শুক্রবার ৫ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

ব্যালেন্সড ডায়েটের এক অপরিহার্য উপাদান হিসেবে একজন সুস্থ স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রায় ৫০ থেকে ৭৫ গ্রাম প্রোটিন দরকার হয়। দেহ গঠন, ক্ষয় পূরণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখা, হরমোন ও এনজাইম তৈরি ছাড়াও রক্ত ও কোষের গঠনের অন্যতম উপাদান প্রোটিন। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে অনেকেই বিজ্ঞাপনের মোহে পড়ে বা জিম, এক্সারসাইজ বা মাসল তৈরির অজুহাতে লাগাম ছাড়া ভাবে প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট কিনে দেদার খেয়ে যাচ্ছেন, যার ফল কিন্তু মারাত্মক হতে পারে।
 

প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট কী?

বেশিরভাগ প্রোটিন সাপ্লিমেন্টের মুখ্য উপাদান হল— হোয়ে, সয়া, বোসিন, এগ অ্যালবুমিন ইত্যাদি হাই বায়োলজিক্যাল ভ্যালুর প্রোটিন। মোটামুটি এক স্কুপে ২০-২৪ গ্রাম প্রোটিন এবং ১০০ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়।

আবার হোয়ে প্রোটিনে ব্রাঞ্চড চেন অ্যামিনো অ্যাসিড এবং লিউসিন জাতীয় এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড থাকায় স্ট্রেনথ ও পারফরম্যান্স বাড়ায়, যা স্পোর্টস বা স্ট্রেনথ ট্রেনিং-এর সঙ্গে যুক্ত মানুষদের বিশেষ পছন্দের। আবার হোয়ে প্রোটিন গ্লুটাথিয়ন জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎপাদন বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

 

বিভিন্নরকম হোয়ে প্রোটিন

হোয়ে প্রোটিন কনসেন্ট্রেট (ল্যোকটোজ বেশি থাকলেও ফ্যাট ও কোলেস্টেরল খুব কম।
হোয়ে আইসোলেট (প্রোটিন কনসেনট্রেশন খুব বেশি)
হোয়ে হাইড্রোলিসেট (ল্যাকটোজ ও ফ্যাটবিহীন হওয়ায় দ্রুত দেহে শোষিত হয়)

 

প্রোটিন সাপ্লিমেন্টের বিপদ

 

কিটোসিস

কার্বোহাইড্রেট ছাড়া অতিরিক্ত প্রোটিন লিভার ফ্যাটকেই শক্তির মুখ্য উৎস হিসাবে ব্যবহার করে রক্তের অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে দিয়ে বিপজনক কিটো অ্যাসিডোসিসের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
 

কিডনির সমস্যা

লাগাম ছাড়া ভাবি প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার ফলে রক্তে বেড়ে যায় অ্যামোনিয়া ইউরিয়ার মতো বজ্র পদার্থের মাত্রা। ফলে দীর্ঘদিন ধরে কিডনির স্ট্রেস চলার কারণে রেনাল ডিজঅর্ডার এবং কিডনি স্টোনের আশঙ্কাও বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: না খেয়ে নয়, বরং খেয়েই কমান ওজন! কী কী খেলে মেদ ঝরবে? দেখুন ভিডিয়ো

হেলদি ডায়েট: হাড়ের সমস্যায় ভুগছেন? কী ভাবে নেবেন যত্ন? হাড় মজবুত রাখতে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় এই সব বদল আনুন

ডায়েট টিপস: অকালে বুড়িয়ে যাচ্ছে ত্বক? তারুণ্য ধরে রাখতে মেনে চলুন এই নিয়মগুলি

 

হজমের গন্ডগোল

ল্যাকটোজ ইমটলারন্ট বা কেসিন বা হোয়ে প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নিলে পেটভার, পেট ব্যাথা, বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য— এসব সমস্যা দেখা দিতে পারে।
 

ডিহাইড্রেশন

অতিরিক্ত প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট থেকে তৈরি অতিরিক্ত বিপাকজাত বজ্র পদার্থ ঠিকমতো দেহ থেকে বের করে দেওয়ার জন্য জলের চাহিদা বাড়ে। তাই পর্যাপ্ত জল পান না করলে মাথা ব্যথা, ক্লান্তি, গলা-বুক জিভ শুকিয়ে যাওয়া, অবসাদ, ত্বক শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ প্রকাশ পায়।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৫: যখন ‘ওরা থাকে ওধারে’

‘ওগো তুমি যে আমার…’— আজও তাঁর জায়গা কেউ নিতে পারেনি/২

যোগা-প্রাণায়াম: পিসিওডি এবং পিসিওএস-এর সমস্যা? চিন্তা নেই যোগায় আছে সমাধান

 

অস্টিওপোরোসিস

অতিরিক্ত প্রোটিন সাবলিমেন্ট দেহের অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে দিয়ে হাড়ের ক্যালশিয়াম ও ফসফরাসের ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
 

গাউট

প্রোটিন পাউডারের অ্যামিনো অ্যাসিড দেহে ঠিকভাবে কাজে না লাগলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিড লেভেল বেড়ে গিয়ে ডেকে আনতে পারে গেটে বাতের সমস্যা।

আরও পড়ুন:

ইংলিশ টিংলিশ: Preposition-এর মূল নিয়মগুলো জানো কি?

ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-৯: নীল আকাশ, রঙিন ফল কালার, হ্রদের জলে তার প্রতিচ্ছবি…ঠিক যেন রূপকথার গল্প

খাই খাই: শীতের আমেজে লোভনীয় কিছু খাওয়ার ইচ্ছা? রেস্তরাঁর মতো ঝটপট বানিয়ে ফেলুন সুখা মরিচ মাটন

 

হাই প্রো গ্লাইসেমিয়া

ডায়াবেটিসে বেশি যারা ইনসুলিন নিচ্ছেন বা মেডিসিন ডিপেন্ডেন্ট তাঁরা কখনওই ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ ছাড়া প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নেবেন না। এতে হঠাৎ করে ব্লাড সুগার লেভেল ফল করতে পারে।
 

ওজন বেড়ে যাওয়া

যাঁরা বাড়তি ওজন কমানোর জন্য এন্তার প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নিচ্ছেন, সাবধান। অতিরিক্ত প্রোটিন মানেই অতিরিক্ত ক্যালরি, যা ঠিকমতো খরচ না হলেই ওজন কমার বদলে বাড়বে।
 

হাইপোথাইরয়েড প্রিজম

থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে চলবে না সয়া বেস্ট সাপ্লিমেন্ট।

আরও পড়ুন:

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৩: ‘বেদনায় ভরে গিয়েছে পেয়ালা…’

ত্বকের পরিচর্যায়: ফর্সা হওয়ার দৌড়ে না গিয়ে স্বাভাবিক রং নিয়েই সুন্দর ও সুরক্ষিত থাকুন, জানুন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৩: নোবেল-প্রাপ্তির সংবর্ধনা-সভায় রবীন্দ্রনাথ ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন

 

ওষুধের প্রতিক্রিয়া

কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি চলাকালীন এলোপাথাড়ি প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট খুব বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। যাঁরা অ্যান্টি কোয়াওলেন্ট বা অ্যান্টি হাইপারটেনশন ড্রাগ নিচ্ছেন, তাঁরাও সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন। একই কথা গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
 

বিভিন্ন ধরনের বিশেষ অসুখ-বিসুখ

কিডনি এবং লিভারের অসুখ, ফিনাইল কিটোনিউরিয়া, হোমসিস্টিনিউরিয়া ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে লো-প্রোটিন ডায়েট দেওয়া হয়, সেখানে প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট হয়ে উঠতে পারে মৃত্যু দূত।

তাই সাবধান! প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১


Skip to content