ভৈরব চক্রবর্তীর ফোন আসার আগেই এই বিষয়টা নিয়ে একটু ভাবনা চিন্তার জন্যে টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়েছিল ধৃতিমান। বুবুর এটা বিশ্রামের সময়, তাই টেলিভিশনের ভলিউম কমানো ছিল। তবে ভাগ্যিস সেটা কোনও রাজনৈতিক আলোচনা নয়। তাহলে কমানো ভলিউমেই যে পরিমাণ তারস্বরে ঝগড়াঝাঁটি হয় তাতে, গম্ভীর হয়ে ‘চ্যাঁচাচ্ছিস কেন’ বলে বকে দিত। আসলে বাবু ছোটবেলা থেকে যে যে কথাগুলো ওকে বলেছে বা হয়তো মা বলতো বাবা বলতেন, সেগুলোই বুবু আশ্চর্য দক্ষতায় অবিরামভাবে বলে যায়।
বুবু আসলে বাবুর শৈশবকে ফিরিয়ে দেয়। বুবুকে ঘিরেই তার মনে হয় মা-বাবা এই ঘরেই কোথাও যেন বসে আছেন। এটা একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর্যালোচনা তাই সব বক্তারা অনেকটা ধীর-স্থিরভাবে তাদের বক্তব্য রাখছেন। মাঝে মাঝে চলচ্চিত্র জগতে কৌশিকির সতীর্থেরা তাঁদের শোক জ্ঞাপন করছেন। আশ্চর্য ব্যাপার এই সময় যাদের সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় আদায় কাঁচকলায় ছিল তারাও কৌশিকীর প্রশংসা করছেন, অবশ্য এটাই তো উচিত।
বুবু আসলে বাবুর শৈশবকে ফিরিয়ে দেয়। বুবুকে ঘিরেই তার মনে হয় মা-বাবা এই ঘরেই কোথাও যেন বসে আছেন। এটা একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর্যালোচনা তাই সব বক্তারা অনেকটা ধীর-স্থিরভাবে তাদের বক্তব্য রাখছেন। মাঝে মাঝে চলচ্চিত্র জগতে কৌশিকির সতীর্থেরা তাঁদের শোক জ্ঞাপন করছেন। আশ্চর্য ব্যাপার এই সময় যাদের সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় আদায় কাঁচকলায় ছিল তারাও কৌশিকীর প্রশংসা করছেন, অবশ্য এটাই তো উচিত।
ধৃতিমান তার ল্যাপটপ খুলে বসছিল কানে হেডফোন। ল্যাপটপটা পুরনো হয়ে গিয়েছে স্পষ্ট শুনতে গেলে ভলিউমটাকে যথেষ্ট বাড়াতে হবে। তাই হেডফোনটা ব্যবহার করা জরুরি। অবশ্য ছবি দেখার সময়ও ধৃতিমান হেডফোনে শোনে যাতে সংলাপের সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যের আবহ এবং কোনও শব্দানুসঙ্গ বাদ না যায়। ধৃতিমান কৌশিকীর পুরনো ইন্টার্ভিউ দেখতে শুরু করল। সে কী কথা বলেছে? কী ভাবে বলেছে মনের মধ্যে কোনও চাপ ছিল কিনা? ভবিষ্যৎ নিয়ে কি ইঙ্গিত দিয়েছে?
আরও পড়ুন:
পর্ব-৫০: বাথটাবে অচৈতন্য অবস্থায় পড়েছিলেন অভিনেত্রী কৌশিকী দত্তগুপ্ত
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৯: সুন্দরবনের পাখি—পানকৌড়ি
পরপর কয়েকটা ইন্টার্ভিউ দেখতে দেখতে ফোনটা এসে গেল।
—হ্যাঁ শ্রেয়া বলুন!
ঘটনাটা শুনে শ্রেয়া চক্রবর্তী সাহেবকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করে বলেছিল যেহেতু সে কলকাতায় নেই। ডিপার্টমেন্ট থেকে আর কেউ ধৃতিমান চৌধুরীকে ডাকবেন না। আসলে শ্রেয়া জানে অ্যাসিন্টান্ট কমিশনার (ডিডি) রণজয় রায় যেকোনও কারণেই হোক ধৃতিমানকে অপছন্দ করে। শ্রেয়া কে ধৃতিমান জানালো এই নিয়ে চিন্তা না করতে স্পট ভিজিট করার পর শ্রেয়াকে সে সব জানাবে। শ্রেয়ার মায়ের সমস্যা মিটেছে জেনে ধৃতিমান খুশি হয়ে ফোন কেটে দিল। উল্টোডাঙ্গা থেকে সল্টলেক হয়ে নিউ টাউন সামান্য দূরত্ব, কিন্তু কলকাতায় পূজো মরশুম শুরু হলে সকাল-সন্ধে রাস্তা দেখলেই বোঝা যায়। ঘন ঘন ট্রাফিক জ্যামে আটকাচ্ছেন উবের চালক। চালক একবার সোজা ভিআইপি দিয়ে বেরিয়ে কেষ্টপুর খাল থেকে ডানদিক নেবে ভেবেছিল। কিন্তু সেখানে শ্রীভূমির পুজো বরাবর শুরুর আগেই শুরু হয়। জ্যামাতঙ্কে বেচারি ১ এ চন্দ্র, ২-এ পক্ষ করে সল্টলেকের রাস্তাই ধরল।
—হ্যাঁ শ্রেয়া বলুন!
ঘটনাটা শুনে শ্রেয়া চক্রবর্তী সাহেবকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করে বলেছিল যেহেতু সে কলকাতায় নেই। ডিপার্টমেন্ট থেকে আর কেউ ধৃতিমান চৌধুরীকে ডাকবেন না। আসলে শ্রেয়া জানে অ্যাসিন্টান্ট কমিশনার (ডিডি) রণজয় রায় যেকোনও কারণেই হোক ধৃতিমানকে অপছন্দ করে। শ্রেয়া কে ধৃতিমান জানালো এই নিয়ে চিন্তা না করতে স্পট ভিজিট করার পর শ্রেয়াকে সে সব জানাবে। শ্রেয়ার মায়ের সমস্যা মিটেছে জেনে ধৃতিমান খুশি হয়ে ফোন কেটে দিল। উল্টোডাঙ্গা থেকে সল্টলেক হয়ে নিউ টাউন সামান্য দূরত্ব, কিন্তু কলকাতায় পূজো মরশুম শুরু হলে সকাল-সন্ধে রাস্তা দেখলেই বোঝা যায়। ঘন ঘন ট্রাফিক জ্যামে আটকাচ্ছেন উবের চালক। চালক একবার সোজা ভিআইপি দিয়ে বেরিয়ে কেষ্টপুর খাল থেকে ডানদিক নেবে ভেবেছিল। কিন্তু সেখানে শ্রীভূমির পুজো বরাবর শুরুর আগেই শুরু হয়। জ্যামাতঙ্কে বেচারি ১ এ চন্দ্র, ২-এ পক্ষ করে সল্টলেকের রাস্তাই ধরল।
আরও পড়ুন:
বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি: বাংলা বুকের ভিতরে
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৬২: সত্যজিৎ রায় রুপটান শিল্পীকে বলেছিলেন, উত্তমকুমারের কোনও মেকআপ করার
একজন ডিপার্টমেন্টের বাইরের লোক আনঅফিসিয়াল ক্যাপাসিটিতে গোয়েন্দা বিভাগকে রহস্যসমাধানে সাহায্য করছে। তাঁর জন্যে অনেক জটিল কেস সলভ হচ্ছে অথচ ট্রান্সপোর্টেশন বা লজেস্টিক সাপোর্ট ছাড়া আর কিছুই সে পায় না। তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ না করলেও জয়েন্ট সিপি ক্রাইম তার নাম জানেন, হতে পারে সিপিও হয়তো জানেন। রণজয় রায়ও কৃতী অফিসার কিন্তু একজন পেশায় সখের গোয়েন্দা, যার নাটকের দল আছে। যিনি দুটি মাত্র ফিচার ছবি আর কিছু ডকুমেন্টারি বানিয়েছেন তাকে নিয়ে ভৈরব চক্রবর্তীর মাতামাতি কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। রণজয় তার ব্যক্তিগত পরিসরে মন্তব্যও করেছে ফেলুদা ব্যোমকেশ পরাশর কিরীটী রায় বা দীপক চ্যাটার্জি এককালে ছিল, এটা শবর দাশগুপ্তদের যুগ!
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩
মুভি রিভিউ: মামুটির মাল্টিস্টারার ছবি ‘সিবিআই ৫: দ্য ব্রেন’ গতানুগতিক থ্রিলার
রণজয় রায় সেকেন্ড ফ্লোরে নির্দিষ্ট ২০৬ নম্বর ঘরের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। ধৃতিমানকে আসতে দেখে এগিয়ে এসে হাত মেলালেন—
—আসুন মিঃ চৌধুরী! আপনার জন্য ওয়েট করছিলাম!
রণজয় পকেট থেকে দু-জোড়া হ্যান্ডগ্লাভস বের করে একটা একজোড়া ধৃতিমানকে দিল। অন্যজোড়া নিজে পরে নিল। কৌশিকির তদন্তের আগেই মাথার মধ্যে যেন রণজয়ের এই অতি সহৃদয় ব্যবহারের কারণ তদন্তের প্রয়োজন হয়ে পড়ল। তবে কি ভৈরব চক্রবর্তী সিপি সাহেবকে রণজয় ও ধৃতিমানের মধ্যের সমীকরণের বিষয়ে কিছু বলেছেন?
—আসুন মিঃ চৌধুরী! আপনার জন্য ওয়েট করছিলাম!
রণজয় পকেট থেকে দু-জোড়া হ্যান্ডগ্লাভস বের করে একটা একজোড়া ধৃতিমানকে দিল। অন্যজোড়া নিজে পরে নিল। কৌশিকির তদন্তের আগেই মাথার মধ্যে যেন রণজয়ের এই অতি সহৃদয় ব্যবহারের কারণ তদন্তের প্রয়োজন হয়ে পড়ল। তবে কি ভৈরব চক্রবর্তী সিপি সাহেবকে রণজয় ও ধৃতিমানের মধ্যের সমীকরণের বিষয়ে কিছু বলেছেন?
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮১: তথাকথিত পরিচয়হীন প্রতিভার মূল্যায়ন কী শুধুই সাফল্যের নিরিখে সম্ভব?
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ
অত্যন্ত বিলাসবহুল কামরা, মেনডোর টপকে ঘরে পা দেবার পরেই ধৃতিমান ডানদিকে দেয়ালের কোণে চোখ রাখল। তার সন্দেহ সঠিক। মেইন সুইচবক্সে যে কার্ড ঢোকানো আছে সেটি হোটেলের অ্যাক্সেস কার্ড নয়। একই রকম শক্ত ক্রেডিট কার্ড। আলো বন্ধ যাতে না হয়ে যায় সে ভাবে হালকা করে কার্ড টেনে দেখল কার্ডের পদবী দেখা যাচ্ছে দত্তগুপ্ত।—চলবে।
কৌশিকী দত্তগুপ্ত হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর ২০২৪
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।