অলঙ্করণ : সৌমি দাসমণ্ডল।
হরিপদ বলল, “আপনি ঠিক আছেন তো?” তার গলার উদ্বেগের সুর যথেষ্ট আন্তরিক।
সত্যব্রত বললেন, “হ্যাঁ, আপাতত। তবে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!”
সত্যব্রত মিসড কল করার প্রায় পাঁচ মিনিটের মধ্যে হরিপদ চলে এসেছিল গাড়ি নিয়ে। সে যেন অপেক্ষাতেই ছিল, স্যার কখন মিস কল করবেন আর সে তাড়াতাড়ি চলে আসবে। বেলা ফুরিয়ে আসছিল দ্রুত। অরণ্যশীর্ষের আলো মুছে যাচ্ছিল ক্রমে। পাখিদের কলকাকলি, ঘরে ফেরার আনন্দ প্রকাশ করছিল। যতক্ষণ না হরিপদ আসছিল গাড়ি নিয়ে সত্যব্রত হাঁটা থামাননি। মোরাম বিছানো রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছিলেন তিনি। পায়ের শব্দ যদিও আর শোনা যাচ্ছিল না। যে তাঁকে অনুসরণ করছিল, সে খোলা রাস্তা ধরে অনুসরণের দুঃসাহস দেখাতে রাজি নয়, এর অর্থ হল, অনুসরণকারী সত্যব্রতর খুব চেনা অথবা সত্যব্রত চিনে নিলে অসুবিধায় পড়বে সে।
কিন্তু সত্যব্রত তখন তিনটি কারণে দুশ্চিন্তা করছিলেন। এক নম্বর কারণ, নুনিয়া যে ফোনটা কুড়িয়ে পেয়েছিল এবং ধীরাজ মহাপাত্র যা তাঁকে হস্তান্তরিত করেছে, তা যদি বেহাত হয়, তাহলে সেটা বড়সড় ক্ষতি হবে। দ্বিতীয় কারণ, নুনিয়ার সুরক্ষা। তাঁর আশঙ্কা হচ্ছিল, যে কোন দিন নুনিয়ার বড় কোণ বিপদ হতে পারে। মঙ্গল মাহাতোর সঙ্গে বিবাহ হলেও তো বিপদ! তৃতীয় কারণ, ধীরাজ মহাপাত্র নিজেই। সে যে সত্যব্রতর সঙ্গে দেখা করেছে, মোবাইল হস্তান্তরিত করেছে, এ-কথা নিশ্চয়ই অনুসরণকারীর জানতে বাকি নেই। তাহলে তার উপর শাস্তির খাঁড়া নেমে আসবে না তো? এতসব ব্যাপার চিন্তা করতে গিয়ে তাঁর নিজের প্রাণের চিন্তাটুকু কোথায় নেই হয়ে গিয়েছিল। হরিপদর গাড়ি যদি জোরে হর্ণ না বাজাতো, তিনি হয়তো দেখতেই পেতেন না।
সত্যব্রত বললেন, “হ্যাঁ, আপাতত। তবে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!”
সত্যব্রত মিসড কল করার প্রায় পাঁচ মিনিটের মধ্যে হরিপদ চলে এসেছিল গাড়ি নিয়ে। সে যেন অপেক্ষাতেই ছিল, স্যার কখন মিস কল করবেন আর সে তাড়াতাড়ি চলে আসবে। বেলা ফুরিয়ে আসছিল দ্রুত। অরণ্যশীর্ষের আলো মুছে যাচ্ছিল ক্রমে। পাখিদের কলকাকলি, ঘরে ফেরার আনন্দ প্রকাশ করছিল। যতক্ষণ না হরিপদ আসছিল গাড়ি নিয়ে সত্যব্রত হাঁটা থামাননি। মোরাম বিছানো রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছিলেন তিনি। পায়ের শব্দ যদিও আর শোনা যাচ্ছিল না। যে তাঁকে অনুসরণ করছিল, সে খোলা রাস্তা ধরে অনুসরণের দুঃসাহস দেখাতে রাজি নয়, এর অর্থ হল, অনুসরণকারী সত্যব্রতর খুব চেনা অথবা সত্যব্রত চিনে নিলে অসুবিধায় পড়বে সে।
কিন্তু সত্যব্রত তখন তিনটি কারণে দুশ্চিন্তা করছিলেন। এক নম্বর কারণ, নুনিয়া যে ফোনটা কুড়িয়ে পেয়েছিল এবং ধীরাজ মহাপাত্র যা তাঁকে হস্তান্তরিত করেছে, তা যদি বেহাত হয়, তাহলে সেটা বড়সড় ক্ষতি হবে। দ্বিতীয় কারণ, নুনিয়ার সুরক্ষা। তাঁর আশঙ্কা হচ্ছিল, যে কোন দিন নুনিয়ার বড় কোণ বিপদ হতে পারে। মঙ্গল মাহাতোর সঙ্গে বিবাহ হলেও তো বিপদ! তৃতীয় কারণ, ধীরাজ মহাপাত্র নিজেই। সে যে সত্যব্রতর সঙ্গে দেখা করেছে, মোবাইল হস্তান্তরিত করেছে, এ-কথা নিশ্চয়ই অনুসরণকারীর জানতে বাকি নেই। তাহলে তার উপর শাস্তির খাঁড়া নেমে আসবে না তো? এতসব ব্যাপার চিন্তা করতে গিয়ে তাঁর নিজের প্রাণের চিন্তাটুকু কোথায় নেই হয়ে গিয়েছিল। হরিপদর গাড়ি যদি জোরে হর্ণ না বাজাতো, তিনি হয়তো দেখতেই পেতেন না।
হরিপদ বলল, ‘আমি ফোনের দিকেই চোখ পেতে বসেছিলাম। আমার মন বলছিল, আপনি ফোন করবেন। তারপর দেখি মিসড কল করলেন। আমি আর এক মিনিটও দেরি করিনি! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাড়ি নিয়ে ছুটে এসেছি।”
সত্যব্রত বললেন, “তোমায় ধন্যবাদ। হয়তো আমার ভয় অমূলক ছিল। তবুও আমার মনে হচ্ছিল, কেউ যেন আমাকে ফলো করছে। জঙ্গলের পাতার উপর কারুর পা টিপে টিপে চলার আওয়াজ আমার কানে এসেছে। প্রতি পদক্ষেপে পাতার মর্মরধ্বনি আমি শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি পরখ করবার জন্য এক-দু’বার দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম, শব্দটাও থেমে যাচ্ছিল তক্ষুনি!”
হরিপদ বলল, “কেউ কেন আপনাকে ফলো করতে যাবে, এটাই আমি বুঝতে পারছি না স্যার ! আপনি তো কারুর কোন ক্ষতি করেননি। বরং আমরা সকলেই বলি, আপনি আগের ডাক্তারবাবুদের থেকে একেবারে আলাদা। আমি তো কমদিন এখানে কাজ করছি না? কত ডাক্তারকেই তো আসতে-যেতে দেখলাম। কিন্তু তাঁরা কেউই আপনার মতো নয়। এই জঙ্গলকে, তার বাসিন্দা মানুষগুলিকে আপনার মতো কেউ এতো ভালোবাসেনি। দেখবেন, যদি এখানে কয়েক বছর থেকে যেতে পারেন, তাহলে একদিন চার্চের হাসপাতালের ভিড় পাতলা হয়ে গিয়ে অনেকে আমাদের হেলথ সেন্টারে এসে জুটবে!”
সত্যব্রত বললেন, “তোমায় ধন্যবাদ। হয়তো আমার ভয় অমূলক ছিল। তবুও আমার মনে হচ্ছিল, কেউ যেন আমাকে ফলো করছে। জঙ্গলের পাতার উপর কারুর পা টিপে টিপে চলার আওয়াজ আমার কানে এসেছে। প্রতি পদক্ষেপে পাতার মর্মরধ্বনি আমি শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি পরখ করবার জন্য এক-দু’বার দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম, শব্দটাও থেমে যাচ্ছিল তক্ষুনি!”
হরিপদ বলল, “কেউ কেন আপনাকে ফলো করতে যাবে, এটাই আমি বুঝতে পারছি না স্যার ! আপনি তো কারুর কোন ক্ষতি করেননি। বরং আমরা সকলেই বলি, আপনি আগের ডাক্তারবাবুদের থেকে একেবারে আলাদা। আমি তো কমদিন এখানে কাজ করছি না? কত ডাক্তারকেই তো আসতে-যেতে দেখলাম। কিন্তু তাঁরা কেউই আপনার মতো নয়। এই জঙ্গলকে, তার বাসিন্দা মানুষগুলিকে আপনার মতো কেউ এতো ভালোবাসেনি। দেখবেন, যদি এখানে কয়েক বছর থেকে যেতে পারেন, তাহলে একদিন চার্চের হাসপাতালের ভিড় পাতলা হয়ে গিয়ে অনেকে আমাদের হেলথ সেন্টারে এসে জুটবে!”
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৫১: রিমিতার বয়ান
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৮: সকালবেলাই হাঁটতে হবে?
সত্যব্রত প্রীত হলেন। হরিপদর মতো মানুষের কাছ থেকে কমপ্লিমেন্ট পাওয়াও একটা বিশাল ব্যাপার। এই হেলথ সেন্টারের সঙ্গে যাদের নাড়ির টান, হরিপদ তাদের একজন। আজ প্রায় বছর কুড়ি হল সে এই সেন্টারে গাড়ি চালাচ্ছে। তার আগে সে চার্চের হাসপাতালে কাজ করত। হঠাৎ সে-কথা মনে পড়ায় সত্যব্রত একটু চমকিত হলেন। হরিপদ চার্চের হাসপাতালে কাজ করত, তার মানে সে কিছু তথ্য দিতে পারে। সত্যব্রত ডাকলেন, “হরিপদ?”
“বলুন স্যার।“
“তুমি চার্চের হাসপাতালে কাজ করতে না একসময়?”
“হ্যাঁ স্যার। কিন্তু সে অনেকদিন আগে!”
“তখন ফাদার কে ছিলেন? রডরিগ?”
“আজ্ঞে না স্যার, তখন ছিলেন ফাদার স্যামুয়েল। একেবারে মাটির মানুষ। লোকে সাক্ষাৎ গড্ বলে মনে করত। আমাদের দেখতেন নিজের সন্তানের মতো! তাঁর জন্যই তো চার্চে জয়েন করেছিলেন আমার বাবা-মা। আমি তাঁকে দেখেছি যখন তখন তাঁর বয়স হয়েছে। কিন্তু কী যে পরিশ্রম করতে পারতেন! না দেখলে বিশ্বাস হবে না! আমি তাঁর কাছেই কাজ করেছি।”
“ফাদার রডরিগকে দেখনি ?”
“পরে এসেছেন। আমি থাকতে থাকতেই। একেবারে বিপরীত। চার্চের নিয়মকানুন মানতেন না, অথচ তিনি নিজে এই চার্চের প্রধান! বেপরোয়া জীবনযাপন করতেন। একটা ঘোড়া ছিল, তাতে চড়ে এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াতেন। লোকে নানা কথা বলত, তবে আমার জানা নেই সে-সব সত্যি কি না!”
“যেমন…!”
“থাক না স্যার। শুনেছি তিনি অসুস্থ, শয্যাশায়ী। উঠতেও পারেন না ভালো করে। খেতে পরতেও না! কী হবে আর পুরানো ঘা খুঁচিয়ে?”
“হরিপদ! পুরানো ঘা-ই যখন নতুন ঘা-এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন আগে তাকে সারিয়ে তুলতে হয়। তাতে নতুন ঘা আপনা থেকেই সেরে যায়। আমাদের একজনকে বাঁচাতে হবে, আর তাকে বাঁচানোর জন্য চার্চের পুরানো দিনের গল্প যতটা সম্ভব শোনা উচিত!”
“বলুন স্যার।“
“তুমি চার্চের হাসপাতালে কাজ করতে না একসময়?”
“হ্যাঁ স্যার। কিন্তু সে অনেকদিন আগে!”
“তখন ফাদার কে ছিলেন? রডরিগ?”
“আজ্ঞে না স্যার, তখন ছিলেন ফাদার স্যামুয়েল। একেবারে মাটির মানুষ। লোকে সাক্ষাৎ গড্ বলে মনে করত। আমাদের দেখতেন নিজের সন্তানের মতো! তাঁর জন্যই তো চার্চে জয়েন করেছিলেন আমার বাবা-মা। আমি তাঁকে দেখেছি যখন তখন তাঁর বয়স হয়েছে। কিন্তু কী যে পরিশ্রম করতে পারতেন! না দেখলে বিশ্বাস হবে না! আমি তাঁর কাছেই কাজ করেছি।”
“ফাদার রডরিগকে দেখনি ?”
“পরে এসেছেন। আমি থাকতে থাকতেই। একেবারে বিপরীত। চার্চের নিয়মকানুন মানতেন না, অথচ তিনি নিজে এই চার্চের প্রধান! বেপরোয়া জীবনযাপন করতেন। একটা ঘোড়া ছিল, তাতে চড়ে এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াতেন। লোকে নানা কথা বলত, তবে আমার জানা নেই সে-সব সত্যি কি না!”
“যেমন…!”
“থাক না স্যার। শুনেছি তিনি অসুস্থ, শয্যাশায়ী। উঠতেও পারেন না ভালো করে। খেতে পরতেও না! কী হবে আর পুরানো ঘা খুঁচিয়ে?”
“হরিপদ! পুরানো ঘা-ই যখন নতুন ঘা-এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন আগে তাকে সারিয়ে তুলতে হয়। তাতে নতুন ঘা আপনা থেকেই সেরে যায়। আমাদের একজনকে বাঁচাতে হবে, আর তাকে বাঁচানোর জন্য চার্চের পুরানো দিনের গল্প যতটা সম্ভব শোনা উচিত!”
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬১: ‘বন্ধু’ তোমার পথের সাথী
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৮: ষাট-বাষট্টি, বড়োজোর সত্তর বছর বাঁচবেন রবীন্দ্রনাথ, বলেছিল এক গণৎকার
হরিপদ বলল, “আমাকে মাফ করবেন স্যার। আমি আসলে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। স্যরি!”
“ঠিক আছে। তুমি এখন বল, ফাদার রডরিগের সম্পর্কে কী রিউমার মানে ওই যাকে বলছ নানা কথা বলত লোকে, তার কথাই বলছি আর কী, কী শুনেছ?”
“স্যার। লোকের কথা, সব সত্যি নয় যদিও। ফাদার রডরিগের না কি এখানে এসে পদস্খলন ঘটেছিল! ঘোড়ায় চড়ে তিনি নানা জায়গায় যেতেন, আবার তাঁর গোপন প্রেমিকাদের কাছেও যেতেন। একজন ছিলেন না তাঁর জীবনে, অনেক মেয়েই না কি এসেছিল। এই নিয়ে একবার খুব গণ্ডগোল হয়। শহরের বড় চার্চ থেকে আরও অনেক ফাদার আসেন। তারপর অবশ্য ব্যাপারটি মিটে যায়। ফাদার কিছুকালের জন্য এই চার্চ ছেড়ে অন্যত্র চলে যান, তারপর আবার ফিরে আসেন। আমি অবশ্য এ সব ঘটার অনেক আগেই চার্চ ছেড়ে হেলথ সেন্টারে জয়েন করেছি। ফাদার রডরিগের আমলে আমি চার্চে ছিলাম না। তবে তাঁকে দেখেছি। বেশিদিন আগের কথা তো নয়।
“ঠিক আছে। তুমি এখন বল, ফাদার রডরিগের সম্পর্কে কী রিউমার মানে ওই যাকে বলছ নানা কথা বলত লোকে, তার কথাই বলছি আর কী, কী শুনেছ?”
“স্যার। লোকের কথা, সব সত্যি নয় যদিও। ফাদার রডরিগের না কি এখানে এসে পদস্খলন ঘটেছিল! ঘোড়ায় চড়ে তিনি নানা জায়গায় যেতেন, আবার তাঁর গোপন প্রেমিকাদের কাছেও যেতেন। একজন ছিলেন না তাঁর জীবনে, অনেক মেয়েই না কি এসেছিল। এই নিয়ে একবার খুব গণ্ডগোল হয়। শহরের বড় চার্চ থেকে আরও অনেক ফাদার আসেন। তারপর অবশ্য ব্যাপারটি মিটে যায়। ফাদার কিছুকালের জন্য এই চার্চ ছেড়ে অন্যত্র চলে যান, তারপর আবার ফিরে আসেন। আমি অবশ্য এ সব ঘটার অনেক আগেই চার্চ ছেড়ে হেলথ সেন্টারে জয়েন করেছি। ফাদার রডরিগের আমলে আমি চার্চে ছিলাম না। তবে তাঁকে দেখেছি। বেশিদিন আগের কথা তো নয়।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩২: সরকারবাড়ির ছেলেদের সঙ্গে শ্রীমার বুড়ি-বুড়ি খেলা
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৮: কে আবার বাজায় বাঁশি
বছর কুড়ি আগে ফাদার রডরিগ প্রথম আসেন। তখনই পঞ্চাশ কি পঞ্চান্ন শুনেছিলাম, এখন আর মনে নেই, কিন্তু কর্মঠ ছিলেন এত যে সহজে বয়সের আন্দাজ করা যেত না। বছর দশেক ছিলেন, তারপরেই ঐ ঝামেলাটি হয়, ফাদার এখান থেকে চলে যান। বছর পাঁচেক পরে ফিরেও এসেছিলেন। হালে বছরখানেক পরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর থেকে তাঁকে আর কেউ দেখেনি। তিনি তাঁর নিজের কক্ষেই স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী হয়ে আছেন বলে শুনেছি। শরীর একেবারে ভেঙে গিয়েছে। ফাদার রডরিগের অসুস্থতায় অনেকে খুব দুঃঝিত, ব্যথিত। চরিত্রে যেমন দোষ থাকুক না কেন, গুণও অনেক ছিল। গরীব-দুঃখী দেখলে প্রাণ কাঁদত। কেউ কায় নি শুনলে নিজের খাবার তাঁকে মুখে তুলে ধরে নিজে উপবাস করে কাটাতেন। এই মানুষটির অমন কলঙ্ক, মাঝেমাঝে অবাক হয়ে যাই আমি!”
“অবাক হওয়ার কিছু নেই হরিপদ। এটাই জীবন। নিছক ভালো আর নিছক খারাপ তুমি কোথাও পাবে না। যা শুনে বুঝলাম, ফাদার রডরিগ একটি বর্ণময় চরিত্র। সত্যি, তাঁর এইরকম পরিণতি খারাপ লাগছে। তাঁর সঙ্গে যদি দেখা করা যেত, শুনেছি তিনিই না কি নুনিয়াকে বাঁচিয়েছিলেন ?”
“স্যার, লোকে বলে, এমনি এমনি বাঁচান নি, ফাদারের না কি কী সব স্বার্থ ছিল নুনিয়াকে বাঁচানোর পিছনে ! তবে সেটা কী তা আমার জানা নেই।”
“ফাদার হলেন তথ্যের খনি। কত কিছু যে তিনি জানেন, সত্যিই আমার আফসোস হচ্ছে যে ফাদারের কাছে পৌঁছানো গেল না ! আর আমি পৌঁছানোর আপাতত কোন সম্ভাবনাও দেখছি না…”
“অবাক হওয়ার কিছু নেই হরিপদ। এটাই জীবন। নিছক ভালো আর নিছক খারাপ তুমি কোথাও পাবে না। যা শুনে বুঝলাম, ফাদার রডরিগ একটি বর্ণময় চরিত্র। সত্যি, তাঁর এইরকম পরিণতি খারাপ লাগছে। তাঁর সঙ্গে যদি দেখা করা যেত, শুনেছি তিনিই না কি নুনিয়াকে বাঁচিয়েছিলেন ?”
“স্যার, লোকে বলে, এমনি এমনি বাঁচান নি, ফাদারের না কি কী সব স্বার্থ ছিল নুনিয়াকে বাঁচানোর পিছনে ! তবে সেটা কী তা আমার জানা নেই।”
“ফাদার হলেন তথ্যের খনি। কত কিছু যে তিনি জানেন, সত্যিই আমার আফসোস হচ্ছে যে ফাদারের কাছে পৌঁছানো গেল না ! আর আমি পৌঁছানোর আপাতত কোন সম্ভাবনাও দেখছি না…”
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৯: মহাকাব্যের রাক্ষস ও মানুষের কাহিনিতে আধুনিক জীবনচিত্রের প্রতিফলন রয়েছে কি?
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১০: লীলা মজুমদার— নতুন রূপকথার হলদে পাখি
হরিপদ কথা ঘোরাল, “স্যার, একেবারে বাড়ি ফিরবেন তো ? না কি, অন্য কোথাও যাবেন?”
“না, আজ আর কোথাও যাব না। একেবারে কাল তোমার সঙ্গে বিকেলের দিকে বুধন মাহাতোর বাড়ি যাবো।“
হরিপদ চুপ করে গাড়ি চালাচ্ছিল। অন্ধকার নেমে এসেছে। হেডলাইট জ্বালাতে হয়েছিল। পথের দুপাশে কখনও বসন্তের জঙ্গল, কোথাও রুক্ষ টিলা, ধূ-ধূ মাঠ। অন্ধকারে সব ঢেকে যাচ্ছে। দূরে কোথাও মাদল বাজছিল। আজ কী পূর্ণিমা না কি? সত্যব্রত ভাবলেন, মানুষের জীবনে ক্ষণে ক্ষণে নিয়ম পাল্টায়। প্রকৃতির নিয়ম পাল্টায় না। আদি-অনাদিকাল ধরে সে একই নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছে। মানুষ যদি এত নিষ্ঠাবান হত!—চলবে।
“না, আজ আর কোথাও যাব না। একেবারে কাল তোমার সঙ্গে বিকেলের দিকে বুধন মাহাতোর বাড়ি যাবো।“
হরিপদ চুপ করে গাড়ি চালাচ্ছিল। অন্ধকার নেমে এসেছে। হেডলাইট জ্বালাতে হয়েছিল। পথের দুপাশে কখনও বসন্তের জঙ্গল, কোথাও রুক্ষ টিলা, ধূ-ধূ মাঠ। অন্ধকারে সব ঢেকে যাচ্ছে। দূরে কোথাও মাদল বাজছিল। আজ কী পূর্ণিমা না কি? সত্যব্রত ভাবলেন, মানুষের জীবনে ক্ষণে ক্ষণে নিয়ম পাল্টায়। প্রকৃতির নিয়ম পাল্টায় না। আদি-অনাদিকাল ধরে সে একই নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছে। মানুষ যদি এত নিষ্ঠাবান হত!—চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।