মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪


 

মহারাজ

কাহিনি বৈশিষ্ট্য: ঐতিহাসিক ঘটনা (২০২৪)
ভাষা: হিন্দি
প্রযোজনা: আদিত্য চোপড়া
পরিবেশনা: ওয়াই আর এফ এন্টারটেনমেন্ট
রচনা: বিপুল মেহেতা, স্নেহা দেশাই
নির্দেশনা: সিদ্ধার্থ পি মালহোত্রা
অভিনয়ে: জুনেদ খান, জগদীপ অহলাওয়াট, শালিনী পাণ্ডে, শর্বরী প্রমুখ
সময়সীমা: ১৩১মিনিট
দেখা যাবে: নেটফ্লিক্স
রেটিং: ৫.৫/১০

নামভূমিকায় ইরফান খানের অভিনয় করার কথা ছিল, শেষমেশ তা হয়নি। মহারাজ চরিত্রে অভিনয় করেছেন জগদীপ আহ্লায়াৎ। যেহেতু এমন কোনও চরিত্রে আমরা আগে ইরফান খানকে দেখিনি, তাই তিনি করলে কেমন হতো সেই আকাঙ্ক্ষা বা লোভ তো মানুষের থাকবেই। তবে জগতের নিয়মে আমাদের ইরফানের মতো ক্ষণজন্মা অভিনয় প্রতিভাকে হারাতে হয়েছে। তাই ইরফানের না দেখা চরিত্রায়নকে মাথায় না রেখে মহারাজ যদুনাথ ব্রিজরতন ওরফে জে জে চরিত্রে জগদীপ আহ্লায়াৎ-এর অসামান্য অভিনয় আমায় মুগ্ধ করেছে।

চেহারা বা মুখভঙ্গিমায় বিন্দুমাত্র খলনায়কি ছিল না। খুব খেয়াল করে দেখলে হয়তো এক দু’বার চোখের পেশী সামান্য কুঞ্চন নজরে আসতেও পারে। অথচ কি ভয়ংকর অন্তঃকরণ এই পরমপূজ্য মহারাজ যদুনাথ ব্রিজরতন ওরফে জেজে’র। ১৮৬২ সালে বোম্বাই ব্রিটিশ আদালতে মহারাজ মানহানি মামলা ও গুজরাতি সাহিত্যিক সৌরভ শাহের লিখিত উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয়েছে এই ছবি।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭৫: সত্যব্রত সকাশে

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭৩: দুই মহর্ষির দ্বন্দ্বে কি ‘ইতি ও নেতি’র বিরোধেরই প্রতিফলন?

১৮৬২-র মামলা নিয়ে করা ছবি নিয়ে ২০২৪-এর জুন মাসে মুক্তির আগে গুজরাত হাইকোর্টে আবার মামলা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছিল এই চলচ্চিত্র বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের পুষ্টিমার্গ ধারার মানুষদের ধর্মবিশ্বাসকে আঘাত করেছে। স্বাভাবিকভাবে ছবির মুক্তিতে আইনি বাধা তৈরি হয়। কিন্তু ছবিটি দেখার পর বিচারপতি শ্রীমতি সঙ্গীতা কে ভিশন জানান যে এ ছবিতে কোন সম্প্রদায়কে আঘাত করা হয়নি। সুতরাং ছবির মুক্তিতে কোন বাধা নেই। গত একুশে জুন ২০২৪ নেটফ্লিক্স প্ল্যাটফর্মে এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৬: নান্দনিক শিক্ষায় উৎসাহী ছিলেন শ্রীমা

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫০: পুত্রস্নেহে অন্ধ হলে পিতাকেও ধৃতরাষ্ট্রের মতো দুর্দশা ভোগ করতে হয়

কারসান দাস মূলজি প্রাক-স্বাধীন ভারতের বোম্বে প্রেসিডেন্সির একজন প্রগতিশীল চিন্তাবিদ এবং সমাজ সংস্কারক ছিলেন। তিনি যে মেয়ের (কিশোরী) সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন, সে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় বৈষ্ণব বল্লভ সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু মহারাজ ‘জেজে’ এর একজন ভক্ত বিশ্বাসী। মহারাজের বাস যে ‘হাভেলি’-তে তা ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে পবিত্রতম স্থান।
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৩: কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৫: বার্নার্ড শ ও শার্লটি—যদি প্রেম দিলে না প্রাণে/১

কিন্তু সমস্ত ধর্মগুরু বা সাধু অন্তরে সিদ্ধ ও সুস্থ নন। জেজে মহারাজও তাঁর পশুবৃত্তিকে জয় করতে পারেননি। হোলি উৎসবের নাচগানের সময় মূলজির বাগদত্তা মেয়েটি তাঁর কামনার উদ্রেক ঘটাল। হোলির দিন সন্ধ্যায় চরণ সেবা অত্যন্ত প্রচলিত পদ্ধতি। এই চরণ সেবার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে হাভেলিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী বিবাহিত এবং সংসারী হওয়া সত্ত্বেও জেজে মহারাজ তার পাশবিক বাসনা চরিতার্থ করে আসছেন।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৮: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— বাবুর ও বন জুঁই

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার

কিশোরীর সঙ্গে একই ঘটনা ঘটলো। চরণদাস কিশোরীকে বিবাহ করতে অস্বীকার করে কিশোরী আত্মহত্যা করে। ক্রমশ প্রকাশ পায় যে একা কিশোরী নয়, এ ঘটনা বহু অনূঢ়া এবং বিবাহিতাদের সঙ্গে আগেও ঘটেছে। কারসান দাস মূলজি তাঁর সত্যপ্রকাশ পত্রিকায় জে জে মহারাজকে দায়ী করেন। মহারাজ কারসান দাসের বিরুদ্ধে বিপুল অঙ্কের মানহানির মামলা করেন। সেই মামলা এবং তার ফলাফলের সামাজিক প্রতিফলন নিয়ে ছবি মহারাজ।

কারসান দাস মূলজির ভূমিকায় হিন্দি ছবিতে আত্মপ্রকাশ করলেন প্রখ্যাত অভিনেতা আমির খানের পুত্র জুনেদ খান। প্রথম ছবিতে জুনেদ যথেষ্ট সাবলীল এবং অবশ্যই সংবেদনশীল। যাইহোক, ইতিহাস নির্ভর এই ছবির আর্ট ডাইরেকশন এবং পোশাক পরিকল্পনা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রশংসনীয়।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content