অলঙ্করণ : সৌমি দাসমণ্ডল।
লোকটা যেমন বলেছিল ঠিক সেখানেই অপেক্ষা করছিল।
সত্যব্রত গাড়ি নিয়ে এসেছেন। ড্যানিয়েল হরিপদ চার্চের সামনের দিকে প্রবেশপথের অদূরে গাড়ি রেখেছে। সত্যব্রতকে বেরিয়ে আসতে দেখে সে স্টার্ট দিয়েছিল, সত্যব্রত গিয়ে গাড়িতে উঠে বসতেই ড্যানিয়েল জিজ্ঞাসা করল, “ফিরবেন তো স্যার? না কি অন্য কোথাও যাবেন?”
সত্যব্রত বললেন, “হরিপদ, গাড়িটা নিয়ে তুমি ফেরার পথ ধরবে, কিন্তু কিছুদূর গিয়েই আবার ব্যাক করতে হবে আমাদের। চার্চের পিছনে পশ্চিমদিকে যে জঙ্গল আছে, সেখানে একজন অপেক্ষা করবে, তার সঙ্গে দেখা করতে হবে আমাকে। তুমি যতদূর সম্ভব আড়াল করে গাড়িটা রেখো। বেশিক্ষণ লাগবে না। মিনিট পনেরো হয়তো অপেক্ষা করতে হবে তোমাকে। আমি তার মধ্যেই চলে আসবো।”
হরিপদ কে, কেন, কী—এইসব কৌতূহল দেখায় না। সে নিজের ডিউটিটা বুঝে নেয় এবং সেটাই ভালো ভাবে করার চেষ্টা করে। সে বলল, “ঠিক আছে স্যার। কোনও অসুবিধা নেই। আমাকে যতক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় করবো। আমার কাজ আপনাকে নিয়ে এসেছি যেমন, আপনার কাজ মিটলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। আপনি ভাববেন না!”
সত্যব্রত বললেন, “এই জন্য তোমাকে আমি এত ভরসা করি হরিপদ!”
“ভরসা করতে হয় প্রভু যীশুকে করুন স্যার। তিনি আছেন, রক্ষা করবেন!”
“সবসময় কি তিনি রক্ষা করেন সবাইকে? বুধন মাহাতো তো খ্রিষ্টান ছিল, সে কি আর রক্ষা পেল?”
“ওরা নামেই খিষ্টান হয়েছিল স্যার। কোনওদিন চার্চে রবিবারের প্রার্থনায় আসতে দেখিনি কাউকেই। আসলে প্রভু নিশ্চয়ই রক্ষা করতেন!”
“আচ্ছা! হরিপদ তুমি ওদের বাড়ি চেনো?”
“চিনি স্যার!”
“আমাকে নিয়ে যেতে পারবে কাল-পরশুর মধ্যে ?”
“পারবো স্যার। যখন যাবেন বলবেন, তবে বেলার দিকে যাওয়াই ভালো। ওরা যদি কোথাও কাজে বেরিয়ে যায়, তাহলে সকালের দিকে গিয়ে ফিরে আসতে হতে পারে।”
“বেশ!”
হরিপদ গাড়ি চালাচ্ছিল আস্তে আস্তে। কিছুদূর গিয়ে সে বাম দিকে ঘুরল। ছোট্ট একটা রাস্তা, তবে একটা গাড়ি যেতে পারবে এমন চওড়া। এ-পথে গাড়ি বা লোকজনের যাতায়াত আছে বোঝা যায়। কয়েক জায়গায় চিপস্, সিগারেট, নোংরা পলিপ্যাক পড়ে থাকতে দেখলেন সত্যব্রত। মানুষের মতো সৃষ্টিশীল অথচ নোংরা প্রাণী আর দুটি নেই। এই প্রকৃতিকে যতভাবে ধর্ষণ করা যায়, মানুষ করেই চলবে আদি-অনাদি কাল ধরে!
সত্যব্রত গাড়ি নিয়ে এসেছেন। ড্যানিয়েল হরিপদ চার্চের সামনের দিকে প্রবেশপথের অদূরে গাড়ি রেখেছে। সত্যব্রতকে বেরিয়ে আসতে দেখে সে স্টার্ট দিয়েছিল, সত্যব্রত গিয়ে গাড়িতে উঠে বসতেই ড্যানিয়েল জিজ্ঞাসা করল, “ফিরবেন তো স্যার? না কি অন্য কোথাও যাবেন?”
সত্যব্রত বললেন, “হরিপদ, গাড়িটা নিয়ে তুমি ফেরার পথ ধরবে, কিন্তু কিছুদূর গিয়েই আবার ব্যাক করতে হবে আমাদের। চার্চের পিছনে পশ্চিমদিকে যে জঙ্গল আছে, সেখানে একজন অপেক্ষা করবে, তার সঙ্গে দেখা করতে হবে আমাকে। তুমি যতদূর সম্ভব আড়াল করে গাড়িটা রেখো। বেশিক্ষণ লাগবে না। মিনিট পনেরো হয়তো অপেক্ষা করতে হবে তোমাকে। আমি তার মধ্যেই চলে আসবো।”
হরিপদ কে, কেন, কী—এইসব কৌতূহল দেখায় না। সে নিজের ডিউটিটা বুঝে নেয় এবং সেটাই ভালো ভাবে করার চেষ্টা করে। সে বলল, “ঠিক আছে স্যার। কোনও অসুবিধা নেই। আমাকে যতক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় করবো। আমার কাজ আপনাকে নিয়ে এসেছি যেমন, আপনার কাজ মিটলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। আপনি ভাববেন না!”
সত্যব্রত বললেন, “এই জন্য তোমাকে আমি এত ভরসা করি হরিপদ!”
“ভরসা করতে হয় প্রভু যীশুকে করুন স্যার। তিনি আছেন, রক্ষা করবেন!”
“সবসময় কি তিনি রক্ষা করেন সবাইকে? বুধন মাহাতো তো খ্রিষ্টান ছিল, সে কি আর রক্ষা পেল?”
“ওরা নামেই খিষ্টান হয়েছিল স্যার। কোনওদিন চার্চে রবিবারের প্রার্থনায় আসতে দেখিনি কাউকেই। আসলে প্রভু নিশ্চয়ই রক্ষা করতেন!”
“আচ্ছা! হরিপদ তুমি ওদের বাড়ি চেনো?”
“চিনি স্যার!”
“আমাকে নিয়ে যেতে পারবে কাল-পরশুর মধ্যে ?”
“পারবো স্যার। যখন যাবেন বলবেন, তবে বেলার দিকে যাওয়াই ভালো। ওরা যদি কোথাও কাজে বেরিয়ে যায়, তাহলে সকালের দিকে গিয়ে ফিরে আসতে হতে পারে।”
“বেশ!”
হরিপদ গাড়ি চালাচ্ছিল আস্তে আস্তে। কিছুদূর গিয়ে সে বাম দিকে ঘুরল। ছোট্ট একটা রাস্তা, তবে একটা গাড়ি যেতে পারবে এমন চওড়া। এ-পথে গাড়ি বা লোকজনের যাতায়াত আছে বোঝা যায়। কয়েক জায়গায় চিপস্, সিগারেট, নোংরা পলিপ্যাক পড়ে থাকতে দেখলেন সত্যব্রত। মানুষের মতো সৃষ্টিশীল অথচ নোংরা প্রাণী আর দুটি নেই। এই প্রকৃতিকে যতভাবে ধর্ষণ করা যায়, মানুষ করেই চলবে আদি-অনাদি কাল ধরে!
হরিপদ সেই রাস্তা ধরে গাড়িটা কিছুদূর নিয়ে গিয়ে একটা জায়গায় দাঁড় করালো। বলল, “আপনি নেমে যান। আমি বড় রাস্তায় ফিরে যাচ্ছি। ওইখানে গাড়ির বনেট খুলে অপেক্ষা করবো। কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলব, গাড়ি একটু গড়বড় করছে। এখানে গাড়ি রাখলে কারও চোখে পড়বে। আপনি তখন আর নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারবেন না। বুঝতে পারছি, আপনার ব্যাপারটা গোপন এবং জরুরি। কাজ শেষ হলে ফোন করবেন, আমি চলে আসবো।” বলে সামনের দিকে হাত তুলে দেখিয়ে বলল, “ওই দিকে এগিয়ে গেলেই আপনি চার্চের পিছনের দিকে পৌঁছাবেন। যার সঙ্গে দেখা করার কথা সে হয়তো ওইখানেই আছে!”
“আচ্ছা”, বলে সত্যব্রত নেমে পড়লেন।
হরিপদ শান্ত গলায় বলল, “আর একটা কথা স্যার। মোবাইলটা হাতেই রাখবেন। আমার নাম্বারটা একবার রিং করে রেখে দিন, যাতে কোন বিপদ বুঝলে আমাকে একবার মিস কল দেবেন, আমি চলে আসবো। সতর্ক থাকবেন। কেমন জানি না মনে হচ্ছে, না জেনেই কোন বিপদের মধ্যে পা বাড়িয়েছেন আপনি। কিন্তু ভয় পাবেন না, হরিপদর শরীরে যতক্ষণ প্রাণ আছে, কেউ কিছু করতে পারবে না আপনার !” বলে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে চলে গেল যেমন এসেছিল, তেমনিই।
সত্যব্রত মুগ্ধ হলেন। এরা কত সহজ-সরল, কত সহজেই মানুষকে আপন করে নিতে পারে। শহুরে মানুষ এভাবে পারবে না। তার পরিবেশই তাকে হতে দেবে না এমন।
হরিপদর নির্দেশ মতো খানিকটা গিয়েই দেখলেন কিছু শাল-সেগুনের জটলার কাছে দাঁড়িয়ে আগের দেখা সেই লোকটি অস্থিরভাবে পায়চারি করছে। সেদিকে এগিয়ে যেতেই পায়ের নীচে শুকনো শাল-সেগুনের পাতায় আওয়াজ হল। সেই আওয়াজে চমকে লোকটা ঘুরে তাকিয়েই তাঁকে দেখতে পেল। তবে তার মুখের ভাবের অস্থিরতা তাতে কমলো না।
সত্যব্রত এগিয়ে গিয়ে বললেন, “আমি জানি না, কে আপনি ? আপনি কি আপনার পরিচয় দিতে পারবেন আমাকে?”
“আমি ধীরাজ স্যামুয়েল মহাপাত্র। আমি চার্চের রান্নাঘরের দায়িত্বে আছি স্যার। আমাকে দয়া করে আপনি করে বলবেন না। তুই কিংবা তুমি করে বলুন!”
“ঠিক আছে। এখন বল, নুনিয়া সম্পর্কে কী বলবে?”
“স্যার, নুনিয়া খুব ভালো মেয়ে। সবাই ওকে ভুল বোঝে। ওর একটা অন্ধ অতীত আছে। খুব ভয়ঙ্কর অতীত। আপনি জানেন না যে…”
তাকে থামিয়ে দিয়ে সত্যব্রত বললেন, “আমি জানি, আজ ফাদার আন্তোনিও আমায় সব বলেছেন। ওটা বাদ দিয়ে নতুন কথা কিছু থাকে তো বল।”
“ভালোই হল। আমার কম সময় লাগবে। এমনিতেও বেশিক্ষণ বাইরে থাকলেই খোঁজ পড়বে। নুনিয়াকে আপনি বাঁচান স্যার!”
“নুনিয়াকে বাঁচাবো ? আমি ? কেন কী হয়েছে নুনিয়ার ?”
“ওরা হয়তো এবার ওকে চার্চ থেকে তাড়িয়ে দেবে। তা তাড়িয়েও যদি দিত, তাহলেও অসুবিধা ছিল না, আমার বাড়ি জলেশ্বরে, ওড়িশায়, সেখানে পাঠিয়ে দিতাম। আমার বউ বাচ্চা খুব ভালোবাসে। নিজের দুটি আছে, নুনিয়াকে পেলে সে খুব খুশি হত। যদিও নুনিয়া এখন আর ততটা বাচ্চা নেই, তবুও…। কিন্তু ওরা ওকে বিয়ে দেওয়ার নাম করে পাচার করে দিতে চাইছে!”
“ওরা মানে কারা ? আর বিয়ের নামে পাচার করে দেবে বলে বলছ যে, এই কথা কী কেউ বলেছে?”
“না, আমায় কেউ কিছু বলেনি। আর এ সব কথা কেউ কাউকে বলে বেড়ায় না। নিজেদের মধ্যে রাখে। কিন্তু আমার সন্দেহ। এর আগে দেখেছি, হোমের কোন কোন বাচ্চাকে না কি অন্য হোমে পাঠানো হয়েছে। যখনই দেখেছি সাইকেল আর তার ভাই মঙ্গল মাহাতোর আনাগোনা শুরু হয়েছে একসঙ্গে, তখনই কোনও না কোনও বাচ্চাকে দূরের হোমে পাঠানোর কথা কানে এসেছে। এই হোমে মাঝেমাঝে দূরের হোম থেকে মেয়েরা আসে, বাচ্চারা আসে, আবার অন্য হোমে তাদের পাঠিয়েও দেওয়া হয় এক-দু’দিনের ভিতরেই। আমি তো কিচেনের দায়িত্ব সামলাই, আমি জানি, মিলের হিসেব বেশি হলেই বুঝি, আবার কোন গড়বড় হতে যাচ্ছে।”
“আচ্ছা”, বলে সত্যব্রত নেমে পড়লেন।
হরিপদ শান্ত গলায় বলল, “আর একটা কথা স্যার। মোবাইলটা হাতেই রাখবেন। আমার নাম্বারটা একবার রিং করে রেখে দিন, যাতে কোন বিপদ বুঝলে আমাকে একবার মিস কল দেবেন, আমি চলে আসবো। সতর্ক থাকবেন। কেমন জানি না মনে হচ্ছে, না জেনেই কোন বিপদের মধ্যে পা বাড়িয়েছেন আপনি। কিন্তু ভয় পাবেন না, হরিপদর শরীরে যতক্ষণ প্রাণ আছে, কেউ কিছু করতে পারবে না আপনার !” বলে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে চলে গেল যেমন এসেছিল, তেমনিই।
সত্যব্রত মুগ্ধ হলেন। এরা কত সহজ-সরল, কত সহজেই মানুষকে আপন করে নিতে পারে। শহুরে মানুষ এভাবে পারবে না। তার পরিবেশই তাকে হতে দেবে না এমন।
হরিপদর নির্দেশ মতো খানিকটা গিয়েই দেখলেন কিছু শাল-সেগুনের জটলার কাছে দাঁড়িয়ে আগের দেখা সেই লোকটি অস্থিরভাবে পায়চারি করছে। সেদিকে এগিয়ে যেতেই পায়ের নীচে শুকনো শাল-সেগুনের পাতায় আওয়াজ হল। সেই আওয়াজে চমকে লোকটা ঘুরে তাকিয়েই তাঁকে দেখতে পেল। তবে তার মুখের ভাবের অস্থিরতা তাতে কমলো না।
সত্যব্রত এগিয়ে গিয়ে বললেন, “আমি জানি না, কে আপনি ? আপনি কি আপনার পরিচয় দিতে পারবেন আমাকে?”
“আমি ধীরাজ স্যামুয়েল মহাপাত্র। আমি চার্চের রান্নাঘরের দায়িত্বে আছি স্যার। আমাকে দয়া করে আপনি করে বলবেন না। তুই কিংবা তুমি করে বলুন!”
“ঠিক আছে। এখন বল, নুনিয়া সম্পর্কে কী বলবে?”
“স্যার, নুনিয়া খুব ভালো মেয়ে। সবাই ওকে ভুল বোঝে। ওর একটা অন্ধ অতীত আছে। খুব ভয়ঙ্কর অতীত। আপনি জানেন না যে…”
তাকে থামিয়ে দিয়ে সত্যব্রত বললেন, “আমি জানি, আজ ফাদার আন্তোনিও আমায় সব বলেছেন। ওটা বাদ দিয়ে নতুন কথা কিছু থাকে তো বল।”
“ভালোই হল। আমার কম সময় লাগবে। এমনিতেও বেশিক্ষণ বাইরে থাকলেই খোঁজ পড়বে। নুনিয়াকে আপনি বাঁচান স্যার!”
“নুনিয়াকে বাঁচাবো ? আমি ? কেন কী হয়েছে নুনিয়ার ?”
“ওরা হয়তো এবার ওকে চার্চ থেকে তাড়িয়ে দেবে। তা তাড়িয়েও যদি দিত, তাহলেও অসুবিধা ছিল না, আমার বাড়ি জলেশ্বরে, ওড়িশায়, সেখানে পাঠিয়ে দিতাম। আমার বউ বাচ্চা খুব ভালোবাসে। নিজের দুটি আছে, নুনিয়াকে পেলে সে খুব খুশি হত। যদিও নুনিয়া এখন আর ততটা বাচ্চা নেই, তবুও…। কিন্তু ওরা ওকে বিয়ে দেওয়ার নাম করে পাচার করে দিতে চাইছে!”
“ওরা মানে কারা ? আর বিয়ের নামে পাচার করে দেবে বলে বলছ যে, এই কথা কী কেউ বলেছে?”
“না, আমায় কেউ কিছু বলেনি। আর এ সব কথা কেউ কাউকে বলে বেড়ায় না। নিজেদের মধ্যে রাখে। কিন্তু আমার সন্দেহ। এর আগে দেখেছি, হোমের কোন কোন বাচ্চাকে না কি অন্য হোমে পাঠানো হয়েছে। যখনই দেখেছি সাইকেল আর তার ভাই মঙ্গল মাহাতোর আনাগোনা শুরু হয়েছে একসঙ্গে, তখনই কোনও না কোনও বাচ্চাকে দূরের হোমে পাঠানোর কথা কানে এসেছে। এই হোমে মাঝেমাঝে দূরের হোম থেকে মেয়েরা আসে, বাচ্চারা আসে, আবার অন্য হোমে তাদের পাঠিয়েও দেওয়া হয় এক-দু’দিনের ভিতরেই। আমি তো কিচেনের দায়িত্ব সামলাই, আমি জানি, মিলের হিসেব বেশি হলেই বুঝি, আবার কোন গড়বড় হতে যাচ্ছে।”
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৪৭: উন্মেষার কথা
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-১২: পার্টি থেকে ফিরে সঞ্জয় দেখলেন পুনম বাথটবে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন
সত্যব্রত বিমূঢ় বিস্ময়ে অভিভূত হচ্ছিলেন। সর্ষের মধ্যে এত ভূত তিনি কল্পনা করেন নি। তিনি কোনরকমে বললেন, “কী বলছ তুমি তা জানো?”
“আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে কিছু একটা গড়বড় তো আছেই, পুলিশ অনুসন্ধান করলে ঠিক বেরিয়ে আসবে দেখবেন। অ্যাম্বুল্যান্সে করে ওদের পাঠানো হয়। রাতের বেলা। আমার দেখার কথা নয়। কিন্তু একদিন দেখে ফেলেছিলাম, অ্যাম্বুল্যান্সে স্ট্রেচারে করে তোলা হচ্ছে। চার্চের অ্যাম্বুল্যান্স দেখলে পাশের রাজ্যের বর্ডারেও চেক না করেই ছেড়ে দেয়। এই সুযোগটা নিচ্ছে হয়তো কেউ!”
“স্ট্রেচারে করে কাউকে নিয়ে গেলেই পাচার হচ্ছে, ভাবছো কেন? অসুস্থ পেশেন্ট হতে পারেন। হয়তো এখানে পেশেন্টের কন্ডিশন খারাপ হওয়ায় তাকে শহরের কোন বড় হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছিল।”
“সেটা আমিও যে ভাবিনি এমন নয়। কিন্তু সেটা হলে এক-আধটা স্ট্রেচার হবে, একসঙ্গে তিন-চারটে স্ট্রেচার
হবে? সব সময়েই? একসঙ্গে চার-পাঁচজন পেশেন্ট প্রতিবারেই অসুস্থ হয়ে দূরের হাসপাতালে যায়?”
সত্যব্রতকে মানতেই হল, কথাটার মধ্যে যুক্তি আছে। কিন্তু অভিযোগ করলেই হয় না। কেবল অভিযোগ কোর্ট কেন, পুলিশও মানতে চাইবে না। এলাকায় চার্চের প্রভাব মারাত্মক। ডিএম, এসপি অবধি সকলেই খাতির করেন ফাদারদের। চার্চের কোনও ফাইল হলে তা সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ আছে বলে শুনেছেন তিনি।
সত্যব্রত বললেন, “পুলিশকে বলতেই পারি, কিন্তু তাঁরা সাক্ষ্য প্রমাণ চাইবেন। তখন?”
“সেটা জোগাড় করতে হবে। ওহ্, আসল জিনিসটা দিতেই ভুলে গিয়েছি!”
“আসল জিনিস?” অবাক হলেন সত্যব্রত।
“জঙ্গলে কাল দুপুরে নুনিয়া একটা মোবাইল খুঁজে পেয়েছে। সস্তা মোবাইল। কিন্তু সাইকেল সেটা জঙ্গলে আতিপাঁতি করে খুঁজছিল।তার আগেই নুনিয়ার সেটা চোখে পড়ে এবং কী মনে হওয়াতে সেটা সাইকেলকে দেয়নি। বরং মিথ্যে বলেছিল যে, এমন কিছুই সে কুড়িয়ে পায়নি। ওরা নুনিয়াকে হটিয়ে দিয়ে মোবাইলটা পাগলের মতো খুঁজেছে। কিন্তু পায়নি! কারণ, নুনিয়া ওটা এনে আমাকে দিয়ে বলেছিল, এটা সযত্নে লুকিয়ে রাখতে! আজ আপনাকে দেখে মনে হল, আপনার কাছে দেওয়াটাই নিরাপদ হবে। আমার বিশ্বাস এতে এমন কিছু আছে যা অন্যের হাতে পড়ুক চায় না সাইকেল!”
“দেখ, সস্তা হোক আর যাই হোক না কেন, মোবাইল ছাড়া এখন মানুষ অচল। তার উপর সাইকেল মাল সাপ্লাই, আমদানি ইত্যাদি কাজের সঙ্গে যুক্ত। তার কাছে একটা মোবাইল থাকা জরুরি, হোক না তা সস্তা ! হয়তো সেই কারণেই সে এই মোবাইলটা খুঁজছিল। নুনিয়ার দিয়ে দেওয়া উচিত ছিল!”
“আপনি ভুল ভাবছেন ডাক্তার বাবু, সাইকেলের তিন-তিনখানা দামি মোবাইল আছে। সে হঠাৎ এই সস্তা মোবাইল হারিয়ে পাগলের মতো করবে কেন?”
“আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে কিছু একটা গড়বড় তো আছেই, পুলিশ অনুসন্ধান করলে ঠিক বেরিয়ে আসবে দেখবেন। অ্যাম্বুল্যান্সে করে ওদের পাঠানো হয়। রাতের বেলা। আমার দেখার কথা নয়। কিন্তু একদিন দেখে ফেলেছিলাম, অ্যাম্বুল্যান্সে স্ট্রেচারে করে তোলা হচ্ছে। চার্চের অ্যাম্বুল্যান্স দেখলে পাশের রাজ্যের বর্ডারেও চেক না করেই ছেড়ে দেয়। এই সুযোগটা নিচ্ছে হয়তো কেউ!”
“স্ট্রেচারে করে কাউকে নিয়ে গেলেই পাচার হচ্ছে, ভাবছো কেন? অসুস্থ পেশেন্ট হতে পারেন। হয়তো এখানে পেশেন্টের কন্ডিশন খারাপ হওয়ায় তাকে শহরের কোন বড় হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছিল।”
“সেটা আমিও যে ভাবিনি এমন নয়। কিন্তু সেটা হলে এক-আধটা স্ট্রেচার হবে, একসঙ্গে তিন-চারটে স্ট্রেচার
হবে? সব সময়েই? একসঙ্গে চার-পাঁচজন পেশেন্ট প্রতিবারেই অসুস্থ হয়ে দূরের হাসপাতালে যায়?”
সত্যব্রতকে মানতেই হল, কথাটার মধ্যে যুক্তি আছে। কিন্তু অভিযোগ করলেই হয় না। কেবল অভিযোগ কোর্ট কেন, পুলিশও মানতে চাইবে না। এলাকায় চার্চের প্রভাব মারাত্মক। ডিএম, এসপি অবধি সকলেই খাতির করেন ফাদারদের। চার্চের কোনও ফাইল হলে তা সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ আছে বলে শুনেছেন তিনি।
সত্যব্রত বললেন, “পুলিশকে বলতেই পারি, কিন্তু তাঁরা সাক্ষ্য প্রমাণ চাইবেন। তখন?”
“সেটা জোগাড় করতে হবে। ওহ্, আসল জিনিসটা দিতেই ভুলে গিয়েছি!”
“আসল জিনিস?” অবাক হলেন সত্যব্রত।
“জঙ্গলে কাল দুপুরে নুনিয়া একটা মোবাইল খুঁজে পেয়েছে। সস্তা মোবাইল। কিন্তু সাইকেল সেটা জঙ্গলে আতিপাঁতি করে খুঁজছিল।তার আগেই নুনিয়ার সেটা চোখে পড়ে এবং কী মনে হওয়াতে সেটা সাইকেলকে দেয়নি। বরং মিথ্যে বলেছিল যে, এমন কিছুই সে কুড়িয়ে পায়নি। ওরা নুনিয়াকে হটিয়ে দিয়ে মোবাইলটা পাগলের মতো খুঁজেছে। কিন্তু পায়নি! কারণ, নুনিয়া ওটা এনে আমাকে দিয়ে বলেছিল, এটা সযত্নে লুকিয়ে রাখতে! আজ আপনাকে দেখে মনে হল, আপনার কাছে দেওয়াটাই নিরাপদ হবে। আমার বিশ্বাস এতে এমন কিছু আছে যা অন্যের হাতে পড়ুক চায় না সাইকেল!”
“দেখ, সস্তা হোক আর যাই হোক না কেন, মোবাইল ছাড়া এখন মানুষ অচল। তার উপর সাইকেল মাল সাপ্লাই, আমদানি ইত্যাদি কাজের সঙ্গে যুক্ত। তার কাছে একটা মোবাইল থাকা জরুরি, হোক না তা সস্তা ! হয়তো সেই কারণেই সে এই মোবাইলটা খুঁজছিল। নুনিয়ার দিয়ে দেওয়া উচিত ছিল!”
“আপনি ভুল ভাবছেন ডাক্তার বাবু, সাইকেলের তিন-তিনখানা দামি মোবাইল আছে। সে হঠাৎ এই সস্তা মোবাইল হারিয়ে পাগলের মতো করবে কেন?”
আরও পড়ুন:
বরসে গা সাওন: স্মরণে উস্তাদ রাশিদ খান
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৩: এক্সপায়ারি ডেটের ওষুধ খাবেন?
সত্যব্রত চমকে গেলেন এ বার। সাইকেলের তিন-তিনটে দামি মোবাইল? এতগুলি মোবাইল তার কী কাজে লাগে? তাঁর নিজের একটাই মোবাইল, আর সেটা সামলাতেই তাঁকে হিমসিম খেতে হয়। আর সেখানে সাইকেলের মতো মানুষ…! হতে পারে, ভাবলেন তিনি, সাইকেলের অর্ডার সাপ্লাইয়ের বিজনেসে ভালো প্রোফিট হচ্ছে। তখনই তাঁর মনে পড়লো, সাইকেলের ভাই মঙ্গল মাহাতোর হাতে একটু আগে দামি কোরিয়ান কোম্পানির লেটেস্ট মডেলের ফোন দেখেছেন। মঙ্গল মাহাতো কী করে সেটা জানেন না তিনি, তবে সে-ও যে কম পয়সাওলা লোক নয়, এটা বোঝা গিয়েছে। তা না হলে একটা ষাট হাজারি মোবাইল ক্যারি করা সম্ভব হতো না।
ধীরাজ ততক্ষণে মোবাইলটা বার করে বাড়িয়ে দিয়েছে তাঁর দিকে। সস্তা চায়না মোবাইল। কি-প্যাড সিস্টেমের পুরানো মডেল। কথা বলা আর ছোট মেসেজ টাইপ করা ছাড়া আর কোন কাজে লাগে না এগুলি। আজকাল এর চলও উঠে গিয়েছে।
সত্যব্রত জিজ্ঞাসা করলেন, “সিম আছে?”
“আছে। তবে মোবাইল খুঁজে না পেয়ে এতক্ষণে সেটা ডিঅ্যাক্টিভেট করে দিয়েছে নিশ্চয়ই।”
“মোবাইলটা বন্ধ আছে?”
“হ্যাঁ, সম্ভবত চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ায় আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমি আর চার্জ দিইনি। যেমন নুনিয়া দিয়েছিল, তেমনই রাখা আছে!”
“বেশ, আমি নিলাম। তবে এটা পুলিশের হাতে জিম্মা করতে হবে। তুমি নিজের খেয়াল রেখো। আমার মনে হচ্ছে, চার্চে যা সব ঘটছে, তার সব কিছুই ঠিক না-ও হতে পারে। নুনিয়ার কারা সর্বনাশ করতে চাইছে আর কেন, সেটাও জানা দরকার!”
“যা করবেন গোপনে করবেন স্যার! না হলে ওরা নুনিয়াকে মেরে দেবে। ভারি ভালো মেয়েটি। মনটা দরাজ একেবারে।” হাতের চেটোয় চোখের জল মুছল ধীরাজ।
“তোমার নাম্বারটা আমাকে দিতে পারবে ?”
“বলছি। সেভ করে নিন!” ধীরাজ নাম্বার বলল। সত্যব্রত সেভ করে নিলেন। কে জানে কখন কথা বলার দরকার পড়ে।
“একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?”
“এ ভাবে বলছেন কেন? আপনি যা খুশি জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আপনাকে দেখে ভরসা হল বলেই এত কথা বললাম। আগে তো কাউকে বলিনি!”
“ফাদার রডরিগ কী মৃত্যুশয্যায়?”
“ফাদার রডরিগ?”
“হ্যাঁ !”
“বলতে পারবো না। আমি তাঁকে কখনও দেখিনি। আসলে অনেকেই দেখেনি তাঁকে। তবে শুনেছি, তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ। ঘরে বন্দি থাকেন। চোখের অসুখ আছে। আলোতে সমস্যা হয় তাঁর। এখন না কি চলাফেরাও করতে পারেন না তেমন। ফাদার আন্তোনিও আর ওঁর ঘরে যিনি সবসময় থাকেন, সেক্রেটারি বাবু জন উৎপল ঘড়ুই, তাঁদের দুজনের কেবল যাওয়ার অধিকার আছে। আগে নুনিয়াকে যেতে দেওয়া হত শুনেছি। আমি কখনো দেখিনি নুনিয়াকে যেতে।”
“কিচেনে ওনার খাবার রান্না হয় না ?”
“কেন হবে না? স্যুপ, ব্রেড, কখনো সেদ্ধ মাংস—এইসব যেখন যেমন বলা হয়, থালি সাজিয়ে রাখা হয়, ফাদার কিংবা জন উৎপল এসে নিয়ে যান। পরে কেউ গিয়ে ফাদার আন্তোনিওর অফিস ঘর থেকে এঁটো বাসন-কোসন নিয়ে আসে। এইরকমই ব্যবস্থা!”
“অসুস্থ যখন, ডাক্তারবাবুরা কেউ তো যান?”
“যেতে পারেন। আমার জানা নেই। বললে, জানবার চেষ্টা করবো!”
“করো তো। তাহলে ওই ডাক্তারের সঙ্গে যদি কথা বলা যায়। যাক্, তুমি এই ক’দিন চোখ-কান খোলা রাখ। আর সাবধানে থাকো।”
“হ্যাঁ! আমি এখন যাই। এতক্ষণ আমাকে দেখতে না পেয়ে আবার হুলুস্থূল পড়ে গিয়েছে কি না কে জানে?” বলে ধীরাজ আর দাঁড়ায় না, গাছপালা জঙ্গলের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়।
ধীরাজ ততক্ষণে মোবাইলটা বার করে বাড়িয়ে দিয়েছে তাঁর দিকে। সস্তা চায়না মোবাইল। কি-প্যাড সিস্টেমের পুরানো মডেল। কথা বলা আর ছোট মেসেজ টাইপ করা ছাড়া আর কোন কাজে লাগে না এগুলি। আজকাল এর চলও উঠে গিয়েছে।
সত্যব্রত জিজ্ঞাসা করলেন, “সিম আছে?”
“আছে। তবে মোবাইল খুঁজে না পেয়ে এতক্ষণে সেটা ডিঅ্যাক্টিভেট করে দিয়েছে নিশ্চয়ই।”
“মোবাইলটা বন্ধ আছে?”
“হ্যাঁ, সম্ভবত চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ায় আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমি আর চার্জ দিইনি। যেমন নুনিয়া দিয়েছিল, তেমনই রাখা আছে!”
“বেশ, আমি নিলাম। তবে এটা পুলিশের হাতে জিম্মা করতে হবে। তুমি নিজের খেয়াল রেখো। আমার মনে হচ্ছে, চার্চে যা সব ঘটছে, তার সব কিছুই ঠিক না-ও হতে পারে। নুনিয়ার কারা সর্বনাশ করতে চাইছে আর কেন, সেটাও জানা দরকার!”
“যা করবেন গোপনে করবেন স্যার! না হলে ওরা নুনিয়াকে মেরে দেবে। ভারি ভালো মেয়েটি। মনটা দরাজ একেবারে।” হাতের চেটোয় চোখের জল মুছল ধীরাজ।
“তোমার নাম্বারটা আমাকে দিতে পারবে ?”
“বলছি। সেভ করে নিন!” ধীরাজ নাম্বার বলল। সত্যব্রত সেভ করে নিলেন। কে জানে কখন কথা বলার দরকার পড়ে।
“একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?”
“এ ভাবে বলছেন কেন? আপনি যা খুশি জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আপনাকে দেখে ভরসা হল বলেই এত কথা বললাম। আগে তো কাউকে বলিনি!”
“ফাদার রডরিগ কী মৃত্যুশয্যায়?”
“ফাদার রডরিগ?”
“হ্যাঁ !”
“বলতে পারবো না। আমি তাঁকে কখনও দেখিনি। আসলে অনেকেই দেখেনি তাঁকে। তবে শুনেছি, তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ। ঘরে বন্দি থাকেন। চোখের অসুখ আছে। আলোতে সমস্যা হয় তাঁর। এখন না কি চলাফেরাও করতে পারেন না তেমন। ফাদার আন্তোনিও আর ওঁর ঘরে যিনি সবসময় থাকেন, সেক্রেটারি বাবু জন উৎপল ঘড়ুই, তাঁদের দুজনের কেবল যাওয়ার অধিকার আছে। আগে নুনিয়াকে যেতে দেওয়া হত শুনেছি। আমি কখনো দেখিনি নুনিয়াকে যেতে।”
“কিচেনে ওনার খাবার রান্না হয় না ?”
“কেন হবে না? স্যুপ, ব্রেড, কখনো সেদ্ধ মাংস—এইসব যেখন যেমন বলা হয়, থালি সাজিয়ে রাখা হয়, ফাদার কিংবা জন উৎপল এসে নিয়ে যান। পরে কেউ গিয়ে ফাদার আন্তোনিওর অফিস ঘর থেকে এঁটো বাসন-কোসন নিয়ে আসে। এইরকমই ব্যবস্থা!”
“অসুস্থ যখন, ডাক্তারবাবুরা কেউ তো যান?”
“যেতে পারেন। আমার জানা নেই। বললে, জানবার চেষ্টা করবো!”
“করো তো। তাহলে ওই ডাক্তারের সঙ্গে যদি কথা বলা যায়। যাক্, তুমি এই ক’দিন চোখ-কান খোলা রাখ। আর সাবধানে থাকো।”
“হ্যাঁ! আমি এখন যাই। এতক্ষণ আমাকে দেখতে না পেয়ে আবার হুলুস্থূল পড়ে গিয়েছে কি না কে জানে?” বলে ধীরাজ আর দাঁড়ায় না, গাছপালা জঙ্গলের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৫: প্রতিযোগিতা সর্বদা স্বাস্থ্যকর নয়, কদ্রুবিনতার শত্রুতায় কি তারই ইঙ্গিত?
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৫: রবীন্দ্রনাথ নিজের ডাক্তারি নিজেও করেছেন
সত্যব্রত ফিরে আসছেন। এমন সময় মনে হল, কেউ অতি সন্তর্পণে শুকনো পাতা মাড়িয়ে পা টিপে টিপে তাঁকে অনুসরণ করছে। তবে রাস্তা দিয়ে নয়। সে যাচ্ছে রাস্তার সমান্তরালে জঙ্গলের মধ্যে গাছপালার আড়ালে আড়ালে।
বসন্তের শুরু। নতুন পাতায় সেজে উঠেছে জঙ্গল। কুসুম গাছের শীর্ষ লালে লাল হয়ে আছে। এই সময় জঙ্গল ঘন বলে মনে হয় না, তবে নীচে ঝোপঝাড় থাকলে আলাদা কথা। এই জঙ্গলেও আছে। অতএব তার আড়াল দিয়ে কেউ লুকিয়ে অনুসরণ করতে পারে তাঁকে। দেখবার চেষ্টা করলেন। নাহ্, কাউকে চোখে পড়ল না। যদি কেউ থাকেও, সে অতি ধূর্ত। কী মনে হতে, হরিপদকে রিং করলেন একবার। দেখা যাক, হরিপদ মিসড্ কল দিতে বলেছিল, সে নিশ্চয়ই অতি দ্রুত চলে আসবে।—চলবে।
বসন্তের শুরু। নতুন পাতায় সেজে উঠেছে জঙ্গল। কুসুম গাছের শীর্ষ লালে লাল হয়ে আছে। এই সময় জঙ্গল ঘন বলে মনে হয় না, তবে নীচে ঝোপঝাড় থাকলে আলাদা কথা। এই জঙ্গলেও আছে। অতএব তার আড়াল দিয়ে কেউ লুকিয়ে অনুসরণ করতে পারে তাঁকে। দেখবার চেষ্টা করলেন। নাহ্, কাউকে চোখে পড়ল না। যদি কেউ থাকেও, সে অতি ধূর্ত। কী মনে হতে, হরিপদকে রিং করলেন একবার। দেখা যাক, হরিপদ মিসড্ কল দিতে বলেছিল, সে নিশ্চয়ই অতি দ্রুত চলে আসবে।—চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।