শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

ডায়াবেটিস রোগীরা চিন্তায় থাকেন কোন কোন খাবার খাবেন, আর কোন কোন খাবার খাবেন না। প্রধানত তিন ধরনের খাবার আমরা খাই—
কার্বোহাইড্রেট
ফ্যাট
প্রোটিন৷

কার্বোহাইড্রেট

সাধারণত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খেলে ব্লাড সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে করণীয় হল—এই কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার পুরোপুরি খাওয়া বন্ধ না করে কমিয়ে দিতে হবে। এই কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবারের কিছু ভাগ আছে। একটি হল সিম্পল কার্বোহাইড্রেট এবং অপরটি হল কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট। যে কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়ার পর দ্রুত আমাদের রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় তাহলে সিম্পল কার্বোহাইড্রেট। কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট হল যে খাবারগুলি আমাদের রক্তে সুগারের মাত্রাকে ধীরে ধীরে বাড়ায়। সুতরাং কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট খেতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু সিম্পল কার্বোহাইড্রেটকে দ্রুত বন্ধ করতে হবে।

সিম্পল কার্বোহাইড্রেট থাকে ভাতে। কেউ দুই বেলা ভাত খান, কেউ বা তিন বেলা৷ ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তির এই দুই বার বা তিন বার ভাত খাওয়া তো বন্ধ করতে হবে এবং যদি ভাত খান তাহলে দুপুরে দুই কাপ ভাত খেতে পারেন। ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিকে ব্রাউন রাইস খেতে হবে। সাদা ভাত ও ব্রাউন রাইসের পার্থক্য হল এই যে ব্রাউন রাইসে রক্তে সুগারের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে। আমাদের আর একটি খাবার হল রুটি। রুটি হয় ময়দা বা আটা থেকে। ময়দার রুটি, লুচি বা পরোটা ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়ানো যাবে না। খেলেও খুবই অল্প পরিমাণে খেতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীরা আটার তৈরি খাবার খেতে পারেন। আমরা অনেকেই টিফিনে বা ব্রেকফাস্ট-এ কর্নফ্লেক্স খাই। ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তির কোনও কর্নফ্লেক্স খাওয়া যাবে না। কারণ এতে রক্তে সুগারের মাত্রা ভীষণভাবে বাড়িয়ে দেয়। এই কর্নফ্লেক্সের পরিবর্তে ওটস বা ডালিয়া খেতে পারেন। কিংবা হাতে বানানো আটার রুটি খেতে পারেন। একটা কথা মনে রাখা দরকার সাদা দেখতে খাবারগুলি থেকে সুগারের মাত্রা দ্রুত বাড়ে। যেমন—ময়দা, পাউরুটি প্রভৃতি। ডায়াবেটিস দেখা দিলে আমরা যদি সেটাকে একটু পরিবর্তন করে ব্রাউন ব্রেড খাই তুলনামূলকভাবে সেটি ভালো। ময়দার তৈরি সুজি, চাউমিন এড়িয়ে চলতে হবে। আটার তৈরি চাউমিন খেতে পারেন। ময়দার তৈরি বিভিন্ন বিস্কুট এড়িয়ে চলতে হবে। আটার তৈরি বিস্কুট খেতে পারেন। ডায়াবেটিস রোগীরা সবুজ শাকসবজি খাবেন। কিন্তু মাটির নীচে জন্মায় এমন জিনিস যেমন—আলু, কচু, ওল এগুলি খাবেন না। দুধ, দই, ছানা এগুলি খেতে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু এগুলিতে চিনি দেওয়া থাকলে তা খাওয়া যাবে না। চিনির বদলে কি অন্য কিছু দেওয়া যেতে পারে? চিনির বদলে মিছরি, মধু, গুড় বা নকুলদানা কিছুই খাওয়া যাবে না। আপনি সুগার ফ্রি খেতে পারেন। এই সুগার ফ্রির মধ্যে ন্যাচুরা বলে একটি জিনিস পাওয়া যায় সেটি খেতে পারেন। ধরা যাক, ডায়াবেটিস যুক্ত রোগীর পায়েস বা চাটনি খেতে ইচ্ছা করেছে, সেক্ষেত্রে আপনি সেটা সুগার ফ্রি বানাতে পারেন। মিষ্টি বাঙালির অন্যতম প্রিয় খাবার। এখন সুগার ফ্রি মিষ্টি পাওয়া যায় সেগুলি খাবেন। কিন্তু জেনে নেবেন চিনির বদলে স্যাকারিন দেওয়া আছে কি না। যদি থাকে তাহলে তা খাবেন না। কারণ স্বাস্থ্যের পক্ষে এটি ভালো নয়। সেক্ষেত্রে আপনি মিষ্টি বানিয়ে তা খেতে পারেন।
ফ্যাট

ফ্যাট ব্লাড সুগার বাড়ায় না। কিন্তু একটা বিষয় মনে রাখা দরকার ডায়াবেটিস থাকলে ব্লাড প্রেশার বা হার্টের সমস্যাগুলি থাকে। তার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। সুতরাং ফ্যাটজাতীয় খাবার দিনে দশ শতাংশের বেশি খাওয়া যাবে না। তেল খাওয়া কমাতে হবে আমাদের। কারণ আমাদের শরীরে যদি ফ্যাটের মাত্রা বেড়ে যায় তাহলে পরোক্ষভাবে ডায়াবেটিসের কারণে হার্টের সমস্যা, ব্লাড প্রেশারের সমস্যা, লিভার ও কিডনির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। দুধ, দই, ছানা এগুলি আপনি খেতে পারেন। দুধের ক্ষেত্রে ফ্যাট নেই এমন দুধ আপনি খেতে পারেন। ছোট-বড় মাছ, সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে মাছের তেল হার্টের পক্ষে ভালো। কিন্তু বাঙালিরা মাছ যেরকমভাবে ভেজে খান তাতে মাছের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং একটু কম ভেজে খেতে হবে। সবরকম মাছ খান। দৈনিক খাদ্যতালিকায় অবশ্যই মাছ রাখুন। যদি কোলেস্টেরলের সমস্যা না থাকে তাহলে আপনি ডিম খেতে পারেন। ডিমের সাদা অংশটি হল প্রোটিন, হলুদ অংশটি হল ফ্যাট। যদি কোলেস্টেরল বেশি থাকে তাহলে ডিমের হলুদ অংশটি বাদ দিয়ে খেতে হবে। বাইরের খাবার বা ডালডা দিয়ে ভাজা খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

প্রোটিন

কোনও প্রোটিনেই সাধারণত কোনও সমস্যা নেই। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে আমাদের কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই কিডনির সমস্যা দেখা দিলে প্রোটিনের ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। অর্থাৎ দিনের মধ্যে আপনি কত গ্রাম প্রোটিন খাচ্ছেন তা লক্ষণীয়। শরীরের যত কেজি ওজন তত গ্রাম প্রোটিন খেতে পারেন। কারও শরীরের ওজন যদি ৭০ কেজি হয় তাহলে সে ৭০ গ্রাম প্রোটিন খাবেন। ছাতু, দুধ, ডিমের সাদা অংশ, মাছ খেতে পারেন। এগুলিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রোটিন আছে। রাত্রিবেলা শোয়ার সময় আপনি দুধ ও রুটি খেতে পারেন। মাছের বিকল্প হিসেবে মুরগির মাংস খেতে পারেন। কিন্তু খাসির মাংস বা রেড মিট খাওয়া যাবে না। কারণ এগুলি কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং যদি কিডনির সমস্যা না থেকে থাকে তাহলে আপনি বেশি পরিমাণে প্রোটিন খেতে পারেন। আপনি কার্বোহাইড্রেট যেটি কম খাচ্ছেন সেটি পুষিয়ে দিতে হবে প্রোটিন দিয়ে।

বাইরের যে সমস্ত খাবার আমরা খাই, তাতে দেখি না যে কতটা পরিমাণ প্রোটিন বা ফ্যাট আছে। যেমন একটি ৩০০ মিলি কোল ড্রিঙ্কের বোতলে ১০০ চামচ সমান চিনি থাকে। খেতে কিন্তু এটি মিষ্টি নয়। চিনি থাকার কারণে এগুলিকে এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা যে সস বা কেচাপ খাই তাতে এক চামচ সমান চিনি থাকে। এই জিনিসগুলিও এড়িয়ে চলতে হবে। রোজ খাদ্যতালিকায় অবশ্যই আপনাকে ফল খেতে হবে। তবে মিষ্টি ফল খাবেন না। যেমন—আম, কাঁঠাল, সবেদা, লিচু, আঙুর। এই আঙুর যদি একান্ত খেতেই হয় তাহলে আপনি লাল আঙুর সারাদিনে দুটি বা তিনটি খেতে পারেন। বড় কলা যেমন—সিঙ্গাপুরি, মর্তমান খাওয়া যাবে না। আমসত্ত্ব, খেজুর এগুলি খাওয়া যাবে না। পেয়ারা, আপেল, জাম, জামরুল, পাকা পেঁপে ও যেকোনও লেবু খেতে পারেন। কোনও ফলই জুস করে খাবেন না, চিবিয়ে খাবেন। জুস করলে ফলে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই জুস করে খাওয়া উচিত নয়।

Skip to content