ছবি: প্রতীকী।
অডিয়ো ক্লিপ (পর্ব-১১)
ফোনের ডিসপ্লেতে ফুটে ওঠা নামটা ‘দুবেজি’! ফোনটা বেজে যাচ্ছে। নীলাঞ্জন জানতে চাইছে, সে কী করবে? আমি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে আমার আর শ্রেয়ার দিকে হাত দেখালাম। নীলাঞ্জন সম্মতি জানাল, সে বুঝতে পেরেছে। আমাদের কথা গোপন করতে হবে। তারপর আলতো করে হাত দেখিয়ে ফোনটা ধরতে বললাম।
—হ্যালো? কে বলছেন?
একটু সরু গলায় উত্তর এলো—
—রায় সাব নমস্কার, দুবে বলছিলাম, নিউজ টিভি।
দুবেজি জানালেন, নিরঞ্জন না বললেও তারা জানেন, আজ সুচেতার শ্রাদ্ধের কাজ। পুরনো সহকর্মীর জন্য কর্তৃপক্ষ আজকের দিনে কিছু ফল মিষ্টি পাঠিয়েছেন। সেটা নিয়ে দুবেজি নিচে অপেক্ষা করছেন। ওপরে পৌঁছে দিতে চান। নীলাঞ্জন উত্তর কি হওয়া উচিত জেনে তাকালো। আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম আসতে পারে। নীলাঞ্জন সে রকমই জানালো, ফোনটা রাখার পর সে যথেষ্ঠ চিন্তিত।
—আপনারা কোথায় যাবেন?
আমার উত্তর দেওয়ার আগেই শ্রেয়া বলে উঠলেন—
—বাড়ির ভিতরে! আচ্ছা ব্যালকনি কোন দিকে?
—কেন?
শ্রেয়া ঝাঁঝিয়ে উত্তর দিল—
—আরে মশাই দরজার পাশে আমাদের জুতো খুলে ঘরে এসেছি, ওগুলো সরাতে হবে তো।
এ বার নীলাঞ্জন এর প্রশ্ন আমার দিকে —
—আবার টাকার কথা তুললে কী বলব?
—ভালো প্রশ্ন। মনে হয় সেটা উনি বলবেন! আপনি… আপনি ভাবার সময় নেবেন?
—আপনারা কোথায় যাবেন?
আমার উত্তর দেওয়ার আগেই শ্রেয়া বলে উঠলেন—
—বাড়ির ভিতরে! আচ্ছা ব্যালকনি কোন দিকে?
—কেন?
শ্রেয়া ঝাঁঝিয়ে উত্তর দিল—
—আরে মশাই দরজার পাশে আমাদের জুতো খুলে ঘরে এসেছি, ওগুলো সরাতে হবে তো।
এ বার নীলাঞ্জন এর প্রশ্ন আমার দিকে —
—আবার টাকার কথা তুললে কী বলব?
—ভালো প্রশ্ন। মনে হয় সেটা উনি বলবেন! আপনি… আপনি ভাবার সময় নেবেন?
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৪৪: আমি ফোন না করলে বুঝবে, অ্যাম ইন ট্রাবল…
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭৭: যাজ্ঞসেনী স্বয়ংবরা দ্রৌপদী কি শুধুই প্রতিহিংসার বাতাবরণ বিনির্মাণ করেন?
অবাক শ্রেয়াকে দেখিয়ে বললাম আমি সবটা বুঝিয়ে বলছি, আমাকে নীলাঞ্জনের আবার প্রশ্ন—
—আচ্ছা আমি কি দুবেজির সঙ্গে একটু মিষ্টি পাঠিয়ে দেবো?
শ্রেয়া টাকার কথাতে অবাক হয়েছিল। আবার নীলাঞ্জনের প্রশ্নে মেজাজ হারাল—
—আপনি কী বলবেন সেটা একেবারেই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু কেউই এই অবস্থায় আপনার কাছ থেকে কোনও ধরনের ভদ্রতা বা আতিথেয়তা আশা করেন না। সেটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।
সময় চলে যাচ্ছে। আমি শ্রেয়াকে নিয়ে দ্রুত পাশের বেডরুমে ঢুকলাম, দরজাটা ভেজিয়ে দিলাম কিন্তু পুরো বন্ধ করলাম না যাতে কথাবার্তা শুনতে পারি। শ্রেয়া ততক্ষণে আমাদের জুতো নিয়ে লাগোয়া ব্যালকানিতে চলে গিয়েছে। অপেক্ষা করতে করতে শ্রেয়ার কথা মনে হল…
শ্রেয়াকে এ সব ব্যক্তিগত যন্ত্রণা হয়ত স্পর্শ করে না। ও যেন একটু বেশিই কাঠখোট্টা। তবে তার একটা রক্তাক্ত যন্ত্রণাকাতর ইতিহাস আছে।
—আচ্ছা আমি কি দুবেজির সঙ্গে একটু মিষ্টি পাঠিয়ে দেবো?
শ্রেয়া টাকার কথাতে অবাক হয়েছিল। আবার নীলাঞ্জনের প্রশ্নে মেজাজ হারাল—
—আপনি কী বলবেন সেটা একেবারেই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু কেউই এই অবস্থায় আপনার কাছ থেকে কোনও ধরনের ভদ্রতা বা আতিথেয়তা আশা করেন না। সেটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।
সময় চলে যাচ্ছে। আমি শ্রেয়াকে নিয়ে দ্রুত পাশের বেডরুমে ঢুকলাম, দরজাটা ভেজিয়ে দিলাম কিন্তু পুরো বন্ধ করলাম না যাতে কথাবার্তা শুনতে পারি। শ্রেয়া ততক্ষণে আমাদের জুতো নিয়ে লাগোয়া ব্যালকানিতে চলে গিয়েছে। অপেক্ষা করতে করতে শ্রেয়ার কথা মনে হল…
শ্রেয়াকে এ সব ব্যক্তিগত যন্ত্রণা হয়ত স্পর্শ করে না। ও যেন একটু বেশিই কাঠখোট্টা। তবে তার একটা রক্তাক্ত যন্ত্রণাকাতর ইতিহাস আছে।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৩: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— কেরালি ও নোনা হাতিশুঁড়
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৬:কোনও একটি দাবিতে বিরোধীরা জোট বাঁধুক কখনও চায় না শাসক
গড়িয়ার রথতলার শ্রেয়া বাসু ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে কলকাতার একটি মাঝারি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে মাত্র কয়েকসপ্তাহ আগে চাকরির চিঠি পেয়েছে। হাতে মার্কশিট নিয়ে জয়েনিং কদিন বাদে। বাবা সাধারণ পুলিশকর্মী কনস্টেবল ত্রিদিব বসু। খিদিরপুরে ভোটের সময় ডিউটি করছিলেন। দু’ পক্ষের ধস্তাধস্তি মারামারির সময় কোনও একপক্ষের কেউ অপরপক্ষের কারও দিকে তাক করে গুলি চালায়। ভিড়ের ধাক্কাধাক্কিতে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ত্রিদিবের বুকে লাগে। হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই সব শেষ।
বাড়িতে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছিলেন। রথতলার ছোট্ট বাড়িতে অতো গণ্যমান্য লোকের জায়গা ছিল না। বাড়ির সামনেই সকলের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। জনতা ভিড় করেছিল প্রেস মিডিয়া ছিল। ত্রিদিব বসুর বিধবা স্ত্রী এবং তার মেয়েকে স্বাভাবিক সান্তনা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন—’একা ভাববেন না, আমরা রয়েছি আপনার সঙ্গে। কোনও প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করবেন।’
বাড়িতে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছিলেন। রথতলার ছোট্ট বাড়িতে অতো গণ্যমান্য লোকের জায়গা ছিল না। বাড়ির সামনেই সকলের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। জনতা ভিড় করেছিল প্রেস মিডিয়া ছিল। ত্রিদিব বসুর বিধবা স্ত্রী এবং তার মেয়েকে স্বাভাবিক সান্তনা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন—’একা ভাববেন না, আমরা রয়েছি আপনার সঙ্গে। কোনও প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করবেন।’
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ
গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৮: যেথা আমি যাই নাকো / তুমি প্রকাশিত থাকো
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের তো এই ধরনের প্রতিশ্রুতি দিতেই হয়। কিন্তু শ্রেয়া ওই জনতার সামনে মিডিয়ার সামনে মুখ্যমন্ত্রীকে বললেন—
—বাবা ছাড়া সংসারে কারও কোনও রোজগার ছিল না। দয়া করে বাবার জায়গায় আমাকে চাকরিটা দিন।
—তুমি তো ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছো, অনেক ভালো চাকরি পাবে। একটা চাকরি তো পেয়েছো বোধহয়। কনস্টেবলের চাকরি থেকে সেখানে অনেক উন্নতি করতে পারবে।
—বাবা পুলিশের চাকরি করেই আমাকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়েছেন। আমিও পারবো। বাবার এ ভাবে মৃত্যু না হলে হয়তো সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে অন্যভাবে বাঁচতাম। এখন তা আর সম্ভব নয়। আমি পুলিশ জয়েন করতে চাই। সুযোগ পেলে পরীক্ষা দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে নেব। আপনার সাহায্য চাই।
—বাবা ছাড়া সংসারে কারও কোনও রোজগার ছিল না। দয়া করে বাবার জায়গায় আমাকে চাকরিটা দিন।
—তুমি তো ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছো, অনেক ভালো চাকরি পাবে। একটা চাকরি তো পেয়েছো বোধহয়। কনস্টেবলের চাকরি থেকে সেখানে অনেক উন্নতি করতে পারবে।
—বাবা পুলিশের চাকরি করেই আমাকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়েছেন। আমিও পারবো। বাবার এ ভাবে মৃত্যু না হলে হয়তো সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে অন্যভাবে বাঁচতাম। এখন তা আর সম্ভব নয়। আমি পুলিশ জয়েন করতে চাই। সুযোগ পেলে পরীক্ষা দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে নেব। আপনার সাহায্য চাই।
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩
দশভুজা, পর্ব-৩৬: মৃণালিনী— রবি ঠাকুরের স্ত্রী-র লেখকসত্তা
এরকম নাটকীয় রাজনৈতিক সুযোগ কোনও পোক্ত রাজনীতিবিদ ছাড়তে চান না। আর চাকরিতে আইনগত বাধা নেই। অনডিউটি গুলিতে মৃত্যু। কমপেনসেশন গ্রাউন্ডে চাকরিটা নিকট আত্মীয়র পাওয়ার কথা। শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন নেই। ক্যাটাগরি চেঞ্জের জটিলতা নেই। আর মেয়েটার লড়াকু মানসিকতার প্রশংসা করতেই হবে। হেড অফ স্টেটের মুখোমুখি সঠিক সময়ে সঠিক দাবি পেশ করার জন্যে যথেষ্ঠ সাহস লাগে।
মুখ্যমন্ত্রী মিডিয়া ও জনসমক্ষে শ্রেয়ার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন —‘আমি দেখছি’! এই টুকু শব্দ বলার মধ্যেও একটা রাজনৈতিক পরিপক্কতা ছিল। প্রথমত বিরোধীরা বলতে পারেন, চাকরি দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলেছেন। সে রাস্তা বন্ধ। তাছাড়া পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কর্তা ব্যক্তিদেরও আলোচনার নামে তাদের একটু স্পেস দেওয়া যাবে। শ্রেয়া চাকরি পেয়েছিল এবং মেধায় অন্য অনেকের থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকার সুবাদে আজ ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের সফল অফিসার। আসলে ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের কর্তা ভূপতি চক্রবর্তী একটা ডিপার্টমেন্টাল ইন্টারভিউতে শ্রেয়াকে দেখে তাকে নিজের ডিপার্টমেন্টে নিয়ে নেন।
টিং টং— দুবেজি আসার সংকেত!—চলবে।
মুখ্যমন্ত্রী মিডিয়া ও জনসমক্ষে শ্রেয়ার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন —‘আমি দেখছি’! এই টুকু শব্দ বলার মধ্যেও একটা রাজনৈতিক পরিপক্কতা ছিল। প্রথমত বিরোধীরা বলতে পারেন, চাকরি দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলেছেন। সে রাস্তা বন্ধ। তাছাড়া পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কর্তা ব্যক্তিদেরও আলোচনার নামে তাদের একটু স্পেস দেওয়া যাবে। শ্রেয়া চাকরি পেয়েছিল এবং মেধায় অন্য অনেকের থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকার সুবাদে আজ ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের সফল অফিসার। আসলে ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের কর্তা ভূপতি চক্রবর্তী একটা ডিপার্টমেন্টাল ইন্টারভিউতে শ্রেয়াকে দেখে তাকে নিজের ডিপার্টমেন্টে নিয়ে নেন।
টিং টং— দুবেজি আসার সংকেত!—চলবে।
সুচেতা মুখোপাধ্যায় হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ২৯ আগস্ট, ২০২৪
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।