ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
রুপোলি পর্দার আড়ালে প্রতিনিয়তই ঘটে চলে কতশত বিচিত্র ও বৈচিত্রময় ঘটনা। সাধারণ দর্শকরা পর্দার সামনে ঘটতে দেখা ঘটনাপ্রবাহের পাশাপাশি কিন্তু অপেক্ষা করে থাকেন যদি সেই সমস্ত বৈচিত্রের টুকরো কিছু ঝলকের আভাসমাত্র পাওয়া যায় কোনওভাবে। এবার তাদের সেই অপেক্ষার অবসান হওয়ার পালা। টলিউডে প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকা সেই সমস্ত নানাবিধ বৈচিত্রের সমাহার নিয়েই এবার থেকে থাকছেন টলিউডের অন্যতম মুখ্য সহকারী পরিচালক বিভাসরঞ্জন বেরা। বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক ও আকর্ষণীয় ঘটনার কাহিনি নিয়েই থাকছে তার এই ধারাবাহিক ‘অচেনা টলিউড’।
পর্ব – ৩
স্বপন সাহার নাম ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ ওঠা উচিত ছিল কি ছিল না, না উঠলে কেন নয়, এসব তর্ক চলতেই পারে। কিন্তু যেটা লক্ষণীয় বিষয়, বাংলা তথা ভারত বর্ষ তথা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পূর্ণদৈর্ঘ্যের কাহিনি চিত্রের পরিচালককে কখনও কোনও টিভির ‘রিয়েলিটি শো’তে বিচারক হিসেবে বা বিতর্ক সভায় বক্তা হিসেবে বা সিনেমা বিষয়ক কোনও সরকারি-বেসরকারি কমিটিতে সদস্য হিসেবে দেখা যায়নি। এর কারণ কী? কারণ সাধারণ মানুষ হিসেবে তার থেকে যাওয়া। তার পোশাক, আচার-আচরণ, কথা বলার ধরন দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই লোকটা প্রায় একশোর কাছাকাছি ছবির পরিচালক। অবশ্য আর একটা কারণও ছিল। তিনি ইংরেজিতে, হিন্দিতে সাবলীল নন। স্বভাবতই স্মার্টনেসের একটা অভাব তো আছে, যেটা সামাজিক মাধ্যমে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। ইংরেজি বা হিন্দি সংবাদপত্রের সাংবাদিকরা সাক্ষাৎকারের সময় যখন ইংরেজিতে বা হিন্দিতে প্রশ্ন করতেন, স্বপনদা বাংলায় উত্তর দিতেন। ফলে দু-চার পাঁচটা ছবি করা পরিচালককে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যতটা নাচানাচি হত, স্বপনদার ক্ষেত্রে ততটা হয়নি। স্বপনদা সুট-বুট পরা পরিচালক নন, একেবারে সাধারণ জামা, প্যান্ট, চটি পরা পরিচালক। ঘন ঘন পান খেতেন কিন্তু সিগারেট বা মদ্যপান করতে কখনও দেখিনি, শুনিওনি। ফলে পার্টি বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে (যেখানে মদ্যপান একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ) তার আগ্রহ ছিল না। সেটাও টিভি বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম থেকে তাঁকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছিল। কারণ এইসব ক্ষেত্রে উপস্থিত না থাকলে মিডিয়া জগতের অনেক তাবড় তাবড় ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ হওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হয়। যাঁদের গুড বুকে না থাকলে কেউ খবরের শিরোনামে আসতে পারেন না। সে আপনি একশোটা ছবি করুন বা একটা ছবি করুন। তবে শুধু মদ্যপান করতেন না বলেই যে পার্টিতে অনীহা ছিল, তা বললে হয়তো অসম্পূর্ণ ব্যাখ্যা হবে। মনে হয় ইংরেজিতে সাবলীল ছিলেন না বলে আনইজি ফিল করতেন, সহজভাবে সমাজের তাবড় তাবড় লোকের সঙ্গে মিশতে দ্বিধা বোধ করতেন।
আমার পরিষ্কার মনে আছে শ্রীভেঙ্কটেশ ফিল্মসের প্রথম ছবি ‘ভাই আমার ভাই’এর সাকসেস পার্টি। স্বপনদাকে নিয়ে সবার সীমাহীন উৎসাহ। পার্টি শুরুর আগে স্বপনদার বক্তব্য শোনার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছেন। স্বপনদা ডায়াসে এলেন। পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে লিখিত ভাষণ পাঠ করে দায় সারলেন। এহেন মানুষটাকে নিয়ে মিডিয়া কেন মাথা ঘামাবে? অথচ তাকে নিয়ে যে আমজনতার আগ্রহ ছিল না, তা কিন্তু নয়। অনেকেই জানে না (আমি জেনেছি তার অন্যতম সহকারী এবং কাছের মানুষ পুলিন হালদারের কাছ থেকে) তিনি যখন বাংলাদেশ থেকে এবার বাংলায় এসে ছবি তৈরির জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন, যখন তাকে কেউ চেনে না, তখন টেকনিশিয়ানস স্টুডিওতে ঢুকতে গিয়ে দারোয়ানের কাছে পদে পদে বাধা পেতেন। স্টুডিওর দারোয়ান নানুদা রাশভারী লোক ছিলেন। দেখলেই ভয় পাওয়ার মতো চেহারা ছিল তার। ঢুকতে গেলে হাজার কৈফিয়ত দিতে হত। সেই সময় নাকি স্বপনদা গেটের বাইরে ঠায় অপেক্ষা করতেন। কখন নানুদা একটু অন্যমনস্ক হবেন আর টুক করে লুকিয়ে ভেতরে ঢুকে যাবেন। বহুবার ধরা পড়ে থতমত খেতে হয়েছে। অনেকবার ঢুকতেও দেয়া হয়নি। অথচ পরবর্তীকালে সেই নানুদাই তাঁকে ঢুকতে বেরোতে স্যালুট জানাতেন। পুলিনদার মুখে শুনেছি, একটা সময় ছিল যখন তিনি সংসার চালানোর জন্য লোকের কাছে টাকা ধার করেছেন। কী অদ্ভুত ব্যাপার! অথচ পরে তাঁর পুণ্যে বহু টেকনিশিয়ান, কলাকুশলী সংসার চালাতে সক্ষম হয়েছেন।
বাংলা ছবির সুপারস্টার প্রসেনজিৎ নানান কারণে একসময় টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিলেন। সেই সময় স্বপনদাই তাঁকে নতুনভাবে ফিরিয়ে এনে দর্শকদের মনে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ভাই আমার ভাই, ঝিনুকমালা, অবুঝ মন, সখী তুমি কার, আদরের বোন, বকুল প্রিয়া। হিটের পর হিট। হিট-এর হ্যাটট্রিক করিয়েছেন তাঁকে দিয়ে। আজকের প্রসেনজিৎ হয়তো চিরতরে হারিয়ে যেতেন, যদি না সেইদিন স্বপন সাহা তার মাথায় হাত রাখতেন।
আমার পরিষ্কার মনে আছে শ্রীভেঙ্কটেশ ফিল্মসের প্রথম ছবি ‘ভাই আমার ভাই’এর সাকসেস পার্টি। স্বপনদাকে নিয়ে সবার সীমাহীন উৎসাহ। পার্টি শুরুর আগে স্বপনদার বক্তব্য শোনার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছেন। স্বপনদা ডায়াসে এলেন। পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে লিখিত ভাষণ পাঠ করে দায় সারলেন। এহেন মানুষটাকে নিয়ে মিডিয়া কেন মাথা ঘামাবে? অথচ তাকে নিয়ে যে আমজনতার আগ্রহ ছিল না, তা কিন্তু নয়। অনেকেই জানে না (আমি জেনেছি তার অন্যতম সহকারী এবং কাছের মানুষ পুলিন হালদারের কাছ থেকে) তিনি যখন বাংলাদেশ থেকে এবার বাংলায় এসে ছবি তৈরির জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন, যখন তাকে কেউ চেনে না, তখন টেকনিশিয়ানস স্টুডিওতে ঢুকতে গিয়ে দারোয়ানের কাছে পদে পদে বাধা পেতেন। স্টুডিওর দারোয়ান নানুদা রাশভারী লোক ছিলেন। দেখলেই ভয় পাওয়ার মতো চেহারা ছিল তার। ঢুকতে গেলে হাজার কৈফিয়ত দিতে হত। সেই সময় নাকি স্বপনদা গেটের বাইরে ঠায় অপেক্ষা করতেন। কখন নানুদা একটু অন্যমনস্ক হবেন আর টুক করে লুকিয়ে ভেতরে ঢুকে যাবেন। বহুবার ধরা পড়ে থতমত খেতে হয়েছে। অনেকবার ঢুকতেও দেয়া হয়নি। অথচ পরবর্তীকালে সেই নানুদাই তাঁকে ঢুকতে বেরোতে স্যালুট জানাতেন। পুলিনদার মুখে শুনেছি, একটা সময় ছিল যখন তিনি সংসার চালানোর জন্য লোকের কাছে টাকা ধার করেছেন। কী অদ্ভুত ব্যাপার! অথচ পরে তাঁর পুণ্যে বহু টেকনিশিয়ান, কলাকুশলী সংসার চালাতে সক্ষম হয়েছেন।
বাংলা ছবির সুপারস্টার প্রসেনজিৎ নানান কারণে একসময় টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিলেন। সেই সময় স্বপনদাই তাঁকে নতুনভাবে ফিরিয়ে এনে দর্শকদের মনে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ভাই আমার ভাই, ঝিনুকমালা, অবুঝ মন, সখী তুমি কার, আদরের বোন, বকুল প্রিয়া। হিটের পর হিট। হিট-এর হ্যাটট্রিক করিয়েছেন তাঁকে দিয়ে। আজকের প্রসেনজিৎ হয়তো চিরতরে হারিয়ে যেতেন, যদি না সেইদিন স্বপন সাহা তার মাথায় হাত রাখতেন।