রামের চরিত্র পুরুষোচিতগুণগুলিতে সমৃদ্ধ, সেই গুণগুলি হল, অহিংসা, দয়া, শাস্ত্রজ্ঞান, চরিত্রবল, ইন্দ্রিয়সংযম ও প্রশান্তি। প্রজাপুঞ্জের দশা ঠিক যেন গ্রীষ্মে জলের স্বল্পতার দরুণ, পীড়িত জলচর প্রাণীদের তুল্য।

রামের চরিত্র পুরুষোচিতগুণগুলিতে সমৃদ্ধ, সেই গুণগুলি হল, অহিংসা, দয়া, শাস্ত্রজ্ঞান, চরিত্রবল, ইন্দ্রিয়সংযম ও প্রশান্তি। প্রজাপুঞ্জের দশা ঠিক যেন গ্রীষ্মে জলের স্বল্পতার দরুণ, পীড়িত জলচর প্রাণীদের তুল্য।
আদর্শ শিক্ষাগুরুর দৃষ্টান্ত হলেন দানবগুরু শুক্রাচার্য, যিনি প্রতিপক্ষীয় দেবগুরু বৃহস্পতির পুত্রকে শিষ্যরূপে গ্রহণ করেছেন নির্দ্বিধায়। বিদ্যাদানের ক্ষেত্রে শত্রু বা মিত্রের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। দেবতাদের কূট চক্রান্তের অন্যতম চাল হলেন কচ।
সীতা রামচন্দ্রের সঙ্গে বনগমনের সিদ্ধান্তে স্বামীর সম্মতি নিয়ে সহযাত্রিণী হবেন, স্থির হল। বনবাসপ্রসঙ্গে রাম ও সীতার তুমুল বাদানুবাদের সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মণ, যিনি রামের ছায়াসঙ্গী। চোখভরা জল নিয়ে তিনি রামের চরণে লুটিয়ে পড়লেন।
যুধিষ্ঠির স্থৈর্য, অর্জুন শৌর্য, ভীমসেন যেন গতিময়তার প্রতীক। তিনি যাত্রাপথের চলমান ছন্দ ধরে রেখেছেন। মা কুন্তীসহ চার ভাই পথশ্রমের ক্লান্তিতে নিদ্রিত। অদূরে শালগাছের উপরে হিড়িম্ব নামে এক রাক্ষসের আশ্রয়। কেমন শক্তিমত্তা সেই রাক্ষসের? স্বভাবটিও বা কেমন?
রাম, স্বামীর আসন্ন বিচ্ছেদবেদনায় সাশ্রুলোচনা স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে, বনবাসজীবনের দুঃখদায়ক কষ্টকর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন। সীতাকে বনবাসের সিদ্ধান্ত থেকে নিবৃত্ত করাই তাঁর লক্ষ্য।
স্বজন জ্ঞাতিদের প্রাণহরণের চক্রান্ত ব্যর্থ করে গৃহচ্যুত পঞ্চপাণ্ডব, মা কুন্তীকে সঙ্গে নিয়ে, রাতের অন্ধকারে, গোপণে, বারণাবত পরিত্যাগ করে এগিয়ে চললেন। দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীম, চার ভাই ও মাকে বহন করে, বায়ুবেগে, এগিয়ে চললেন। লক্ষ্য হল দূরত্ববৃদ্ধি।
মাকে প্রণাম জানিয়ে রাম স্ত্রী জানকীর উদ্দেশ্যে গমন করলেন। রামপত্নী সীতা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি রামের যৌবরাজ্যাভিষেকের আনন্দে মাঙ্গলিক দেবার্চনা প্রভৃতি সম্পন্ন করে রামের আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন। লজ্জিত রাম, নতমুখে, উৎসবসমারোহে মুখর, সন্তুষ্ট লোকজনে পরিপূর্ণ প্রাসাদের অন্তঃপুরে প্রবেশ করলেন। রামকে দেখে অজানা আশঙ্কায় থরথর করে কেঁপে উঠলেন জানকী? সীতাকে ভয়ে কেঁপে উঠতে দেখে রঘুনন্দন ধার্মিক রাম আর আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না তাঁর আকৃতিতে শোকের প্রকাশ, তা আর গোপন রাখা যাবেনা। তাং দৃষ্ট্বা স হি ধর্ম্মাত্মা ন শশাক...
কশ্যপপত্নী কদ্রু ও বিনতার প্রতিযোগিতার রেষারেষির সূচনা ঠিক কী কারণে হয়েছিল? সত্যযুগে দক্ষ প্রজাপতি দুই স্ত্রী, কদ্রু ও বিনতার প্রতি তুষ্ট হয়ে বর দিতে চাইলেন। কদ্রু স্বামীর কাছে বর চাইলেন।
রাম জানালেন, কোনওদিন তিনি জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে পিতার বা মায়েদের কিছুমাত্র অপছন্দের কোন কাজ করেছেন—এমনটা তাঁর জানা নেই। সত্যবাদী পিতা অসত্য আশ্রয়ের কারণে পরলোকভয়ে ভীত।
মহাকাব্য মহাভারতের উৎসমুখের কথাসূত্র পাণ্ডবদের বংশধর জনমেজয়কৃত সর্পযজ্ঞ। সেই মারণযজ্ঞের অবসান —কোনও সদর্থকচিন্তা জাগিয়ে তোলে মনে?
প্রিয় রামের কাছে দেবী কৌশল্যা তাঁর সমস্ত দুঃখ, ক্ষোভ উজার করে দিলেন। তিনি সেই মুখরা, নিত্য কলহরতা, তিক্তবচনে অভ্যস্তা কৈকেয়ীর মুখোমুখি হবেন কী করে? তিনি রামের সপ্তদশ বছর বয়স অবধি এই দুঃখমুক্তির অপেক্ষায় দিন গুণেছেন এতকাল।
পাণ্ডবমাতা কুন্তীর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ ছিল ধৃতরাষ্ট্রের উক্তিতে। পরে সেই একই ধৃতরাষ্ট্রের রাতের ঘুম কেড়ে নিল, পঞ্চপাণ্ডবের সাফল্য। সর্বোত্তম বলশালী ভীম এবং সর্বাস্ত্রনিপুণ অর্জুন, দুর্যোধনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠলেন।
প্রাসাদের অন্তঃপুরে কী দেখলেন রাম? শুকনো মুখে দীন হীনের মতো পিতা দশরথকে, বিষন্নতা যেন ঘিরে রেখেছে তাঁকে। রানি কৈকেয়ীও আছেন সেখানে। সবিনয়ে পিতা ও মাতার পাদবন্দনা করলেন রাম।
নৈমিষারণ্যে, মহর্ষি শৌনক আয়োজিত, দ্বাদশবর্ষব্যাপী যজ্ঞে, আগত সৌতি উগ্রশ্রবা, কথকঠাকুর। মুনিঋষিদের অনুরোধে, মহাভারতের বিচিত্র আখ্যান উপাখ্যান বর্ণনা করে চলেছেন তিনি।
ভাবি রাজা রামচন্দ্রকে,তাঁর ভয়।সংজ্ঞাহীন, ভূমিশয্যায় শায়িত, রাজার দীনদশা রানীর মনে বিন্দুমাত্র রেখাপাত করল না। এ মানসিক দ্বন্দ্ব দু’জনেরই। রাজা ও রানির, সন্তানস্নেহের টানাপোড়েনের সংঘাত।