বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের দ্বিতীয় এবং শেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবনাবসান। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব। বৃহস্পতিবার সকালে বুদ্ধদেবের মৃত্যুর খবর জানান তাঁর সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, সকালেও বুদ্ধদেব প্রাতরাশ করেছিলেন। তার পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সকাল ৮টা ২০ মিনিটে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই তিনি প্রয়াত হন। খবর পেয়ে সুচেতন সেখানে পৌঁছেছেন।

সূত্রের খবর, বুধবার রাতে বুদ্ধদেবের শ্বাসকষ্ট বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেটা রাতে সামাল দেওয়া হয়েছিল। তখনই ঠিক করা হয়েছিল, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ উডল্যান্ডসের চিকিৎসকেরা এসে তাঁকে পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে। কারণ, হাসপাতালে যাওয়ার বিষয়টিতে তাঁর ঘোর অনীহা ছিল। তাই চিকিসকদের পরামর্শের কথা ভাবা হয়েছিল। সেই মতোই বিষয়টি এগোচ্ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন বুদ্ধদেব। সকালে উঠে প্রাতরাশের পর চা-ও খেয়েছিলেন। তার পরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে নেবুলাইজ়ার দেওয়ার চেষ্টা হয়। সূত্রের খবর, সেই সময়েই তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসকদের খবর দেওয়া হয় দ্রুত। তাঁরা এসে বুদ্ধদেবকে প্রয়াত বলে ঘোষণা করেন।
প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শেষযাত্রা বৃহস্পতিবার হবে না বলে জানালেন মহম্মদ সেলিম। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জানিয়েছেন, আপাতত বৃহস্পতিবার সকালে বুদ্ধদেবের দেহ তাঁর পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই রাখা হবে তাঁর আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের জন্য। পরে তাঁর দেহ সংরক্ষণ করা হবে। তবে বৃহস্পতিবারই তাঁর চক্ষুদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তার পরে সরকারি হাসপাতালে তাঁর মরদেহ দেওয়া হবে। সিপিএমের তরফে জানানো হয়েছে এনআরএস হাসপাতালেই দেওয়া হবে বুদ্ধদেবের দেহ।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭৪: রাজা দশরথ, রাম, লক্ষ্মণ, সীতা সকলেই কি এক একটি জীবনবোধের প্রতীক?

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৫: আজি এ কোন গান নিখিল প্লাবিয়া

প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পাম অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২০মিনিটে এক কামরার ফ্ল্যাটেই প্রয়াত হয়েছেন অশীতিপর বুদ্ধদেব। বর্ষীয়ান বাম নেতার মৃত্যুতে শোকাহত মমতা বৃহস্পতিবার রাজ্যে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শেষ যাত্রায় সবরকম সহযোগিতারও কথাও বলেছেন তিনি।

শুক্রবার সকাল ১০টায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের দফতরের আনা হবে বুদ্ধদেবের দেহ। সেখান থেকে বিকেল ৪টের সময় শুরু হবে শেষযাত্রা। শেষযাত্রার পরে তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেহ দান করা হবে।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৪: প্রতিমাদেবী— এক দুঃখবতীর কথা

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৩: রাজনীতিতে উন্নতির জন্য নিন্দা বা প্রশংসা ব্যক্তিগত পরিসরে করাই শ্রেয়, সভায় নয়

সেলিমই জানিয়েছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দেহ দান করে গিয়েছিলেন। তাই অন্ত্যেষ্টি হবে না। সেলিম বলেন, ‘‘বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলার প্রক্রিয়া চলছে। যাঁরা দেহ সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন তাঁদেরকেই দেওয়া হবে।’’ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার পরেই বুদ্ধদেবের চক্ষুদান প্রক্রিয়া শুরু হবে। তার পরেই তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হবে সংরক্ষণের জন্য।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭৭: কথা কিছু কিছু

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৭: উপবাস নিয়ে শ্রীমায়ের দৃষ্টিভঙ্গি

প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পাম অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২০মিনিটে এক কামরার ফ্ল্যাটেই প্রয়াত হয়েছেন অশীতিপর বুদ্ধদেব। বর্ষীয়ান বাম নেতার মৃত্যুতে শোকাহত মমতা বৃহস্পতিবার রাজ্যে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শেষ যাত্রায় সবরকম সহযোগিতারও কথাও বলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৩: বাবু ডাক্তার ও ‘ডাক্তারবাবু’

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৫: আজি এ কোন গান নিখিল প্লাবিয়া

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জন্ম উত্তর কলকাতায়। ১ মার্চ, ১৯৪৪। পূর্বপুরুষের আদি নিবাস বর্তমান বাংলাদেশ। উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর এলাকায় শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় থেকে পাশ করে তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভ্রাতুষ্পুত্র কিন্তু গোড়া থেকে ছাত্র রাজনীতির মূলস্রোতে ততটা সম্পৃক্ত ছিলেন না। কবাডি খেলতেন। খেলতেন ক্রিকেটও। চোখের সমস্যার জন্য তাঁকে ক্রিকেট খেলা ছাড়তে হয়। কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে রোম্যান্টিসিজম তাঁকে ছেড়ে যায়নি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সখ্যের অন্যতম কারণ ছিল ক্রিকেট। সেটি ক্রিকেট রোম্যান্টিক বুদ্ধদেব। আর যে বুদ্ধদেব বঙ্গ ক্রিকেটকে ‘অশুভ শক্তি’র হাত থেকে মুক্ত করতে চেয়ে কার্যত প্রকাশ্যেই সিএবি-র নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন অধুনাপ্রয়াত জগমোহন ডালমিয়ার সঙ্গে, তিনি পরিচ্ছন্ন প্রশাসন-প্রয়াসী।
<১৯৭৭ সালে কাশীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রথম নির্বাচনে জেতেন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মন্ত্রিসভায় তথ্য ও জনসংযোগ দফতরের দায়িত্ব পালন করেন। এটি পরে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর নামে পরিচিত হয়। ১৯৮২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হন বুদ্ধদেব। পরে ১৯৮৭ সালে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে জিতে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী হন। সেই থেকেই তাঁর কেন্দ্র যাদবপুর। যে কেন্দ্র ২০১১ সালে তাঁকে বিমুখ করেছিল। তখন রাজ্যে পালাবদলের পালা। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন বুদ্ধদেব।
১৯৮৪ সাল থেকে বুদ্ধদেব সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য। ১৯৮৫ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে জ্যোতি বসুর সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী হন। পলিটব্যুরোর সদস্য হন ২০০০ সালে। সে বছরই ৬ নভেম্বর বুদ্ধদেব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেন জ্যোতিবাবু অবসর নেওয়ার পর। ২০১১ পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন।

২০২২ সালে বুদ্ধবাবুকে পদ্মভূষণ সম্মানের জন্য মনোনীত করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। প্রশাসক বুদ্ধদেবকে নিয়ে নানা বিতর্ক সত্ত্বেও শুধু বাম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেই নয়, বুদ্ধদেবের জনপ্রিয়তা আমজনতাকেও ছুঁয়ে গিয়েছে বারংবার। তাঁর সোজাসাপটা জীবন, পাম অ্যাভিনিয়ের সাধারণ ফ্ল্যাটের যাপন এসেছে চর্চার কেন্দ্রে।

Skip to content