শনিবার ৯ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

আগস্টের চার তারিখে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসিসট্যান্স ডগস’ ডে। যে সব কুকুররা, মানে সারমেয়গণ আর্ত রোগীর চলাফেরায় সহায়ক হয়, তাদের কথা মনে রেখেই এদিনের উদযাপন। শুধু এটাই নয়, ছাব্বিশ তারিখে আন্তর্জাতিক সারমেয় দিবস। এর উদ্দেশ্য হল, পথপশুদের রক্ষা ও মঙ্গলবিধান। এই ফাঁকেই, কুকুর নিয়ে দু’চার কথা যা আমরা জানি কিন্তু মানি না, অথবা মানি, কিন্তু কুকুরের ‘মানি’ নেই বলেই তাদের গণ্য করি না, সেগুলোই একটু বলা আর কী! বন্ধুগণ!
আমরা রচনা বইতে পড়েছি কুকুর একটি গৃহপালিত পশু। তার চারটি পা, একটি লেজ ইত্যাদি। কিন্তু জমানা বদলেছে ভাইসব। কুকুর এখন মানুষ হয়ে গেছে। এখন তার ফেসবুক প্রোফাইল আছে, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স আছে, কাজ করে দেওয়ার মানুষ আছে, ফলোয়ার্স আর পৃষ্ঠপোষক আছে। কুকুর এখন ফিল্মে হিরো হয়, স্যোশ্যাল মিডিয়ায় রিল বানায়, সানগ্লাস পরে প্রেম করে, রিমোট টিপে টিভি দেখে, মোবাইলে গেম খেলে, বাচ্চার পড়া ধরে, বাজার করে, পুলিশে চাকরি করে চোর ধরে, স্যালুট পায়, স্যালুট দেয়।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৫০: তুমি কি কেবলই ছবি?

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭৭: যাজ্ঞসেনী স্বয়ংবরা দ্রৌপদী কি শুধুই প্রতিহিংসার বাতাবরণ বিনির্মাণ করেন?

বিস্মৃত অতীতে মানুষ বুঝেছিল কুকুর তার পরম বন্ধু। সেই কবে দেবকুক্কুরী সরমা পণিদস্যুদের খুব করে বকে দিয়ে গরু ছাড়াতে গিয়েছিল। পণিরা উৎকোচ দিয়ে তাকে দলে টানার চেষ্টা করে, কিন্তু সরমার ভাষণের সামনে তাদের আর কিছু বলা হয়ে ওঠেনি। শেষে কী হয়েছিল জানা যায় না, তবে তারপর থেকে মানুষের সংস্পর্শে এসে সারমেয়রা মনুষ্যত্ব আয়ত্ত করেছে। দৃষ্টি, অঙ্গচালনা, আবদার কিংবা অভিমানে তারা হিউম্যান প্রো, মানুষের উন্নততর ভার্সন বটে।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৩: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— কেরালি ও নোনা হাতিশুঁড়

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৬:কোনও একটি দাবিতে বিরোধীরা জোট বাঁধুক কখনও চায় না শাসক

পৃথিবীর নিয়মে একদিক বাড়ে একদিক কমে। মনুষ্যত্ব এখন অন্যত্রগামী হওয়ায় মানুষ এখন মানুষের চেয়ে অন্যরকম কিছু হতে চাইছে বেশি। বিশ্বাস, একনিষ্ঠতা ইত্যাদি ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য কুকুরের স্বভাবগত। কেন সে ক্ষুদ্র স্বার্থ ছাড়াই বিনা কারণেই বিভিন্ন নিরাপত্তার ভার কাঁধে তুলে নেয়, কেন আবার রাস্তা কারও একার নয় এই আপ্তবাক্যকে উড়িয়ে দিয়ে দিব্য ভূতলস্থ হয়ে ‘দেখি কে লেজে পা দিতে পারো’ এরকম একটা কনফিডেন্স নিয়ে বসে থাকে, সে সব বুঝতে গেলে মানুষকে কুকুর হয়ে উঠতে হবে।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৮: যেথা আমি যাই নাকো / তুমি প্রকাশিত থাকো

কিন্তু মুশকিল হল, সারমেয় রা ক্রমশঃ মনুষ্যত্ব অর্জন করতে চলেছে, মানুষ-ও আর মানুষ হয়ে বসে নেই, অনেকদিন তো মানুষ হয়ে থাকা গেল, এখন স্বাদ বদল না করলেই নয় বুঝি। তাই, দেখা আর হয় না বুঝি, লুকোচুরি চলতেই থাকে। তবে সারমেয় রা মানুষের সঙ্গে, পাশে এবং পিছনে পরম বিশ্বাস নিয়ে লেজ নেড়ে নেড়ে আজও চলছে। মানুষ সারমেয়দের ঠিক কোথায় আছে তা বলা বেশ কঠিন। কখনও মনে হয় এদের বুঝি গলায়-গলায় ভাব। কখনও মনে হয়, মানুষই এদের অধীন। কখনও মনে হয়, উল্টোটাই একমাত্র সত্যি। কিন্তু ঠিক যে কী তা-ও বলা কঠিন।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

দশভুজা, পর্ব-৩৬: মৃণালিনী— রবি ঠাকুরের স্ত্রী-র লেখকসত্তা

মানুষ এমনি এমনিই সারমেয়দের উত্যক্ত করে নিজের লেজের পূর্বস্মৃতিকে খুঁটিয়ে তুলছে। এসব দেখে চোখ বুজে চোরকে চলে যেতে দিয়ে মনে মনে খুব হেসে নিচ্ছে সারমেয় ভাইসব। এমনিতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে গা ঘামানো শুরু হয় সকাল থেকেই, বিস্কুটের বিনিময়ে। চোর পুলিশ ডাকাত আর বাবু সকলের বিস্কুট-ই চেখে দেখে নিতে হয়। তারপর বাছাবাছি। নতুন প্রকৌশল। তবে সব বিস্কুট রুচিকর নয়, বলাবাহুল্য-ই।

একটু আবেদন থাকল লালু-ভুলু-কালু-লালি-ভুলি-কালিদের পক্ষ থেকে। দেবেন যখন একটু ভালো দেখে বিস্কুট দেবেন। পুষ্টিকর বিস্কুট নিজেরাই খাবেন। আমাদের জন্য নতুন কিছু বানান। আর পারলে, বিস্কুট না দিয়ে অন্য কিছু দিন। কুকুরের পেটে ঘি ভাত সহ্য হয় না এসব রটাবেন না। আগে দিয়েই দেখুন। আর হ্যাঁ, আমাদের নাম করে অন্যের বদনাম করবেন না। আমাদের লেজের সমানোচনা না করে চোখের দিকে তাকান। নিজেকে দেখতে পাবেন। মনে থাকবে?—চলবে।
* হুঁকোমুখোর চিত্রকলা : লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content