সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ: লেখক।

এই বছরের হিসেব নিকেশ একটু অন্যরকম কেমন। যা যা অলিখিত হয়ে চলছিল, তাকেই যেন মিলিয়ে দিতে নেমে পড়েছে চারপাশের দিনগুলো। এই যেমন সরস্বতী পুজোর দিনেই ভ্যালেন্টাইন দিবস। কে জানে কী আছে বিধাতার মনে? না হলে স্বয়ম্ভূ দেবাদিদেবের দিনটিই কিনা এবছর আটুই মার্চ নারী দিবস?
খাঁচার পাখি আর বনের পাখির হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে এমনটা হয় হয়তো। শিবের মতো বর চাইতে চাইতে নারীর আত্ম-উদ্ঘোষণার একটি দিন খুঁজে পাওয়া, আর সেদিনই কিনা দেবাদিদেবের সারপ্রাইজ ভিজিট!
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩৩: লিপ ইয়ার

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৪: শোভনাসুন্দরী—ঠাকুরবাড়ির এক সরস্বতী!

সেই কোন কালে কালিদাস বলে গিয়েছেন, পার্বতী আর পরমেশ্বর বাক আর অর্থের মতোই জোটবদ্ধ। একে অপরের পরিপূরক। কালিদাসের কাল বিগত। সুবর্ণলতারাও আর গৃহবন্দি নেই, তবুও সদ্য বিগত বন্ধনজর্জর কালের ছায়াপাত ঘটে, ঘটতেই থাকে। ভারতীয় আস্তিক দর্শন বলবে প্রকৃতি-পুরুষ তত্ত্বের কথা, পুরুষ চির অচঞ্চল কিন্তু সৃষ্টির অধিকর্তা। নারী ক্রিয়াশীলা, কিন্তু তাঁর সৃজনী শক্তি পুরুষের চৈতন্যের অধীন। দুয়ের মিলনে জেগে ওঠে প্রাণ, বিশ্ব চরাচর।

এই যেমন অর্ধনারীশ্বরের কিংবা প্রকৃতি-পুরুষ তত্ত্বের সাকার রূপ শিবারূঢ়া দেবী কালিকাকে ঘিরে জল্পনা-কল্পনায় সামাজিক রঙ লাগে। ওই রঙে কৃষ্ণ আঁধার, শ্বেতশুভ্র রূপালোক, আরক্তিম অনুরাগ কিংবা নীল মৃত্যুর ছায়া। তত্ত্ব ক্রমশ মানবীয় রূপ নেয়। অচঞ্চল পুরুষতত্ত্ব শ্মশানবৈরাগী উদাসীন নেশাগ্রস্ত আশুতোষ পুরুষে পরিণত হন। বলা ভালো, পুরুষ সিংহে। এদিকে, পুরুষ সিংহ সিংহীর এনে দেওয়া শিকার খেয়ে শৌর্যে বীর্যে প্রকৃত পুরুষসিংহ হয়ে ওঠেন। ওদিকে, ত্রিগুণাতীত শিব কাব্যের পাকেচক্রে পড়ে গুণহীন শ্মশানচারী বাউণ্ডুলে এক স্বামী হয়ে দিনরাত অভাবের সংসারে কোঁদল করে কিংবা নেশায় অচেতন থেকে জগতের পরিত্রাণ করেন।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮২: রবীন্দ্রনাথ সাহেব-শিক্ষকদের কাছেও পড়েছেন

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৬: সারদা মায়ের ছোটকাকা ও পুত্রপ্রতিম স্বামীজির জীবনাবসান

শিব আশুতোষ, বেলপাতা আর জলেই তাঁর তুষ্টি, এটাই বুঝি তাঁর ইউএসপি। কোনও বাহানা বায়না নেই, এটা খাব না, সেটা করব না। নেবেন ধুতুরা ফুল, আকন্দের মালা। বদলে সিদ্ধিদান করবেন। ভক্তরা আগে থেকে তাঁকেই সিদ্ধি দিয়ে রাখেন ধুপ আর বাতাসার সঙ্গে। তবে হ্যাঁ, রেগে গেলে একটু ম্যানেজ করে নিতে হবে, ওটাই ওঁর বিশেষ ব্যাপার। রুদ্র কিন্তু সহজেই ভোলানাথ হতে পারেন, নিজগুণে।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-২: রাজমালা অনুসারে রত্ন মাণিক্যের পিতা হলেন ডাঙ্গর ফা, তিনিই ধর্ম মাণিক্য

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫৩: ক্রোধ ও ক্ষমা, কোনটির প্রভাব বেশি? হিংসা ও প্রতিহিংসার ফল কী সুদূরপ্রসারী?

সুকুমার রায় এককালে বলে গিয়েছেন, ছেলেরা জগতের পচা ও ময়লা, যাবতীয় খারাপ জিনিসের নির্মাণ। মেয়েরা যাবতীয় ভাল ভাল জিনিস, যেমন ক্ষীর ননী ছানা ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি। তো, দেবাদিদেব, যাঁর কোনও ছোটবেলা নেই, শিবু-শম্ভু-ভোলা ইত্যাদি ডাকনামে যিনি দাপিয়ে বেড়ান, তিনি বাড়িতে স্নান করেন কিনা বলা কঠিন। মেনকা যেভাবে বিয়ের মণ্ডপে তাঁকে দেখেছিলেন তাতে তেমন আশাও কম। রেগে গেলে রাগ থামানোর সহজ উপায় হল মাথায় জল ঢালা। রাগ কিংবা জ্বর, ভয়ানক রকম উঠে গেলে মাথায় জল ঢালাই বিধান। আবার বেশ ঘটা করে বসিয়ে মাথায় নিয়ম করে জল ঢালার প্রথাই হল অভিষেক। পৃথিবী যখন বেশিরকমের গরম হয়ে ওঠে, তখন কালবৈশাখী নামে। শিবরাত্রিতে প্রহরে প্রহরে জল ঢেলে যে অভিষেক হয় কিংবা রুদ্র অথচ ভোলা শিবকে শান্ত ও তুষ্ট করার যে সরল পাটীগণিত, তাতে রাগ গলে জল হতে কতক্ষণ!
* ক্যাবলাদের ছোটবেলা (kyablader-chotobela): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content