ছবি: প্রতীকী।
গঙ্গাকূলে রাত্রি যাপন করে ভোরবেলায় শত্রুঘ্নকে তাড়া দিলেন ভরত, শত্রুঘ্ন ওঠ, মঙ্গল হোক তোমার। নিষাদরাজকে দ্রুত ডেকে আন, তিনি সৈন্যবাহিনীকে নদী পার করিয়ে দেবেন। শত্রুঘ্নোত্তিষ্ঠ কিং শেষে নিষাদাধিপতিং গুহম্। শীঘ্রমানয় ভদ্রং তে তারয়িষ্যতি বাহিনীম্।। শত্রুঘ্ন জানালেন, ভরতের মতো তিনিও রামচন্দ্রের চিন্তায় সারা রাত জেগে রয়েছেন। ইতিমধ্যে গুহ উপস্থিত হলেন। কুশল সংবাদ বিনিময়ের পরে নিষাদপতি গুহ, ভরতের অনুরোধে, নিজের জ্ঞাতিবর্গকে ভরতের সৈন্যদলের গঙ্গা পারাপারের জন্যে নৌবহরের ব্যবস্থাপনার আদেশ দিলেন। জ্ঞাতিরা পাঁচশত নৌকা আনলেন। এ ছাড়াও, বিশাল ঘণ্টাযুক্ত, পতাকাশোভিত, সুগঠিত, সুনাবিকচালিত, পাণ্ডুকম্বলাচ্ছাদিত, সুন্দর বাদ্যধ্বনিসমন্বিত, স্বস্তিক নামের রাজাদের বহনযোগ্য মাঙ্গলিক তরণী, গুহ উপহার দিলেন। সেই নৌকায় ভরত, শত্রুঘ্ন, কৌশল্যা, সুমিত্রা ও অন্যান্য রাজপত্নীরা, পুরোহিত বশিষ্ঠ, গুরুগণ, অন্যান্য ব্রাহ্মণগণ আরোহণ করলেন। পণ্যদ্রব্য ও শকটগুলি অন্য নৌকাগুলিতে রাখা হল। সৈন্যরা কেউ তীর্থস্নানরত, কেউ নৌকায় আরোহণে ব্যস্ত, কেউ বা তৎপর প্রয়োজনীয় দ্রব্যসংগ্রহে।
সব মিলিয়ে সেখানে এক গগনস্পর্শী মহাকোলাহল সৃষ্টি হল। পতাকাযুক্ত নৌকায় চলল দাসেরা। আরোহীদের নিয়ে দ্রুত ছুটল নৌকা। কোনও তরণী মহিলাপূর্ণ, কোনটায় রইল উত্তম ঘোড়া, কোনও নৌকা যানবাহনপূর্ণ হল। সেই মানুষগুলিকে অপর পারে পৌঁছে দিয়ে গুহবন্ধু দাশেরা শূন্য নৌকাগুলিকে খেলার সামগ্রী করে তুলল। মাহুতচালিত হাতির দল সাঁতরে পার হল নদী, তাদের দেখে, মনে হল পাখায় ভর করে যেন ধাবমান পর্বত চলেছে। কেউ নৌকায়, কেউ বাঁশ ও তৃণনির্মিত ভেলায় চড়ে, কেউ বা কলসী ও ঘটের সাহায্যে,কেউ হাত দিয়ে সাঁতরে নদী পার হলেন।ভরতের সজ্জিত বাহিনী এইভাবে পুণ্যতোয়া গঙ্গা অতিক্রম করে মৈত্র মুহূর্তে পবিত্র প্রয়াগ বনভূমির উদ্দেশে যাত্রা করল। মহান ভরত, সৈন্যদলকে আশ্বস্ত করে, তাদের প্রতি যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে, ঋষির ভরদ্বাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চললেন। মহাত্মা ভরত, দেব পুরোহিত দ্বিজবরের আশ্রমের নিকটে উপস্থিত হয়ে, সুরম্য পর্ণ কুটির, তরুরাজিসমাকীর্ণ বিশাল রমণীয় বন দেখতে পেলেন।
মহর্ষি ভরদ্বাজের আশ্রমে প্রবেশ করবেন ভরত। তাঁর রাজকীয় সৈন্যদল যেন আশ্রমবাসীদের কোনও অসুবিধের কারণ না হয়, তাই ভরত তাদের এক ক্রোশ দূরে রাখলেন। শস্ত্র ও রাজকীয় পরিচ্ছদহীন, ধার্মিক, ভরত, অঙ্গে ক্ষৌমবস্ত্র পরিধান করে, সমন্ত্রী পদব্রজে পুরোহিতকে সম্মুখে রেখে, পৌঁছলেন মহর্ষি ভরদ্বাজের আশ্রমে। মহাতপস্বী ভরদ্বাজ ইতিমধ্যে বশিষ্ঠমুনিসহ ভরতের অভ্যর্থনার আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। ভরত ও বশিষ্ঠ মহর্ষি ভরদ্বাজকে অভিবাদন করলেন। মহাতেজস্বী ভরদ্বাজ, ভরতকে দর্শনমাত্র তাঁকে দশরথপুত্র বলে চিনতে পারলেন। ঋষি ভরদ্বাজ, অযোধ্যার রাজপরিবার ও রাজার অনুষঙ্গের সবকিছুর অনুপুঙ্খ কুশল সংবাদ জেনে নিলেন।
সব মিলিয়ে সেখানে এক গগনস্পর্শী মহাকোলাহল সৃষ্টি হল। পতাকাযুক্ত নৌকায় চলল দাসেরা। আরোহীদের নিয়ে দ্রুত ছুটল নৌকা। কোনও তরণী মহিলাপূর্ণ, কোনটায় রইল উত্তম ঘোড়া, কোনও নৌকা যানবাহনপূর্ণ হল। সেই মানুষগুলিকে অপর পারে পৌঁছে দিয়ে গুহবন্ধু দাশেরা শূন্য নৌকাগুলিকে খেলার সামগ্রী করে তুলল। মাহুতচালিত হাতির দল সাঁতরে পার হল নদী, তাদের দেখে, মনে হল পাখায় ভর করে যেন ধাবমান পর্বত চলেছে। কেউ নৌকায়, কেউ বাঁশ ও তৃণনির্মিত ভেলায় চড়ে, কেউ বা কলসী ও ঘটের সাহায্যে,কেউ হাত দিয়ে সাঁতরে নদী পার হলেন।ভরতের সজ্জিত বাহিনী এইভাবে পুণ্যতোয়া গঙ্গা অতিক্রম করে মৈত্র মুহূর্তে পবিত্র প্রয়াগ বনভূমির উদ্দেশে যাত্রা করল। মহান ভরত, সৈন্যদলকে আশ্বস্ত করে, তাদের প্রতি যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে, ঋষির ভরদ্বাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চললেন। মহাত্মা ভরত, দেব পুরোহিত দ্বিজবরের আশ্রমের নিকটে উপস্থিত হয়ে, সুরম্য পর্ণ কুটির, তরুরাজিসমাকীর্ণ বিশাল রমণীয় বন দেখতে পেলেন।
মহর্ষি ভরদ্বাজের আশ্রমে প্রবেশ করবেন ভরত। তাঁর রাজকীয় সৈন্যদল যেন আশ্রমবাসীদের কোনও অসুবিধের কারণ না হয়, তাই ভরত তাদের এক ক্রোশ দূরে রাখলেন। শস্ত্র ও রাজকীয় পরিচ্ছদহীন, ধার্মিক, ভরত, অঙ্গে ক্ষৌমবস্ত্র পরিধান করে, সমন্ত্রী পদব্রজে পুরোহিতকে সম্মুখে রেখে, পৌঁছলেন মহর্ষি ভরদ্বাজের আশ্রমে। মহাতপস্বী ভরদ্বাজ ইতিমধ্যে বশিষ্ঠমুনিসহ ভরতের অভ্যর্থনার আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। ভরত ও বশিষ্ঠ মহর্ষি ভরদ্বাজকে অভিবাদন করলেন। মহাতেজস্বী ভরদ্বাজ, ভরতকে দর্শনমাত্র তাঁকে দশরথপুত্র বলে চিনতে পারলেন। ঋষি ভরদ্বাজ, অযোধ্যার রাজপরিবার ও রাজার অনুষঙ্গের সবকিছুর অনুপুঙ্খ কুশল সংবাদ জেনে নিলেন।
রাজা দশরথ ইতিমধ্যে গত হয়েছেন, তাই তাঁর বিষয়ে তিনি নীরব রইলেন। ভরত ও বশিষ্ঠ মুনি, মহর্ষি ভরদ্বাজের শারীরিক সুস্থতা এবং আশ্রমের পারিপার্শ্বিকের সব কিছু স্বাভাবিক অবস্থায় যথোচিত আছে কি না জেনে নিলেন। রাঘব রামের প্রতি স্নেহবশত হয়তো তাঁর নিরাপত্তাবিষয়ে, আশঙ্কিত মনে, ভরদ্বাজ ঋষি, ভরতকে সন্দিগ্ধ প্রশ্ন করলেন, কিমিহাগমনে কার্য্যং তব রাজ্যং প্রশাসতঃ। এতদাচক্ষ্ব সর্ব্বং মে ন হি মে শুধ্যতে মনঃ।। রাজ্যশাসনকালীন তোমার এখানে আগমনের কারণ কী? সবটাই বল, আমার মনে সন্দেহ দূর হচ্ছে না। ঋষি আরও জানালেন, স্ত্রীর কারণে পিতা আদেশে দিয়েছিলেন, বনবাসী ভবেতীহ সমাঃ কিল চতুর্দশ। চতুর্দশ বছর বনবাসী হও। পিতার আদেশে, ওই মহাযশস্বী কৌশল্যানন্দন, রাম, পত্নী ও ভাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন বনবাসী হয়েছেন। নিষ্কণ্টক রাজ্যভোগের জন্য সহানুজ ভরত সেই নিষ্পাপ রামের এখানে কোনও ক্ষতি করতে ইচ্ছুক নন তো? কচ্চিন্ন তস্যাপাপস্য পাপং কর্ত্তুমিহেচ্ছসি। অকণ্টকং ভোক্তুমনা রাজ্যং তস্যানুজস্য চ।। অশ্রু বাঁধ মানল না, দুঃখভরা কণ্ঠে ভরত প্রত্যুত্তর দিলেন, ভগবান, আপনি যদি এমন মনে করেন তাহলে হায় আমার মরণ হল আজ। হতোঽস্মি যদি মামেবং ভগবানপি মন্যতে। ভরত জানালেন,তাঁর তরফে কোনও দোষের সম্ভাবনা নেই।
ভরতের অনুপস্থিতিতে, জননী যা বলেছিলেন, ভরতের অগোচরে সব ঘটেছে। ভরত ধিক্কার দিয়ে বললেন, তিনি নিজে এ বিষয়ে অসন্তুষ্ট হয়েছেন এবং সেই নির্দেশ পালন করেননি। ভরত তাঁর সদিচ্ছার কথা জানালেন। ভরত সেই নরব্যাঘ্র রামকে প্রসন্ন করে তাঁকে ফিরিয়ে নিতে চলেছেন। রামের পদযুগল বন্দনা করে, তাঁকে অযোধ্যায় ফিরিয়ে নিতে এসেছেন। ভরতের সদভিপ্রায় জেনে, প্রসন্ন হন ঋষি। অনুগ্রহ করে, সম্প্রতি মহামতি রাম কোথায় আছেন, তিনি জানান। বশিষ্ঠ প্রভৃতি ঋষির স্তুতিসহ প্রার্থনায় এবং ভরতের প্রতি প্রীত হয়ে, মহর্ষি ভরদ্বাজ বললেন, পুরুষব্যাঘ্র ভরত রঘুকুলজাত। তাই ভরতের উপযুক্ত কথাই ভরত বলেছেন। গুরুজনের সঙ্গে মতৈক্য, সংযম, সদ্ব্যক্তির অনুসরণ এই চারিত্রিক গুণগুলি ভরতকেই শোভা পায়। ভরতের মনোগত অভিপ্রায় ঋষি ভরদ্বাজ, অবগত হলেও সেই সিদ্ধান্ত দৃঢ় কি না, জানা প্রয়োজন। ভরতের কীর্তিবৃদ্ধির লক্ষ্যেও ঋষির এই জিজ্ঞাসা। ঋষিপ্রবর জানালেন, সীতা ও লক্ষ্মণের সঙ্গে ধর্মজ্ঞ রামের সংবাদ তিনি জানেন। তোমার এই ভাই মহাপর্বত চিত্রকূটে বসবাস করছেন। অয়ং বসতি তে ভ্রাতা চিত্রকূটে মহাগিরৌ। তিনি বললেন, আগামীকাল সেখানে যাওয়াই ভালো। ঋষির অনুরোধ,আজ মন্ত্রীদের সঙ্গে ভরত যেন এখানে অবস্থান করেন। প্রার্থিত উদ্দেশ্য পূরণ করেন যিনি, সেই ভরত যেন এই বাঞ্ছিত কামনা পূর্ণ করেন। তখন উদারমনা, মূর্তিমান আনন্দরূপ, ভরত বললেন, ‘স্তথেতি’ তাই হোক। রাজকুমার ভরত স্থির করলেন, সেই আশ্রমেই তিনি রাত্রিবাস করবেন।
ভরতের অনুপস্থিতিতে, জননী যা বলেছিলেন, ভরতের অগোচরে সব ঘটেছে। ভরত ধিক্কার দিয়ে বললেন, তিনি নিজে এ বিষয়ে অসন্তুষ্ট হয়েছেন এবং সেই নির্দেশ পালন করেননি। ভরত তাঁর সদিচ্ছার কথা জানালেন। ভরত সেই নরব্যাঘ্র রামকে প্রসন্ন করে তাঁকে ফিরিয়ে নিতে চলেছেন। রামের পদযুগল বন্দনা করে, তাঁকে অযোধ্যায় ফিরিয়ে নিতে এসেছেন। ভরতের সদভিপ্রায় জেনে, প্রসন্ন হন ঋষি। অনুগ্রহ করে, সম্প্রতি মহামতি রাম কোথায় আছেন, তিনি জানান। বশিষ্ঠ প্রভৃতি ঋষির স্তুতিসহ প্রার্থনায় এবং ভরতের প্রতি প্রীত হয়ে, মহর্ষি ভরদ্বাজ বললেন, পুরুষব্যাঘ্র ভরত রঘুকুলজাত। তাই ভরতের উপযুক্ত কথাই ভরত বলেছেন। গুরুজনের সঙ্গে মতৈক্য, সংযম, সদ্ব্যক্তির অনুসরণ এই চারিত্রিক গুণগুলি ভরতকেই শোভা পায়। ভরতের মনোগত অভিপ্রায় ঋষি ভরদ্বাজ, অবগত হলেও সেই সিদ্ধান্ত দৃঢ় কি না, জানা প্রয়োজন। ভরতের কীর্তিবৃদ্ধির লক্ষ্যেও ঋষির এই জিজ্ঞাসা। ঋষিপ্রবর জানালেন, সীতা ও লক্ষ্মণের সঙ্গে ধর্মজ্ঞ রামের সংবাদ তিনি জানেন। তোমার এই ভাই মহাপর্বত চিত্রকূটে বসবাস করছেন। অয়ং বসতি তে ভ্রাতা চিত্রকূটে মহাগিরৌ। তিনি বললেন, আগামীকাল সেখানে যাওয়াই ভালো। ঋষির অনুরোধ,আজ মন্ত্রীদের সঙ্গে ভরত যেন এখানে অবস্থান করেন। প্রার্থিত উদ্দেশ্য পূরণ করেন যিনি, সেই ভরত যেন এই বাঞ্ছিত কামনা পূর্ণ করেন। তখন উদারমনা, মূর্তিমান আনন্দরূপ, ভরত বললেন, ‘স্তথেতি’ তাই হোক। রাজকুমার ভরত স্থির করলেন, সেই আশ্রমেই তিনি রাত্রিবাস করবেন।
আরও পড়ুন:
প্রজাতন্ত্র
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৯: কী ছিল চিঠিতে, উত্তর লিখতে গিয়ে উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের হাত কেঁপেছিল
মহর্ষি ভরদ্বাজ, তাঁকে আতিথ্যগ্রহণের আমন্ত্রণ জানালেন। দরিদ্র আশ্রমবাসী মহর্ষির আতিথিসৎকারের সামর্থ্য আছে কি না, এ বিষয়ে হয়তো ভরতের সন্দেহ আছে, সেই দ্বিধা দূর করলেন মহর্ষি ভরদ্বাজ। তিনি জানেন, প্রীতিময় ভরত, যে কোনও অল্প বস্তুতেই সন্তুষ্ট। ঋষি ভরদ্বাজ ভরতের সৈন্যবাহিনীকে ভোজনদানে আপ্যায়িত করতে ইচ্ছুক। ভরত যেন সেই ইচ্ছা পূরণ করেন। ভরত সৈন্যবাহিনীকে দূরে রেখে এসেছেন কেন? ভরত জানালেন, আশ্রমের তপস্বীদের পরিহার করাই সেনাবাহিনীর কর্তব্য। ভরতের বাহিনীর অনুগমনরত, সেনারা এবং শ্রেষ্ঠ ঘোড়া ও মত্ত বলশালী হাতিগুলি, পাছে আশ্রমতরু, জল, ভূমি, কুটিরগুলি নষ্ট করে,সেই আশঙ্কায় ভরতের এই সিদ্ধান্ত। ঋষির অনুমতিক্রমে সৈন্যদের আনা হল। অগ্নিশালায় প্রবেশ করে, ভরদ্বাজ ঋষি বিশ্বকর্মাকে আহ্বান করে, কারণ জানালেন। অতিথিসৎকারের জন্য বিশ্বকর্মার প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যে, মহর্ষি আহ্বান জানালেন, ইন্দ্র, বরুণ, কুবের প্রমুখ লোকপালদের।
পূব ও পশ্চিমবাহিনী নদীগুলিকে একযোগে মৈরেয় সুরা,সুপানীয় মদ্য, শীতল ইক্ষুরসতুল্য সুমিষ্ট জল বহনের জন্য, আহ্বান জানালেন মহর্ষি ভরদ্বাজ। বিশ্বাবসু,হাহা-হূহূ প্রভৃতি দেবগন্ধর্ব এবং ঘৃতাচী, বিশ্বাচী, মিশ্রকেশী, অলম্বুষা, নাগদত্তা, হেমাপ্রভৃতি অপ্সরারা যাঁরা ইন্দ্র ও ব্রহ্মার সেবা করেন সেই সুবেশা অলঙ্কৃতা অপ্সরাগণ তুম্বুরার সঙ্গে আহূত হলেন। ভরদ্বাজ ঋষি প্রার্থনা জানালেন, উত্তর কুরুদেশে কুবেরের দিব্য ফল ও ফুলের যে উদ্যান আছে সেই ফলফুলে সজ্জিত হোক আশ্রমের উদ্যান। ভগবান সোমদেব যেন ভক্ষ্য,ভোজ্য,চূষ্য ও লেহ্য ইত্যাদি বিবিধ বিচিত্র অন্ন প্রস্তুত করেন। তরুচ্যুত বিবিধ মাল্য, পানযোগ্য সুরা, বিবিধ মাংস প্রস্তুত হোক। পূর্বমুখে প্রার্থনারত অনন্য তেজস্বী মহামুনি ভরদ্বাজের বার বার আন্তরিক প্রার্থনায় সাড়া দিলেন দেবতারা।
মলয় ও দর্দ্দুর পর্বত থেকে স্বেদহর, শীতল, বাতাস বইতে লাগল। মেঘেরা দিব্য কুসুম বর্ষণ করলেন, দেবদুন্দুভিধ্বনি শ্রুতিগোচর হল। অপ্সরাগণ নৃত্য এবং দেবতা ও গন্ধর্বরা সঙ্গীত শুরু করলেন। বীণাবাদ্যর ষড়জ স্বরের ঝঙ্কার বিস্তৃত হল সর্বত্র। ভূমিতে, অন্তরীক্ষলোকে এবং প্রাণীদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করল সেই ধ্বনি। ভরতের সেনারা বিশ্বকর্মার নির্মাণকৌশল দেখলেন। দেখলেন, চারিদিকে পঞ্চ যোজনব্যাপী সমভূমি বৈদূর্যমণিসম সবুজ তৃণে আচ্ছাদিত। সেখানে রয়েছে, ফলন্ত বেল, কপিত্থ, কাঁঠাল, বীজপূরক, আমলকী ও আমগাছগুলি। সেখানে উপস্থিত হয়েছে, উত্তর কুরুদেশ থেকে, দিব্য উপভোগ্য অরণ্যানি ও তীরস্থ বহুতরুরাজিসমন্বিত নদী। কোথাও শুভ্রবর্ণের চতুঃশালা, কোথাও গজশালা ও অশ্বশালা, কোথাও বা সুন্দর তোরণযুক্ত মেঘসদৃশ রম্য প্রাসাদ। সব ভবন মালা দিয়ে সজ্জিত, দিব্যগন্ধে সমাচ্ছন্ন।
সেখানে প্রতিটি গৃহ সুপরিমিত চতুষ্কোণ, সব কটি গৃহ, শয্যা আসন ও বাহন (শিবিকা) বিশিষ্ট। সেখানে সবরকম পানীয়, দিব্য ভোজ্যদ্রব্য, পরিষ্কার বস্ত্রানুষঙ্গ, উত্তমান্ন প্রস্তুত। সব পাত্র নির্মল ও পরিষ্কার, আসনবিছান রয়েছে সব ঘরে, শয্যা আস্তীর্ণ, অতি রমণীয় সেই ভবন। কৈকেয়ীপুত্র ভরত, মহর্ষির অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলেন সেই রত্নমণ্ডিত গৃহে। তাঁর অনুগমন করলেন মন্ত্রীগণ, পুরোহিত। গৃহের আয়োজন দেখে আনন্দিত হলেন ভরত। দিব্য ছত্রচামরযুক্ত প্রস্তুত রাজাসন সসম্মানে প্রদক্ষিণ করলেন সমন্ত্রী দশরথপুত্র ভরত, ওই সিংহাসনের যোগ্য অধীশ্বর রামচন্দ্র। তাঁকে স্মরণ করে প্রণাম নিবেদন করলেন তিনি। কুমার ভরত চামর হাতে নিয়ে মন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট আসন গ্রহণ করলেন।
পূব ও পশ্চিমবাহিনী নদীগুলিকে একযোগে মৈরেয় সুরা,সুপানীয় মদ্য, শীতল ইক্ষুরসতুল্য সুমিষ্ট জল বহনের জন্য, আহ্বান জানালেন মহর্ষি ভরদ্বাজ। বিশ্বাবসু,হাহা-হূহূ প্রভৃতি দেবগন্ধর্ব এবং ঘৃতাচী, বিশ্বাচী, মিশ্রকেশী, অলম্বুষা, নাগদত্তা, হেমাপ্রভৃতি অপ্সরারা যাঁরা ইন্দ্র ও ব্রহ্মার সেবা করেন সেই সুবেশা অলঙ্কৃতা অপ্সরাগণ তুম্বুরার সঙ্গে আহূত হলেন। ভরদ্বাজ ঋষি প্রার্থনা জানালেন, উত্তর কুরুদেশে কুবেরের দিব্য ফল ও ফুলের যে উদ্যান আছে সেই ফলফুলে সজ্জিত হোক আশ্রমের উদ্যান। ভগবান সোমদেব যেন ভক্ষ্য,ভোজ্য,চূষ্য ও লেহ্য ইত্যাদি বিবিধ বিচিত্র অন্ন প্রস্তুত করেন। তরুচ্যুত বিবিধ মাল্য, পানযোগ্য সুরা, বিবিধ মাংস প্রস্তুত হোক। পূর্বমুখে প্রার্থনারত অনন্য তেজস্বী মহামুনি ভরদ্বাজের বার বার আন্তরিক প্রার্থনায় সাড়া দিলেন দেবতারা।
মলয় ও দর্দ্দুর পর্বত থেকে স্বেদহর, শীতল, বাতাস বইতে লাগল। মেঘেরা দিব্য কুসুম বর্ষণ করলেন, দেবদুন্দুভিধ্বনি শ্রুতিগোচর হল। অপ্সরাগণ নৃত্য এবং দেবতা ও গন্ধর্বরা সঙ্গীত শুরু করলেন। বীণাবাদ্যর ষড়জ স্বরের ঝঙ্কার বিস্তৃত হল সর্বত্র। ভূমিতে, অন্তরীক্ষলোকে এবং প্রাণীদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করল সেই ধ্বনি। ভরতের সেনারা বিশ্বকর্মার নির্মাণকৌশল দেখলেন। দেখলেন, চারিদিকে পঞ্চ যোজনব্যাপী সমভূমি বৈদূর্যমণিসম সবুজ তৃণে আচ্ছাদিত। সেখানে রয়েছে, ফলন্ত বেল, কপিত্থ, কাঁঠাল, বীজপূরক, আমলকী ও আমগাছগুলি। সেখানে উপস্থিত হয়েছে, উত্তর কুরুদেশ থেকে, দিব্য উপভোগ্য অরণ্যানি ও তীরস্থ বহুতরুরাজিসমন্বিত নদী। কোথাও শুভ্রবর্ণের চতুঃশালা, কোথাও গজশালা ও অশ্বশালা, কোথাও বা সুন্দর তোরণযুক্ত মেঘসদৃশ রম্য প্রাসাদ। সব ভবন মালা দিয়ে সজ্জিত, দিব্যগন্ধে সমাচ্ছন্ন।
সেখানে প্রতিটি গৃহ সুপরিমিত চতুষ্কোণ, সব কটি গৃহ, শয্যা আসন ও বাহন (শিবিকা) বিশিষ্ট। সেখানে সবরকম পানীয়, দিব্য ভোজ্যদ্রব্য, পরিষ্কার বস্ত্রানুষঙ্গ, উত্তমান্ন প্রস্তুত। সব পাত্র নির্মল ও পরিষ্কার, আসনবিছান রয়েছে সব ঘরে, শয্যা আস্তীর্ণ, অতি রমণীয় সেই ভবন। কৈকেয়ীপুত্র ভরত, মহর্ষির অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলেন সেই রত্নমণ্ডিত গৃহে। তাঁর অনুগমন করলেন মন্ত্রীগণ, পুরোহিত। গৃহের আয়োজন দেখে আনন্দিত হলেন ভরত। দিব্য ছত্রচামরযুক্ত প্রস্তুত রাজাসন সসম্মানে প্রদক্ষিণ করলেন সমন্ত্রী দশরথপুত্র ভরত, ওই সিংহাসনের যোগ্য অধীশ্বর রামচন্দ্র। তাঁকে স্মরণ করে প্রণাম নিবেদন করলেন তিনি। কুমার ভরত চামর হাতে নিয়ে মন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট আসন গ্রহণ করলেন।
আরও পড়ুন:
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৫: সুন্দরবনের পাখি — মাছরাঙা
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৮: প্রতিভা দেবী—ঠাকুরবাড়ির সরস্বতী
সচিব, পুরোহিত, সেনাপতি, সেনাধ্যক্ষগণ যথা নির্দিষ্ট আসনে উপবেশনের পরে, ভরদ্বাজ মুনির অনুমতিক্রমে সেখানে দৃশ্যমান হল পায়েসের পাঁকে ভরা নদীগুলি। নদীগুলির দুকূল জুড়ে রয়েছে পাণ্ডুরবর্ণের মৃত্তিকা, ঋষি ভরদ্বাজের অনুগ্রহে, সেখানে গড়ে উঠল রমণীয় দিব্য গৃহ। ব্রহ্মা প্রেরণ করলেন দিব্য অলঙ্কারে বিভূষিতা বিশ সহস্র নারী, কুবের পাঠিয়েছেন, স্বর্ণমণিযু্ক্ত প্রবালে সজ্জিতা বিশ সহস্র রমণী। যাদের সংস্পর্শে পুরুষ উন্মাদপ্রায় হয়ে ওঠে তেমনই বিশ সহস্র অপ্সরা, নন্দনকানন হতে উপস্থিত হলেন। নারদ, তম্বুর, গোপ প্রভৃতি সূর্যসম কিরণময় গন্ধর্বরাজগণ সংগীত শুরু করলেন। অলম্বুষা, মিশ্রকেশী, পুণ্ডরীকা ও বামনা প্রভৃতি অপ্সরারা নৃত্য আরম্ভ করলেন।
মহর্ষি ভরদ্বাজের তেজের প্রভাবে, সুরলোকে ও কুবেরের চৈত্ররথবনে যে মালাগুলি ছিল সেগুলিই প্রয়াগে দৃশ্যমান হল। সেখানের বিল্বতরু হল মৃদঙ্গবাদক, বিভীতক বৃক্ষগুলি হল ঝাঁঝরবাদক। অশ্বত্থ গাছ নর্তকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হল। সরল, তাল, (দেবদারু, পাম) তিলক, তমাল প্রভৃতি তরুরাজি হর্ষভরে উপস্থিত হল, কেউ হল কুব্জ, কেউ বা খর্বাকৃতি বামন। শিংশপা (শিশুগাছ), আমলকী, জাম, লতাবল্লরীগুলি যেন প্রমদা নারীর মতো মহর্ষির আশ্রমে বাস করতে লাগল। সুরাপায়ীরা সুরা পান কর, ক্ষুধার্তরা পায়েস, কিংবা পবিত্র মাংস,যাঁর যা ইচ্ছা সে তাই ভক্ষণ কর। সুরাং সুরাপাঃ পিবত পায়সঞ্চ বুভুক্ষিতাঃ। মাংসানি চ সুমেধ্যানি ভক্ষ্যন্তাং যো যদিচ্ছতি।। এমন রব উঠল। এক একজন পুরুষকে সাত আটজন নারী মিলিতভাবে নদীতীরে স্নান করাতে লাগল।স্নানান্তে আয়তনয়না সুন্দরী নারীরা দেহ মুছিয়ে দিয়ে, সুধা পান করাতে লাগল। বাহনের পালকগণ, ঘোড়া, হাতি, উট, সুরভি-সন্তান গোবৎসদের ভোজন করাতে লাগলেন। ইক্ষ্বাকুবংশীয় বীর যোদ্ধাদের বাহনগুলির খাদ্য ছিল ইক্ষু, মধু, খই প্রভৃতি। অশ্ব ও গজের প্রতি দৃষ্টি নেই অশ্ব ও গজরক্ষকদের।
সকলেই মদিরাপানোন্মত্ত হয়ে মুদিতনয়ন। পরিতৃপ্ত সৈন্যরা রক্তচন্দনে লিপ্ত হয়ে, অপ্সরাদের সঙ্গে মিলিতভাবে বলতে লাগলেন, আমরা অযোধ্যায় ফিরে যাব না, দণ্ডকারণ্যেও নয়। ভরতের কল্যাণ হোক, রামচন্দ্র ও সুখে থাকুন। নৈবাযোধ্যাং গমিষ্যামো ন গমিষ্যাম দণ্ডকান্। কুশলং ভরতস্যাস্তু রামস্যাস্তু তথা সুখম্।। পদাতিক যোদ্ধারা, হস্তী ও অশ্বারোহী সৈন্যরা যেন প্রভুহীন,তাঁরা তেমন আতিথ্য লাভ করে, এমন কথা বলতে লাগলেন। ভরতের অনুগমনকারী হাজার হাজার আনন্দিত লোকের মুখে একই কথা, স্বর্গোঽয়ম্ এ যে স্বর্গ। মালা ধারণ করে, নৃত্যগীতরত সৈনিকরা হাসতে হাসতে ছোটাছুটি শুরু করল। অমৃততুল্য দিব্য অন্ন দেখে, অভুক্তদের ভোজনে ইচ্ছা হল। নতুন বসন পরিধান করে, সেনাদের দাস, দাসী, বধূ সকলে অতীব প্রীত হল। হাতি, ঘোড়া, গর্দভ, উট, গরু, মৃগ প্রভৃতি পশুদের প্রচুর খাদ্য দিয়ে তৃপ্ত করা হল, যাতে তারা অন্য খাদ্যে আকৃষ্ট না হয়। সেখানে নেই কোন মলিনবসন, ক্ষুধার্ত, ম্লান, ধূলিধূসর, স্খলিতকেশ মানুষ।
মহর্ষি ভরদ্বাজের তেজের প্রভাবে, সুরলোকে ও কুবেরের চৈত্ররথবনে যে মালাগুলি ছিল সেগুলিই প্রয়াগে দৃশ্যমান হল। সেখানের বিল্বতরু হল মৃদঙ্গবাদক, বিভীতক বৃক্ষগুলি হল ঝাঁঝরবাদক। অশ্বত্থ গাছ নর্তকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হল। সরল, তাল, (দেবদারু, পাম) তিলক, তমাল প্রভৃতি তরুরাজি হর্ষভরে উপস্থিত হল, কেউ হল কুব্জ, কেউ বা খর্বাকৃতি বামন। শিংশপা (শিশুগাছ), আমলকী, জাম, লতাবল্লরীগুলি যেন প্রমদা নারীর মতো মহর্ষির আশ্রমে বাস করতে লাগল। সুরাপায়ীরা সুরা পান কর, ক্ষুধার্তরা পায়েস, কিংবা পবিত্র মাংস,যাঁর যা ইচ্ছা সে তাই ভক্ষণ কর। সুরাং সুরাপাঃ পিবত পায়সঞ্চ বুভুক্ষিতাঃ। মাংসানি চ সুমেধ্যানি ভক্ষ্যন্তাং যো যদিচ্ছতি।। এমন রব উঠল। এক একজন পুরুষকে সাত আটজন নারী মিলিতভাবে নদীতীরে স্নান করাতে লাগল।স্নানান্তে আয়তনয়না সুন্দরী নারীরা দেহ মুছিয়ে দিয়ে, সুধা পান করাতে লাগল। বাহনের পালকগণ, ঘোড়া, হাতি, উট, সুরভি-সন্তান গোবৎসদের ভোজন করাতে লাগলেন। ইক্ষ্বাকুবংশীয় বীর যোদ্ধাদের বাহনগুলির খাদ্য ছিল ইক্ষু, মধু, খই প্রভৃতি। অশ্ব ও গজের প্রতি দৃষ্টি নেই অশ্ব ও গজরক্ষকদের।
সকলেই মদিরাপানোন্মত্ত হয়ে মুদিতনয়ন। পরিতৃপ্ত সৈন্যরা রক্তচন্দনে লিপ্ত হয়ে, অপ্সরাদের সঙ্গে মিলিতভাবে বলতে লাগলেন, আমরা অযোধ্যায় ফিরে যাব না, দণ্ডকারণ্যেও নয়। ভরতের কল্যাণ হোক, রামচন্দ্র ও সুখে থাকুন। নৈবাযোধ্যাং গমিষ্যামো ন গমিষ্যাম দণ্ডকান্। কুশলং ভরতস্যাস্তু রামস্যাস্তু তথা সুখম্।। পদাতিক যোদ্ধারা, হস্তী ও অশ্বারোহী সৈন্যরা যেন প্রভুহীন,তাঁরা তেমন আতিথ্য লাভ করে, এমন কথা বলতে লাগলেন। ভরতের অনুগমনকারী হাজার হাজার আনন্দিত লোকের মুখে একই কথা, স্বর্গোঽয়ম্ এ যে স্বর্গ। মালা ধারণ করে, নৃত্যগীতরত সৈনিকরা হাসতে হাসতে ছোটাছুটি শুরু করল। অমৃততুল্য দিব্য অন্ন দেখে, অভুক্তদের ভোজনে ইচ্ছা হল। নতুন বসন পরিধান করে, সেনাদের দাস, দাসী, বধূ সকলে অতীব প্রীত হল। হাতি, ঘোড়া, গর্দভ, উট, গরু, মৃগ প্রভৃতি পশুদের প্রচুর খাদ্য দিয়ে তৃপ্ত করা হল, যাতে তারা অন্য খাদ্যে আকৃষ্ট না হয়। সেখানে নেই কোন মলিনবসন, ক্ষুধার্ত, ম্লান, ধূলিধূসর, স্খলিতকেশ মানুষ।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৪: শিকারী ও ‘শিকার’
মাই নেম ইজ গওহর জান—ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে অঘোষিত বিপ্লব এনেছিলেন এই শিল্পী
সৈন্যরা আশ্চর্য হয়ে দেখল, পর্যাপ্ত ছাগ, মেষ ও বরাহমাংস, উৎকৃষ্ট ব্যঞ্জন সমূহ, বিভিন্ন ফলের নির্যাস দিয়ে তৈরি সুগন্ধি সূপপূর্ণ স্বর্ণ ও রৌপ্যপাত্র এবং পুষ্পধ্বজায় সজ্জিত শুভ্র অন্নপূর্ণ হাজার হাজার স্বর্ণপাত্র। বনের পাশে ছিল পায়েসের পাঁক মিশ্রিত কূপ। ধেনুরা কামনা পূর্ণ করেছিল, গাছেরা হয়েছিল মধুক্ষরা। দীঘিগুলির কোনটি মৈরেয়মদে পরিপূর্ণ, কোনটি মৃগ, ময়ূর, কুক্কুট প্রভৃতির সুপক্ক উত্তপ্ত মাংসে আবৃত। সেখানে ছিল, সহস্র সহস্র পাত্র, নিযুত সংখ্যক স্থালী,অর্বুদ পরিমাণ পাত্র, শত শত কুম্ভ, সুপরিষ্কৃত দধিপূর্ণ পাত্র, ক্ষুদ্র কুম্ভ এবং পীতবর্ণের সুগন্ধি তক্রপূর্ণ পাত্র। হ্রদগুলি রসাল শ্বেত তক্রপূর্ণ হয়েছিল। সেগুলির কোনটিতে ছিল দুধ ও আবার কোথাও ছিল স্তূপীকৃত শর্করা। সৈন্যরা দেখল, নদীকূলে, পাত্রে সঞ্চিত শ্বেত বর্ণের চন্দনানুলেপন, বিবিধ চূর্ণাদি স্নানের উপকরণসমূহ। দন্তকাষ্ঠ, স্বচ্ছ দর্পণ, বস্ত্রের স্তূপ, সহস্র সহস্র কাষ্ঠপাদুকা ও চর্মপাদুকা, কাজলদানি, কেশ সংস্কারের চিরুনী,ছত্র,ধন,বর্ম,বিচিত্র সব আসন ও শয্যা। খর, অশ্ব, গজদের পানের জন্যে জলাধার এবং অবগাহনের উদ্দেশ্যে নির্মিত সোপানবিশিষ্ট, ফুল্লকমলদল শোভিত, আকাশবর্ণের স্বচ্ছ জলপূর্ণ হ্রদ।সৈন্যরা পশুদের ক্ষুধানিবৃত্তির জন্যে নীল বৈদূর্যমণিতুল্য বর্ণবিশিষ্ট কোমল তৃণভূমি সর্বত্র দেখতে পেল। সেখানের মানুষেরা, মহর্ষি ভরদ্বাজকৃত স্বপ্নসম এই অদ্ভুত আতিথ্যের আয়োজন দেখে বিস্ময়াবিষ্ট হলেন। যেন তাঁরা সুরলোকের রম্য নন্দনবনে বিহার করছেন, এইভাবে সেই রাত্রি অতিবাহিত হল। মহর্ষির অনুমতি নিয়ে স্বস্থানে ফিরে গেলেন, গন্ধর্বগণ ও বরাঙ্গনারা। সৈন্যরা তখনও মদিরাচ্ছন্ন প্রমত্ত অবস্থায়, দিব্য অগরু ও চন্দনচর্চিত হয়ে বিরাজমান। শুধু মানুষের পিষ্ট স্বর্গীয় বিবিধ উত্তম কুসুম চতুর্দিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে ছড়িয়ে রইল।
ভরত যে পথে চলেছেন রামের সন্ধানে, একদা একই পথের পথিক হয়েছিলেন রাম। কত অনাড়ম্বর, সাদাসিধে সেই যাত্রা,অনাসক্তি ও বৈরাগ্যের ধূলিমলিন সেই প্রস্থান। পিছুটান ছিল,ছিল প্রজাদের ব্যথিত অশ্রুপূর্ণ সকাতর প্রার্থনা আর ছিল অনুতপ্ত পিতা ও স্নেহের দুর্বহভারে ভেঙ্গে পড়া মাতৃহৃদয়। কোনও পিছুটান, আটকে রাখতে পারেনি যাঁকে সেই দাশরথি রামকে ফিরিয়ে আনবেন, রাজকীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবেন ভরত। তাই ভরতের যাত্রা সমারোহ ও জাঁকজমকপূর্ণ।
যাত্রাপথে, ভরত ও শত্রুঘ্ন, দুই ভাই, রামের চিন্তায় বিনিদ্র রাত্রি যাপন করেছেন। চোখে ঘুম নেই, তাঁদের। ভরতকে, রামের শুভাকাঙ্খী নিষাদরাজ গুহর সন্দেহপ্রবণতার শিকার হতে হয়েছে। যখন গুহর আস্থা অর্জন করেছেন তখন যাত্রাপথ, নির্বাধ সুগম হয়েছে। জীবনে নিজেরা কোনও বড় জটিলতার কারণ না হয়েও,অনেকসময়ে মানুষ পারিপার্শ্বিকের প্রভাবে অন্যদের আস্থা হারান, তখন তাদের হীনমন্যতা গ্রাস করে।প্রাথমিক কিছু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, আবহমান জীবনে, সত্যনিষ্ঠতা আদর্শপরায়ণতা নৈতিকতার জয় সর্বত্র। ভরতের শুভবোধ ও ন্যায়পরায়ণতা সেই বিবেক চেতনার শিরোপায় সদর্পে উড্ডীন অন্যতম দুটি পালক। রামায়ণের ভরত, যুগে যুগে, আদর্শনিষ্ঠ এক তরুণের উদাহরণ হয়ে থাকবেন।
ভরত যে পথে চলেছেন রামের সন্ধানে, একদা একই পথের পথিক হয়েছিলেন রাম। কত অনাড়ম্বর, সাদাসিধে সেই যাত্রা,অনাসক্তি ও বৈরাগ্যের ধূলিমলিন সেই প্রস্থান। পিছুটান ছিল,ছিল প্রজাদের ব্যথিত অশ্রুপূর্ণ সকাতর প্রার্থনা আর ছিল অনুতপ্ত পিতা ও স্নেহের দুর্বহভারে ভেঙ্গে পড়া মাতৃহৃদয়। কোনও পিছুটান, আটকে রাখতে পারেনি যাঁকে সেই দাশরথি রামকে ফিরিয়ে আনবেন, রাজকীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবেন ভরত। তাই ভরতের যাত্রা সমারোহ ও জাঁকজমকপূর্ণ।
যাত্রাপথে, ভরত ও শত্রুঘ্ন, দুই ভাই, রামের চিন্তায় বিনিদ্র রাত্রি যাপন করেছেন। চোখে ঘুম নেই, তাঁদের। ভরতকে, রামের শুভাকাঙ্খী নিষাদরাজ গুহর সন্দেহপ্রবণতার শিকার হতে হয়েছে। যখন গুহর আস্থা অর্জন করেছেন তখন যাত্রাপথ, নির্বাধ সুগম হয়েছে। জীবনে নিজেরা কোনও বড় জটিলতার কারণ না হয়েও,অনেকসময়ে মানুষ পারিপার্শ্বিকের প্রভাবে অন্যদের আস্থা হারান, তখন তাদের হীনমন্যতা গ্রাস করে।প্রাথমিক কিছু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, আবহমান জীবনে, সত্যনিষ্ঠতা আদর্শপরায়ণতা নৈতিকতার জয় সর্বত্র। ভরতের শুভবোধ ও ন্যায়পরায়ণতা সেই বিবেক চেতনার শিরোপায় সদর্পে উড্ডীন অন্যতম দুটি পালক। রামায়ণের ভরত, যুগে যুগে, আদর্শনিষ্ঠ এক তরুণের উদাহরণ হয়ে থাকবেন।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৯: আলোকলতা তিলোত্তমারা যুগে যুগে পুরুষের উজ্জীবনী শক্তির আধার
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০০: চোর মাচায়ে শোর
মহর্ষি ভরদ্বাজের অতিথিপরায়ণতার বিচিত্র বিধি, দুই ভাইয়ের ক্ষেত্রে বিপরীতমুখী। সস্ত্রীক রাম লক্ষ্মণের সঙ্গে ত্রিকিলদর্শী মহর্ষির সম্মুখীন হয়ে, বিনম্র শ্রদ্ধায়, নত হয়ে আত্মপরিচয় দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল রাজকীয় পরিচয়ের দুর্ভর ভার। অক্লেশে নতজানু হয়েছেন রাম, আশ্রমে আগমনের উদ্দেশ্য, বনবাসের কারণ এবং বনবাসীর সাত্ত্বিক জীবন বরণের আভাস দিয়েছেন। মহর্ষি অতিথিকে সাদরে বরণ করে,বনজ ফলমূল দিয়ে প্রস্তুত সুস্বাদু অন্ন দিয়ে আপ্যায়িত করেছেন। তিনি, রামের জন্যে, দুই মহানদীর সঙ্গমে অবস্থিত সুন্দর রমণীয় জায়গাটিতে বনবাস জীবন যাপনের আদর্শ স্থান মনে করলেও, পুর ও জনপদবাসীদের সংসর্গ পরিহারের জন্যে রাম, সবিনয়ে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। মহর্ষির নির্দিষ্ট তপস্বীদের তপোভূমি চিত্রকূট পর্বতটিকে রাম তাঁদের বনবাস জীবনের আদর্শ স্থান বলে মনে করেছেন। ঋষি ভরদ্বাজ, প্রকৃতির সান্নিধ্যে রামচন্দ্রের যে বাসভূমি নির্বাচন করেছেন, সেটি পরম রমণীয় বনচরদের আদর্শ বিচরণভূমি। গজ, ময়ূর, হরিণ, টিট্টিভ ও কোকিলকূজনে মুখরিত স্থানটিতে হয়তো সদ্য নাগরিক জীবন থেকে নির্বাসিত,স্বজনদের স্নেহকোল থেকে বিচ্ছিন্ন রাম সান্ত্বনা খুঁজে পাবেন। ত্রিকালদর্শী ঋষি তাঁর অন্তর্দৃষ্টি বলে হয়তো সদ্য পিতৃস্নেহবঞ্চিত রামের অন্তর্নিহিত বেদনাবোধ স্পর্শ করতে পেরেছিলেন।
অপরদিকে ভরতের রাজকীয় আপ্যায়নের আয়োজনে মহর্ষি কোনও ত্রুটি রাখেননি। সে কী অযোধ্যারাজের শাসন দণ্ডের প্রতি শ্রদ্ধার প্রকাশ? মহর্ষি ভরদ্বাজের ভরতসম্বন্ধে অভিমত সম্পূর্ণ নঞর্থক ছিল। তিনি সোজাসুজি প্রশ্ন করেছেন? ভরত কী তার রাজ্যোপভোগের পথের কাঁটাটি সড়িয়ে দিতে এসেছেন এই বিজয় অভিযানে? ঋষির সন্দেহপূর্ণ কথা শুনে, মরমে মরে গিয়েছেন ভরত। ত্রিকালজ্ঞ ঋষি ভরতের অভিপ্রায় মনে মনে জেনেও এমন প্রশ্ন করলেন কেন? ভরতের মনে কোনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে কি না সেটি নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন ছিল হয়তো। রাম তাঁর চরিত্র মাধুর্যে বিমুগ্ধ করে রেখেছেন মননশীল ঋষি থেকে, মন্ত্রী মণ্ডলের ও রাজপরিবারের সকল সদস্যদেরকে, এমন কি আমজনতাও তাঁর সমর্থক। এই রামের করিশ্মায় আচ্ছন্ন বন্ধু নিষাদরাজ গুহ থেকে মহর্ষি ভরদ্বাজ, কেউ বাদ নেই। রামের সঙ্গে তুলনামূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভরতকে অপাঙক্তেয় বলা যায়। রামানুরাগী রামানুজ ভরত, কখনও স্বপ্নেও তেমন চিন্তা স্থান দেননি মনে। তবু পারিপার্শ্বিকের প্রতিকূলতায় তিনি প্রাথমিকভাবে খলনায়কের পর্যায়ভুক্ত হয়েও নিজের সততা শেষপর্যন্ত প্রমাণ করেছেন বার বার। এমন ভাগ্যবিড়ম্বিত ব্যক্তিত্ব জীবনপথে বিরল নন।
মহর্ষি বাল্মীকিবর্ণিত সেই ভৌগোলিক প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ, তপোভূমির প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ ভারত ও তার অন্তরাত্মা প্রচ্ছন্ন রয়েছে ভারতীয় জীবনচর্চায়, অভ্যাসে, প্রাত্যহিকতায়।গঙ্গা সঙ্গমে প্রয়াগ আজও ভারতীয়দের পরম তীর্থ। রাম রয়েছেন হৃদয়ে, রামানুজ ভরত, লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন মিশে রয়েছেন পারিবারিকজীবনে ভ্রাতৃত্ববোধের আদর্শে। সেই পরম্পরা বয়ে চলেছে, গঙ্গার স্রোতধারায় সহস্র বেগে আজও।—চলবে।
অপরদিকে ভরতের রাজকীয় আপ্যায়নের আয়োজনে মহর্ষি কোনও ত্রুটি রাখেননি। সে কী অযোধ্যারাজের শাসন দণ্ডের প্রতি শ্রদ্ধার প্রকাশ? মহর্ষি ভরদ্বাজের ভরতসম্বন্ধে অভিমত সম্পূর্ণ নঞর্থক ছিল। তিনি সোজাসুজি প্রশ্ন করেছেন? ভরত কী তার রাজ্যোপভোগের পথের কাঁটাটি সড়িয়ে দিতে এসেছেন এই বিজয় অভিযানে? ঋষির সন্দেহপূর্ণ কথা শুনে, মরমে মরে গিয়েছেন ভরত। ত্রিকালজ্ঞ ঋষি ভরতের অভিপ্রায় মনে মনে জেনেও এমন প্রশ্ন করলেন কেন? ভরতের মনে কোনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে কি না সেটি নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন ছিল হয়তো। রাম তাঁর চরিত্র মাধুর্যে বিমুগ্ধ করে রেখেছেন মননশীল ঋষি থেকে, মন্ত্রী মণ্ডলের ও রাজপরিবারের সকল সদস্যদেরকে, এমন কি আমজনতাও তাঁর সমর্থক। এই রামের করিশ্মায় আচ্ছন্ন বন্ধু নিষাদরাজ গুহ থেকে মহর্ষি ভরদ্বাজ, কেউ বাদ নেই। রামের সঙ্গে তুলনামূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভরতকে অপাঙক্তেয় বলা যায়। রামানুরাগী রামানুজ ভরত, কখনও স্বপ্নেও তেমন চিন্তা স্থান দেননি মনে। তবু পারিপার্শ্বিকের প্রতিকূলতায় তিনি প্রাথমিকভাবে খলনায়কের পর্যায়ভুক্ত হয়েও নিজের সততা শেষপর্যন্ত প্রমাণ করেছেন বার বার। এমন ভাগ্যবিড়ম্বিত ব্যক্তিত্ব জীবনপথে বিরল নন।
মহর্ষি বাল্মীকিবর্ণিত সেই ভৌগোলিক প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ, তপোভূমির প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ ভারত ও তার অন্তরাত্মা প্রচ্ছন্ন রয়েছে ভারতীয় জীবনচর্চায়, অভ্যাসে, প্রাত্যহিকতায়।গঙ্গা সঙ্গমে প্রয়াগ আজও ভারতীয়দের পরম তীর্থ। রাম রয়েছেন হৃদয়ে, রামানুজ ভরত, লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন মিশে রয়েছেন পারিবারিকজীবনে ভ্রাতৃত্ববোধের আদর্শে। সেই পরম্পরা বয়ে চলেছে, গঙ্গার স্রোতধারায় সহস্র বেগে আজও।—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।