প্রেক্ষাগৃহ: চিত্রা, প্রাচী ও ইন্দিরা
উত্তম অভিনীত চরিত্রের নাম: অশোক
উত্তম কুমারের আরেকটি না দেখা মায় কম দেখা ছবি।
ছবিটির বিশেষত্ব হল, নিউ থিয়েটার্স-র ব্যানারে উত্তম কুমারের প্রথম ছবি। নিয়তির কি বিচিত্র খেলা! উত্তম যতদিন একের পর এক ছবিতে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছেন ততদিন ঈশ্বর ভালো ভালো পরিচালক যুগিয়ে গিয়েছেন। কেরিয়ারের প্রথম পাঁচ বছর নীতিন বসু থেকে দেবকী বসু—কে না ছিলেন সে তালিকায়! বরং কেরিয়ারের শেষের দিকে যখন উত্তমের চোখের ঈশারায় টলিউড চলত তখন একঝাঁক মধ্যনমেধার মাঝারিয়ানাতে তাঁকে নাম লেখাতে হয়েছিল।
ছবিটির বিশেষত্ব হল, নিউ থিয়েটার্স-র ব্যানারে উত্তম কুমারের প্রথম ছবি। নিয়তির কি বিচিত্র খেলা! উত্তম যতদিন একের পর এক ছবিতে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছেন ততদিন ঈশ্বর ভালো ভালো পরিচালক যুগিয়ে গিয়েছেন। কেরিয়ারের প্রথম পাঁচ বছর নীতিন বসু থেকে দেবকী বসু—কে না ছিলেন সে তালিকায়! বরং কেরিয়ারের শেষের দিকে যখন উত্তমের চোখের ঈশারায় টলিউড চলত তখন একঝাঁক মধ্যনমেধার মাঝারিয়ানাতে তাঁকে নাম লেখাতে হয়েছিল।
যাইহোক খ্যাতি-অখ্যাতির সমন্বয়ে নিউ থিয়েটার্সের ব্যানারে উত্তম সুযোগ পেলেন। ব্যাপারটা ঘটল পরিচালক সুবোধ মিত্র ওরফে কচিদার তত্ত্বাবধানে। অনেকদিন ধরেই উত্তমের ইচ্ছে ছিল নিউ থিয়েটার্সের সঙ্গে কাজ করার। কিন্তু বিধি বাম। এবারে সে সুযোগ আসাতে এক মূহুর্ত বিলম্ব না করে উত্তম কাজে মন দিয়েছিলেন।
কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও পোড়া কপাল ঠিক হল না। উত্তরা, পূরবী ও উজ্জ্বলা-র রিলিজ চেইন পাল্টে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করলেন চিত্রা, প্রাচী ও ইন্দিরা-তে ছবি মুক্তির ব্যবস্থা করতে। হলও তাই। কিন্তু মানুষ নতুন নায়িকা মায়া মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে উত্তমের রসায়ন মানতে পারলেন না। ছবিটি বাণিজ্যের ভাষায় সুপার ফ্লপ হল।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১২: সে এক ‘বউঠাকুরাণীর হাট’ [১০/০৭/১৯৫৩]
দশভুজা: যে গান যায়নি ভোলা— প্রাক জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য…/১
দেখব এবার জগৎটাকে, পর্ব-১৪: এত বাতাস, দূষণমুক্ত কয়েকটা দিন, অচেনা সঙ্গীদের সঙ্গে আমাজনে ঘুরে বেড়ানো যেন স্বপ্নের মতো
ইংলিশ টিংলিশ: I talk কিন্তু he talks কেন হয়? সঙ্গে আরও জেনে নাও be এবং have verb-এর সঠিক প্রয়োগ
এত বছর পর ছবিটি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলে কয়েকটা আপাত নিরীহ ব্যাপার উঠে আসবে।
প্রথমত: ছবির কাহিনী। সাদামাটা প্রেক্ষাপটে অসাধারণ ব্যাপ্তি। এ ছবির বাহ্যিক আবেদন সর্বকালে সেরা। অভ্যন্তরীণ আবেদনেই পরিচালক দিশাহারা হয়ে পড়লেন। জৈবিক চাহিদা যে দার্শনিক স্তরে উন্নীত করা যায় তা, দেখাতে পরিচালক ব্যর্থ হয়েছিলেন। যার সফল উদাহরণ ‘গল্প হলেও সত্যি’ ছবিটি।
প্রথমত: ছবির কাহিনী। সাদামাটা প্রেক্ষাপটে অসাধারণ ব্যাপ্তি। এ ছবির বাহ্যিক আবেদন সর্বকালে সেরা। অভ্যন্তরীণ আবেদনেই পরিচালক দিশাহারা হয়ে পড়লেন। জৈবিক চাহিদা যে দার্শনিক স্তরে উন্নীত করা যায় তা, দেখাতে পরিচালক ব্যর্থ হয়েছিলেন। যার সফল উদাহরণ ‘গল্প হলেও সত্যি’ ছবিটি।
দ্বিতীয়ত: ছবির নায়িকা নির্বাচন। রোনাল্ড কোলম্যান, পিটার সেলার্স-দের অনুসরণকারী উত্তমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয়, মায়া মুখোপাধ্যায় করে উঠতে পারেননি। অন্যদিকে সুবোধ মিত্র মায়াকে দিয়ে যে মানের ন্যাচারাল অ্যাকটিং করিয়েছিলেন তা, হিট করলে পরবর্তীকালে সুচিত্রা-সাবিত্রীদের অসুবিধা হয়ে যেত।
তৃতীয়ত: সহশিল্পীদের মুখে সিচুয়েশনভিত্তিক সংলাপের বুননের অভাব। ‘ধন্যি মেয়ে’ বা ‘ছদ্মবেশী’ ছবি দুটি যদি ভালোভাবে সমালোচনা করা যায় তো দেখা যাবে, সেখানে মহানায়কোচিত দাপটে উত্তম থাকলেও সহশিল্পীরা ফ্রেম টু ফ্রেম চোখা চোখা সংলাপ বলে যাচ্ছেন। ছবির যেখানে রিপিট ভ্যালুকে প্রাধান্য দিতে হয় সেখানে সহশিল্পীদের অংশ উপেক্ষা করলে চলবে কেন! ‘নবীন যাত্রা’-র ব্যর্থতার এটাও অন্যতম কারণ।
আরও পড়ুন:
ষাট পেরিয়ে, পর্ব-১৬: বয়স হয়েছে তাই ওজন কমে যাচ্ছে— এই ধারণা কি আদৌ ঠিক? পর্ব-১
বেগুন ভর্তা তো খেয়েছেন, এবার ঝটপট তৈরি করে ফেলুন লাউপাতার ভর্তা, রইল রেসিপি
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৫: বনবাসের সঙ্গী সীতা
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪১: ঠাকুরবাড়িতে এসে সাহেব খেতেন ভাজা চিঁড়ের সঙ্গে কড়াইশুঁটি
চতুর্থত: সংগীত। পঙ্কজ মল্লিক মহাশয়ের সুরসংযোজন, নিঃসন্দেহে ধ্রুপদী আঙ্গিকে। কিন্তু ফিল্মের গায়নরীতিতে পঞ্চাশের দশক যে নতুনত্ব তথা অভিনবত্ব আমদানী করতে চাইছিল তা, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী, শচীন দেব বর্মনরা বম্বে বসে দেখাচ্ছিলেন। কলকাতায় নিউ থিয়েটার্সের স্টাফ আর্টিস্টরা ততটা চৌখস ছিলেন না।
ফল ফলল সঙ্গে সঙ্গে, ‘নবীন যাত্রা’ ছেড়ে মানুষ দলে দলে ‘আনার কলি’, ‘সংযোগ’, ‘দো বিঘা জমিন’-এ ভিড় জমালেন।—চলবে
ছবি: জয়দীপ ভট্টাচার্য-র সৌজন্যে
ফল ফলল সঙ্গে সঙ্গে, ‘নবীন যাত্রা’ ছেড়ে মানুষ দলে দলে ‘আনার কলি’, ‘সংযোগ’, ‘দো বিঘা জমিন’-এ ভিড় জমালেন।—চলবে
ছবি: জয়দীপ ভট্টাচার্য-র সৌজন্যে
* উত্তম কথাচিত্র (Uttam Kumar – Mahanayak – Actor) : ড. সুশান্তকুমার বাগ (Sushanta Kumar Bag), অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, মহারানি কাশীশ্বরী কলেজ, কলকাতা।