আজ রবিবার। শুভায়নের অফিস থেকে ফোন এসেছিল, জরুরি দরকার-যেতে হয়েছে। শুভায়নের স্ত্রী রুচিরা ঘরের কাজ করতে করতে বার বার অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে। এই ফ্ল্যাটেই তাদের সংসার শুরু হয়। প্রতিটি জিনিস বড় যত্নে সাজানো রুচিরার। আজই শুভায়নকে চিঠিটা দেখাবে। গত তিনদিন যে তার কীভাবে কেটেছে, তা সে নিজেই জানে। দিশাহীন অবস্থা।
ছোট থেকে রুচিরা শান্তিপ্রিয়, নির্বিবাদী, ভীতু প্রকৃতির। নিজের ক্ষেত্রে যে এমন একটা পদক্ষেপ নিতে পারবে কোনওদিন ভাবেনি সে। সদ্যস্নাত রুচিরার চুল দিয়ে জল ঝরছে। ব্যালকনিতে ফুলের টবগুলো ছুঁয়ে দেখছিলো সে। মা না থাকায় বাবাকেই এতদিন বন্ধুর মতো সব বলে এসেছে রুচিরা। মাঝে মাঝেই তার সঙ্গে শুভায়নের ঝগড়ার কথা প্রাণেশবাবু শুনতেন। মেয়েকে ধৈর্য ধরে মানিয়ে নিতে বলতেন। সেপারেশনের কথা তো তিনদিন আগে শুভায়ন-ই বলেছে।
আজকাল প্রায় প্রায়ই কনফারেন্স থেকে রাত করে বাড়ি ফিরে শুভায়ন খেতে চায় না — বলে খেয়ে এসেছে। রুচিরা বুঝতে চায় না, প্রায়ই বিছানায় শুয়ে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। রুচিরার রাগ, দুঃখ, অভিমান, কান্নার পালা চলতেই থাকে।
“সব জেনে শুনে কেন এমন করো বলতো? আমি তোমার হ্যান্ডিক্রাফটের খেলনা নই, যে তুমি যেমন খুশি গড়বে! আফটার অল তুমি আমার কন্ট্রোলার নও! “শুভায়ন রূঢ় মন্তব্য করে। এর পর থেকে রাতে ডিনারের পর শুভায়ন কিছু বইপত্তর নিয়ে পাশের ঘরে চলে যায়। রুচিরা আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু ঘুম আসেনা —কিসের তাগিদে এই সংসার! কয়েকমাস এমনভাবে চলার পর শুভায়ন একদিন রুচিরাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, “দেখো রুচিরা, আমি চাই না তুমি আমার জন্য এভাবে কষ্ট পাও। এ রকম ভাবে রিলেশন বাঁচে না। তুমি তোমার বাবার কাছে চলে যাও। উনি একা থাকেন। ওখানে এই নিত্য দিনের অশান্তি থেকে তুমি ভালো থাকবে। আমাদের কিছু দিন সেপারেশন দরকার।”
ছোট থেকে রুচিরা শান্তিপ্রিয়, নির্বিবাদী, ভীতু প্রকৃতির। নিজের ক্ষেত্রে যে এমন একটা পদক্ষেপ নিতে পারবে কোনওদিন ভাবেনি সে। সদ্যস্নাত রুচিরার চুল দিয়ে জল ঝরছে। ব্যালকনিতে ফুলের টবগুলো ছুঁয়ে দেখছিলো সে। মা না থাকায় বাবাকেই এতদিন বন্ধুর মতো সব বলে এসেছে রুচিরা। মাঝে মাঝেই তার সঙ্গে শুভায়নের ঝগড়ার কথা প্রাণেশবাবু শুনতেন। মেয়েকে ধৈর্য ধরে মানিয়ে নিতে বলতেন। সেপারেশনের কথা তো তিনদিন আগে শুভায়ন-ই বলেছে।
আজকাল প্রায় প্রায়ই কনফারেন্স থেকে রাত করে বাড়ি ফিরে শুভায়ন খেতে চায় না — বলে খেয়ে এসেছে। রুচিরা বুঝতে চায় না, প্রায়ই বিছানায় শুয়ে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। রুচিরার রাগ, দুঃখ, অভিমান, কান্নার পালা চলতেই থাকে।
“সব জেনে শুনে কেন এমন করো বলতো? আমি তোমার হ্যান্ডিক্রাফটের খেলনা নই, যে তুমি যেমন খুশি গড়বে! আফটার অল তুমি আমার কন্ট্রোলার নও! “শুভায়ন রূঢ় মন্তব্য করে। এর পর থেকে রাতে ডিনারের পর শুভায়ন কিছু বইপত্তর নিয়ে পাশের ঘরে চলে যায়। রুচিরা আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু ঘুম আসেনা —কিসের তাগিদে এই সংসার! কয়েকমাস এমনভাবে চলার পর শুভায়ন একদিন রুচিরাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, “দেখো রুচিরা, আমি চাই না তুমি আমার জন্য এভাবে কষ্ট পাও। এ রকম ভাবে রিলেশন বাঁচে না। তুমি তোমার বাবার কাছে চলে যাও। উনি একা থাকেন। ওখানে এই নিত্য দিনের অশান্তি থেকে তুমি ভালো থাকবে। আমাদের কিছু দিন সেপারেশন দরকার।”
এই কথা শোনার পর রুচিরার আর এক মুহূর্ত এই ফ্ল্যাটে থাকতে ইচ্ছে হয়নি। আর থাকতে না পেরে বাবাকে ফোন করে। শেষে দাম্পত্য অশান্তির কথা শুনে প্রাণেশবাবু সক্রিয় হয়ে ওঠেন। উকিলের সঙ্গে কথা বলার পর তৈরি হয় ডিভোর্সের চিঠি। রুচিরা বাবার সঙ্গে গেছিল। মাত্র দেড় বছরের বিবাহিত জীবনে এই সিদ্ধান্ত হয়তো অনেক বেশি বাস্তববাদী করে তুলেছে তাকে!
আজ রবিবার। অন্তত আজকের দুপুরটা একসঙ্গে লাঞ্চ করবে ভেবেছিল রুচিরা, কিন্তু দরকারি কাজ আছে, তাড়াতাড়ি ফিরবে বলে শুভায়ন অফিস বেরিয়ে যায়।
কলিং বেলের শব্দে চিন্তার জাল ছিঁড়ে যায় রুচিরার। দরজা খুলে অপরিচিত মুখ দেখে থমকে যায়।
“বলুন কি দরকার?”
একটি বছর কুড়ির ছেলে হন্ত দন্ত হয়ে বলে, “এটা কি শুভায়ন বোসের বাড়ি?” ছেলেটির মুখ ম্লান। রুচিরা তার গলার স্বরে বিপদের সংকেত পেয়ে চঞ্চল হয়ে ওঠে।
“কেন কী হয়েছে?”
“বাড়ি ফেরার সময় স্যারের গাড়িতে একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। উনি এখন আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। আপনি আমার সঙ্গে আসুন।”
হাসপাতালে গিয়ে রুচিরা জানতে পারে শুভায়নের মাথায় দুটো স্টিচ হয়েছে, তবে বিপদ কেটে গিয়েছে। জ্ঞান ফিরতে কিছুক্ষণ সময় লাগবে। অফিসে কাজের চাপ বেশি থাকায় শুভায়ন উদ্বিগ্ন হয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল। একটি বাচ্চা ছেলে অন্যমনস্ক ভাবে রাস্তা পার হচ্ছিল। তাকে বাঁচাতে গিয়ে শুভায়ন যতটা সম্ভব সাইড করে ব্রেক কষে। আর তখনই ধাক্কা খায় লাইট পোস্টে। উত্তেজনায় রুচিরার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়ে।
“আমি ওর সঙ্গে দেখা করবো।”
রুচিরার কাতর অনুরোধে ডাক্তার আশ্বাস দেন, —”মিস্টার বোসের জ্ঞান ফিরলেই আপনাকে খবর দেওয়া হবে।”
আজ রবিবার। অন্তত আজকের দুপুরটা একসঙ্গে লাঞ্চ করবে ভেবেছিল রুচিরা, কিন্তু দরকারি কাজ আছে, তাড়াতাড়ি ফিরবে বলে শুভায়ন অফিস বেরিয়ে যায়।
কলিং বেলের শব্দে চিন্তার জাল ছিঁড়ে যায় রুচিরার। দরজা খুলে অপরিচিত মুখ দেখে থমকে যায়।
“বলুন কি দরকার?”
একটি বছর কুড়ির ছেলে হন্ত দন্ত হয়ে বলে, “এটা কি শুভায়ন বোসের বাড়ি?” ছেলেটির মুখ ম্লান। রুচিরা তার গলার স্বরে বিপদের সংকেত পেয়ে চঞ্চল হয়ে ওঠে।
“কেন কী হয়েছে?”
“বাড়ি ফেরার সময় স্যারের গাড়িতে একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। উনি এখন আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। আপনি আমার সঙ্গে আসুন।”
হাসপাতালে গিয়ে রুচিরা জানতে পারে শুভায়নের মাথায় দুটো স্টিচ হয়েছে, তবে বিপদ কেটে গিয়েছে। জ্ঞান ফিরতে কিছুক্ষণ সময় লাগবে। অফিসে কাজের চাপ বেশি থাকায় শুভায়ন উদ্বিগ্ন হয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল। একটি বাচ্চা ছেলে অন্যমনস্ক ভাবে রাস্তা পার হচ্ছিল। তাকে বাঁচাতে গিয়ে শুভায়ন যতটা সম্ভব সাইড করে ব্রেক কষে। আর তখনই ধাক্কা খায় লাইট পোস্টে। উত্তেজনায় রুচিরার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়ে।
“আমি ওর সঙ্গে দেখা করবো।”
রুচিরার কাতর অনুরোধে ডাক্তার আশ্বাস দেন, —”মিস্টার বোসের জ্ঞান ফিরলেই আপনাকে খবর দেওয়া হবে।”
আরও পড়ুন:
তুষারপাতের সেই দিনগুলি, পর্ব-৭: সে এক কাণ্ড, প্রথমে দেখে তো বুঝতেই পারছিলাম না সুপিরিয়রের শুরু কোথায়…
ডাক্তারের ডায়েরি, পর্ব-২৯: সাফল্যে মাথা ঘোরেনি পরান বাড়ুজ্যের
বয়ঃসন্ধিতে সন্তানের বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা নিয়ে চিন্তিত? শুনুন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
পর্দার আড়ালে, পর্ব-১৫: ‘সাগর সঙ্গমে’ ছবিতে ভারতী দেবী দাক্ষায়নীর চরিত্র করলে ছবি করতে দেবো না: প্রেমেন্দ্র মিত্র
রুচিরা শান্ত হতে পারছে না। তবু কিছু ক্ষণ ধৈর্য তো ধরতেই হবে।
জ্ঞান ফেরার পর স্ত্রীকে পাশে দেখে শুভায়ন স্মিত হাসে। শুভায়নের মাথায় হাত রেখে কেঁদে ফেলে রুচিরা। গুমোট মেঘের পর অঝোর বৃষ্টি।
“আবার ছেলে মানুষি করছ? আমি তো ঠিকই আছি।”
রুচিরার হাতদুটো শক্ত করে ধরে শুভায়ন। প্রাণেশবাবু খবর পেয়ে ছুটে আসেন হাসপাতালে। ডাক্তার জানান শুভায়নকে একদিন বাদেই ছাড়া হবে। তবে তাকে কিছু দিন বাড়িতে রেস্ট নিতে হবে।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রুচিরা কিছুটা স্বচ্ছন্দ ভঙ্গিতে বাবাকে বলে, “আমি ফ্ল্যাটে ফিরে যাচ্ছি। ওর এখন কমপ্লিট রেস্ট দরকার।”
কর্তব্যপরায়ণ স্ত্রীর ভূমিকায় মেয়েকে দেখে প্রাণেশবাবু হাসেন।
“তাহলে তোর তো এখন দায়িত্ব বাড়লো।”
প্রাণেশবাবুর কথা শেষ হয় না, রুচিরা এক মনে বলে চলে “হ্যাঁ বাবা, ও নিজের ব্যাপারে বড্ড ইরেগুলার। তাই এই অবস্থায় ওকে সাবধানে রাখতে হবে।”
প্রাণেশবাবু ভাবেন ডিভোর্সের কথা রুচিরা আর হয়তো মনে করতে চায় না।
“তুই কিন্তু নিজের দিকেও একটু খেয়াল রাখিস।”
প্রাণেশবাবু মেয়ের মাথায় হাত রাখেন। কখনও কখনও কোনও ছোটখাট দুর্ঘটনা বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচায়- কথাগুলো ভাবতে ভাবতে প্রাণেশবাবু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন।
* গল্প (Short Story) – দুর্ঘটনা (Accident) : ড. জনা বন্দ্যোপাধ্যায় (Jana Bandyopadhyay) সংস্কৃতের অধ্যাপিকা, হুগলি মহিলা মহাবিদ্যালয়
জ্ঞান ফেরার পর স্ত্রীকে পাশে দেখে শুভায়ন স্মিত হাসে। শুভায়নের মাথায় হাত রেখে কেঁদে ফেলে রুচিরা। গুমোট মেঘের পর অঝোর বৃষ্টি।
“আবার ছেলে মানুষি করছ? আমি তো ঠিকই আছি।”
রুচিরার হাতদুটো শক্ত করে ধরে শুভায়ন। প্রাণেশবাবু খবর পেয়ে ছুটে আসেন হাসপাতালে। ডাক্তার জানান শুভায়নকে একদিন বাদেই ছাড়া হবে। তবে তাকে কিছু দিন বাড়িতে রেস্ট নিতে হবে।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রুচিরা কিছুটা স্বচ্ছন্দ ভঙ্গিতে বাবাকে বলে, “আমি ফ্ল্যাটে ফিরে যাচ্ছি। ওর এখন কমপ্লিট রেস্ট দরকার।”
কর্তব্যপরায়ণ স্ত্রীর ভূমিকায় মেয়েকে দেখে প্রাণেশবাবু হাসেন।
“তাহলে তোর তো এখন দায়িত্ব বাড়লো।”
প্রাণেশবাবুর কথা শেষ হয় না, রুচিরা এক মনে বলে চলে “হ্যাঁ বাবা, ও নিজের ব্যাপারে বড্ড ইরেগুলার। তাই এই অবস্থায় ওকে সাবধানে রাখতে হবে।”
প্রাণেশবাবু ভাবেন ডিভোর্সের কথা রুচিরা আর হয়তো মনে করতে চায় না।
“তুই কিন্তু নিজের দিকেও একটু খেয়াল রাখিস।”
প্রাণেশবাবু মেয়ের মাথায় হাত রাখেন। কখনও কখনও কোনও ছোটখাট দুর্ঘটনা বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচায়- কথাগুলো ভাবতে ভাবতে প্রাণেশবাবু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন।
* গল্প (Short Story) – দুর্ঘটনা (Accident) : ড. জনা বন্দ্যোপাধ্যায় (Jana Bandyopadhyay) সংস্কৃতের অধ্যাপিকা, হুগলি মহিলা মহাবিদ্যালয়