রঘুরামণ ও তনিমা
ইনস্টিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট, বিদ্যানগর হায়দরাবাদ থেকে পাশ করেছিল রঘুরামণ। তাজ গ্রুপের পাঁচতারা হোটেলে ট্রেনিং তারপর শেরাটন হোটেলে চাকরি। তনিমা যখন হায়দরাবাদ গিয়েছিল, রঘু তখন শেরাটন হোটেলে চাকরি করছে। ওই শেরাটন হোটেলেই একদিন স্পেশাল ডিনারের ব্যবস্থা করেছিল রঘু। শেরাটন থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ম্যারিয়ট গ্রুপের বিখ্যাত হোটেল দ্য সেন্ট রেগিস। বাড়ির লোকেরা বহুবার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলেছে, কিন্তু রঘু রাজি হয়নি।
দাদা যাকে পছন্দ করতো তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাই শ্রীরাধা বাড়িতে আর কিছু বলতে পারেনি। তনিমা বসুন্ধরা ভিলায় ফিরে আসার পর সব শুনে লাফিয়ে উঠলো শ্রীরাধা। কিন্তু তনিমা তখনও বাড়িতে জানাতে মানা করল। শ্রীরাধাকে কলকাতায় আসতে বলল। শ্রীরাধা রঘুকে টেলিগ্রাম করে বসুন্ধরা ভিলার নম্বর দিয়ে বলেছিল শ্রীরাধাকে ফোন করতে। ফোন এসেছিল। শ্রীরাধা সংক্ষেপে সবটুকু জানিয়ে তনিমাকে ফোন দিয়ে ঘর ছেড়ে গিয়েছিল। তনিমা একটাই কথা জানতে চেয়েছিল।
তনিমা তেলেগু জানে না, রঘু বাংলা জানে না। তাই ইংরিজি আর হিন্দি ছিল কথা বলার মাধ্যম। দু’জনের কথোপকথনে শব্দ কম… কথা আটকে নিঃশ্বাসের শব্দ বা নৈঃশব্দ্য বেশি। তনিমা বলেছিল—
—একবার তোমার মনের কথা বুঝতে না পেরে ভুল করেছি, আবার ভুল হবে না তো?
—সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। তাই ঈশ্বর আমায় এতদিন ধরে কষ্ট দিয়েছেন। হায়দরাবাদে সব সময় তোমার কথা মনে হতো। তোমায় ভুলতে আমি ৬০০০ কিলোমিটার দূরে চলে এসেছিলাম। তুমি বললে আমি কালই কলকাতা চলে আসব। ওখানে চাকরি খুঁজে নেবো।
—নেভার। আমি এই শহরে এই দেশে থাকতে চাই না। কিন্তু রঘু আমার একবার বিয়ে হয়েছিল, আমি ডিভোর্সের প্রসেসে আছি। তোমার বাড়িতে ব্যাপারটা কীভাবে নেবে!!
—এনি পয়েন্ট অফ টাইম। ইউ আর দি বেস্ট চয়েস ফর মি অ্যান্ড মাই ফ্যামিলি। কাল কলকাতায় এসে আমি তোমায় রেজিস্ট্রি করতে চাই। নো মোর ডিলেজ।
তনিমা হেসে ফেলে—
—ডিভোর্স পেতে ছ-মাস। রেজিস্ট্রি নোটিশ একমাস। আর হ্যাঁ, আমি কোনও অনুষ্ঠান চাই না।
—ওকে আমি বাড়িতে কথা বলছি। ওরা যদি চায় হায়দরাবাদে একটা রিসেপশন, আমি নাই বলবো।
—তুমি না করো না। আন্টি-আঙ্কেলের খারাপ লাগবে। হায়দরাবাদে রিসেপশন করতে আমার কোনও আপত্তি নেই।
কিন্তু কলকাতায় নয়। আর একবার বিয়েতে শাড়ি গয়নাগাটি অনেক কিছু হয়েছে। শুধু বিয়েটাই হয়ে উঠল না। তাই এ বারের বিয়েটায় আমি সবকিছু বন্ধ করে দিতে বলব। আমার আর একটা অনুরোধ আছে, তুমি এটা অন্যভাবে নিও না। আমার কাছে তুমি ভীষণ ভীষণ ইম্পরট্যান্ট। যেদিন রেজিস্ট্রি হবে তার আগেরদিন তুমি আর রাধু কলকাতায় আসবে। হোটেলে থাকবে। রেজিস্ট্রেশন আমাদের বাড়িতেই হবে। তুমি রাধুকে নিয়ে আসবে। আমাদের বাড়ির গুরুজনদের সঙ্গে দেখা করবে, প্রণাম করবে। আর সেদিনই ইভনিং ফ্লাইটে আমরা হায়দরাবাদ ফিরে যাব। সেখান থেকে কুয়ালালামপুর। এরপর কখনও কোনও পারিবারিক উৎসবে আর আমরা আসবো না। পারিবারিক সংকটে প্রয়োজন হলে আসবো। কিন্তু আমি একা।
তনিমার কোথাও একটা ভয়ংকর অভিমান কাজ করছিল। নিজের ওপর, মা-বাবা গোটা বসুন্ধরা ভিলার ওপর। সম্ভবত পারিবারিক সম্মানকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে তনিমার বিয়েটা বড় বেশি তাড়াহুড়ো করে দেওয়া হয়েছে। বসুন্ধরা ভিলা থেকে একটু খোঁজখবর নিলেই হয়তো অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত সম্পর্কে খবরাখবর জানা যেত। বসুন্ধরা ভিলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে তনিমার বড় বেশি অমর্যাদা করা হয়েছে।
তনিমার ইচ্ছেকে সম্মান দিয়ে সে যেমন বলেছিল ঠিক সেভাবেই সবকিছু হল। এ বাড়ি থেকেও কেউ তার ওপর কোনও রকম জোর করেনি। তারপর থেকে এই এতদিন তনিমা কোনও পারিবারিক উৎসবে বসুন্ধরা ভিলায় পা রাখেনি। বসুন্ধরার মৃত্যুর সময় তনিমা প্রথম সন্তানসম্ভবা, তাই তার আসা হয়নি। ঠিক উপরের ভাই তন্ময়কান্তির মৃত্যুর সময় তনিমার শরীরে তার দ্বিতীয় সন্তান। এত বছর পর স্বর্ণময়ীর মৃত্যুর কথা শুনে ছুটে এসেছে তনিমা রেড্ডি। এতদিনে এই প্রথমবার। কিন্তু কুয়ালালামপুর থেকে একাই এসেছে। সকলের সঙ্গে দেখা করে হায়দরাবাদ হয়ে সে ফিরে যাবে কুয়ালালামপুর। বিনয়কান্তি জানতেন, পারিবারিক আত্মীয়-স্বজনের ভিড়ে তনিমা থাকবে না। তাই তাকে শ্রাদ্ধ পর্যন্ত থাকার জন্য তিনি জোর করেননি। —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম
‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com