ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।
ধরা যাক, কোনও ব্যক্তি ডায়াবেটিসের ওষুধ খাচ্ছেন, তাঁকে কোনও কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে; হয়তো কোনও ইনফেকশনের কারণে বা কোনও সার্জারির কারণে সেক্ষেত্রে তিনি যতদিন হাসপাতালে থাকবেন ততদিনই তাকে ইনসুলিন নিতে হবে; তারপরে তিনি আবারও ওষুধে ফিরে আসতে পারেন।
কোথায় কোথায় ইনসুলিন ছাড়া চলবে না?
কোনও ব্যক্তি দশ বছর ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তিনি নিত্য ওষুধ খাচ্ছেন; কিন্তু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির ইনসুলিন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ বলতে বোঝায়—আমরা প্রতি তিনমাস অন্তর একটা পরীক্ষা করি একে ডায়াবেটিসের গড় বলা হয়। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলা হয় Hba1c। রক্তে Hba1c-এর মাত্রা ৭-এর নীচে রাখতে হবে। সাড়ে ছয়-এর নীচে রাখলে তা অবশ্যই ভালো। যদি দেখা যায় তিনটির বেশি ওষুধ খেয়েও Hba1c নিয়ন্ত্রণে নেই সেক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ইনসুলিন দিতে হবে।
অতীতে যে ইনসুলিন ছিল সেগুলি দিনে তিন থেকে চারবার দিতে হত ছুঁচ ফুটিয়ে। এই ইনসুলিনের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যেত। যেমন রক্তে সুগারের মাত্রা ওঠানামা করার ফলে বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘোরা, ঘাম হওয়া প্রভৃতি। এমন সময় যদি গ্লুকোজ বা চিনি না খাওয়ানো হয় তাহলে রুগির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায় এর নাম হাইপোলাইসেমিয়া।
কিন্তু আধুনিক যে ইনসুলিনগুলি আমাদের কাছে এসেছে তাতে এই সমস্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক কম। আধুনিক এই ইনসুলিন ২৪ ঘণ্টায় একবার দেওয়া হয়। অতীতে যে ইনসুলিনগুলি ছিল সেগুলি খাবার আগেই নিতে হত। কিন্তু আধুনিক ইনসুলিনের ক্ষেত্রে সেরকম কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। খাবার আগে ইনসুলিন নিলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয় মানুষকে। যেমন কেউ যদি কাজের তাগিদে বাইরে দুপুরের খাবার খান তাঁকে সিরিঞ্জ বের করে ইনজেকশন নিতে হবে। বয়স্ক ব্যক্তি যাঁরা তাঁদের ক্ষেত্রে দিনের তিনটি সময় ইনসুলিনের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করতে হবে। আধুনিক এই ইনসুলিনের সুবিধা এটাই যে এটি দিনে একবারই নিতে হয়। আপনি রাত্রে সবার সময়ও নিতে পারেন কিংবা দুপুরে খাবার আগে। পুরোনো ইনসুলিনে রক্তে সুগারের মাত্রা যেভাবে ওঠানামা করত আধুনিক এই ইনসুলিনে তা করে না। অতীতের ইনসুলিনে দেখা গেছে রুগির ওজন বেড়ে যেতে; আধুনিক এই ইনসুলিনে তার সম্ভাবনা অনেক কম।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, আধুনিক এই ইনসুলিনগুলিতে Hba1c মাত্রা দ্রুত কম হয়। অর্থাৎ দ্রুত ৭ বা সাড়ে ছয়-এর নীচে নামিয়ে ফেলতে পারে সেরকম কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। বর্তমানের ডায়াবেটিস চিকিৎসায় পুরোনো ইনসুলিনের প্রয়োগ সেরকমভাবে আর হয় না।
কোন কোন ক্ষেত্রে ইনসুলিন ছাড়া চলবে না?
● গর্ভাবস্থায় ইনসুলিন ছাড়া চলবে না অর্থাৎ ইনসুলিন নিতেই হবে। কারণ সেই সময় কোনও ওষুধ খাওয়া যায় না। ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়ে ইনসুলিনের ডোজটি শুধু ঠিক করে নিতে হবে।
● ডায়াবেটিসজনিত কারণে কারওর কিডনির বা চোখের সমস্যা হলে তাঁদের ইনসুলিন ছাড়া চলবে না। এছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা ওষুধের সাহায্য নিতে পারি।
এখন কোভিডের কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন ক্ষরণ কমে যাচ্ছে। কিন্তু এটা প্রমাণিত যে আমরা যদি দ্রুত রক্তে সুগারের মাত্রাটিকে কমিয়ে ফেলতে পারি তাহলে কিন্তু অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন নিঃসরণের পুরোনো ক্ষমতা অনেকাংশে ফিরে পায়। যখন রুগির চিকিৎসা করা হচ্ছে তখন যদি আমরা দেখি খালি পেটে তিনশোর বেশি সুগার আছে এবং রক্তে Hba1c 9 এর বেশি থাকে সেক্ষেত্রে একমাস বা দুইমাস হয়তো ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করা হতে পারে। তার মানে এটা নয় যে সারাজীবনই রুগির ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা চলবে। এই এক বা দুই মাস ইনসুলিন নেওয়ার পর অগ্ন্যাশয় কিন্তু তার পুরোনো ক্ষমতা ফিরে পায়। তারপর আবার আমরা ওষুধে ফিরে আসতে পারি।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় প্রথম একবছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধরা যাক কোনও ব্যক্তির ব্লাড সুগার ধরা পড়েছে। সেই ব্যক্তি ডায়েট করছেন, ব্যায়াম করছেন কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ নিচ্ছেন না; এই ভাবে তিন মাস, ছয় মাস বা এক বছর হয়ে যাবার পর কিন্তু নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই এক বছরেই যদি ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে এর ফলে হার্টের সময়, পেটের সমস্যা, চোখের সমস্যা ও কিডনির সমস্যা খুব কম হয়। সুতরাং ডায়াবেটিস চিকিৎসায় প্রথম এক বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।পাঁচ দশ বছর পরে ওষুধ খেতে খেতে যদি দেখেন ব্লাড সুগার কমছে না বা Hba1c 7-এর নীচে নামছে না সেক্ষেত্রে অবশ্যই দিনে একবার ইনসুলিন নিতে হবে।
এখন কোভিডের কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন ক্ষরণ কমে যাচ্ছে। কিন্তু এটা প্রমাণিত যে আমরা যদি দ্রুত রক্তে সুগারের মাত্রাটিকে কমিয়ে ফেলতে পারি তাহলে কিন্তু অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন নিঃসরণের পুরোনো ক্ষমতা অনেকাংশে ফিরে পায়। যখন রুগির চিকিৎসা করা হচ্ছে তখন যদি আমরা দেখি খালি পেটে তিনশোর বেশি সুগার আছে এবং রক্তে Hba1c 9 এর বেশি থাকে সেক্ষেত্রে একমাস বা দুইমাস হয়তো ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করা হতে পারে। তার মানে এটা নয় যে সারাজীবনই রুগির ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা চলবে। এই এক বা দুই মাস ইনসুলিন নেওয়ার পর অগ্ন্যাশয় কিন্তু তার পুরোনো ক্ষমতা ফিরে পায়। তারপর আবার আমরা ওষুধে ফিরে আসতে পারি।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় প্রথম একবছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধরা যাক কোনও ব্যক্তির ব্লাড সুগার ধরা পড়েছে। সেই ব্যক্তি ডায়েট করছেন, ব্যায়াম করছেন কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ নিচ্ছেন না; এই ভাবে তিন মাস, ছয় মাস বা এক বছর হয়ে যাবার পর কিন্তু নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই এক বছরেই যদি ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে এর ফলে হার্টের সময়, পেটের সমস্যা, চোখের সমস্যা ও কিডনির সমস্যা খুব কম হয়। সুতরাং ডায়াবেটিস চিকিৎসায় প্রথম এক বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।পাঁচ দশ বছর পরে ওষুধ খেতে খেতে যদি দেখেন ব্লাড সুগার কমছে না বা Hba1c 7-এর নীচে নামছে না সেক্ষেত্রে অবশ্যই দিনে একবার ইনসুলিন নিতে হবে।