে অর্জুন মৃগয়ার ছলে রওনা দিলেন। সুভদ্রা তখন সমস্ত দেবতা, ব্রাহ্মণ ও রৈবতক পর্বতের অর্চনা করে, ব্রাহ্মণদের স্বস্তিবাক্য উচ্চারণান্তে, পর্বতকে প্রদক্ষিণ করে, দ্বারকার দিকে অগ্রসর হলেন। কুন্তীপুত্র অর্জুন, কামনার শরে বিদ্ধ হয়ে, সর্বাঙ্গসুন্দরী সুভদ্রাকে বল প্রয়োগ করে রথে দ্রুত তুলে নিলেন। শুচিস্মিতা সুভদ্রাকে সেই সুবর্ণময় রথে নিয়ে, নিজের আবাসের দিকে ধাবিত হলেন। সুভদ্রা অপহৃতা হয়েছেন দেখে, সৈনিকরা কোলাহল করতে করতে, দ্বারকানগরীর দিকে ছুটে গেল।সেখানে,তারা সকলে সমবেতভাবে, সুধর্মাসভায়, সভাপালকে ঘিরে পার্থ অর্জুনের পরাক্রমের বিষয়ে সব কিছু জানাল। তাদের বিবরণ শুনে সভাপাল, যুদ্ধ ঘোষণাসূচক,স্বর্ণময় মহাঘোর রণভেরী বাজাতে লাগলেন। সেই শব্দে ক্ষুব্ধ ভোজ, বৃষ্টি, অন্ধকেরা, পানাহার ছেড়ে, চারিদিক থেকে ছুটে এল।
সভায় উপস্থিত হয়ে স্বর্ণখচিত সুসজ্জিত প্রদীপ্ত অগ্নিতুল্য শত শত সিংহাসনে মহাবলী বৃষ্ণি, অন্ধকরা যেন দীপ্ত তেজে অগ্নিসম উজ্জ্বলতায় উপবেশন করলেন। তাঁদের উপস্থিতিতে, সভাপাল, জিষ্ণু অর্জুনের ক্রিয়াকলাপ সম্বন্ধে জানালেন। সব কিছু শুনে, ক্রোধে রক্তচক্ষু বৃষ্ণিবীরদের, পার্থর ব্যবহার অসহনীয় মনে হল। রব উঠল, অবিলম্বে রথ প্রস্তুত হোক, কুন্ত, ধনু, মহার্ঘ বিশাল কবচ আহরণ কর। যোজয়ধ্বং রথানাশু প্রাসানাহরতেতি চ। ধনূংষি চ মহার্হাণি কবচানি বৃহন্তি চ।। কেউ সারথিদের উচ্চকণ্ঠে ডেকে উঠলেন, কেউ রথ প্রস্তুত করতে নির্দেশ দিলেন, কেউ কেউ নিজেরাই স্বর্ণসজ্জিত রথে অশ্ব যুক্ত করতে লাগলেন। কবচ ও পতাকাযুক্ত রথ আনা হলে, বীরদের তুমুল মহাকলরব শুরু হল। বন্যপুষ্পমালাধারী, মদ্যপানে প্রমত্ত, কৈলাশপর্বতশিখরসম, নীলবাসা বলরাম, বলে উঠলেন, কিমিদং কুরুথা প্রাজ্ঞাঃ!তূষ্ণীম্ভূতে জনার্দ্দনে।অস্য ভাবমবিজ্ঞায় সংক্রুদ্ধা মোঘগর্জিতাঃ।। ওহে প্রাজ্ঞরা, কৃষ্ণ যে এখনও নীরব। তাঁর মনোভাব না জেনে বৃথা ক্রুদ্ধ আস্ফালন, কেন? মহাবুদ্ধিমান কৃষ্ণ তাঁর অভিপ্রায় প্রকাশ করলে, তাঁর অভিমতানুসারে আয়াসহীনভাবে কাজটি করা যাবে। হলায়ুধ বলরামের সঙ্গত কথা শুনে, ‘সাধু’, ‘সাধু’ লতে বলতে সকলে নীরব হয়ে সভায় আসন গ্রহণ করলেন।
সভায় উপস্থিত হয়ে স্বর্ণখচিত সুসজ্জিত প্রদীপ্ত অগ্নিতুল্য শত শত সিংহাসনে মহাবলী বৃষ্ণি, অন্ধকরা যেন দীপ্ত তেজে অগ্নিসম উজ্জ্বলতায় উপবেশন করলেন। তাঁদের উপস্থিতিতে, সভাপাল, জিষ্ণু অর্জুনের ক্রিয়াকলাপ সম্বন্ধে জানালেন। সব কিছু শুনে, ক্রোধে রক্তচক্ষু বৃষ্ণিবীরদের, পার্থর ব্যবহার অসহনীয় মনে হল। রব উঠল, অবিলম্বে রথ প্রস্তুত হোক, কুন্ত, ধনু, মহার্ঘ বিশাল কবচ আহরণ কর। যোজয়ধ্বং রথানাশু প্রাসানাহরতেতি চ। ধনূংষি চ মহার্হাণি কবচানি বৃহন্তি চ।। কেউ সারথিদের উচ্চকণ্ঠে ডেকে উঠলেন, কেউ রথ প্রস্তুত করতে নির্দেশ দিলেন, কেউ কেউ নিজেরাই স্বর্ণসজ্জিত রথে অশ্ব যুক্ত করতে লাগলেন। কবচ ও পতাকাযুক্ত রথ আনা হলে, বীরদের তুমুল মহাকলরব শুরু হল। বন্যপুষ্পমালাধারী, মদ্যপানে প্রমত্ত, কৈলাশপর্বতশিখরসম, নীলবাসা বলরাম, বলে উঠলেন, কিমিদং কুরুথা প্রাজ্ঞাঃ!তূষ্ণীম্ভূতে জনার্দ্দনে।অস্য ভাবমবিজ্ঞায় সংক্রুদ্ধা মোঘগর্জিতাঃ।। ওহে প্রাজ্ঞরা, কৃষ্ণ যে এখনও নীরব। তাঁর মনোভাব না জেনে বৃথা ক্রুদ্ধ আস্ফালন, কেন? মহাবুদ্ধিমান কৃষ্ণ তাঁর অভিপ্রায় প্রকাশ করলে, তাঁর অভিমতানুসারে আয়াসহীনভাবে কাজটি করা যাবে। হলায়ুধ বলরামের সঙ্গত কথা শুনে, ‘সাধু’, ‘সাধু’ লতে বলতে সকলে নীরব হয়ে সভায় আসন গ্রহণ করলেন।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯১: গো-শালিক

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৮: দুর্গম গিরি কান্তার ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’
বলরাম কৃষ্ণকে বললেন, হে জনার্দন, এই সব দেখেও, কথা না বলে নিশ্চুপ বসে আছ কেন? কিমবাগুপবিষ্টোঽসি প্রেক্ষমাণো জনার্দন!। তোমার জন্যই (তোমার সন্তুষ্টির জন্যে) পার্থকে যথাযোগ্য সমাদর করা হয়েছে, কুলের কলঙ্ক, দুষ্টবুদ্ধি সে কী এই সম্মানের যোগ্য? কে নিজেকে সদ্বংশজাত মনে করে, অন্ন ভোজনান্তে আহারের পাত্রটিকেই ভেঙে ফেলতে পারে? কেই বা পিতৃপুরুষকৃত সম্বন্ধকে মান্যতা দিয়ে, নতুন সম্বন্ধ সৃষ্টি করতে ইচ্ছুক হয়ে, (কন্যা) লাভের আশায়,এমন সাহসিকতার (বলপূর্বক কন্যাহরণ) কাজ করে? বলরামের অভিযোগ, সেই পার্থ, আমাদের অবমাননা করে, কেশবকে অসম্মান করে, নিজের মৃত্যুস্বরূপ বলপ্রয়োগ করে, সুভদ্রাকে হরণ করেছেন। তিনি আজ আমার মাথার মাঝখানে পা রেখেছেন, হে গোবিন্দ, চরণের পরশ যদি সাপ সহ্য করে তেমন আমি কেন সহ্য করব? কথং হি শিরসো মধ্যে কৃতং তেন পদং মম। মর্ষয়িষ্যামি গোবিন্দ!পাদস্পর্শমিবোরোগঃ।। বলরামের কণ্ঠে কঠোর প্রতিজ্ঞার তীব্রতা, অদ্য নিষ্কৌরবামেকঃ করিষ্যামি বসুন্ধরাম্। ন হি মে মর্ষণীয়োঽয়মর্জ্জুনস্য ব্যতিক্রমঃ।। আজই আমি পৃথিবীকে কৌরবশূন্যা করে তুলব। অর্জুনের এই ব্যতিক্রমী (কর্ত্তব্যলঙ্ঘন) আচরণ আমার অসহনীয় বলেই মনে হয়। বলরাম মেঘ ও দুন্দুভিমন্দ্রিত স্বরে গর্জন করে উঠলেন। ভোজ, বৃষ্ণি, অন্ধকরা সকলে, তাঁর প্রস্তাবে, সম্মত হয়ে, অনুমোদন করলেন।
দাম্পত্যজীবনের শর্ত লঙ্ঘন করে ব্রহ্মচর্যে দীক্ষিত অর্জুন,বার বছরের বনবাসজীবন মেনে নিয়েছিলেন। ব্রহ্মচর্যের অঙ্গ হিসেবে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যযুক্ত স্থান ও সঙ্গে বিভিন্ন দর্শনীয় তীর্থস্থানও পরিভ্রমণ করলেন। পরিশেষে গঙ্গাতীরে আশ্রম স্থাপন করে বসবাসকালীন নাগকন্যা উলূপী তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হলেন। অর্জুন তাঁর ব্রহ্মচর্য ও বনবাসজীবনের শর্তাদি ও বনবাসের কারণ জানিয়েছিলেন। উলূপীর যুক্তির কাছে নতি স্বীকার করে অর্জুন তাঁর সংযম বিসর্জন দিয়ে উলূপীর সঙ্গমেচ্ছা পূর্ণ করলেন। পরিবর্তে উলূপী অর্জুনকে বর দিয়েছিলেন, অর্জুন সর্বদাই জলে অজেয় থাকবেন। সর্বত্র জলচর প্রাণীরা অর্জুনের আনুগত্য স্বীকার করবে। উলূপীর কাছে বিদায় নিয়ে হিমালয় ও বহু পুণ্য তীর্থ দর্শনান্তে কলিঙ্গদেশ ও মহেন্দ্রপর্বত দর্শন করলেন। এর পরে মণিপুররাজ্যে উপস্থিত হয়ে রাজা চিত্রবাহনের কন্যা চিত্রাঙ্গদার প্রতি আসক্ত হলেন এবং রাজার কাছে কন্যা চিত্রাঙ্গদাকে প্রার্থনা করলেন।
দাম্পত্যজীবনের শর্ত লঙ্ঘন করে ব্রহ্মচর্যে দীক্ষিত অর্জুন,বার বছরের বনবাসজীবন মেনে নিয়েছিলেন। ব্রহ্মচর্যের অঙ্গ হিসেবে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যযুক্ত স্থান ও সঙ্গে বিভিন্ন দর্শনীয় তীর্থস্থানও পরিভ্রমণ করলেন। পরিশেষে গঙ্গাতীরে আশ্রম স্থাপন করে বসবাসকালীন নাগকন্যা উলূপী তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হলেন। অর্জুন তাঁর ব্রহ্মচর্য ও বনবাসজীবনের শর্তাদি ও বনবাসের কারণ জানিয়েছিলেন। উলূপীর যুক্তির কাছে নতি স্বীকার করে অর্জুন তাঁর সংযম বিসর্জন দিয়ে উলূপীর সঙ্গমেচ্ছা পূর্ণ করলেন। পরিবর্তে উলূপী অর্জুনকে বর দিয়েছিলেন, অর্জুন সর্বদাই জলে অজেয় থাকবেন। সর্বত্র জলচর প্রাণীরা অর্জুনের আনুগত্য স্বীকার করবে। উলূপীর কাছে বিদায় নিয়ে হিমালয় ও বহু পুণ্য তীর্থ দর্শনান্তে কলিঙ্গদেশ ও মহেন্দ্রপর্বত দর্শন করলেন। এর পরে মণিপুররাজ্যে উপস্থিত হয়ে রাজা চিত্রবাহনের কন্যা চিত্রাঙ্গদার প্রতি আসক্ত হলেন এবং রাজার কাছে কন্যা চিত্রাঙ্গদাকে প্রার্থনা করলেন।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৯: বেশি ঘুম শরীরের পক্ষে ভালো?

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৬: নীল রাত্রি, নীল অন্ধকার
রাজার শর্তানুযায়ী অর্জুন তাঁর নিজের ঔরসে,চিত্রাঙ্গদার গর্ভজাত পুত্রকে মাতামহ চিত্রবাহনকে প্রদানের অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে, চিত্রাঙ্গদাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করলেন। তিন বৎসর পরে দক্ষিণের পঞ্চতীর্থ দর্শন করে, মণিপুরে ফিরে গেলেন। সেখানে চিত্রাঙ্গদার গর্ভে বভ্রুবাহন নামে পুত্রের পিতা হলেন। রাজা চিত্রবাহনের অঙ্গীকার পূরণ করলেন, বভ্রুবাহন মাতামহের পুত্ররূপে পরিচিত হলেন। মণিপুর থেকে প্রস্থান করে গোকর্ণতীর্থে গমন করলেন। শেষে প্রভাসতীর্থে সখা কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা হল তাঁর। অর্জুনের তীর্থ ভ্রমণের উদ্দেশ্য ও কারণ, অকপটে প্রিয় মিত্রকে জানালেন। দুজনে রৈবতক পর্বতে অবস্থান করে পশ্চিম উপকূলে দ্বারকায় উপস্থিত হলেন। যাদববংশীয়দের, ভোজ বৃষ্ণি অন্ধক সম্প্রদায়ের সকলে, অর্জুনকে সাদরে সসম্মানে অভ্যর্থনা জানালেন। প্রতিদানে অর্জুন আচরণে ভদ্রতার কোন অভাব ছিল না। কিন্তু বৃষ্ণি ও অন্ধকবংশীয়দের বার্ষিক উৎসবে বসুদেবকন্যা, কৃষ্ণের ভগিনী, অসামান্যা রূপবতী সুভদ্রাকে দেখে অর্জুন আবারও সংযম হারিয়ে ফেললেন। ভুলে গেলেন তিনি সম্মানীয় অতিথি, কোনও বিশ্বাসভঙ্গের কাজ তিনি করতে পারেন না। তাঁর কামভাব জেগে উঠল। বনবাসী ব্রহ্মচারীর যা অত্যন্ত বেমানান ও অনৈতিক আচরণ। অভিন্নহৃদয় কৃষ্ণের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় ছিল। কৃষ্ণ, পিতার অনুমোদন সাপেক্ষে উভয়ের বিবাহে আগ্রহী হলেও, শেষপর্যন্ত স্বয়ংবরসভায় সুভদ্রা অর্জুনের সঙ্গে বিবাহে সম্মত হবেন কি না সে বিষয়ে কৃষ্ণের সন্দেহ রয়ে গেল। কৃষ্ণ সুভদ্রাহরণে স্বয়ং সম্মতি দিলেন এবং যুধিষ্ঠিরের অনুমোদন লাভ করে, অর্জুন আর অপেক্ষা করলেন না। কৃষ্ণ স্বয়ং এই অপহরণ কাণ্ডের আয়োজক। আর দ্বিধা কোথায়? সুভদ্রাকে বলপূর্বক হরণ করে সম্পূর্ণ একটি সম্প্রদায়ের আস্থা নষ্ট করলেন। যথারীতি কন্যার সম্মতির কোন প্রয়োজন বোধ করলেন না।

মা সারদা।
অর্জুনের উদ্দেশ্য সুভদ্রাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করা। এর লক্ষ্য একটি বিবাহবন্ধনের মাধ্যমে প্রার্থিতা কন্যাটিকে গ্রহণ। অর্জুনের এই বিবাহের পদক্ষেপগ্রহণ, শাস্ত্রনিন্দিত রাক্ষস বিবাহের সমতুল্য। শাস্ত্রকার বলেছেন, হত্যা ছিত্ত্বা চ ভিত্ত্বা চ ক্রোশন্তীং রুদতীং গৃহাৎ। প্রসহ্য কন্যাহরণং রাক্ষসো বিধিরুচ্যতে।। কন্যাপক্ষীয় বাধাদানকারীদের হত্যা করে,অঙ্গচ্ছেদ করে, প্রাচীর দুর্গ প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতা ভেদ করে বলপূর্বক, ক্রন্দনরতা অথবা সাহায্য প্রার্থনারতা কন্যাকে হরণ করে যে বিবাহ সেটি রাক্ষস বিবাহ নামে অভিহিত। অর্জুনের অতর্কিত হামলায় সুভদ্রা আর্ত চিৎকারে করেছিলেন কি না বা চোখ থেকে কফোঁটা অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়েছিল সে সম্বন্ধে মহাভারতকার নীরব, যেমন অপ্রতিরোধ্য অর্জুন, কোন প্রতিপক্ষীয় বীরের বাধার সম্মুখীন হয়ে সেই বীরের প্রাণহানির কারণ হয়েছিলেন কি না, সে বিষয়েও ব্যাসদেব নিশ্চুপ। হতচকিত বৃষ্ণিবংশীয়রা এবং জ্যেষ্ঠ বলরাম, প্রতিশোধের জ্বালায় জ্বলে উঠলেন যেমন, তেমনই কৃষ্ণের নীরবতায় হতবাক হলেন তাঁরা। পার্থ অর্জুন,সকলের মর্যাদা হানি করে,সকলের অসম্মান করেছেন। তাই তাঁর এই আচরণ সহনীয় নয়। প্রতিশোধ নিতেই হবে এবার।
একটি বিবাহে দুটি পরিবার মিলিত হয়। সেই আনন্দের আবহে, বিবাহের যা কিছু অসম্পূর্ণতা, সব দূর হয়ে যায়। অর্জুনের ঘটনাবহুল বনবাস জীবনে ব্রহ্মচর্য রক্ষা করতে পারেননি। উলূপী তাঁর সংযমের বাঁধ ভেঙে দিয়েছিল। তাঁর পরে,অর্জুন একে একে চিত্রাঙ্গদা ও সুভদ্রার প্রতি একতরফা কামাবেগ অনুভব করেছিলেন। চিত্রাঙ্গদার সঙ্গে বিবাহটি অনুমোদিত বিবাহের পর্যায়ভুক্ত কিন্তু সুভদ্রাহরণ নিন্দিত রাক্ষসবিবাহের পর্যায়ভুক্ত বললে অত্যুক্তি হয় না।
এমন কন্যার সম্মতি না নিয়ে, তাঁকে অপহরণ করে, অশালীন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করবার এই রীতি শুধু রাজপরিবারেই নয় এখনও এই প্রক্রিয়া বিরল নয়।ভরতবংশীয় অর্জুনের পিতৃপুরুষ ভীষ্মও ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বয়ংবরসভা থেকে ভ্রাতৃবধূরূপে তিন রাজকন্যাকে হরণ করে এনেছিলেন, যাঁর পরিণাম শুভ হয়নি। অর্জুন প্রবাদপ্রতিম বীর, তাঁর আচরণ হয়তো ক্ষত্রধর্মবিরোধী নয়,তবে উদাহরণটি হয়তো গ্রহণযোগ্য নয়। ভাগ্যের ফেরে দূর প্রবাসে, ভরতবংশীয়দের এই অসংযম, এই কামনার তারণা এখনও হয়তো প্রভাবিত করে। মানুষ জৈবপ্রবৃত্তির বশে নিঃসঙ্গ অবস্থায় অসংযমী হয়ে পড়ে। তবে এর বিপরীত উদাহরণ বিরল নয়। অর্জুনের দ্বারকাবাসীদের প্রতি বিশ্বাসভঙ্গ হয়তো তার থেকেও সমালোচনার যোগ্য আচরণ। এমন উদাহরণ হয়তো অনুসরণীয় নয়। বিখ্যাত পুরুষদের সব আচরণ কী সঠিক?ভরতবংশীয়রা সেটি মনে রাখবেন তো?
একটি বিবাহে দুটি পরিবার মিলিত হয়। সেই আনন্দের আবহে, বিবাহের যা কিছু অসম্পূর্ণতা, সব দূর হয়ে যায়। অর্জুনের ঘটনাবহুল বনবাস জীবনে ব্রহ্মচর্য রক্ষা করতে পারেননি। উলূপী তাঁর সংযমের বাঁধ ভেঙে দিয়েছিল। তাঁর পরে,অর্জুন একে একে চিত্রাঙ্গদা ও সুভদ্রার প্রতি একতরফা কামাবেগ অনুভব করেছিলেন। চিত্রাঙ্গদার সঙ্গে বিবাহটি অনুমোদিত বিবাহের পর্যায়ভুক্ত কিন্তু সুভদ্রাহরণ নিন্দিত রাক্ষসবিবাহের পর্যায়ভুক্ত বললে অত্যুক্তি হয় না।
এমন কন্যার সম্মতি না নিয়ে, তাঁকে অপহরণ করে, অশালীন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করবার এই রীতি শুধু রাজপরিবারেই নয় এখনও এই প্রক্রিয়া বিরল নয়।ভরতবংশীয় অর্জুনের পিতৃপুরুষ ভীষ্মও ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বয়ংবরসভা থেকে ভ্রাতৃবধূরূপে তিন রাজকন্যাকে হরণ করে এনেছিলেন, যাঁর পরিণাম শুভ হয়নি। অর্জুন প্রবাদপ্রতিম বীর, তাঁর আচরণ হয়তো ক্ষত্রধর্মবিরোধী নয়,তবে উদাহরণটি হয়তো গ্রহণযোগ্য নয়। ভাগ্যের ফেরে দূর প্রবাসে, ভরতবংশীয়দের এই অসংযম, এই কামনার তারণা এখনও হয়তো প্রভাবিত করে। মানুষ জৈবপ্রবৃত্তির বশে নিঃসঙ্গ অবস্থায় অসংযমী হয়ে পড়ে। তবে এর বিপরীত উদাহরণ বিরল নয়। অর্জুনের দ্বারকাবাসীদের প্রতি বিশ্বাসভঙ্গ হয়তো তার থেকেও সমালোচনার যোগ্য আচরণ। এমন উদাহরণ হয়তো অনুসরণীয় নয়। বিখ্যাত পুরুষদের সব আচরণ কী সঠিক?ভরতবংশীয়রা সেটি মনে রাখবেন তো?
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।