শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

এ বছর যারা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তাদের জন্যই এই প্রতিবেদন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার কলা বিভাগের একটি অন্যতম বিষয় ইতিহাস। আজ সেই বিষয়ের ওপরেই প্রতিটি অধ্যায় ভিত্তিক পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করব। এই প্রতিবেদন থেকে তোমরা একটা আভাস পাবে এবার ইতিহাস পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে।

অধ্যায়ভিত্তিক নম্বর বিভাজন

প্রথমেই আমরা কটি অধ্যায় নিয়ে পরীক্ষা হবে, সেটা দেখে নিই। মোট পাঁচটি অধ্যায় নিয়ে পরীক্ষা হবে। প্রথম, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অধ্যায় নিয়ে পরীক্ষা হবে। অর্থাৎ দ্বিতীয় অধ্যায়টি কিন্তু পরীক্ষায় থাকছে না। এবার আমরা দেখে নেব কোন অধ্যায় থেকে কেমন নম্বর বিভাজন করা হয়েছে।
প্রথম অধ্যায় অর্থাৎ ‘অতীত স্মরণ’ থেকে এমসিকিউ (MCQ) অর্থাৎ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন আসবে চারটি। এই অধ্যায় থেকে কোনও অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন আসবে না। তৃতীয় অধ্যায় অর্থাৎ ‘ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি: নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য’— এই অধ্যায় থেকে এমসিকিউ আসবে তিনটি। অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন বা এসএকিউ (SAQ) আসবে সাতটি। চতুর্থ অধ্যায় অর্থাৎ ‘সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া’ থেকে এমসিকিউ আসবে সাতটি আর অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন আসবে ছয়টি। পঞ্চম অধ্যায় অর্থাৎ ‘ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন’ থেকে এমসিকিউ আসবে পাঁচটি এবং অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন থাকবে ছয়টি আর ষষ্ঠ অধ্যায় অর্থাৎ ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং উপনিবেশসমূহ’ থেকে এমসিকিউ থাকবে পাঁচটি এবং অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নও থাকবে পাঁচটি।

বড় প্রশ্ন

এবার আসি বড় প্রশ্নের বিষয়ে, অর্থাৎ ৮নং প্রশ্নের আলোচনায়। বড় প্রশ্ন অর্থাৎ ‘পার্ট-এ’ বা ক বিভাগ আর এমসিকিউ এবং এসএকিউ মিলিয়ে ‘পার্ট-বি’ বা খ বিভাগ (যেটি আলাদা বুকলেট-এর মাধ্যমে থাকে)। ‘পার্ট-এ’-এর ক্ষেত্রে আবার দুটো ভাগ থাকে গ্রুপ-এ এবং গ্রুপ-বি, প্রথম খণ্ডে চারটি ও দ্বিতীয় খণ্ডে চারটি, মোট আটটি প্রশ্ন থাকবে এবং লিখতে হবে মোট পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর। প্রতিটা খণ্ড থেকে দুটো করে প্রশ্নের উত্তর করতেই হবে। এই বছরে প্রথম খণ্ডে প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ অধ্যায় থেকে মোট চারটি প্রশ্ন থাকবে এবং দ্বিতীয় খণ্ডে পঞ্চম ও ষষ্ঠ অধ্যায় থেকে মোট চারটি প্রশ্ন থাকবে। প্রত্যেকটা অধ্যায় থেকে সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে এবার আলোচনা করা যাক।

প্রথম অধ্যায়

প্রথম অধ্যায় থেকে কয়েকটি প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেমন—
মিথ (উপকথা) ও লিজেন্ড (পুরাকাহিনি) বলতে কী বোঝো? অতীত বিষয়ে মানুষের ধারণাকে এরা কীভাবে রূপদান করে? (৫+৩)
জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা করো৷ (৩+৫)
পেশাদার ইতিহাস বলতে কী বোঝায়? অপেশাদারি ইতিহাসের সঙ্গে পেশাদার ইতিহাসের পার্থক্য কী? (৩+৫)
অতীতকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে কিংবদন্তি বা মিথ এবং স্মৃতিকথার ভূমিকা আলোচনা করো। (৮)
মিউজিয়ামের প্রকারভেদ আলোচনা করো৷ (৮)

তৃতীয় অধ্যায়

ক্যান্টন বাণিজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল? এই বাণিজ্যের অবসান কেন হয়? (৪+৪)
পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের ফলাফলের তুলনামূলক আলোচনা করো৷ (৮)
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও৷ (৮)
চিনের ওপর আরোপিত বিভিন্ন অসম চুক্তিগুলির সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো৷ (৮)
নানকিং-এর সন্ধি ও তিয়েনসিনের সন্ধির মূল শর্তগুলি আলোচনা করো৷ (৪+৪)
ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল ব্যাখ্যা করো৷ (৪+৪)
ভারতে রেলপথ পরিবর্তনের উদ্দেশ্য ও প্রভাব আলোচনা করো (৮)

চতুর্থ অধ্যায়

৮নং-এর প্রশ্ন, সমাজ ও শিক্ষাসংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান মূল্যায়ন করো। (৮)
আলিগড় আন্দোলনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও৷ (৮)
ব্রিটিশ শাসনে ভারতে আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের আন্দোলনের বিবরণ দাও৷ (৮)
বাংলায় নবজাগরণের প্রকৃতি আলোচনা করো৷ এর সীমাবদ্ধতা কী ছিল? (৫+৩)
চিনের চৌঠা মে আন্দোলনের কারণগুলি বিশ্লেষণ করো৷ এই আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা করো৷ (৫+৩)

পঞ্চম অধ্যায়

মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের সমালোচনামূলক আলোচনা করো৷
অথবা, ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্য ও ত্রুটিগুলি আলোচনা করো। (৮)
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট ও শর্তাবলি আলোচনা করো৷ এই আইনের গুরুত্ব কী ছিল? (৪+৪)
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট কী ছিল? এই ঘটনার গুরুত্ব আলোচনা করো৷ (৪+৪)
রাওলাট আইনের উদ্দেশ্য কী ছিল? গান্ধীজি কেন এই আইনের বিরোধিতা করেছিলেন? (৪+৪)
লক্ষ্ণৌ চুক্তির শর্তাবলি উল্লেখ করো, এই চুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো৷ (৪+৪)

ষষ্ঠ অর্থাৎ শেষ অধ্যায়

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলন সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লেখো৷ (৮)
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো এবং এই আন্দোলনে মহিলাদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো৷ (৫+৩)
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান পর্যালোচনা করো৷ (৮)
১৯৪৬-এর নৌবিদ্রোহের কারণ ও তাৎপর্য লেখো৷ (৪+৪)
হো-চি-মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও৷ (৮)

এমসিকিউ এবং এসএকিউ বেশি করে অনুশীলন করো

এবার আসি পরীক্ষা প্রসঙ্গে, হাতে এখন যতটুকু সময় আছে, এমসিকিউ এবং এসএকিউ প্রত্যেকটা অধ্যায়ের জন্যে অনেক বেশি করে অনুশীলন করো৷ এমসিকিউ এবং এসএকিউ-এর জন্যে যে বুকলেট দেওয়া হবে অর্থাৎ ‘পার্ট-বি’-এর বুকলেট খুব ভালো করে পড়ে আগে যে প্রশ্নের উত্তর একেবারে নিশ্চিত সেগুলোর উত্তর দাও৷ এমসিকিউ-এর ক্ষেত্রে পাশের বক্সে সঠিক উত্তরের নম্বর লেখো৷ তার সাথে সেই উত্তরটিতে একটা টিক চিহ্নও দিয়ে দাও। এমসিকিউ আসবে চব্বিশটি, তোমাকে সবগুলোরই উত্তর দিতে হবে। তাই খুব ভালো করে প্রশ্ন পড়ে উত্তর দেবে। হাতের লেখা পরিষ্কার হয় যেন, পরীক্ষকের বুঝতে যেন কোনওমতেই অসুবিধা না হয়। এসএকিউ-এর প্রশ্ন থাকে ২৪টি, তোমাদের উত্তর করতে হবে ১৬টির, তাই ভালো করে বিকল্প প্রশ্নগুলো দেখে উত্তর লিখবে, এমন যেন না হয় যে দুটি বিকল্প প্রশ্নের উত্তর লিখলে, অথচ কোনও একটি একক প্রশ্নের উত্তর লিখলে না, তাই খুব মনোযোগ সহকারে উত্তর লিখবে। বড় প্রশ্ন অর্থাৎ ‘পার্ট-এ’-এর রচনাধর্মী প্রশ্নের ক্ষেত্রে চেষ্টা করবে অংশভিত্তিক মানের প্রশ্নের উত্তর দিতে। বড় প্রশ্ন লেখার সময়ে অবশ্যই শুরুতে একটা ভূমিকা লিখবে।তারপর পয়েন্ট অনুযায়ী লিখে শেষে একটি উপসংহার দেবে। এক্ষেত্রেও যে প্রশ্নের উত্তর সবচেয়ে ভালো লিখতে পারবে, সেইটাই আগে লিখবে। তবে সব প্রশ্নকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে লিখবে৷ কোনও একটা খুব ভালো আর সময়ের অভাবে শেষের উত্তরগুলো লেখা সমমানের হল না, তা যেন না হয়। তাই প্রথম থেকেই দ্রুত লেখার চেষ্টা করবে, খেয়াল রাখবে হাতের লেখা যেন সহজেই বোঝা যায়। আর একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা, ‘পার্ট-বি’-এর বুকলেট ও ‘পার্ট-এ’-এর খাতায় প্রথমেই নাম, রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর সঠিকভাবে লিখবে, অযথা কাটাকাটি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবে।

মোটামুটি তোমাদের পরীক্ষায় কাজে লাগতে পারে এমন বিষয়গুলো নিয়েই আজ আলোচনা করলাম। সবাইকেই বলছি মাথা ঠান্ডা রেখে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মন শান্ত করে পরীক্ষা দাও। সবাই খুব ভালো থেকো, সুস্থ থেকো। আর খুব ভালো করে পরীক্ষা দাও।


Skip to content