শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


 

উইকেন্ড এসকর্ট

— দেখুন, আপনার নামটা?
— ধৃতিমান।
— হ্যাঁ, ধৃতিমান নিখিল সেন নামকরা ব্যারিস্টার ছিলেন। কোর্টে কোর্টের বাইরে নানারকম কথার খেলা খেলতেন। আমি সাধারণ স্কুল টিচার।
— আপনি কলকাতার নামী স্কুলের টিচার।
—স্কুলের নাম হয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য। মোটামুটি সব স্কুলেই সিনসিয়ার টিচার্স থাকেন। একটা বেসিক ডিসিপ্লিন থাকে। কোনও কোনও ব্যাচে খুব ভালো স্টুডেন্ট আসে খুব ভালো রেজাল্ট করে। এমন নয় যে অন্য ব্যাচে সেই টিচার ভালো করে পড়াননি। তাই টিচাররা সাধারণই থাকেন। হ্যাঁ যে কথা বলছিলাম, এটা সাধারণ কথার কথা। স্বাভাবিক মৃত্যু না হলে সেটা অস্বাভাবিক। আর তার সঙ্গে খুন শব্দটা এসেই যায়। আপনার মূল প্রশ্নের উত্তরটা দিয়েনি। আপনি বুদ্ধিমান নিশ্চয়ই এটা বুঝতে পেরেছেন যে নিখিল সেনের জীবন নিয়ে আমার খুব একটা আগ্রহ ছিল না।

—উনি যে আপনার আধার কার্ড ব্যবহার করে অন্য কাউকে আই মিন।
—প্রথমত আধার কার্ড ব্যাপারটা পাসপোর্ট এর মতো এক্সক্লুসিভ নয়। আপনি ইচ্ছে করলেই ঘনিষ্ঠ কারও আধার কার্ড ডাউনলোড করে ল্যামিনেট করে নিতে পারেন। আধার সাইটে গিয়ে পিভিসি আধার কার্ডের কপি পেতে পারেন। এখন আমার আধার কার্ড নিয়ে অন্য কাউকে অ্যালাও করছেন যারা সেটা তো তাদের ইন্টিগ্রিটির প্রশ্ন। আজ নয়, সেই মুঘল যুগ থেকেই আমাদের সততা খুব কম দামে বিক্রি হয়। সুতরাং এটা জানা বা না জানার কোন প্রশ্ন নেই ম্যানুপুলেশন কে কীভাবে করছেন? সেটা তার ব্যাপার। আবারও বলছি সেসব নিয়ে আমার বা আমার পরিবারের কোন উৎসাহ দায়বদ্ধতা কিছু নেই।
—পরিবার বলতে আপনার ছেলে বিদেশ থেকে কি ফিরছেন?
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-১৭: নিখিল সেনের মৃত্যু নিয়ে আদালতে প্রশ্ন উঠবেই

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৫৩: কাপাডিয়ার বয়ান

শ্রুতি সেন এ বার সরাসরি তাকান।
—দিব্যজ্যোতিকে এসবের মধ্যে টানবেন না, তার এক্সাম চলছে। তাকে আমি সব জানিয়েছি এবং আসতে মানা করেছি। আর কিছু ?
—তর্কের খাতিরে যদি ধরে নিই যে মিস্টার সেন খুন হয়েছেন, আপনি কি কাউকে সন্দেহ করেন?
—আমি নিখিলের এখনকার আশপাশের সার্কেলে কে বা কারা ছিলেন তার কিছুই বিশেষ জানি না? বহু বছর আগে যখন এত বিখ্যাত হয়ে যায়নি তখন জানতাম। আজকের নিখিল সেনকে আমি বিশ্বাসও করি না সন্দেহও করি না। সুতরাং এত যদি কিন্তু’র মধ্যে আমি যেতেই চাই না। বলতে পারব না।
—আপনি কখন খবর পেলেন?
—নিখিলের এক জুনিয়র ফোন করে ভোরবেলা জানিয়েছিল।
— আপনি রিসর্টে গিয়েছিলেন।
—না।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, পর্ব-৩৬: সুন্দরবনের নদীবাঁধের হাল হকিকত

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’

—আপনি তো শুনেছি ময়না তদন্তের পর ওঁর ডেড বডি নিতেও অস্বীকার করেছিলেন।
—আপনি সবসময় যে সঠিক শুনবেন সেই গ্যারান্টি কোত্থেকে পেলেন? ভুল শুনেছেন। নিখিল বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে ওর এক মামাতো ভাই আছে। আমি তাকে অনুরোধ করেছিলাম ডেডবডি নিয়ে ক্রিমেশন করাতে। আমার পক্ষে ওই সব হ্যান্ডেল করাটা ডিফিকাল্ট ছিল।
—না, মানে সম্পর্ক যাই হোক একটা পারিবারিক ব্যাপার তো থাকে সাধারণত।
—ধৃতিমান আপনার নামের অর্থ ধৈর্যবান। সেইসঙ্গে আপনি বুদ্ধিমান। এটা আপনি তো নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে নিখিল সেনের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ঠিকই ইউজুয়াল সম্পর্ক ছিল না। এই পুরো কনভারসেশনটাই কনফিডেন্সিয়াল, কিন্তু এরপর আমি যা বলব সেগুলো আরও কনফিডেন্সিয়াল আপনার অফিসেও আলোচনা করার জন্য নয়। দিস ইজ ফর ইওর পার্সোনাল কনজাম্পশন অনলি। মিউচুয়ালি সেপারেটেড বাট লিগ্যালি নট। যতদিন পর্যন্ত দিব্যজ্যোতির স্টাডিজ কম্পপ্লিট না হচ্ছে, ততদিন আমি নিখিলের সমস্ত বেয়াদপি টলারেট করবার কথা দিয়েছিলাম। ইট’স অ্যা ডিল। আমি আপনার সামনে স্বীকার করছি থ্যাংক গড আমাকে ওই লোকটার সঙ্গে ডিভোর্স পেপার সাইন করে কোর্টে অ্যাপিয়ার করতে হবে না।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৪: মা সারদার সন্তানসম শিষ্যের দেহরক্ষা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস: ঠাকুরবাড়ির বাঙালিয়ানা‌

শ্রুতি সেন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।
—হোপ ইট ওয়জ ডান।
—হ্যাঁ শুধু একটা প্রশ্ন।
—ইয়েস।
—নিখিল সেনকে নিয়ে আপনার স্কুলে বা অন্যত্র কখনও কোনও এমব্যারাশিং পজিশনে পড়তে হয়নি।
—আমার সঙ্গে এতক্ষণ কথা বলার পর যে এটা কেন আপনার মনে হল? হয়তো আপনি এমন একটা কিছু জানতে চাইছেন যেটার উত্তর এখনও আপনি আমার থেকে পাননি। তাই নানাভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। মিঃ চৌধুরী আমি আপনাকে অ্যালাও করছি তাই আপনি প্রশ্নগুলো করতে পারছেন। আমার পার্সোনালিটি টপকে ফট করে এসব প্রশ্ন করার সাহস কেউ করে না। নমস্কার।
একবারও পিছনের দিকে না তাকিয়ে শ্রুতি সেন সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে যাচ্ছেন। তাঁর দিকে তাকিয়ে ধৃতিমান ভাবছিল হয়ত সবই ঠিকঠাক বলছেন। কিন্তু যদি না বলতেন তাহলে? শ্রেয়া ম্যাডাম কি ধমকে চমকেও এনার কাছ থেকে কোনও কথা বের করতে পারবেন?—চলবে।
 

নিখিল সেন হত্যা রহস্য: পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content