রবিবার ১৭ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

আমাদের রোজকার সব্জিগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢেঁড়স। যদিও ঢেঁড়সকে আমরা সাধারণত খুব একটা গুরুত্ব দিই না। কিন্তু এই সব্জির পুষ্টিগুণ প্রচুর। এটা শরীরকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে সহজেই রক্ষা করতে পারে।
 

ঢেঁড়স কী কী পুষ্টিগুণ রয়েছে?

 

প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেঁড়সে পাওয়া যাবে

শক্তি ১৪৫ কিলোক্যালরি
শর্করা ৭.৬ গ্রাম
ফাইবার ৩.২ গ্রাম
স্নেহজাতীয় পদার্থ ০.১ গ্রাম
প্রোটিন ২.০ গ্রাম
ভিটামিন সি ২১ মিলিগ্রাম
ক্যালশিয়াম ৭৫ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেশিয়াম ৫৭ মিলিগ্রাম

 

ঢেঁড়সের উপকারিতা

 

ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে

ঢেঁড়শ ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে ত্বক কে সুন্দর ও ব্রণ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
 

শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে

ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টি ইনফ্লামেটোরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। অ্যাজমার লক্ষণ বৃদ্ধি প্রতিরোধে এবং অ্যাজমার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ঢেঁড়স বেশ উপকারী।
 

কোলেস্টেরল কমায়

ঢেড়সে পেকটিন নামক সলিউবল ফাইবার থাকে, যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন:

বর্ষাকাল আসতেই মুঠো মুঠো চুল পড়ছে? সমস্যার সমাধান করতে পারে কালোজিরে

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৩: মহীয়সী গৃহস্থনারী মা সারদা

 

কোষ্ঠকাঠিন্য রসমস্যা থেকে মুক্তি দিতে

প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটা আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাকে কমাতে ভীষণভাবে সাহায্য করে।
 

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়

ঢেঁড়স ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর। যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহজেই বাড়ায়।
 

ভ্রুণ তৈরিতে

ঢেঁড়স মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনাকে প্রতিরোধ করে এবং ভ্রুণের মস্তিষ্ক গঠনেও সাহায্য করে।

আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩০: নলিনী দাশ— গণ্ডালুর সৃজনশিল্পী

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৫: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— আমুর ও গোশিঙা

 

দৃষ্টি ভালো রাখে

ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ। চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এই ভিটামিনের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। গ্লুকোমা, অল্পবয়সে চোখে ছানি পড়ার মতো সমস্যা রুখে দিতে পারে ঢেঁড়সের জল। এ ছাড়া এই সব্জির মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, বিটা-ক্যারোটিন, লুটেইন এবং জ়ানথিন— এই সব উপাদানই দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়াও এতে উপস্থিত লিউটিন চোখের ছানি বা গ্লুকোমা প্রতিরোধ করে।
 

চুলের যত্নে

ঢেঁড়স চুলের কন্ডিশনার হিসেবে বেশ ভালো। এটি খুশকি দূর করে এবং শুষ্ক মাথার ত্বকের জন্য উপকারী।

আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-২: যতই দেখি তারে, ততই দহি…

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৫: প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান সত্যেন্দ্রনাথ ভেবেছিলেন পরীক্ষায় পাশই করবেন না

মহর্ষি বশিষ্ঠ ও রাজর্ষি বিশ্বামিত্রের দ্বৈরথের মূলে ছিল মহর্ষির পালিতা গাভী নন্দিনী। একটি বাড়িতে গৃহপালিত প্রাণীকে কেন্দ্র করে সুখদুঃখের আবর্তন চলতেই থাক। পালিত প্রাণী, সন্তানতুল্য। পরিবারের আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে সে।তাকে হারাবার ভয়ে,শঙ্কা জন্মায়। সেই প্রাণীটির অনুপস্থিতি,এতটাই শোকাবহ,সন্তান হারানোর শোক থেকে কোন অংশে কম নয় সেই বিচ্ছেদবেদনা। নন্দিনী কামধেনু,যথেচ্ছ আনন্দদান, পার্থিব কামনাপূরণের সঙ্গে তুলনায়, এক নিক্তিতে বোধ হয় সমতুল্য। বশিষ্ঠের পালিতা কন্যাসমা নন্দিনীকে প্রার্থনা করেছেন একজন রাজা, তাঁর আছে রাজোচিত ক্ষাত্রতেজ ও সৈন্যবল।

প্রত্যাখ্যাত রাজা ভেবেছিলেন, যে কোনও মূল্যেই তিনি নন্দিনীকে অধিকার করবেন। কিন্তু রাজার আশায় জল ঢেলেছে নন্দিনী নিজে।একটি অনুগত প্রাণী, নিজের জীবন পণ করে, স্নেহের ঋণ পরিশোধ করে। সাধারণ জীবনে এ দৃষ্টান্ত বিরল নয়। নন্দিনীর আনুগত্য তার অনন্য দৃষ্টান্ত। এখন আধুনিক দ্বন্দ্বময় সামাজিক জীবনে গৃহকোণে একটি স্নেহপালিত প্রাণীর উপস্থিতি অনেক মানসিক ক্লেদ দূর করে। বিশ্বামিত্র ও তাঁর সৈন্যদের, নন্দিনীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ, ক্ষমার অযোগ্য এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধের পর্যায়ভুক্ত, বলা যেতে পারে। একজন রাজার ক্ষমতার দম্ভ,একটি সংবেদনশীল প্রাণীর মনের দুঃখবোধকে স্পর্শ করতে পারেনি। প্রভু মহর্ষি বশিষ্ঠের আশ্রিত নন্দিনী সকৃতজ্ঞ মনে এমনভাবে নিজের সুরক্ষায় বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে যেন কে আশ্রিত? ও কে আশ্রয়দাতা? এ বিষয়ে সংশয় দেখা দেয়।

ক্ষমাশীল মহর্ষি শত্রুতার প্রতিরোধে যখন নিষ্ক্রিয় তখন যেন পালিতা নন্দিনী আশ্রয়দাতা প্রভুর আশ্রয় হয়ে উঠেছে।সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার ভয়ানক প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ প্রাথমিকভাবে শত্রুর প্রতি সজোরে আঘাত হেনেছে। রাজসিক অহমিকায় আঘাত লেগেছে। শেষ পর্যন্ত বশিষ্ঠের জয় যেন পালিতা নন্দিনীর বিজয় বলেই মনে হয়। এ বিজয় সকল প্রাণীদের প্রতি সমদর্শিতার নিরিখে সহানুভূতিশীল মনুষ্যত্বের জয়, যুগে যুগে মানুষের ‘জীবে প্রেম’ ও জীবের মানুষের প্রতি ভালবাসার একটি অনন্য উদাহরণ।
আরও পড়ুন:

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৫৬: প্রথমে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির বিজ্ঞাপনে উত্তম কুমারকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১: ভাঙনের জয়গান গাও

 

হার্ট ভাল রাখে

রক্তে কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারয়েড্স এবং এলডিএল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে ঢেঁড়স ভেজানো জল। এ ছাড়া ঢেঁড়সের জলে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানও রয়েছে। যা প্রদাহজনিত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। হার্টের শিরা এবং ধমনী সংক্রান্ত জটিলতা অনেকটাই নিরাময় হয় এই পানীয় খেলে। ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে ‘পলিফেনল’, যা সহজে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। ফলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি এড়ানো যায়।
 

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে

ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে ফাইবার, যা বিপাকক্রিয়া চাঙ্গা রাখতেও সাহায্য করে। বিপাকহার ভালো হলে শারীরবৃত্তীয় সব কাজ ভাল হয়। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রক্তে ইনসুলিনের কার্যকারিতা সঠিকভাবে পরিচালিত হয় ঢেঁড়স ভেজানো জল খেলে। তবে, এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলার মতো তথ্যপ্রমাণ এখনও মেলেনি।

যোগাযোগ: ৯৮৩০৭৬৮১৫২

* হেলদি ডায়েট (Healthy Diet): সুতনুকা পাল (Sutanuka Paul), পুষ্টিবিদ, ডায়েট-টু-ফাইট।

Skip to content