সোমবার ২০ মে, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

তোমাদের মাধ্যমিক পরীক্ষা চলে এল। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ থেকে তোমাদের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তোমরা জীবনের প্রথম একটা বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছ। নিজের স্কুল এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা ছেড়ে অন্য স্কুলে গিয়ে তোমাদের পরীক্ষা দিতে হবে। স্বাভাবিক একটা ভীতি কাজ করে। তবে এই ভয়কে তোমরা জয় করতে পার যদি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি ঠিক ঠাক থাকে। মনে রাখবে আগাগোড়া মূল পাঠ্যবই যদি ভালো করে পড়ে যাও, আর নিজের আত্মবিশ্বাস বজায় রাখো তবে সফলতা আসবেই। একমাত্র এ ভাবেই বেশি নম্বর পাওয়া সম্ভব। এই প্রতিবেদনে এ বার বাংলা পরীক্ষার জন্য কী কী প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার একটা আভাস তোমাদের দেওয়ার চেষ্টা করছি।
 

প্রশ্নপত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা

পরীক্ষার্থীদের প্রথমে প্রশ্ন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। তোমরা অবশ্যই মনে রাখবে গল্প থেকে তোমাদের ৩টি, কবিতা থেকে ৩টি, প্রবন্ধ থেকে ৩টি এবং ব্যাকরণ থেকে 8টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এই এমসিকিউ প্রশ্নের জন্য কোনও বিকল্প প্রশ্ন থাকবে না। তাই পাঠ্যপুস্তক খুঁটিয়ে পড়া আবশ্যক। ব্যাকরণের ক্ষেত্রে টেস্ট পেপার বা মডেল প্রশ্নের বই অনুশীলন খুবই জরুরি। সে ক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষকদের দিয়ে দেখিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন গল্প থেকে ৪টি, কবিতা থেকে ৪টি, প্রবন্ধ থেকে ৩টি এবং ব্যাকরণ থেকে 8টি লিখতে হয়। এই প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুশীলন এবং বই খুঁটিয়ে পড়তে হবে।

এ ছাড়া তোমরা জান যে, গল্প থেকে ১টি, কবিতা থেকে ১টি, প্রবন্ধ থেকে ১টি, নাটক থেকে ১টি এবং পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ কোনি থেকে ২টি রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর লিখতে হবে। পাশাপাশি প্রবন্ধ রচনা, সংলাপ রচনা, প্রতিবেদন রচনার জন্যও বেশ কিছু সময় হাতে রাখা দরকার। সুতরাং ১ থেকে ১১ নম্বর দাগ পর্যন্ত ৯০ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর লিখতে গেলে একটা সুনির্দিষ্ট সময় বিভাজন তোমাদের মনে রাখতে হবে। তাহলেই উত্তর লেখার সময় অনেকটা সুবিধা হবে। আমরা পরীক্ষক হিসাবে দেখেছি সময়ের পরিকল্পনার অভাবে বহু পরীক্ষার্থী সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না।

 

পরিকল্পনা মাফিক সময় বিভাজন

পরীক্ষার্থীরা তোমরা অবশ্যই মনে রাখবে ১ নম্বর দাগে যে এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় সেগুলির জন্য সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের বেশি সময় নিলে চলবে না। তোমরা ৩০ মিনিট সময় ব্যবহার করবে ২ নম্বর দাগের উত্তর লেখার জন্য। ৩ নম্বর দাগে ১২ মিনিট সময় নিলে তবে ঠিক ঠাক সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। ৪ নম্বর দাগে থাকে যে রচনাধর্মী প্রশ্ন সেখানে তোমরা ১০ মিনিটের বেশি সময় নেবে না। ৫ নম্বর দাগে যে রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। সেখানে তোমরা ১০ মিনিট সময় নিও। ৬ নম্বর দাগে প্রবন্ধ থেকে উত্তর লেখার ক্ষেত্রে তোমরা ১০ মিনিট সময় নেবে। আর ৭ নম্বর দাগে নাটকের প্রশ্নোত্তর লিখতে গেলে সময় নেবে ৮ মিনিট। ৮ নম্বর দাগে কোনি’র দুটি প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য তোমরা সময় নিও ২০ মিনিট। ৯ নম্বর দাগে বঙ্গানুবাদের জন্য সময় নেবে ১৫ মিনিট। ১০ নম্বর দাগের সংলাপ বা প্রতিবেদন লেখার জন্য তোমাদের ২০ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখা উচিত। সব শেষে ১১ নম্বর দাগের প্রবন্ধ রচনার জন্য সময় লাগবে ৩০ মিনিট। অতঃপর পুরো খাতা রিভিশনের জন্য ৫ মিনিট সময় অবশ্যই রেখো। চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে সময় ধরে ‘মক টেস্ট’ দিয়ে নিজেরাই সময় বিভাজন করে নেবে।
 

উত্তরের শব্দ সংখ্যার সীমা

পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্রে শব্দসংখ্যা ব্যবহারের বিষয়টি অবশ্যই মনে রাখতে হবে। ২ নম্বর দাগের জন্য ২০টি শব্দ, ৩ নম্বর দাগের জন্য ৬০টি শব্দ এবং ৪, ৫ ও ৬ নম্বর দাগের জন্য কমবেশি ২৫০টি শব্দ নির্ধারিত। ৭ নম্বর দাগের জন্য নির্ধারিত কমবেশি ১২৫টি শব্দ। ৮ ও ১০ নম্বর দাগের জন্য কমবেশি ১৫০টি শব্দ ব্যবহার করে উত্তর লিখতে হবে। ১১ নম্বর দাগের প্রবন্ধ রচনার জন্য কমবেশি ৪০০টি শব্দ ব্যবহার করতে হবে।

আরও পড়ুন:

জীবনের প্রথম বড় ম্যাচের আগে অনুশীলনে ফাঁকি নয়, পরীক্ষায় লক্ষ্যভেদ করলে আগামীর পথ মসৃণ হবে

আরও পড়ুন:

মনের আয়না: ঘুমোতে গেলেই মগজে ভিড় করছে রাজ্যের দুশ্চিন্তা? জন্মাচ্ছে অকারণ ভয়? রইল সমাধান

 

উত্তরপত্র বিষয়ে কিছু সতর্কতা

খাতার প্রথম অংশে তোমাদের জন্য নাম, রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ইত্যাদি লেখার নিদিষ্ট জায়গা থাকে। সেই সঙ্গে তোমাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা থাকে। ওই পৃষ্ঠায় ভিতরের দিকে (ব্যাক পেজে) উত্তর লেখার প্রয়োজন নেই। পরের পৃষ্ঠায় থেকে তোমরা উত্তর লিখতে শুরু করবে। তার আগে পেন বা পেনসিল দিয়ে উপরে, বাঁদিক, ডান দিকে মার্জিন দেবে। বাঁদিকে প্রায় এক ইঞ্চি এবং ডান দিকে এক ইঞ্চির কম মার্জিন হলে চলবে। অতিরিক্ত পৃষ্ঠা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তোমরা নাম, রোল, নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর অবশ্যই লিখবে। সঙ্গে মার্জিন অবশ্যই দেবে।
 

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসমূহ

গল্প থেকে নিম্নলিখিত রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি প্রস্তুত করবে।

‘পাঁচদিন নদীকে দেখা হয় নাই’—নদীর সঙ্গে দেখা না হওয়ার কারণ কী? নদের চাঁদের উৎসুক্যবোধের পরিচয় দাও। ২+৩

‘নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে।’—উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর। ৫

‘চিঠি পকেটেই ছিল’— কোন চিঠির কথা বলা হয়েছে? সে চিঠির পরিণতি কী হয়েছিল? ২+৩

‘তিরিশ বছর বয়সে নদীর জন্য নদের চাঁদের এত বেশি মায়া একটু অস্বাভাবিক।’—নদের চাঁদের নদীর প্রতি ভালোবাসার কারণ কী? নদীর প্রতি তার ভালোবাসার পরিচয় দাও।

‘আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন’—কোন দিন টির কথা বলা হয়েছে? সেটি কী কারণে কার জীবনে দুঃখের দিন হয়ে উঠেছিল? ২+৩

‘তপন যেন কোথায় হারিয়ে যায় এই সব কথার মধ্যে’—’এই সব কথা’ বলতে কোন সব কথার কথা বলা হয়েছে? তাতে তপন হারিয়ে যাওয়ার কারণ কী? ২+৩

‘পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে’— কোন ঘটনাকে অলৌকিক আখ্যা দেওয়া হয়েছে? সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল তা জ্ঞানচক্ষু গল্প অবলম্বনে বুঝিয়ে দাও। ২+৩

‘শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীর ভাবে সংকল্প করে তপন’— কোনটি দুঃখের মুহূর্ত? কেনই বা সেটি দুঃখের? এই দুঃখবোধ থেকে বক্তা কী সংকল্প গ্রহণ করেছিল? ১+২+৩

‘অমৃতের জবাব আমাকে বদলে দিয়েছে’— অমৃতের জবাব কাকে বদলে দিয়েছে? তার চরিত্রে কোন ধরনের বদল হয়েছিল? ১+৪

‘কিন্তু আমাকে বাঁচানোর জন্য তো আমার মা আছে’— বক্তা কে? সে এ কথা কেন বলেছ…

‘মুন্সিজি, এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন’— কে কাকে পত্র লিখেছিলেন? এই পত্রে কী লেখা ছিল? ১+৩

আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৯: গুরুদেবের দেওয়া গুরুদায়িত্ব

আরও পড়ুন:

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৩২: শোকের আঁধারে আকাশ কালো—অযোধ্যায়

 

গদ্য প্রবন্ধ থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন

‘আমরা কালি তৈরি করতাম নিজেরাই’—কালি তৈরি করার কাহিনী নিজের ভাষায় লেখ। ৫

‘জন্ম নিল ফাউন্টেন পেন’— ফাউন্টেন পেনের জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা কর। ৫

‘আমার মনে পড়ে প্রথম ফাউন্টেন পেন কেনার কথা’— বক্তার প্রথম ফাউন্টেন পেন কেনার ঘটনাটি বিবৃত কর। ৫

‘সব মিলিয়ে লেখিলিখি রীতিমত ছোটখাট ঐকটি অনুষ্ঠান’— বক্তা একথা বলেছেন কেন? অনুষ্ঠানটির পরিচয় দাও। ৫

‘যারা ওস্তাদ কলমবাজ তাদের বলা হয় ক্যালিগ্রাফিস্ট বা লিপি কুশলী’। লিপি কুশলীদের কাজ কী ছিল? তাদের সম্পর্কে যা জান লেখ। ২+৩

‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় এখনও নানা রকম বাধা আছে’—বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা প্রবন্ধ অনুসারে বাধা গুলি আলোচনা কর।

‘এই রকম ভুল লেখা সাধারণ পাঠকের পক্ষে অনিষ্টকর’—কোন লেখার কথা ভুল বলে উল্লেখ করা হয়েছে? তা সাধারণ পাঠকের পক্ষে অনিষ্টকর কেন?

‘এতে রচনা উৎকট হয়’—কার লেখা কোন রচনার অংশ? কোন কারণে রচনা উৎকট হয়? এর প্রতিকার কী?

‘এই দোষ থেকে মুক্ত না হলে বাংলা বৈজ্ঞানিক সাহিত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না।’— কোন দোষে, কথা বলা হয়েছে? বৈজ্ঞানিক সাহিত্য কীভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে?

আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৮: মাছের ডিম বার্ধক্যের ছাপ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়! মাছের ডিমের এই অবাক করা গুণের কথা জানতেন?

আরও পড়ুন:

জিমে যাওয়ার সময় নেই? সুস্থ থাকার জন্য হাঁটবেন নাকি দৌড়োবেন?

 

কোনি থেকে নির্বাচিত প্রশ্ন

কোনি কীভাবে বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেয়েছিল আলোচনা কর।

‘এটা বুকের মধ্যে পুষে রাখুক’—কী পুষে রাখার কথা বলা হয়েছে? কী কারণে এ কথা বলা হয়েছে? ২+৩

‘ফাইট কোনি ফাইট’— কোনি উপন্যাসে কোনির ফাইটের কী পরিচয় মেলে?

কোনির যন্ত্রণাময় জীবনের পরিচয় দাও।

ওটাই তো আমি রে, যন্ত্রণাটাই তো আমি’ —বক্তা কে? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

‘কোনি’ উপন্যাসের লীলাবতী চরিত্রটির পরিচয় দাও।

‘তোর আসল লজ্জা জলে, আসল গর্ব ও জলে’— কে, কেন এ কথা বলেছেন? এ কথা বলার তাৎপর্য কী?

‘ট্যালেন্ট ঈশ্বরের দান’— ট্যালেন্ট কী? ট্যালেন্ট সম্পর্কে ক্ষীতিশের মতামত কী ছিল?

‘কোনি’ উপন্যাসে ক্ষীতিশ সিংহ কোনি-কে কীভাবে তৈরি করেছিলেন, আলোচনা কর।

আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৩: বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই উইসকনসিনের সঙ্গে পার্থক্যটা টের পেলাম, মুহূর্তে ঠোঁট, গাল জমে যেতে লাগল

আরও পড়ুন:

বিচিত্রের বৈচিত্র্য, জীবন খাতার প্রতি পাতায় যতই লেখো হিসাব নিকাশ/২

 

প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার।

বাংলার উৎসব

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার।

বিজ্ঞানের ভালোমন্দ

তোমার জীবনের লক্ষ্য

গাছ লাগাও প্রাণ বাঁচাও।

কুসংস্কার প্রতিরোধে ছাত্র সমাজ।

দেশ ভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ

ঋতু বৈচিত্র।

তোমার দেখা বই মেলা।
 

অবশ্যই মনে রেখো

পরীক্ষার আগের দিন বেশি রাত জেগে পড়াশোনা করার দরকার নেই।

সুষম ও সহজপাচ্য আহার বাঞ্ছনীয়।

পরীক্ষার দিন সকালে নিজের ব্যাগে অ্যাডমিট, রেজিস্ট্রেশন, ভালো পেন, পেনসিল, স্কেল গুছিয়ে নেবে। পেন নতুন হলে আগে একটু লিখে নেবে বাড়িতে।

পরীক্ষা হলে এক ঘণ্টা আগে পৌঁছে যেও। পরীক্ষার শুরুর ১৫ মিনিট আগে হাতে প্রশ্নপত্র পাবে। প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর মনোযোগ দিয়ে পড়বে। তারপরে পছন্দ মতো প্রশ্নগুলো বেছে নেবে। উত্তরপত্রের নিদিষ্ট জায়গায় নিজের নাম, রোল, নম্বর এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর সঠিক ভাবে লিখতে ভুলো না কিন্তু।

অতিরিক্ত পৃষ্ঠা নিলে সুতো দিয়ে সঠিক ভাবে বাঁধবে।

যে কদিন বাকি আছে পরীক্ষা পর্যন্ত, সেই কদিন মন দিয়ে দিনরাত রুটিন মেনে পড়লে অবশ্যই ভালো ফল লাভ করবে।

* ক্লাসরুম (Classroom – Madhyamik 2023) : মোহনকুমার মান্না (Mohan Kumar Manna) বাংলার শিক্ষক, রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বালকাশ্রম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

Skip to content