জাগতিক ব্যবহারে মা সারদা কারও মনে যাতে আঘাত না লাগে, তাই সকলের মন বুঝে চলতেন। অপরদিকে জগতের কোনও বস্তুরই তাঁর অপেক্ষা নেই। সর্বদা তাঁর আত্মস্থ অবস্থা। শ্রীমার এই অদ্ভুত ভাবাতীত অবস্থা যোগীনমা ও গোলাপমাই বেশিরভাগ সময় প্রত্যক্ষ করতেন। তাই তাঁদের মন সর্বদা যেন শ্রীমার কাছে রয়েছে। আর তাঁদের দৈনন্দিন ব্যবহারে একদিকে যেমন শ্রীমাকে ইষ্টদেবীজ্ঞানে শ্রদ্ধা ও ভক্তির অন্ত ছিল না।
আলোকের ঝর্ণাধারায়
পর্ব-৮০: শ্রীশ্রীমার অনুগ্রহ
বদনগঞ্জ হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান শিক্ষক প্রবোধবাবু সেই অঞ্চলের সম্মানিত ব্যক্তি। কামারপুকুরে ঠাকুরের জন্মস্হানের কাছে ‘গোঁসাইয়ের ভিটা’ জমি কিনে মন্দির এবং আশ্রম প্রতিষ্ঠার জন্য আগ্রহী হয়ে শরৎ মহারাজ ওই জমির মালিক লাহাবাবুদের সঙ্গে কথা বলার জন্য প্রবোধবাবুর উপর ভার দেন। প্রবোধবাবু তার জন্য বিশেষ চেষ্টা করেন। আর মাঝে মধ্যে কামারপুকুর যাতায়াত করেন। শ্রীমারও এই বিষয়ে আগ্রহ আছে।
পর্ব-৭৯: বালিকাভাব মা সারদার
মা সারদা আহার হয়ে যাওয়ার পর বিশ্রাম করছেন। তখন শীতের বিকেল। বাইরের বাটিতে ডিসপেনসারিতে সেসময় স্বামী সারদেশানন্দ কাজ করছিলেন। হঠাৎ তিনি খবর পেলেন যে ‘মায়ের পেটে ব্যথা, খুব কষ্ট হচ্ছে’। তিনি ছুটে গিয়ে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে জানতে চাইলেন, ‘কেমন ব্যথা, কখন হয়েছে, কেন হয়েছে, কোথায় কামড়াচ্ছে’ ইত্যাদি।
পর্ব-৭৮: মা সারদার ‘পরকে আপন করা’
মা সারদার নতুন বাড়ি হওয়ায় সেখানে দুধের অভাব দূর করার জন্য জ্ঞানানন্দ মহারাজ দুটি ভালো গরু কিনে আনেন। সুরেন্দ্রনাথ গুপ্ত এই গরু কেনার খরচ বহন করেন। তবে শ্রীমা সংসারী হয়েও সন্ন্যাসিনী ছিলেন, নিজের জন্য কোনো ঝঞ্ঝাট বাড়াতে চাইতেন না। নিজের জন্য আলাদা বাড়ির ইচ্ছাও তাঁর ছিল না। যখন তাঁর ভাইরা আলাদা হয়ে নিজেদের বাড়ি করে তখন কালীকুমার তাঁর দিদি শ্রীমার সাহায্যে ভালো বাড়ি, বৈঠকখানা করেন।
পর্ব-৭৭: কোয়ালপাড়া আশ্রমের রাজেন মহারাজ ও মা সারদার প্রসাদী
ছেলেদের খাওয়া হয়ে গেলে শ্রীমা মেয়েদের খেতে দিয়ে তাদের সঙ্গে নিজেও একটু খেতেন। ভক্তদের আনা ফলমিষ্টি শ্রীমা সামান্যই মুখে দিতেন, সেসব অন্যেরাই পেত। ইদানীং তাঁর দাঁত গেছে, চারটি মুড়িই জল খাওয়া, তাও চিবোতে পারেন না। তাই আঁচলে মুড়ি নিয়ে একটা নোড়া দিয়ে সেগুলো গুঁড়ো করে নবাসনের বৌকে ডেকে বলেন, ‘বৌমা, দাও তো একটু নুন, লঙ্কা’।
পর্ব-৭৬: বৎসল্যরসে মা সারদা
স্বামী সারদেশানন্দ ও জ্ঞানানন্দ বাল্যবন্ধু ছিলেন। তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল তা শ্রীমা জানতেন। তাঁরা দুজন শ্রীমার কাছে যখন আসতেন, তখন বাইরে বেশি লোকজন না থাকলে তিনি তাঁদের নিজের দুয়ারে বসিয়ে এক থালায় খেতে দিতেন। আনন্দে খুশি হয়ে নিজের হাতে তাঁদের খাবার পরিবেশন করতেন। তাঁরা দুজনও সহোদর শিশুর মতো পরম আনন্দে গল্পগুজব করতে করতে ধীরে ধীরে খেতেন।
পর্ব-৭৫: ‘ছেলেদের জন্য আমার কোনও নিয়মকানুন থাকে না’
শ্রীমার জনৈক ভক্ত তাঁর প্রসাদ পাবার জন্য অতি ব্যাকুল হল। মা সারদা একটি সন্দেশ হাতে নিয়ে ঠাকুরকে দৃষ্টিভোগ দিয়ে এবং নিজের জিহ্বাগ্রে সেটি ঠেকিয়ে ভক্তকে খুব আনন্দের সঙ্গে দিলেন ও বললেন,’বাবা, খাও প্রসাদ’। স্বামী সারদেশানন্দ ঠাকুর এবং শ্রীমার দেশ দেখে কলকাতায় ফিরছিলেন।
পর্ব-৭৪: শ্রীমার গৃহী ভক্তদের সন্ন্যাসদীক্ষা
মা সারদার কাছে বহু গৃহী ভক্ত ব্রহ্মচর্য ও সন্ন্যাসদীক্ষা পেয়ে নিজেদের ধন্য মনে করেছেন। এই দীক্ষাদান নিয়ে শ্রীমা কোন বিশেষ অনুষ্ঠান করতেন না। শুধু ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করেই তাঁর ভক্তদের মহান ব্রতে দীক্ষা দিতেন। ব্রহ্মচারি হতেন যারা তাদের সাদা ডোরকৌপীন বহির্বাস দিতেন আর সন্ন্যাসীদের গেরুয়া পোশাক দিতেন।
পর্ব-৭৩: ভক্তদের সমস্যার সমাধান দিতেন শ্রীমা
সময়টা ছিল স্বাধীনতাসংগ্রামের যুগ। বিট্রিশ সরকার বিপ্লবীদের দমনের জন্য অকথ্য অত্যাচার শুরু করে যাতে লোকের মনে ভীতির সঞ্চার হয়। তখন চারদিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। এমনকি, রামকৃষ্ণমঠ মিশনের সন্ন্যাসীদেরও সন্দেহভাজন বলে মনে করা হচ্ছে। আর যুবক বিপ্লবীরা অনেকেই শ্রীমার কাছে দীক্ষিত। তাই জয়রামবাটি, কোয়ালপাড়ায় পুলিশের সদা সতর্ক দৃষ্টি ছিল। এই অঞ্চল তখন ম্যালেরিয়াপ্রবণ এবং অশিক্ষিত গরীব মানুষের বাসভূমি ছিল। সেই কারণে সুস্থসবল বিপ্লবী যুবকদের এখানে এনে আটকে রেখে সরকার তাদের শায়েস্তা করার ব্যবস্থা করে। তাই এই জায়গার...
পর্ব-৭২: উদ্বোধনে মা সারদার ভক্তদের কথা
উদ্বোধন শ্রীমার বাটি নামেও পরিচিত তা সকলেরই জানা আছে। এখানে যে সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারি ভক্তেরা আছেন, তাঁরা সকলেই শ্রীমার কাছে সমান স্নেহের অধিকারী। তাঁদের সকলের খাওয়া পরার সুবিধা নিয়ে তিনি সর্বদা চিন্তায় থাকেন। উদ্বোধনের ডাক্তার মহারাজ পূর্ণানন্দজী কোন কোন দিন রাতে খাবার পঙক্তিতে সময় মতো আসতে না পারার জন্য কথা শোনেন।
পর্ব-৭১: মা সারদার নলিনীর মানভঞ্জন
শ্রীমার ছোট ভাজ নিজে রেঁধে নিজের ঘরে খান। তার কিছু ভাগে পাওয়া ধানজমি আছে। এছাড়া সিংহবাহিনী মন্দিরের আয়ের কিছু অংশও আছে। সব মিলিয়ে তার চলে যায়। সে বিধবার কঠোর জীবন যাপন করে। তার মেয়ে রাধু আর জামাই শ্রীমার সংসারেই খান। তবে ছোট বউও সাধ্যমতো তাঁদের রেঁধে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। তার রাধুকে নিয়ে শ্রীমার সঙ্গে ঝগড়া লেগেই আছে।
পর্ব-৭০: ভানুপিসি ও শ্রীমার ভক্ত
ভানুপিসির সঙ্গে শ্রীমার ভক্তদের স্নেহের সম্পর্ক ছিল। ছেলেদের তিনি তাঁর ‘লাতি’ অর্থাৎ নাতি বলতেন। স্বামী সারদেশানন্দের সঙ্গে তাঁর খুব ভাব ছিল। তাঁকে ভানুপিসি গোপনে বলেন যে মা সারদার ভক্ত ছেলেরা তাঁর পায়ের চিহ্ন নিয়ে রাখে। সারদেশানন্দ তাই শুনে শ্রীমার সম্মতি চান এবং শ্রীমা তাঁকে অনুমতি দেন। কয়েকদিন বাদে তিনি এক শিশি লাল রঙ আর কিছু সাদা রুমাল নিয়ে এসে শ্রীমাকে নিবেদন করেন।
পর্ব-৬৯: শ্রীমার সন্তানস্নেহ
একবার গড়বেতা থেকে এক ভক্ত স্বামী-স্ত্রী তাদের চারজন মেয়ে ও কোলের ছোট ছেলেকে নিয়ে হেমন্তকালে আধপাকা ধানের আল পেরিয়ে গরুর গাড়ি করে নয় ক্রোশ পথ সারা রাত চলে সকালে জয়রামবাটি পৌঁছন। জিবটে গ্রামের পূর্বপ্রান্তে বড়রাস্তায় গাড়ি রেখে দেড়মাইল মাঠ হেঁটে এসে তারা দশটার সময় শ্রীমার নতুন বাড়িতে আসেন। তখন তাদের ছেলেটি ম্যালেরিয়া জ্বরে অসুস্থ।
পর্ব-৬৮: লক্ষ্মীস্বরূপিনী মা সারদা
রামায়ণগান গেয়ে বাঁকু জয়রামবাটির সকলের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছে। সর্বদা তাঁর সেখানে যাতায়াত। তবে যখন তাঁর গানের পসার বেশ জমে উঠেছে, তখন তার আর দেখা পাওয়া গেল না। সব ছেড়ে সে উধাও হয়ে গেল। বহুদিন তার কোন খবর নেই।
পর্ব-৬৭: জননী সারদা সন্তানের দুঃখভার লাঘব করেন
স্বামী অরূপানন্দ অল্পবয়সে সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়ে একটি আশ্রমে যোগ দেন। সেখানে তাঁকে কঠোর পরিশ্রম করতে হত। থাকা ও খাওয়ার কষ্ট তো ছিলই, তাছাড়া আশ্রমের প্রধান তাঁকে অনেক সময় পীড়ন করতেন। এতসব সহ্য করেও অরূপানন্দ ওই আশ্রমের অধ্যক্ষকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। তাই নিদারুণ কষ্ট সহ্য করেও তিনি ওই আশ্রমে অনেকদিন ছিলেন।