বুধবার ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

টেলিফোনে শ্রেয়া বাসুর কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনছিল ধৃতিমান। শুনে মনে হল, ডক্টর সুরজিৎ ব্যানার্জির সঙ্গে এই সম্পর্কের ব্যাপারটা
ওঁরা ঘুণাক্ষরে জানতেন না। মা-বাবা দু’জনেই ভীষণ ভেঙ্গে পড়েছেন। ওরা দুজনের কেউই চাননি যে মেয়ে আচমকা সারাদেশে বিখ্যাত হয়ে যাক এবং তাঁরা সেলিব্রিটির মা-বাবা হয়ে বেঁচে থাকুন। কৌশিকী দত্তগুপ্তের মা-বাবা হওয়া ছাড়াও ওদের একটা স্বতন্ত্র পরিচয় ছিল। স্বামী ডিএসপি’র প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ার আর স্ত্রী স্কুলের ইংরিজি শিক্ষিকা। তবে মা-বাবার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেয়ে কৌশিকীর পড়াশোনায় যে খুব একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি হচ্ছিল তেমনটা নয়। বরং সে নাচ গান এসব নিয়ে বেশি উৎসাহী হত। একেবারে ফেল করা না হলেও পড়াশোনায় সাদামাটাই বলা যায়। পত্রপত্রিকায় নানা রকম খবরাখবর প্রকাশিত হতো। মেয়ে বলতো বিখ্যাত হলে ওরকম একটু আধটু গসিপ হয় ও নিয়েতোমরা চিন্তা করো না।
চিন্তা না করলেও বাবা-মায়ের মনে এই জগত নিয়ে চাপা দুশ্চিন্তা ছিল। সেটাই আজ সত্যি হয়ে গেল। সেই দুশ্চিন্তা করতে করতেই হার্টের রোগ ধরে গেল। প্রথম দিকে অতটা গুরুত্ব দেননি। পরে বাড়াবাড়ি এমন একটা জায়গায় পৌঁছল যে, পেসমেকার বসানো জরুরি হয়ে পড়ল। মানে সেটা ডাক্তার বলেছিলেন।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭৫: ‘ছেলেদের জন্য আমার কোনও নিয়মকানুন থাকে না’

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৩: দেবেন্দ্রনাথ হয়েছিলেন ‘কল্পতরু’

ডাঃ ব্যানার্জির অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়াটাই ভাগ্যের ব্যাপার সেখানে তিনি বলছেন পেসমেকার লাগবে মানে ওঁদের কাছে মোটামুটি স্বয়ং জগতপিতা ব্রহ্মার আদেশ। পুরো অপারেশন থেকে ট্রিটমেন্ট প্রায় আলাদিনের জাদুপ্রদীপের ছোঁয়ায় সবটা ম্যাজিকের মতো হয়ে গিয়েছিল। ডিএসপির কোন এমপ্লয়ির পক্ষে এই ভিআইপি চিকিৎসা স্বপ্নাতীত। সেই ম্যাজিকের যে এত বড় দাম চোকাতে হবে সেটা সেই আত্মসম্মান খুইয়ে ফেলা মধ্যবিত্ত দম্পতি ভাবেননি।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭৮: সুন্দরবনের পাখি—শামুকখোল

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৬: ঠাকুরবাড়ির লক্ষ্মী মেয়ে

শ্রেয়া একটু বিরতি নিতে ধৃতিমান বলল— অবিবাহিতার শরীরে সন্তানসম্ভাবনার লজ্জা থেকে বাঁচতে মেয়েটির আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া। সত্তর দশকের ছবির জন্য ঠিক ছিল। কিন্তু এখন ছবির নায়িকা না হয়েই অনেকেই এসবের কারণে ছোটাছুটি করে অসাবধানজনিত সমস্যা মিটিয়ে ফেলেন। সেখানে কৌশিকীর এটা খুব বড় সমস্যা হবার কথা নয়।
—কিন্তু আপনার তো মনে হচ্ছে এটা সুইসাইড নয়, খুন?
—এটা আমার অনুমান। ফরেন্সিক পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সব মিলেমিশে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যাবে!
—কিন্তু ডাক্তার সুরজিৎ ব্যানার্জির হোটেলরুমে কৌশিকীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়াটা?
—শ্রেয়া আপনার মনে হচ্ছে না, এটা একটা ভীষণ সহজ সমাধান হয়ে যাচ্ছে!
—এভিডেন্স তো সে কথাই বলছে ধৃতিমান।
—না, সেকথা এভিডেন্সকে দিয়ে বলানো হচ্ছে। আর পুলিশের থেকেও…। প্লিজ ডোন্ট টেক ইট আদারওয়াইজ শ্রেয়া…খুনিকে ধরবার জন্য যেন বড্ড বেশি তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে।
—এ কথা বলছেন কেন? ডাক্তার সুরজিৎ ব্যানার্জি তো এখনও…।
—হয়ে যাবেন। আজ বা কাল উনি অ্যারেস্ট হবেন।
—আপনি কি বলতে চাইছেন রণজয় রায় ক্রেডিট নেওয়ার চেষ্টা করছেন, আর তাই জন্য তাড়াহুড়ো করে সুরজিৎ ব্যানার্জিকে অ্যারেস্ট করবেন?
—আমি শুধু সম্ভাবনার কথা বলি শ্রেয়া!
—এক সেকেন্ড ধৃতিমান! চক্রবর্তী সাহেব বোধহয় বিদেশ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কল করার চেষ্টা করছেন। একটা মেসেজ করেছেন। আমি চক্রবর্তী সাহেবকে হোয়াটসঅ্যাপ কল করছি। তারপর আপনাকে কনফারেন্স অ্যাড করে নেব।
আরও পড়ুন:

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-৯: আসছে আমার পাগলা ঘোড়া

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯৩: কালাদেওর কবলে

ফোনটা কেটে গেল। শ্রেয়া এখন বিদেশে ফোন করে ডিসি ডিডি বিভূতি চক্রবর্তীকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে পেয়ে তারপর ধৃতিমানকে জুড়বে। সময় লাগতে পারে। হঠাৎ খালি মাথায় একটা বিদ্যুতের ঝিলিক অনুভব করল ধৃতিমান! কিন্তু সেটা কি বোঝার আগেই শ্রেয়ার হোয়াটসঅ্যাপ কল চলে এল। এত তাড়াতাড়ি প্রায় ৭২৫০ কিমি দূরে জার্মানিতে যোগাযোগ হয়ে গেল! সত্যিই ইন্টারনেট গোটা পৃথিবীকে তালুবন্দি করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪৬: আলাস্কার আকাশে অহরহ ব্যক্তিগত বিমান ওঠানামা করে

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব ৪১: রবীন্দ্রনাথ ও ব্রজেন্দ্র কিশোর

ফোনের কনফারেন্স কলে যোগ হতে হতে বাবু ভাবছে, একসময় তার ধারণা ছিল ইন্টারনেট কল বোধহয় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দিয়ে হয়। পরে জেনেছে না, শতকরা ৯৫-৯৮ ভাগ ইন্টারনেট যোগাযোগ সমুদ্রের তলা দিয়ে পাতা সরু চুলের মতো অপটিক্যাল ফাইবার বেয়ে চলাচল করে। মাত্র এক থেকে দুই শতাংশ যোগাযোগ হয় স্যাটেলাইটের মধ্যে দিয়ে। কারণ স্যাটেলাইট ব্যবহার অনেক বেশি খরচা সাপেক্ষ। —চলবে।

কৌশিকি দত্তগুপ্ত হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪।

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content