রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

ফুচকা খেতে ভালোবাসেন না এমন লোক বোধহয় ভূ-ভারতে বিরল। তা সে প্রাচীনকালই হোক বা আধুনিক। রাস্তার ধারে অলিগলি থেকে ঝাঁ চকচকে শপিং মল, মার্কেটপ্লেস—এমনকি বিয়ে বাড়ির স্টারটার মেনু হিসাবেও ফুচকার সদর্পো উপস্থিতি। সারা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তেই ফুচকার জনপ্রিয়তা খুব বেশি। যদিও বিভিন্ন অঞ্চলের ভিত্তিতে এই ফুচকার স্বাদ ও নামকরণ আলাদা। যেমন—দিল্লিতে এই ফুচকাকে বলে গোলগাপ্পা, পশ্চিমে পানিপুরী বিহার ও উড়িশায় গুড়চুপ এইসব আর কি!

বিভিন্ন ধরনের স্ট্রিট ফুডের মধ্যে ফুচকার আকর্ষণ অন্যতম। বোধহয় তালিকার শীর্ষেই থাকবে। অত্যন্ত মুখরোচক, জিভে জল আনা টক-ঝাল স্বাদের চটপটা ফুচকা সর্বত্রই যেমন অনায়াসে পাওয়া যায়, তেমনই দামেও তুলনামূলকভাবে সস্তা।
প্রাচীনকালের কথা কেন বললাম? শোনা যায়, মহাভারতেও নাকি উল্লেখ আছে ফুচকার। একবার মাথা কুন্তী তার নববিবাহিতা পুত্রবধূ দ্রৌপদীকে ঘরে থাকার সামান্য উপকরণ দিয়ে পঞ্চপাণ্ডব পুত্রের জন্য সুস্বাদু ও পেট ভরা আহার্য প্রস্তুত করার কথা বলেছিলেন। সময়ের সরণী বেয়ে বহু পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে যা রূপান্তরিত হয়েছে আজকের ফুচকায়।
আরও পড়ুন:

জারি তাপপ্রবাহের দাপট! গরমে সুস্থ থাকতে কী খাবেন?

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৯: ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—ওড়া, কেওড়া, চাক কেওড়া ও কৃপাল

 

ফুচকার রকম-সকম

শুধু কি আর মশলাদার আলুমাখা আর টক-ঝাল-তেঁতুল-জল দিয়ে বানানো চটপটা ফুচকা? পাশাপাশি দই ফুচকাও এখন নিতান্ত ব্যাকডেটেড, চিকেন ফুচকা, পনির ফুচকা, চকলেট ফুচকা বা আইসক্রিম ফুচকার কাছে।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৩: বাবু ডাক্তার ও ‘ডাক্তারবাবু’

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬৩: মহাভারতে উল্লিখিত মিথ্যাশ্রয়ের প্রাসঙ্গিকতা কী আজও আছে?

 

ফুচকার উপকরণ

ফুচকার উপকরণ হিসাবে সুজি, ময়দা, আটা, আলু সেদ্ধ, ছোলা সেদ্ধ, মটর সেদ্ধ, লবণ, বেকিং সোডা, কাঁচা লঙ্কা কুচি, ধনেপাতা কুচি, পুদিনা পাতা, গন্ধরাজ লেবু, রোস্টেড ধনে-জিরে গুঁড়ো, শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো, বিট লবণ, সাদা তেল, টক দই ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব উপকরণ বেশ স্বাস্থ্যকর। তবে স্বাদ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ফুচকায় বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহৃত হয়।

ফুচকার বিভিন্ন উপকরণ দিয়েই তৈরি হয় মুখরোচক চটপটা স্বাদের চুরমুর। এ যেন ফুচকারই সহোদরা। আলু সেদ্ধ, ছোলা সেদ্ধ, নুন, বিটনুন, ভাজা মশলার গুড়ো, লঙ্কার গুঁড়ো, তেঁতুল জল, লেবুর রস, ধনেপাতা কুচি সব একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে সবশেষে কয়েকটা ফুচকা হাতের চাপে ভেঙে গুঁড়ো করে ওই মিশ্রণের সঙ্গে মিলিয়ে নিলেই তৈরি জিভে জল আনা স্বাদের চুরমুর। এই চুলমুরের সুবিধা এই যে, এটা সহজেই শালপাতার বাটিতে করে বাড়ি অবধি নিয়ে গিয়ে আয়েশ করে বসে খাওয়া যায়। আর বড় কথা, এটা সহজেই বাড়িতেই বানিয়ে নেওয়া হলে পকেট ও স্বাস্থ্য দুই বাঁচে।

আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৯: বাইনাচ-গানেরও কদর ছিল ঠাকুরবাড়িতে

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২৩: তরু দত্ত— এক আনন্দ বিষাদের তরুলতা

 

ফুচকার আদৌ কি কোনও উপকারিতা আছে?

বেশিরভাগ মানুষই উত্তরে বলবেন, উপকারিতার জন্য কি আর ফুচকা খাই? ভালো লাগে তাই খাই। অনেক ফুচকা প্রেমীই তো বলেন, সপ্তাহে বার কয়েক ফুচকা না খেলে কি চলে? মন খারাপ থাকলে, আর মন ভালো থাকলেই তো শুধু ফুচকা খাই।

ওজন কমাতে গিয়ে যাঁরা ফুচকাকে বিসর্জন দিয়ে তীব্র মনকষ্টে ভুগছেন, তাঁদের জন্য আনন্দ সংবাদ—একটা ফুচকায় থাকে মোটামুটি ৩৬ কিলোক্যালরি। অর্থাৎ এক প্লেট বা ছটা ফুচকায় মোট ২১৬ কিলো ক্যালরি। আপনি যদি ওজন কমানোর জন্য মোটামুটি দৈনিক ১৪০০ কিলো ক্যালরির ডায়েট নেন, তবে বিকেলের জলখাবার হিসাবে বরাদ্দ ২০০ থেকে ২৫০ কিলো ক্যালরি এক প্লেট ফুচকা দিয়ে রিপ্লেস করতে করতেই পারেন। এই সপ্তাহে এক থেকে দু’ দিন চলতেই পারে। তবে রোজ রোজ নয়। দিনের অন্যান্য ডায়ের রুটিন মাফিক হলে, সপ্তাহে দু’ দিন ছটা করে ফুচকা খেলে ওজন বাড়বে না।

ফুচকায় ব্যবহৃত বিট লবণ, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, লেবুর রস, টকদই ইত্যাদি হজম ভালো রাখে।

কাঁচা লঙ্কা ও লেবুর রস মেটাবলিক রেট বাড়ায়।

অরুচি বা ঘনঘন সর্দি কাশিতে যাঁরা ভোগেন তাঁদের তেঁতুল জল দিয়ে তৈরি টক-ঝাল ফুচকা মুখে রুচি ফেরাতে সাহায্য করে।

তবে ফুচকার এই সব উপকার পেতে হলে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ঘরে প্রস্তুত ও পরিবেশিত হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

আরও পড়ুন:

বদলে দিয়েছিলেন স্বাধীনতা-উত্তর নাটক এবং চলচ্চিত্রের ভাষা

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৯: বেশি ঘুম শরীরের পক্ষে ভালো?

 

ফুচকার খারাপ দিক

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দূষিত জল ও ভালোভাবে না ধোয়া উপকরণের সাহায্যে বানানো ও পরিবেশিত ফুটকা যে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু সংক্রমণের কারণ হয়ে উঠতে পারে, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, আন্ত্রিক, ডায়রিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী হতে পারে রাস্তার ধারের এই ফুচকা।

তেঁতুলের অতিরিক্ত টারটারিক অ্যাসিড থেকে বমি-বমি ভাব, পেট ব্যথা, পেট জ্বালা ইত্যাদি হতে পারে। তবে অল্পস্বল্প খেলে অপকার নয়, উপকারীই মেলে।

গ্যাস্ট্রাইটিস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে ফুচকার অতিরিক্ত টক বা ঝাল কোনওটাই পেট বরদাস্ত করবে না। তাই সাবধানে রয়ে-সয়ে খাওয়াই ভালো।

ফুচকায় প্রচুর পরিমাণে লবণ ব্যবহৃত হয়, যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ভালো নয়।

অতিরিক্ত পরিমাণে ফুচকা প্রায়ই খাওয়া হলে, ক্যালোরির মাত্রা বাড়বেই।

বাড়ির বাইরে কোথাও ফুচকা খেতে হলে, তা ভালোভাবে ঢাকা রাখার ব্যবস্থা আছে কিনা বা গ্লাভস পরে পরিবেশিত হচ্ছে কি না ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

টক-ঝালে উপভোগ্য হয়ে উঠুক স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১

* ডায়েট ফটাফট (Healthy Diet tips): শম্পা চক্রবর্তী (Shampa Chakrabarty), কনসালট্যান্ট ডায়েটিশিয়ান।

Skip to content