শুক্রবার ২ মে, ২০২৫


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

অমলেন্দু এরকম ছিল না। মানে পরে যেমন হয়ে গিয়েছিল সন্দেহবাতিক, খিটখিটে, অকারণে অস্থির! ছেলেবেলায় স্বার্থপর ছিল, হিংসুটে ছিল! সমবয়েসীদের মধ্যে পরস্পরের একটা চাপা প্রতিযোগিতা থাকে কারও কম, কারও বেশি, কারও বা থাকেই না। শেষেরজনেরা ছোটবেলা থেকেই বিন্দাস! কমবয়সেই জীবনের সারাৎসার বুঝে ফেলে। ঈশ্বর, আল্লাহ, গড যাকেই মানো বা না মানো, পুজোপাঠে বিশ্বাস না রাখো, ভাগ্যে বিশ্বাস না রাখো। ভাগ্যকে ঘুরিয়ে অপরচ্যুনিটি বা কানেকশনস যে নামে ইচ্ছে ডাকো, তোমার প্রাপ্তি স্থির হয়ে আছে! কী পাবে কতটুকু পাবে, কী রেখে যাবে বা যাবে না! সাঙ্ঘাতিক উদ্যোগী হয়ে প্রাপ্তির সংখ্যার সামান্য হেরফের করতে পারো সেটা উনিশ-বিশ! চমকে দেওয়ার মতো তফাৎ খুব একটা হবে না! যাদের চমকে দেওয়া ভাগ্য তাদের যোগাযোগ ঘটবে, মুঠো করে ধুলো তুললে সোনা হয়ে পড়বে। সামান্য সাফল্য অসামান্য সম্মান পাবে। কিন্তু সে মানুষটার সুখশান্তির ভাঁড়ার ভরবে কিনা সেটা বলা শক্ত, অর্থ-প্রতিপত্তি আর সুখশান্তি একরাস্তায় আসে না। ইস্কুলে পড়া ভরের নিত্যতা সূত্রের নিয়ম মেনে দাঁড়িপাল্লার একদিক উঠলে অন্যদিক নেমে যাবে।
অমলেন্দু’র মধ্যে একটা তুলনামূলক হিংসে কাজ করতো, শুদ্ধ আভিধানিক বাংলায় যাকে মাৎসর্য্য বলে এটা অন্যের ভালো দেখতে না পারা, অন্যের প্রাচুর্য সহ্য করতে না পারা। পাশের বাড়ির এক বন্ধু মাধ্যমিকের ফার্স্টডিভিশনে পাশ করেছিল অমলেন্দু সেকেন্ডডিভিশন। সেকেন্ডডিভিশনের দুঃখ নয়, লাগোয়া বাড়ির সেই ছেলেটির ফার্স্ট ডিভিশনের দুঃখে বুক ফেটে সারা রাত কেঁদেছিল অমলেন্দু। গ্রাজুয়েট হওয়ার পরে কিন্তু অনেককে টপকে গিয়ে অমলেন্দু চাকরিটা প্রথমেই পেয়ে গিয়েছিল। সেটা তাকে ঠিক কতটা আনন্দ দিয়েছিল তা বলে বোঝানো যাবে না। ইন্ডিয়ান রেলওয়েজে চাকরি পেল। ইস্টার্ন রেলওয়ে হেড অফিস ফেয়ারলি প্রেসের টিকিট কাউন্টারে চাকরি। কম্পিউটার সেভাবে চালু হয়নি, ম্যানুয়ালি ফর্ম ভর্তি করে কাকভোর থেকে গাদাগাদি লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিটকাটার সময় সেটা। ট্রাভেলএজেন্টদের দালাল টিকিটের লাইনের দালালদের দৌরাত্ম্য। টিকিটবাবুদের উপরি আয়ের রাস্তা। অমলেন্দু এসব ঝামেলার মধ্যে ছিল না। সে মাগনা টিফিন বা টাকার খাম নিতো না, তার বদলে যাদের এসবের লোভ ছিল তাদের হাতে কাউন্টার ছেড়ে সে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যেত।
আরও পড়ুন:

হ্যালো বাবু! পর্ব-৭৯: গুগলি/১৪

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৪৮: রান্নার জ্বালানি নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ?

কথায় বলে লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। একদিন দুদিন নয় প্রায় নিয়মিত কাজ না করে কাজের সময় অফিস পালানোটাও তো একটা লোভ আর সেই লোভ জমে জমে পাপ! কর্তা বদলালে নিয়ম বদলায় একবার আচমকা কাউন্টার ধরে ধরে হঠাৎ ক্যাশ কালেকশনের অডিট হল! ব্যাংক হোক রেলের টিকিট হোক ক্যাশ কাউন্টারে চাকরির একটা নিয়ম হল ক্যাশ মিলিয়ে সই করে দেওয়া। অমলেন্দুকে পরের দিন এসে আগের দিনের সইটা করতে হতো। কারন সে তো আর দিনের শেষ পর্যন্ত ক্যাশে বসত না, যারা মাগনা টিফিন চা বা খামে টাকা নিতো তারা বসতো অমলেন্দুর বদলে।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৭: পাতি সরালি

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৬: মা সারদার প্রথম মন্ত্রশিষ্যা ছিলেন দুর্গাপুরীদেবী

আচমকা অডিট হতে এক ঢিলে দুই পাখি মরল। কাজের জায়গায় অমলেন্দু নেই সেটা ধরা পড়ল সঙ্গে ক্যাশ মেলাতে গিয়ে একটা বড় টাকার গরমিল নজরে চলে এল। সরকারি চাকরি তাই দুম করে সাংঘাতিক কিছু ঘটল না, ইউনিয়নের হর্তাকর্তারা বুঝলেন যে অফিসফাঁকি দেওয়া ছাড়া, টাকা তছরূপের কোন অসৎ উদ্দেশ্য অমলেন্দুর ছিল না। তাদের মধ্যস্থতায় অমলেন্দু মেমো খেলো, প্রমোশনের পাকা ঘুঁটি কাটা পড়ল, কাউন্টার থেকে তার বদলি হল ডেস্প্যাচে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১২: প্রশাসক রামচন্দ্রের সাফল্য কী আধুনিক কর্মব্যস্ত জীবনে সফল প্রশাসকদের আলোর দিশা হতে পারে?

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৫: সর্বত্র বরফ, কোত্থাও কেউ নেই, একেবারে গা ছমছম করা পরিবেশ

এর কিছুদিন বাদেই অমলেন্দুর বিয়ে, বাড়ি থেকে সম্বন্ধে দেখা হচ্ছে। কয়েকটা সম্বন্ধ মোটামুটি পাকা হবার দিকে। সম্বন্ধ করে বিয়ে হলে তো পাত্রীপক্ষ পাত্রের খোঁজখবর নেবেই, তেমনি পাত্রপক্ষও পাত্রীর খোঁজ খবর নেয়। ক্যাশকাউন্টারে ওই টাকার গরমিলের ঘটনাটার পর থেকে অমলেন্দুর ব্যবহারে চরিত্রে একটা অদ্ভুত পরিবর্তন শুরু হল। সে এখন কাউকে আর বিশ্বাস করতে চায় না। উল্টে সকলকেই সন্দেহ করতে থাকে। তার মনে হয় আশপাশের সকলেই তার ক্ষতি করতে চায়! ঠিক এমন সময় অমলেন্দু জানতে পারলো দু’জন মাঝবয়েসী ভদ্রলোক তার সম্বন্ধে অফিসের নানা জায়গায় খোঁজখবর করছেন। ফেয়ারলি প্লেস অফিসের বাইরে অমলেন্দু গিয়ে লোকদুটিকে চেপে ধরল। জানা গেল, তারা বৈদ্যবাটির পাত্রীপক্ষ।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৯: সে এক স্বপ্নের ‘চাওয়া পাওয়া’

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭৭: পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যাঁর জীবনের আকাশে কখনও শত্রুতার মেঘ জমেনি

পাত্রী একটু মোটাসোটা হলেও শেষ কথাবার্তা অনুযায়ী তারা পাত্রকে দেবেথোবে অনেক। কিছুদিন আগে এই অমলেন্দুরই এক স্কুলপড়ুয়া বন্ধুর বিয়ে হয়েছে এক বিরাট ব্যবসায়ীর একমাত্র মেয়ের সঙ্গে। সে ছেলে প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করে অমলেন্দুর মতো সরকারি চাকরি নয়। তবু তাকে ঘর সাজিয়ে দিয়েছে নগদে সোনার গয়নায় ভরিয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ী শ্বশুরমশাই। তারপরেই অমলেন্দু ঠিক করেছিল তার সরকারি চাকরির দামটা হবু শ্বশুরবাড়ি থেকে তুলে নেবে। বদ্যিবাটির এই পাত্রীপক্ষ শতকরা ৯০ ভাগ রাজি হয়েছিলেন। দশভাগের সন্দেহ নিরসন করতে সরাসরি অফিসে এসে চাকরি মাইনে উন্নতি এসবের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। রাস্তায় দাঁড়িয়েই তুমুল ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ল অমলেন্দু। আশেপাশে যাওয়া-আসা অফিসেরই লোকজনের কাছে সে যে পরে এটা নিয়ে সে মুরগি হবে সেটা অমলেন্দু একবারও ভাবলো না! —চলবে।
 

অমলেন্দু পাল মৃত্যুরহস্য। পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ০৮ মে ২০২৫।

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content