বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


কলকাতায় বৃষ্টি

‘মহারানি সিজন-১' ছবি একটি দৃশ্যে হুমা কুরেশি।

 

মহারানি: সিজন ১

ভাষা: হিন্দি
প্রযোজনা: নরেন কুমার, ডিম্পল খারবান্দা
সৃজন: সুভাষ কাপুর
কাহিনি: সুভাস কাপুর
চিত্রনাট্য ও সংলাপ: সুভাষ কাপুস, নন্দন সিং, উমাশঙ্কর সিং
পরিচালনা: করণ শর্মা
অভিনয়: হুমা কুরেশি, সোহম শাহ, অমিত শিয়াল, বিনীত কুমার, কনিক সরুতি, অনুজা শাঠে এনামুল্লাহ প্রমুখ
ওটিটি রিলিজ: সোনি লিভ
পর্ব: ১০
রেটিং: ৮.৫/১০


নব্বই দশকের বিহার। লালু প্রসাদের জেলযাত্রা এবং গৃহস্থালিতে ব্যস্ত রাবড়ি দেবীর রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ —মহারানি, সিজন: ১ এর গল্পের বীজ এখান থেকে নেওয়া। কিন্তু কাহিনিকার সুভাষ কাপুর চেনার সূত্র থেকে গল্প নিয়ে কল্পনার ছোঁয়া দিয়ে তাকে অচেনা আকর্ষণীয় এবং উত্তেজনায় ভরে দিয়েছেন। নাম ভূমিকায় হুমা কুরেশি অনবদ্য অভিনয় করেছেন।

জাতপাতের জটিল সমীকরণ, সামন্ততান্ত্রিক প্রথা, দুর্নীতি ও ব্যক্তিগত লোভ আকাঙ্ক্ষা সবকিছু নিয়ে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য একটি ওয়েব সিরিজ মহারানি সিজন ১। যেকোনও কাহিনি মানুষের মনে স্থান করে নেওয়ার জন্য গল্পের চরিত্র ও গল্পের পটভূমি বিশেষভাবে দর্শকের মনে গেঁথে দেওয়া উচিত। একটা সময় সিনেমার দর্শককে খুব বোকা মনে করা হতো। আর সিনেমাকে মনে করা হতো স্বপ্ন বিক্রির উপকরণ। তাই সেই সময়কার সিনেমায় বাস্তবতা কম থাকতো কল্পনায় মোড়া অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্প বলা হতো।

ঘরের ভিতর মানে স্টুডিও আর ঘরের বাইরেটা ঝাঁ চকচকে অন্য কোথা অন্য কোনখানে থেকে এনে জুড়ে দিয়ে হাঁস আর সজারু মিলিয়ে হাঁসজারু। তখন চরিত্রদের মধ্যে উচ্চগ্রামের অভিনয়, ঝকঝকে পয়সা ফেলা সংলাপ, আকর্ষণীয় উত্তেজক নাচ-গান— এসব জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। দর্শক ওইসবে বেশ অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। এর সঙ্গে সঙ্গে সমান্তরাল সিনেমা বা বিষয়ভিত্তিক সিনেমার প্রচলন হল। যে ছবি ব্যবসায়িক আনুকূল্য লাভ না করলেও দেশে-বিদেশে উচ্চ প্রশংসিত হতো এবং পুরস্কার পেতো।

পরবর্তীকালে একদল তরুণ চিত্র পরিচালক এই দুই ধারাকে বিশ্বাসযোগ্যতার নিরিখে মিলিয়ে মিশিয়ে একটা ফর্মুলায় ছবি বানাতে শুরু করলেন। যাতে করে চরিত্র অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য হয়। তাদের কথাবার্তা সংলাপ সব আমাদের দৈনন্দিন জীবনের থেকে নেওয়া আর সমস্যাগুলো আমাদের চেনা। বড় বড় শহরের গল্প বলা ছেড়ে ছোট শহরে থাকা সাধারণ মানুষের গল্প নিয়ে ছবি তৈরি শুরু হল। এই ভিন্ন রুচিতে দর্শক অভ্যস্ত হয়ে গেলেন। বিশ্বাসযোগ্যভাবে এই আনকোরা নতুন পরিচালকেরা একটার পর একটা ভালো ছবি করতে শুরু করলেন। অসংখ্য অজস্র নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রী দর্শকের মনের স্থায়ী জায়গা করে নিতে সক্ষম হলেন। স্টারডমের চুড়োয় বসে থাকা বিশিষ্ট নায়ক-নায়িকাদের অস্তিত্ব সংকট শুরু হল। আর ঠিক এরপরেই চলে এল ওয়েব সিরিজ।
আরও পড়ুন:

মুভি রিভিউ: মুভি রিভিউ: ভোটের বাজারে জমে যাবে ম্যাডাম চিফ মিনিস্টার

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৪: নোবেল পাওয়ায় বন্ধু দিয়েছিলেন লজ্জাবতীর চারা

পরিচালক চিত্রনাট্যকার চিত্রগ্রাহক গল্পের চরিত্রের সঙ্গে সঙ্গে গল্পের পটভূমি বা লোকেশনকেও কেউ একটি বিশেষ চরিত্র হিসেবে তৈরি করতে শুরু করলেন। ছবি বা ওয়েব সিরিজ দেখতে গিয়ে দর্শকের মনে হতে লাগলো ছবির লোকেশন তার খুব চেনা। এখানে যদি তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে সে একা একা জায়গাগুলোতে ঘুরতে পারবে। পুরনো হিন্দি ছবি দেখে এমন কখনো মনে হতো না।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৪: সুন্দরবনের সুন্দরী গাছ

হে নূতন…

মহারানির ক্ষেত্রেও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে। দেখে কোনও কিছুই সিনেমার জন্য সাজানো বলে মনে হচ্ছে না। চরিত্রদের কথাবার্তা ভাবভঙ্গি ঘটনাপ্রবাহ অত্যন্ত স্বাভাবিক। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ভীমা ভারতীর স্ত্রী রানি ভারতীর ছেলেমেয়ে নিয়ে ভরা সংসার। রানির কাছে তার পরিবারই তার জগৎ। কিন্তু রাজনীতির পঙ্কিল কাদার মধ্যে রানির স্বপ্ন ভেঙে চুরে গেল। আততায়ীর গুলিতে ভয়ংকরভাবে আহত হলেন মুখ্যমন্ত্রী ভীমা ভারতী। পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দাবিদার ছিলেন শিক্ষিত নবীন কুমার। কিন্তু সকলকে চমকে দিয়ে ভীমা ভারতী তার স্ত্রী রানিকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করলেন। এরপর মন দিয়ে সিরিজ ওয়ান দেখতে হবে। কোনও ছবি বা সিরিজ নিয়ে প্রতিবেদন করার সময় আমি একেবারেই গল্প বলে দেবার পক্ষপাতী নই। কারণ, ছবি বিষয় কাহিনি হচ্ছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অভিনেতা-অভিনেত্রী তারা সবাই গল্পের পরিপূরক হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু মূল আকর্ষণ থাকে গল্পের। তাই এলিমেন্ট অফ সারপ্রাইজ নষ্ট করে দেওয়াটা এক ধরনের অপরাধ।
আরও পড়ুন:

ইতিহাস কথা কও: পূর্বোত্তরে ইতিহাস ঐতিহ্যে হাতি

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২০: মানকুমারী বসু—সাহিত্য জগতের উজ্জ্বল রত্ন!

একজন অত্যন্ত সাধারণ গৃহিনী থেকে পরিস্থিতির চাপে কি করে তাকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে হয়। অশিক্ষার কারণে তাকে রাজনীতির পোড়খাওয়া নেতাদের হাতে নিছক ক্রীড়নক হয়ে তাকে পদে পদে ধাক্কা খেতে হয়। রাজনীতি যে আসলে কতটা ভয়ংকর সেটা নিজের জীবন নিজের পারিবারিক অস্তিত্ব দিয়ে উপলব্ধির পর তার ঘুরে দাঁড়ানো নিয়েই এই গোটা সিরিজের তিনটি সিজন। সিজন ১-এর কথাটি ফুরোলো। তবে নটেগাছ মুড়োয়নি। এর পরের সিজন-২ আর ৩ নিয়ে প্রতিবেদন আগামী দুই কিস্তিতে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content