বাংলার বিশিষ্ট টপ্পা গায়ক নিধু বাবু ওরফে রামনিধি গুপ্তের জীবন নিয়ে তরুণ মজুমদার ছবি করতে শুরু করেছিলেন। যে ছবিটির নাম রেখেছিলেন ‘অমরগীতি’। চিত্রনাট্য রচনায় তরুণ মজুমদারকে সহযোগিতা করেছিলেন বিভূতি মুখোপাধ্যায়। প্রযোজক ভারতভূষণ মাংলা। বিবিএম গ্রুপ অফ প্রোডাকশনস এর ব্যানারে এই ছবিটি নির্মিত হয়েছিল। গানে গানে ভরা এই ছবি। নিধু বাবুর গানগুলি গেয়েছিলেন রামকুমার চট্টোপাধ্যায়। যদিও সংগীত পরিচালক ছিলেন যথারীতি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
এবার তরুণ মজুমদার হাত দিলেন শিল্পী নির্বাচনের ক্ষেত্রে। নিধুবাবুর চরিত্রের জন্য তিনি নির্বাচন করলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। নায়িকা শ্রীমতীর চরিত্রে সন্ধ্যা রায়কে। এই নির্মাণ পর্বে পরিচালক তরুণ মজুমদার রাজাবাবুর চরিত্রের জন্য ঠিক করেছিলেন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
আরও পড়ুন:
পর্দার আড়ালে, পর্ব-২৮: সপ্তপদী: মূল কাহিনিতে দুই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী পুরুষ ও নারীর ভালোবাসার মধ্যে মিলন রাখেননি তারাশঙ্কর
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৮: পূর্ণ অপূর্ণ-র মাঝে পথ দেখায় ‘দেবত্র’
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৩: ‘তিসরি মঞ্জিল’ ছিল পঞ্চমের প্রথম অগ্নিপরীক্ষা
ততদিনে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকটি দেশি-বিদেশি ছবিতে কাজ করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন দর্শকদের কাছে। তাই তিনি এই ছবির জন্য মোটা অঙ্ক দাবি করেছিলেন। কিন্তু সেটা তরুণ মজুমদাররা দিতে রাজি ছিলেন না। তখন তরুণ মজুমদারকে দ্বিতীয় কারও নাম ভাবতেই হল।
ইতিমধ্যে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মত বদল করে তরুণবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করলেন ওই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। কিন্তু ততদিনে তরুণ মজুমদার ওই চরিত্রের জন্য বিশ্বজিৎকে নির্বাচন করেই ফেলেছেন, তাঁকে শুটিংয়ের তারিখগুলি পর্যন্ত দেওয়া হয়েগিয়েছিল। ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরুণ মজুমদারের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব হল না।
আরও পড়ুন:
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১১: বন থেকে বনান্তরে
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৫: নৌকো উল্টে সত্যেন্দ্রনাথের আইসিএস পড়তে যাওয়া বানচাল হতে বসেছিল
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৭: অ্যাকোয়াপোনিক্স প্রযুক্তির প্রয়োগে উৎকৃষ্টমানের মাছ এবং গাছ বেড়ে উঠতে পারে
ত্রিকোণ প্রেমের এই গল্পে সৌমিত্র, সন্ধ্যা রায়, বিশ্বজিৎ ছিলেন। অন্যান্য ভূমিকাতে অভিনয় করলেন জর্জ বেকার, মীনাক্ষী গোস্বামী, রবি ঘোষ, শেখর চট্টোপাধ্যায়, সন্তোষ দত্ত, অলকা গঙ্গোপাধ্যায়, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুপ কুমার, চিন্ময় রায় প্রমুখ শিল্পী।
ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৩ সালে শ্রী, প্রাচী, ইন্দিরা প্রেক্ষাগৃহগুলিতে। যদিও ছবিটি ব্যবসায়িক সাফল্যই লাভ করতে পারেনি। তখনকার দিনে বহু খরচ খরচা করেও যে ছবিটি নির্মিত হল, তার প্রিন্ট খরচ ওঠা দায় হয়ে পড়েছিল। দর্শকেরা বয়স্ক শিল্পীদের নায়ক নায়িকার চরিত্রে দেখতে আর চাইছিলেন না। ততদিনে তাপস পাল, প্রসেনজিৎ, শতাব্দী রায়, দেবশ্রী রায়—এরা সবাই চলে এসেছেন পর্দায়। সুতরাং দর্শকেরা এই সব নতুন মুখ দেখতে চেয়েছিলেন।