শুক্রবার ৮ নভেম্বর, ২০২৪


ছবির একটি দৃশ্য।

 

ময়দান

কাহিনি বৈশিষ্ট্য: স্পোর্টস বায়োপিক (২০২৪)
ভাষা: হিন্দি
প্রযোজনা: জি স্টুডিয়ো, বনি কাপুর, আকাশ চাওলা, ফ্রেশ
লাইম ফিল্মস, অরুণাভ জয় সেনগুপ্ত
কাহিনি: সাইউইন কোয়াদ্রাস, আকাশ চাওলা, অরুণাভ জয় সেনগুপ্ত
চিত্রনাট্য: সাইউইন কোয়াদ্রাস, আমন রাই, অতুল শাহি, অমিত শর্মা
সংলাপ: রীতেশ শাহ, সিদ্ধান্ত মাগো
নির্দেশনা: অমিত শর্মা
অভিনয়ে: অজয় দেবগণ, প্রিয়ামণি, গজরাজ রাও, রুদ্রনীল ঘোষ প্রমুখ
সময়সীমা: ১৮১মিনিট
রেটিং: ৬.৫ /১০
ওটিটি: আমাজন প্রাইম ভিডিও

জাকার্তায় ফুটবলে ভারতের সোনাজয়ের সলতে পাকানোর ইতিহাস ময়দান। শুধু খেলাকে পাগলের মতো ভালোবেসে সংসার নিজের শারীরিক সুস্থতা সব কিছুকে বাজি ধরতে পারা এক অনন্য সাধারণ ভারতীয় ফুটবল কোচ সৈয়দ আব্দুল রহিমের কঠিন জীবনসংগ্রামের কাহিনী হলো সাম্প্রতিক হিন্দি স্পোর্টস বায়োপিক ময়দান। এ ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন এ আর রহমান।

অজয় দেবগনের অভিনয় জীবনের আর একটি মাইলস্টোন ও সমালোচকদের কলমে উচ্চপ্রশংসিত হলেও ময়দান ছবিটি বক্সঅফিসে মোটেই সুবিধে করতে পারেনি। ভালো সিনেমা হয়েও বক্সঅফিসে সফল হওয়া প্রায় সব ছবির ক্লাইম্যাক্সে দর্শকের একটা প্রাপ্তি থাকে। সারা ছবিতে নানা আশঙ্কা নানান ঝড় ঝাপটায় বিধ্বস্ত হতে থাকা প্রোটাগনিস্টের হার তার প্রতি স্বাভাবিক সহমর্মিতায় দর্শককে কষ্ট দেয়। ধাক্কা খেতে খেতে নিজেকে পরিবর্তন করতে থাকা প্রোটাগনিস্ট শেষবারের মতো যখন অ্যাণ্টাগনিস্টের মুখোমুখি দাঁড়ায়, তখন দর্শক তার জয় দেখতে চায়।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ক্লাইম্যাক্সে লগানের ‘ভুবন’ জিতেছে। সঙ্গে তার গোটা চম্পারণ গ্রাম জিতেছে। চাক দে ইণ্ডিয়ায় বিশ্বকাপ হকির ফাইনালের শেষ মিনিটে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পেনাল্টি স্ট্রোক মিস করে গোটা দেশের কাছে বিশ্বাসঘাতক হয়ে যাওয়া ‘কবীর খান’ ছবির ক্লাইম্যাক্সে জিতে গিয়েছেন, জিতেছেন ভারতীয় মেয়েদের হকি দল। কবীর প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি দেশপ্রেমিক।

দঙ্গল ছবি শেষে স্বর্ণপদকের লড়াইয়ে মেয়ে ‘গীতা ফোগাটের’ সঙ্গে সঙ্গে সব অপমানের প্রতিশোধ নিয়ে গীতার গর্বিত বাবা ‘মহাবীর সিং ফোগাট’ জিতেছেন। আর এই ছবিগুলি দেখতে দেখতে একএকজন দর্শক মনে মনে তাঁদের ব্যক্তিজীবনের সব বাধা অপমান না পাওয়ার বিরুদ্ধে একএকজন ভুবন, কবীর সিং বা মহাবীর সিং ফোগাট হয়ে লড়াই করেছেন। যুদ্ধজয় করে ছবির সঙ্গে প্রোটাগনিস্টের সঙ্গে একাত্ম হয়ে, সেই সাফল্যে আপ্লুত হয়ে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৯: ভার্জিনিয়া ও লিওনার্ড উলফ—উন্মাদনা ও সৃষ্টি /১

মুভি রিভিউ: উলঝ ছবিতে জাহ্নবী কাপুরের অভিনয়ে আশ্চর্য হবেন

ময়দান ছবিতেও শেষদৃশ্যে পিকে চুণি বলরাম জার্নেল সিং বা পিটার থঙ্গরাজদের স্বর্ণপদক জেতার মধ্যে দিয়ে ক্রীড়াজগতের নোংরা রাজনীতির বিরুদ্ধে সৈয়দ আব্দুল রহিমের জয় হয়েছে। কিন্তু সৈয়দ আব্দুল রহিমের ১৯৬২-র সোনা জয়ের পর ১৯৬৩তে তাঁর ফুসফুসে ক্যানসারজনিত কারণে মৃত্যু হয়। আর কঠিন সত্যের ডকুমেন্টেশন রাখার জন্য জয়ের চূড়ান্ত মূহুর্তে রহিমস্যারের কাশিতে রক্তওঠার মুহুর্মূহু রেফারেন্স-ক্ল্যাইম্যাক্স প্রোটাগনিস্টের জয়কে দর্শক হয়ত পুরোপুরি উপভোগ করতে পারেননি।

ক্রীড়াক্ষেত্রে নোংরারাজনীতির বিরুদ্ধে রহিম জিতলেও নিজের শরীরের কাছে তিনি নিজে হেরে গিয়েছেন। সেটা বাস্তব। সেটাই কঠিনতম বাস্তব। কিন্তু সিনেমাকে ব্যবসার কারণে বাস্তবতা বজায় রেখেই স্বপ্ন দেখাতে হয়। অসম্ভব একটি ভালো স্পোর্টস বায়োপিক হওয়া সত্বেও, অজয় দেবগনের অভিনয় জীবনের অন্যতম সেরা ছবি হলেও সুবিশাল পটভূমিতে বানানো ২৩৫ কোটি টাকা বাজেটের এই ছবি মাত্র ৬৮ কোটি টাকার ব্যবসা করতে পেরেছে।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬২: মঠ-মন্দির তৈরি করার চিন্তা বেশি করলে প্রকৃত ধর্মচর্চা থেকে মানুষ দূরে চলে যায়

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬৯: শ্রীমার সন্তানস্নেহ

১৯৫২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে হেলসিঙ্কিতে ভারতীয় জাতীয় ফুটবল দল যুগোস্লাভিয়ার কাছে লজ্জাজনক ভাবে ১০-১ গোলে হেরেছিল। দলের দুর্বল পারফরম্যান্সের জন্য দায়ী হয়েছিলেন দলের প্রশিক্ষক সৈয়দ আব্দুল রহিমকে। শুধু খেলার স্বার্থে হৃতসম্মান পুনরুদ্ধারের জন্য অনেক অনুনয়বিনয় করে অনেক আপত্তি থাকা সত্ত্বেও নতুন খেলোয়াড়দের নিয়ে পরের অলিম্পিকে আরেকটি দলগঠনের অনুমতি পেয়েছিলেন রহিম। সারাভারত থেকে বেছে বেছে পিকে চুনি বলরাম পিটার থঙ্গরাজ জার্নেল সিংদের নিয়ে ১৯৫৬ সালের গ্রীষ্মকালীন মেলবোর্ন অলিম্পিকে ভারত অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চতুর্থ স্থান অর্জন করে।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭১: সুন্দরবনের পাখি: সবুজ বক

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’

১৯৬০ এর অলিম্পিকে ফ্রান্সের সঙ্গে ড্র করার পরেও পয়েন্টের হিসেবে ভারতীয় দল যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। আবার রহিমকে কোচ হিসেবে বাতিল করা হলো।ফুসফুসে দুরারোগ্য কর্কটরোগের কথা জানতে পেরেছেন রহিম। তবুও তাঁর স্ত্রী তাঁকে উদ্দীপনা যোগান। ঘটনাচক্রে রহিম আবার ভারতীয়দলের কোচ হবার সুযোগ পান এবং ১৯৬২ সালে অনেক ঝড়ঝাপটার পর ভারতীয়দল জাকার্তার এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণ করে এবংশেষমেশ দক্ষিণ কোরিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবার স্বর্ণপদক লাভ করে।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪২: যোগমায়া দেবী—এক প্রতিবাদী নারী

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

সৈয়দ আব্দুল রহিম এর ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেছেন অজয় দেবগন। রহিম স্যারের স্ত্রী সায়রা রহিমের ভূমিকায় প্রিয়ামণি যথাযথ। কুচক্রী সাংবাদিক রায় চৌধুরীর ভূমিকা গজরাজ রাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কলকাতা ফুটবলমাঠের অন্ধকার রাজনীতির একনায়ক শুভঙ্করের চরিত্রে রুদ্রনীল ঘোষ তার উজ্জ্বল অভিনয় প্রতিভার পরিচয় রেখেছেন এই ছবিতে। এ আর রহমান সুরারোপিত জানে দো গানটি ভালো লাগে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content